আপনি কি জানেন আপেল সিডার ভিনেগার কি? আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা কি? কেনই বা এর এত ব্যবহার? আসলে আপেল সিডার ভিনেগার সম্পর্কে জানে এমন অনেক পাওয়া যাবে। কিন্তু ও এর অজস্র গুনাগুন সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে। স্বাস্থ্য সচেতন লোকদের মধ্যেই আপেল সিডার ভিনেগার বেশি জনপ্রিয়। শরীরের বাড়তি মেদ কমানো থেকে শুরু করে, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, খাবার সংরক্ষণ, সুস্বাস্থ্য, রূপচর্চা, রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করা নিয়ন্ত্রণ সহ অসংখ্য উপকারী গুলাবলী আছে আপেল সিডার ভিনেগার এ। আর বাইরের দেশ গুলোতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহৃত হয় বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন উপায়ে।
এত সব গুণাবলির কথা শুনে আপনারও নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আপেল সিডার ভিনেগার কি? তাহলে আমাদের সাথে জেনে নিন আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা।
আপেল সিডার ভিনেগার
সাওয়ার ওয়াইন বা ভিনেগার হল অ্যাসিটিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন ট্রেস যৌগের এক ধরনের জলীয় দ্রবণ। এটি কখনও কখনও স্বাদযুক্তও হতে পারে। ভিনেগারে সাধারণত আয়তনের ভিত্তিতে ৫-৮% অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। এটি মূলত অ্যাসিটিক অ্যাসিড এর গাঁজন প্রক্রিয়াতে উৎপাদিত হয়।আপেল সিডার ভিনেগার হল স্লাইস করা আপেল থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা রস। এই রসে থাকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। এখানে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইথানলকে অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে। উৎস ও উপকরণের উপর নির্ভর করেও অনেক ধরনের ভিনেগার পাওয়া যায়।

এটি এখন প্রধানত রন্ধনশিