কিটো ডায়েট চার্ট, কিটো ডায়েট খাবার তালিকা । ২০২৩

কিটো ডায়েট চার্ট

Last Updated on 19th August 2023 by Mijanur Rahman

যাদের ওজন বেড়ে গেছে, কিংবা ওজন কমিয়ে নিজের দেহকে সুস্থ্য ও রাখতে চায়, ডায়েট তাদের জন্য খুবই উপকারী পন্থা। বিভিন্ন রকম ডায়েটের মধ্যে বর্তমানে বহুল জনপ্রিয় হলো কিটো ডায়েট। কিটো ডায়েট চার্ট অনুসরন করে আমরা এখন খুব সহজেই বাড়তি ওজনের সমস্যা থেক মুক্তি পেতে পারি।

বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষ থেকে বড় বড় সেলিব্রেটিকে দেখা যায় নিজেদের শারীরিক গড়ন ঠিক রাখতে কিটো ডায়েট চার্ট ফলো করতে। তাই এখন ওজন কমাতে কিটো ডায়েট খুবই জনপ্রিয় এক উপায়।

কিটো ডায়েট কী?

কিটো ডায়েট বা কিটোজেনিক ডায়েট হলো এমন এক ধরণের ডায়েট যেখানে কার্বোহাইড্রেট এর মাত্রা খুবই কম থাকবে। অর্থাৎ সুপার লো-কার্ব ডায়েট। আমরা, শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করে দেহে  গ্লুকোজ এর চাহিদা মিটিয়ে থাকি। এই গ্লুকোজ ই হলো আমাদের দেহে শক্তির মূল যোগানদাতা। এই উপদানটি রক্তের মাধ্যমে দেহে প্রবাহিত হয়ে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।

যখন প্রয়োজনের অধিক গ্লুকোজ দেহে তৈরি হয় তখন দেহের চাহিদা মিটিয়ে বাকি অংশ জমা হতে থাকে। আর এভাবেই আমাদের দেহের ওজন বাড়তে থাকে। আমাদের ধারণা যে, তেল যুক্ত খাবার অর্থাৎ চর্বি আমাদের দেহের ওজন বাড়ায়, কিন্তু তা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ আমাদের দেহের মাত্রাতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির জন্য চর্বির চেয়ে বেশি দায়ী হলো শর্করা জাতীয় খাবার ।

কিটো ডায়েট এর কাজ হলো দেহে শর্করা জাতীয় খাবাররের মাত্রা কমিয়ে দেয়া। কিটো ডায়েট চার্ট এর খাবার তালিকায় শর্করার মাত্রা খুবই অল্প থাকে। আমাদের নরমাল ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট থাকে ৫০% অপর দিকে, কিটো ডায়েটে থাকবে মাত্র ৫% । এখানেই মূল পার্থক্য। সাধারণ ডায়েটে ২০% প্রোটিন আর ৩০% ফ্যাট থাকলেও কিটো ডায়েটের সময় তা ২৫% প্রোটিন আর ৭০% ফ্যাট। অর্থাৎ চর্বি প্রোটিন জাতীয় খাবারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটাই হলো কিটো ডায়েট।

কিটো ডায়েট কিভাবে কাজ করে?

আগেই বলা হয়েছে কিটো ডায়েট এর মূল লক্ষ হলো, দেহে শর্করার মাত্রা কমিয়ে‍ দিয়ে অতিরিক্ত গ্লুকোজ তৈরি বন্ধ করে দেয়া। যাতে করে গ্লুকোজ দেহে জমতে না পারে এবং দেহের ওজন বৃদ্ধি না পায়। আমরা যদি দেহকে একটি মেশিনের সাথে তুলনা করি তবে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। মেশিন যেমন জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে, দেহও ঠিক একই কাজ করে, খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানকে পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। কিটো ডায়েটের মাধ্যমে যেহেতু শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়া হয়, তখন দেহে শক্তি তৈরির দায়িত্ব পড়ে ফ্যাট ও প্রোটিনের ওপর। 

শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া হওয়ার কারণে দেহে প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কম গ্লুকোজ তৈরি হয়। শক্তি সরবরাহের দায়িত্ব পড়ে চর্বির ওপর। দেহ তখন চর্বি  বা ফ্যাট ব্যবহার শুরু করে দেয়।  এই চর্বি বা ফ্যাট ভেঙে দেহে কিটোন বডিজ তৈরি হয়। তখন স্বাভাবিক ভাবেই  গ্লুকোজের পরিবর্তে ফ্যাট ভাঙনের ফলে উৎপন্ন কিটোন বডিজ দেহে শক্তি সরবরাহ করে থাকে। প্রক্রিয়ার নাম কিটোসিস। আর এ কিটোসিস থেকেই এর  নামকরণ হয়েছে কিটো ডায়েট বা কিটোজেনিক ডায়েট। এভাবে দেহ শর্করা না পেয়ে চর্বি পোড়াতে শুরু করে এবং আমাদের ওজনও দ্রুত কমা শুরু করে। যদি কিটো ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে এ ডায়েট করা যায় তবে মাত্র দুই সপ্তাহে দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়। 

অতিরিক্ত ওজন
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নাই।

কিটো ডায়েটের প্রচলন

কিটো ডায়েটের প্রচলন বেশ পুরোনো। তবে কিটো ডায়েট এর প্রচলন শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোকে উদ্দেশ্য করে প্রচলন করা হয়নি। সর্বপ্রথম ১৯২০ সালে  কিটো ডায়েটের ধারণা দেয়া হয়েছিলো শিশুদের এপিলেপ্সী বা মৃগীরোগের চিকিৎসার জন্যমৃগী রোগীর মস্তিষ্কের Electrical Activities খুব ফাস্ট থাকে। যার কারণে, তাদের মস্তিষ্ক হঠাৎ খুব উত্তেজিত হয়, এরপর খিঁচুনি হয়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সে সময়ে এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোনো ঔষধ ছিল না। প্রতিকার হিসেবে রোগীর খাদ্য তালিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। যেখানে % কার্বোহাইড্রেট, ৭৫% ফ্যাট এবং ২০% প্রোটিন। যাকে বলা হয় Atkins Diet বা লো কার্ব ডায়েট। যা বর্তমানে কিটো ডায়েট নামে ব্যাপক সমাদৃত।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা National Centre for Biotechnology Information (NCBI)এর তথ্যমতে, ১৯২১ সালে রাসেল উইলডার নামের একজন চিকিৎসক কিটো ডায়েটের ব্যবহার প্রথম শুরু করেছিলেন তিনি এর নাম দিয়েছিলেনকিটোজেনিক ডায়েট। তার এই ধারণা থেকে পরবর্তী প্রায় এক দশক  কিটোজেনিক ডায়েট শিশুদের এপিলেপ্সী বা মৃগীরোগের চিকিৎসায়  থেরাপি ডায়েট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। কিন্তু, পরে মৃগীরোগের চিকিৎসার ঔষধ আবিষ্কার হওয়ায় এর ব্যবহার কমতে থাকে। বর্তমানে এসে এই কিটো ডায়েট তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তবে জটিল কোন রোগের থেরাপি হিসেবে নয় বরং ওজন কমাতে। পর্দায় কাজ করা সেলিব্রেটি থেকে মাঠের খেলোয়াড়দের কেও দেখা যায় কিটো ডায়েট করতে। এমন কি  সামন্য একটু ওজন বাড়লেই অনেকে শখের বসে কিটো ডায়েট চার্ট ফলো করা দেয়া শুরু করে দেয়। যা কিনা একদম ঠিক নয়। 

কিটো ডায়েটের প্রকারভেদ

কিটো ডায়েটে খাবার গ্রহণের উপর ভিত্তি করে কিটো ডায়েটকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে,

১। ষ্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েট: এটি খুব কম কার্ব, মাঝারি প্রোটিন এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার। এই কিটো ডায়েটে প্রায় ৭০% ফ্যাট, ২০% প্রোটিন এবং ১০% কার্বহাইড্রেট থাকে।

২। সাইক্লিকাল কিটো ডায়েট: এই ডায়েটে উচ্চতর কার্বোহাইড্রেট রিফিডের সময়কাল অন্তর্ভুক্ত থাকে। ডায়েটে থাকা অবস্থায় আপনি নির্দিষ্ট মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে পারবেন।  এই ডায়েটে সপ্তাহে ৫ দিন স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েট ফলো করা হয় এবং বাকি ২ দিন হাই কার্ব দেয়া হয়।

৩। টার্গেটেড কিটো ডায়েট: এই ধরনের কিটো ডায়েটে শারীরিক পরিশ্রমের ধরণ অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট যোগ করা হয়। যদি আপনার পারশ্রমের মাত্রা বেশি হয় তবে শর্করা গ্রহণ করতে পারবেন । কারণ এতে পরিশ্রেমের কারণে শর্করা দেহে জমা হতে পারবে না।

৪। হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট: এটা অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েটের মতোই তবে এখানে ফ্যাট কমিয়ে প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রোটিন ৩৫% এর মত থাকে এবং কার্ব থাকে ৫%।

এই চার ধরণের কিটো ডায়েটের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডায়েট প্লান হলো ষ্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েট। এখানে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ কম হওয়াতে এটি বেশ কার্যকর বিধায় এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অনেকে আবার হাই প্রোটিন কিটো ডায়েট করে থাকেন এটিও বেশ জনপ্রিয় কারণ এতেও কার্ব এর মাত্রা কম থাকে। অপরদিকে সাইক্লিকাল কিটো ডায়েট বা টার্গেটেড কিটো ডায়েট আরও উন্নত পদ্ধতি এবং প্রাথমিকভাবে বডি বিল্ডার বা ক্রীড়াবিদগণ ব্যবহার করে থকেন। এখানে আমরা ষ্ট্যান্ডার্ড কিটো ডায়েট এর ডায়েট চার্ট নিয়ে আলোচনা করবো।

কিটো ডায়েট চার্ট

কিটো ডায়েট করার জন্য এর নিয়ম অনুসরণ করা অতি গুরুপূর্ণ। কারণ এই ডায়েটে থাকা অবস্থায় যদি আপনি কিটো ডায়েট চার্ট ফলো না করেন তবে তা কোন কাজে দিবে না। তাই যদি আপনি ঠিক করেন যে, ওজন কমানোর জন্য কিটো ডায়েট করবেন তবে অবশ্যই কিটো ডায়েট চার্ট ফলো করে খাবার গ্রহণ করবেন। আর কিটো ডায়েট  শুরু করা আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে শুরু করবেন। 

শুরুতেই বলা হয়েছে কিটো ডায়েট সুপার লো-কার্ব ডায়েট। তাই এখানে যে সকল খাবারের কথা বলা হবে তাতে অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট পরিমাণ খুব সামন্য মাত্রায় থাকবে।

কিটো ডায়েট চার্ট ফলো করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ
ডায়েট চার্ট ফলো করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

যে সকল খাবার খাওয়া যাবে না

শুরুতে আমরা যে সব খাবার খাওয়া যাবে না তা সম্পর্কে একটু ধারণা নয়ে নেই । বিশেষজ্ঞদের মতে কিটো ডায়েটে নিচের খাবার গুলো খাওয়া যাবে না।

১. চাল খাওয়া যাবে না। অর্থাৎ চাল জাতীয় বা চাল থেকে তৈরি কাছু খাওয়া যাবে না। কারণে কার্বোহাইড্রেট এর অন্যতম উৎস চাল। ( ভাত, চাউলের রুটি, চাল দিয়ে বানানো দ্রব্যাদি)

) চালের মতো গমের তৈরি সব কিছু খাওয়া বাদ দিতে হবে যেমন, রুটি, পাওরুটি, বিস্কুট যে কোন প্রকার, গম থেকে আসে সেগুলো খাওয়া ডায়েট করাকালীন বন্ধ রাখতে হবে।

) ডাল খাওয়া ও নিষেধ করা হয়েছে। তাই কোন প্রকার ডাল খেতে পারবেন না। মটরশুটি বা শিম জাতীয় খাবার ও খাওয়া যাবে না।

) শর্করার উৎস এমন কোন সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আলু, মিষ্টি আলু, গাছ আলু বা আলুর মতো অন্যান্য সবজি, যা শর্করা জাতীয় সবজি যেমনমূলা ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।

) আপনি যদি মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রেমি হন তবে কিটো ডায়েট করার সময় চিনির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ডায়েট করা সময় চিনি বা চিনি দিয়ে তৈরি যেকোন ধরণের খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। 

) দুধ খাওয়া বাদ দিতে হবে কিছু দিন। এমনকি দুগ্ধজাতীয় যেকোন ধরণের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

) মিষ্টি ফলমূল মধু খাওয়া যাবে না

) সাধারণ তেলে রান্না করা কিছু খাওয়া যাবে না। সয়াবিন তৈল, সূর্য মুখী তেল, রাইস ব্যান ওয়েল, ক্যানোলা ওয়েল ইত্যাদি দিয়ে রান্না করা খাবার গ্রহণ নিষেধ।

) ফার্মের মুরগি খাওয়া নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যে মুরগিগুলোকে খাবার হিসেবে  টেনারির বর্জ্য থেকে উৎপাদিত খাদ্য খাওয়ানো হয় সেগুলো খাওয়া যাবে না। 

১০) গরুর মাংস খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে যে গরু বা ষাঁড় গুলো বিভিন্ন ফার্মে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোটা তাজা করা হয়। গরুর মতো  খাসির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

১১) কিছু মসলা বা সস খাওয়া যাবে না। যেমন: বারবিকিউ সস, মধু সরিষা, তেরিয়াকি সস, কেচাপ ইত্যাদি।

১২) খাবার তালিকায় চর্বি থাকলেও  অস্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া যাবে না। যেমন, প্রক্রিয়াজাত উদ্ভিজ্জ তেল, মেয়োনিজ ইত্যাদি।

১৩) অ্যালকোহল জাতীয় কিছু খাওয়া যাবে না। তাই এ সময় বিয়ার, ওয়াইন, মদ, মিশ্র পানীয় থেকে দূরে থাকুন

যে সকল খাবার খাওয়া যাবে

) সব ধরনের সবুজ শাক খেতে পারবেন, সবজি খাওয়া যাবে তবে যেগুলো নিষেধ করা হয়েছে তা বাদ দিয়ে।৷ (গাজর, কচি সবুজ মিষ্টি কুমড়া খেলে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। তবে না খাওয়া ই উত্তম)

) টক জাতীয় বিভিন্ন ফলমূল খেতে পারবেন। যেমন, জলপাই, আমলকী, কচি ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া যাবে। 

) যে কোন ধরণের মাছ খেতে পারবেন৷ তবে  তেলযুক্ত দেশীয় মাছ খেলে ভালো হয়। কারণ আমাদের কিটো ডায়েটের লক্ষ্য হলো ফ্যাট বেশি গ্রহণ করা। তাই পাঙ্গাস, বোয়াল, ইলিশ সরপুঁটি, ব্রীগেড, গ্রাসকার্প, বাইম মাছ  তৈলাক্ত বা সাগরের মাছ নিয়ম করে খেতে হবে।

) বাড়িতে পালন করা গরু এবং খাসির মাংস খাওয়া যাবে তবে ইঞ্জেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা গরু বা খাসি নয়। ঘাস, লতা পাতা বা খড় কুটো খেয়ে লালিত পালিত গরু-খাসির মাংস খাওয়া যাবে তবে বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না।

) গরু, বা খাসির পায়া খেতে পারবেন। এগুলো এই সময়ে খুবই উপকারী খাবার৷ তবে খাওযার সময় সাবধান, বেশি খাওয়া যাবে না।

) দেশি মুরগি বা হাঁসের ডিম খেতে পারবেন৷ ফার্মের ডিম ও খাওয়া যাবে তবে বাড়িতে পালিত হাঁস মুরগির ডিম ভালো। ওমেগা-৩ ডিম খাওয়া বেশি ভালো।

) মাছের ডিম খেতে নিষেধ নেই তাই এগুলো নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন।

) ঘি, অর্গানিক বাটার এগুলো খাওয়া যেতে পারে। 

৯) সাধারণ রান্নার তেল খাবারে ব্যবহার নিষেধ থাকলেও এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল, MCT ওয়েল, অর্গানিক Extra virgin cold pressed কোকোনাট ওয়েল এগুলো দিয়ে রান্না করে খেতে পারবেন। যদি পারেন বাসায় তৈরি করা হলে ভালো হয় ৷ 

১০) আমাদের টার্গেট যেহেতু খাবারে চর্বি বেশি থাকবে, তাই বাদাম খেতে পারেন। চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, ইত্যাদি যেকোন ধরণের বাদাম খেতে পারবেন ৷ বাদাম ব্লেন্ড কর উপরে উল্লেখিত নারিকেল তেল দিয়ে পিনাট বাটার বানিয়ে খেতে পারেন৷ তবে সুস্বাদু হওয়ার খাওয়ার সময় মাথায় রাখতে হবে আপনি ডায়েট করছেন।

১১) আপনি যদি চা প্রিয় হন তবে দুধ চিনি ছাড়া রং চা বা কফি খেতে পারবেন।

এই হলো আপনার প্রাথমিক কিটো ডায়েট চার্ট এর খাবার তালিকা। তাই ডায়েট করার সময় এগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

 কিটো ডায়েটে যে সকল সবজি খাবেন
কিটো ডায়েটে যে সকল সবজি খাবেন

যেভাবে কিটো ডায়েট শুরু করবেন

যদি আপনি সিদ্ধান্তে আসেন যে ওজন কমাবেন, কিটো ডায়েট চার্ট ফলো করবেন তবে খাবারের সময় নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া সঠিক সময়ে সঠিক খাবার গ্রহণ করাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আপনি প্রধান খাদ্য শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন তাই আপনারে সময় অনুযায়ী খাবার বন্টন করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখান থেকে একদিনের খাবার বন্টন আপনার জন্য বেশ উপকারে আসবে। 

সকালের নাস্তা

  • যারা সকাল সকাল খাবার গ্রহণ করা ভালো। যাদের সকালে অভ্যাস তারা সকাল ৮-৮.৩০ এর মধ্যে খেয়ে নিবেন। তবে অবশ্যই ১০-১০.৩০ এর বাইরে যাওয়া উচিত নয়। 
  • সকালের নাস্তাটা দুধ চিনি ছাড়া এককাপ চা দিয়ে শুরু করতে পারেন। চয়ের মধ্যে আদা, লেবু এবং অল্প পরিমাণ লবন দিবেন।
  •  কুসুম গরম পানির সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বা কোকনাট ভিনেগার খেতে পারেন ।
  • হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে
  • অ্যাভোকাডো, সালসা, মরিচ, পেঁয়াজ এবং মশলা সহ অমলেট খেতে পারেন
  • টমেটো সঙ্গে সবজি এবং ডিম মাফিন খাওয়া যেতে পারে।
  • মাশরুমের সাথে ডিম পোচ খাওয়া যেতে পারে।

তালিকা থেকে পছন্দ অনুযায়ী খাবার গ্রহন করতে পারেন

 দুপুরের খাবার

  • দুপুরের খাবারে তুলনামূলক ভারী খাবার গ্রহন করতে হবে। কারণ দুপুরের খাবার ই আপনার পুরো দিনের প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবে। 
  • দুপুরের খাবারের সময় হলো যারা সকালে ৮-৮.৩০ এর মধ্যে সকালের নাস্তা করেছেন তারা দেড়টার সময় খেয়ে নিবেন,  এবং যারা ১০-১০.৩০ এ সকালের নাস্তা করেছিলেন তারা অবশ্যই ২.৩০ এর মধ্যে খেয়ে নিবেন।
  • দুপুরের খাওয়ার আগে গ্যাসের সমস্যা কমাতে  এবং চর্বি কমাতে  অবশ্যই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খাবেন। 
  • দুপুরের খাবার রান্নার ক্ষেত্রে তেলের বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। যে খাবারই রান্না করেন না কেন তা অবশ্যই এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল দিয়ে রান্না করবেন।যাই রান্না করেন না কেন এই তেল দিয়েই করবেন। 
  • শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে। তবে রান্না করা সবজি সিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যত কম সম্ভব সেদ্ধ করা যায়। এতে করে সবজির পুষ্টিগত মান কমার কোন সমস্যা হয় না। 
  • মাছ-মাংস,  শাক-সবজি,  মাংসের ক্ষেত্রে খুবই পরিমিত মাত্রায় দেশি মুরগি, উল্লেখিত গরুর মাংস ইত্যাদি খেতে পারেন। তবে মাছ বা মাংসে দুটো একসাথে খাওয়া যাবে না।
  • ঘি দিয়ে ভাজা ডিম ইত্যাদি রাখতে পারেন এছাড়াও ঘি’য়ে ভাজা বাদামের সাথে বাটার রাখতে পারেন।এক দিনে সর্বোচ্চ ছয়টা ডিম কুসুম সহ খেতে পারবেন। কারণ ডিম প্রোটিন এবং ভালো ফ্যাটের উৎস তবে শুধু দুপুরেই ছয়টি ডিম খাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
  • খাবারের সাথে  টমেটো, গাজরসহ শসা বা শসার সালাদ অবশ্যই রাখবেন।

বিকেলের নাস্তা

বিকেলের নাস্তা খাওয়াটা সম্পূর্ণ আপনার ক্ষুধার ওপর নির্ভর করছে। যদি বেশি ক্ষুধা লাগে তবে বিকেলে হালকা খাবার খেতে পারেন। বিকেলের খাবারে চা, বাটার কফি এবং বাদাম খেতে পারেন। এছাড়া বিকেলের নাস্তায় উল্লেখিত পিনাট বাটার তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।

রাতের খাবার

  • রাতের খাবার ঠিক আটটার মধ্যে শেষ করবেন।  এর পরে পানি ছাড়া আর কিছুই খাবেন না।
  • দুপুরের মতো রাতেও  খাবারের আগে ভিনেগার মিশিয়ে এক গ্লাস পানি পান করবেন।
  • দুপুরের খাবারের মতোই রাতের খাবার সারবেন। তবে রাতের খাবার খুব ভরপেট খাবেন না। রাতে ভরপেট না খাওয়াই উত্তম। পরিমিত খাবেন। 

এই গেলো একদিন আপনি কী কী খাবার গ্রহণ করবেন। ডায়েট করার সময় আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে খাবার খেতে হবে। কিটো ডায়েট চার্ট ফলো না করলে আপনার কোন লাভ হবে না। 

কিটো ডায়েট টিপস এবং ট্রিকস

কিটো ডয়েট শুরু করা আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ আমরা ভাত চাল বা গমের উপর নির্ভরশীল তাই। হঠাৎ করে এগুলো ছেড়ে অন্য ধরণের খাবার গ্রহণ করাটা বেশ কষ্টসাধ্য। তাছাড়া রুচির ও একটা ব্যাপার আছে এখানে। তাই শুরুতে কিভাবে অভ্যস্ত হবেন তা নিয়ে বেশ কিছু কৌশল শেয়ার করছি। যাতে করে শুরুতে ভোগান্তি পোহাতে না হয়।

১) কিটো ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত খাবারের লেবেলগুলির (FOOD LABELS) সাথে পরিচিত হয়ে নিন। কোন খাবারে কী পরিমাণ চর্বি, কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার রয়েছে তা নির্ণয় করুন। এরপর পছন্দের খাবারগুলো আপনার ডায়েটের অন্তর্ভুক্ত করুন।

২) আগে থেকেই খাবারের পরিকল্পনা করা আপনার জন্য উপকারী হবে। এতে করে আপনার অতিরিক্ত অর্থ এবং সময় দুটোই বাঁচবে।

৩) বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফুড ব্লগ, অ্যাপস ইত্যাদিতে কিটো ডায়েট রেসিপি এবং খাবারের ধরণ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। যেখান থেকে আপনি নিজের মতো করে খাবার মেনু তৈরি করতে পারেন।

৪) আপনার যদি কিটো খাবার তৈরি করতে সমস্যা হয় তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কিটো-ফুড অর্ডার করতে পারেন। এছাড়া সময়ের ঝামেলা হলে হিমায়িত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

৫)  সামাজিক কোন অনুষ্ঠান বা বন্ধুদের সাথে কোথাও গেলে আপনি নিজের খাবার সাথে নিয়ে যেতে পারেন। যা আপনার কিটো-ফুড গ্রহণ করা আরো সুবিধাজনক করে তুলবে। 

বাইরে কিটো-ফুড খাবার কৌশল

আপনি কিটো ডায়েট করাকালীন যদি বাইরের খাবার খেতে চান তবে বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ এখন অনেক রেস্টুরেন্ট কিটো ফুড তৈরি করে থাকে। যদি একান্তই আপনার বাইরের খাবার খেতে হয় তবে নিচের খাবারগুলো খেতে পারেন,

  • মাংস বা মাছ ভিত্তিক খাবার অর্ডার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে এগুলো কিটো-ফ্রেন্ডলি খাবার কিনা। শাক-সবজির দ্বারা উচ্চ-কার্ব যুক্ত খাবারকে প্রতিস্থাপন করতে পারেন।
  • বাইরের খাবারের জন্য ডিম জাতীয় খাবার সব থেকে কিটো-ফ্রেন্ডলি। তাই ডিম পোচ বা অমলেট অর্ডার করতে পারেন। 
  • যদি সম্ভব হয় বান-লেস (Bun Less) বার্গার খেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি তেলে ভাজা উপাদানের বদলে সবজি নিতে পারেন। সাথে বেশি পরিমাণে অ্যাভোকাডা( avocado), পনির বা ডিম যোগ করতে পারেন।
  • ম্যাক্সিকান রেস্তোঁরায় গেলে অতিরিক্ত পনির, গুয়াকামোল(guacamole), সালসা(, salsa) এবং টক ক্রিম এর তৈরি যেকোন ধরণের মাংস খেতে পারেন।
  • ডেজার্ট প্রিয় হলে একটি পনির বা berries এর সাথে ক্রিম দিয়ে তৈরি কোন কিছু গ্রহণ করতে পারেন (mixed cheese board or berries with cream) জন্য জিজ্ঞাসা করুন।
বার্গার
বার্গার

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সেগুলো থেকে উত্তরণ

কিটো ডায়েট চার্ট ফলো করার মাধ্যমে আপনি আপনার নিয়মিত খাদ্যভাসে পরিবর্তন করে খাবার গ্রহণ করায় বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাই সেগুলো দেখা দিলে ভয় পাবার কারণ নেই। যে যে ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে পারেন,

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

উত্তরণ

এগুলো খুবই সাধারণ। তাই এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য যা যা করতে পারেন,

  • আপনি শুরুতে নিয়মিত কম কার্ব ডায়েট চেষ্টা করতে পারেন। আপনি পুরোপুরি কার্বোহাইড্রেট এ থেকে নির্ভরশীলতা কমানোর আগে এটি আপনার শরীরকে কার্বহাইড্রেট এর চাহিদা থেকে বের হয়ে চর্বি পোড়াতে শেখাতে পারে।
  • কেটোজেনিক ডায়েট আপনার শরীরের পানি এবং খনিজ পদার্থের ভারসাশ্যে পরিবর্তন করতে পারে, তাই আপনার খাবারে লবণ বেশি ব্যবহার করা বা খনিজ পরিপূরক খাবার গ্রহণ করা উপকারী। ডাক্তারের সাথে কথা বলে  আপনার পুষ্টির চাহিদা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
  • শুরুতে আপনাকে ভরপেট খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ক্যালির পরিমাণে খুব বেশি কমাবেন না।
  • আপনার যদি সমস্যা খুব বেশি হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বড় ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন।

কিটো ডায়াটের সময় যে বিষগুলো মানা জরুরি

১) সকালে ঘুম থেকে ওঠতে হবে। নিজ ধর্মানুসারে প্রার্থনা করবেন। কারণ নামাজ পড়া বা যোগাসন করা বেশ উপকারী। এর পর হাটতে বের হবেন। যদি বয়স বেশি হয় তবে স্বাভাবিক গতিতে হাটবেন, বয়স কম হয়ে জগিং করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে খুব যাতে খুব বেশি হাঁপিয়ে না ওঠেন। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী হাটুন বা জগিং করুন। খালি পেটে হাটলে ফ্যাট বার্ণিং সহায়ক হয়।

) আমাদের রাতে দেরী করে ঘুমানোর যে বদ অভ্যাস রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাতে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে ঘুমাতে হবে। আপনি জানলে অবাক হবেন যে,  রাত দশটা থেকে দুইটার ভেতর আমাদের শরীরে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়৷ ফ্যাট বার্নিং  এর জন্য এই হরমোন গুলো সহায়তা করে থাকে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস না করলে কিটো ডায়েট করে কোন ফলাফল নাও পেতে পারেন। 

৩) শরীরের মেদ কমানোর জন্য শুধু খাবারে পরিবর্তন করলে চলবে না। সাথে বিভিন্ন যোগাসন বা ইয়োগা করতে হবে। তাই ইয়োগা করার অভ্যাস গড়ে তুলন। 

৪)  আপনি রোজা বা উপবাস করতে পারেন। স্বাভাবিক ভাবে রোজা বা উপবাস যেভাবে করেন সেভাবে করার চেষ্টা করুন। যদি একেবারে খালি পেটে করতে অসুবিধা হয় তবে শুধু পানি পান করতে পারেন। তবে একেবারে খালি পেটে করা উত্তম।

) রোজা বা উপবাস ভাঙার সময় আপনার খাবার তালিকায় থাকা বাদাম, মাখন এবং শসা খেতে পারেন৷ এছাড়া অন্যান্য সালাদ কিংবা টকজাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে।

) রাতের খাবারের কথা শুরুতেই বলা হয়েছে। রাতের খাবারের নিয়ম মেনে চলতে হবে।

) হঠাৎ করে ফাস্টিং করো শুরু করলে মাথা ঘুরা বা দুর্বলতা দেখ দিতে পারে৷ সেক্ষেত্রে সামান্য লবণ মেশানো পানি খাবেন প্রতিদিন৷  প্রতিদিন একটি কচি ডাব খাওয়া খুব উপকারি।

) যতগুলো ফাস্টিং করতে পারবেন আপনার জন্য ওজন কমানো তত সহায়ক হবে। তাই যত বেশি সম্ভব রোজা বা উপবাস করার চেষ্টা করুন। 

১০যদি নিয়মিত রোজা রাখা কষ্টকর হয় তবে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন খালি পেট বা ওয়াটার ফাস্টিং করতে পারেন।

১১) বাইরের বা খোলামেলা পরিবেশের খাবার একেবারে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে কোন উপকারে আসবে না। 

১২)  সকালে সূর্যের আলোয় কিছু সময় থাকার চেষ্টা করুন। 

১৩)  রাতে ভালো ঘুম হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই। রাতে বিছানায় যাওয়ার অন্তত দুই ঘন্টা আগে সব ধরণের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। 

১৪) মশলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাহিরের গুলো পরিহার করার চেষ্টা করুন। নিজেরা মেশিনে মশলা ভাঙিয়ে ব্যবহার করা উত্তম। 

১৫) হাসিখুসি থাকুন, চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। কারণ চিন্তা ভাবনা সুস্থতার অন্তরায়। আর এই সময়টা শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কিটো ডায়েট কতদিন করতে হয়?

কিটো ডয়েট মূলত স্বল্প সময়ে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে সমাদৃত। তাই এটি  দীর্ঘ সময় করার ফলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ এতে স্বাভাবিক খাবারের ব্যাঘাত ঘটিয়ে নির্দিষ্ট ধরণের খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে করতে হয়। আর দীর্ঘ সময় ধরে কিছু নির্দষ্ঠি খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সব ধরণের নিয়ম অনুসরণ করলে ১৫- থেকে ২০ দিনে কিটো ডায়েট থেকে ওজন কমানো সম্ভব।

তবে আপনি যদি খুব বেশি পরিমাণে ওজন কমাতে যান তবে দুই থেকে চার সপ্তাহের বেশি কিটো ডায়েট করা উচিত নয়। তবে পরামর্শ হলো আপনার অবস্থা অনুযায়ী ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কতদিন কিটো ডায়েট করবেন তা ঠিক করা। সব থেকে ভালো হয় যদি কিটো ডায়েট করার সময় নিয়মিত ডাক্তারের সাথে কথা বলে পরামর্শ গ্রহণ করা। নিজে নিজে কিছু করতে গিয়ে অশুভ কিছু বয়ে না আনাই উত্তম।

কিটো ডায়েটর উপকারিতা

আমরা শুরুতেই জেনেছি যে কিটোজেনিক ডায়েট মৃগীরোগের মতো স্নায়বিক রোগের চিকিৎসার জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন এ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার পর গবেষকরা দেখেছেন এটি বিভিন্নভাবে উপকারী হতে পারে।

১) হৃদরোগ এর জন্য, কিটো ডায়েট শরীরের চর্বি, এইচডিএল (ভাল) কোলেস্টেরলের মাত্রা, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মতো ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

২) ক্যান্সার, কিটো ডায়েট বর্তমানে ক্যান্সারের অতিরিক্ত চিকিৎসা হিসাবে গবেষনা করা হচ্ছে, কারণ এটি টিউমারের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

৩) আলঝেইমার রোগ(Alzheimer’s disease), কিটো ডায়েট আলঝাইমার রোগের লক্ষণ কমাতে এবং এটি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৪) পারকিনসন রোগ, এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে তবে এতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে যে ডায়েট পারকিনসন্স রোগের লক্ষণগুলো নিরাময় করতে কাজে আসছে

৫) পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম, কিটো ডায়েট ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে,যা পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ।

৬) মস্তিষ্কের আঘাত, কিছু গবেষণায় দেখা যায় কিটো ডায়েট মানসিক আঘাতজনিত মস্তিষ্কের আঘাতের সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। 

এগুলো প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হলেও শতভাগ পরীক্ষিত নয়। তাই এই সব রোগ কিটো ডায়েট করলে নিরাময় বা উপসম হবে তা ভাবার কোন অবকাশ নেই। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়, কিটো ডায়াটে এগুলোর মাত্রা কিছুটা 

কিটো ডায়েটে বাদাম
কিটো ডায়েটে বাদাম

কিটো ডায়েট এর ক্ষতিকর দিক

কিটো ডায়েট যদি আপনার স্বাস্থ্যের সাথে খাপ না খায় কিংবা আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে কিটো ডায়েট করেন তবে এ থেকে বিভিন্ন ধরণের দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা হতে পারে। ডা. ইসরাত জাহান চৌধুরী
এম. ফিল (ফিজিওলজি), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ট, ঢাকা জানান, যে কিটো ডায়টের প্রভাবে আমাদের এ ধরণের সমস্যা হতে পারে,

 ১) দীর্ঘদিন কিটো ডায়েটের ফলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। 

২)  কিটো ডায়েটে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয়। উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া ব্রেইনের জন্য ক্ষতিকারক।

৩) অতিরিক্ত কিটোন বডি রক্তে Acidosis করে যা হাড় ক্ষয়ের অন্যতম কারন। ফলে হাড় দুর্বল এবং হাড় ভাঙ্গার সম্ভাবনা দেখা যায়। 

৪) দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাট গ্রহণের কারণে রক্তের কোলেষ্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যায় যা হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। 

৫)  ডায়বেটিসের ক্ষেত্রে কিটো ডায়েটে উপকার পেয়ে ঔষধ বন্ধ করে দেন অনেকে। তবে দেহের অতিরিক্ত কিটোন বডি রক্তের নরমাল pH ব্যালান্স ক্ষতিগ্রস্থ করে। 

৬) টিনেজ মেয়েরা নিজেদের জিরো ফিগার করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে না বুঝে এই ডায়েট শুরু করে। ফলে পুষ্টির অভাবে পিরিয়ডের সমস্যা থেকে শুরু করে হরমনাল ইমব্যালান্সের মত স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন কি বাচ্চা ধারণ ক্ষমতাও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।

৭) গর্ভাবস্থায় কিটো ডায়েট করলে ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এছাড়াও যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন অথবা মেনোপজ স্টেজে আছেন তাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু কিটো ডায়েট নিরাপদ নয়।

যেসব বিষয়ে নজর রাখা উচিত

যারা কিটো ডায়েট শুরু করতে যাচ্ছেন বা ইতিমধ্যে শুরু করেছেন তারা নিম্নের বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন

  • আপনার অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ খুজে বের করতে হবে। যদি কোন রোগের কারণে ওজন বাড়ে তবে রোগের চিকিৎসা নিন। আর যদি অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের জন্য ওজন বাড়ে তবে তা কমিয়ে দিন। আপনার কিটো ডায়েটের দরকার নেই।
  • আপনার ওজন আপনার বয়স, উচ্চতা ও লিঙ্গ ভেদে কেমন হওয়া উচিত তা বের করুন। যদি কিছু বেশি হয় তবে নিয়মিত ব্যয়াম বা পরিশ্রমের কাজ করুন। আপনি কিটো ডায়েট করতে যাবেন না।
  • আপনি যদি শারীরিক ভাবে সুস্থ না হন তবে নিজে নিজে বা অনলাইন দেখে ওজন কামানোর জন্য কিটো ডায়েট করবেন না। শুরুতে ডাক্তার দেখান, পরামর্শ নিন। 
  • কিটো ডায়েট কে সাধারণ কোন বিষয় হিসেবে ভেবে হুট করে কিটো ডায়েট করতে যাবেন না, ব্লাড প্রেশার, সুগার, লিভার ফাংশন টেস্ট, থাইরয়েড টেস্ট, লিপিড প্রফাইল, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার দেহ এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে  কি না।
  • কিটো ডায়েট করাটা ব্যয় বহুল তাই শুরু করার আগে ভেবে নিবেন যে এর সামর্থ্য আপনার রয়েছে কিনা, অযথাই অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু করতে যাবেন না।
  • যদি মনে হয়, স্বাভাকিক ব্যায়াম অতিরিক্ত খাবার কমিয়ে যদি ওজন কমানো সম্ভব হয়ে তবে ভুলেও এর চিন্তা করতে যাবেন না।
  • কিটো ডায়েট করলে ভারী এক্সারসাইজ করতে যাবেন না, স্বাভাবিক হাটা চলা জগিং ও অল্প পরিশ্রমের কাজ করুন।

পরিশেষে

বলা হয় স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই স্বাস্থ্যের সুরক্ষা করা সুখী জীবন যাপনের পূর্বশর্ত। তাই আমাদের সব সময় আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওযা উচিত। শরীরের অতিরিক্ত ওজন যেমন ভালো নয় তেমন কম ওজনও ভালো হয়। তাই দেহের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিভিন্ন বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।

নিয়মতি সাধারণ ডায়েট করেও ওজন কমানো যায়। তবে কিটো ডায়েট করে একটু দ্রুত ওজন কমানো যায় এটাই মূল পার্থক্য। তাই ডায়েট শুরু করার পূর্বে সবদিক বিবেচনা করে ডায়েট করা উচিত। বিশেষ করে টিনেজ মেয়ে বা ছেলেদের এ বিষয়ে সচেতেন থাকা দরকার।

কারণ সামান্য ওজন বেশি কিছু না। তাই যদি আপনার ওজন অতিরিক্ত বেশি হয়ে থাকে আর কম সময়ের মধ্যে ওজন কমানো দরকার হয় তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তবেই কেবল কিটো ডায়েটের কথা মাথায় আনবেন।

না হলে ওজন কমানোর জন্য স্বাভাবিক কিছু নিয়ম অনুসরণ করা, ব্যায়াম করা ও খাবার নিয়ন্ত্রণ করলেই আপানি সুফল পাবেন। আশাকরি এখন আপনি কিটো ডায়েট আপনার নিয়ে সব ধরণের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। এবার নিজের চাহিদা মতো কিটো ডায়েট শুরু করতে পারেন।

তথ্যসূত্র:

১) https://www.healthline.com/nutrition/ketogenic-diet-101#risks
২) https://www.webmd.com/diet/ss/slideshow-ketogenic-diet
৩) Somoy Tv News: https://cutt.ly/SRNW3FN
৪) এন্টারটেইনমেন্ট টুডে: https://cutt.ly/nRNEtms
৫) https://roar.media/bangla/main/health/keto-diet-quick-plan-to-reduce-weight

Author

Leave a Comment

Scroll to Top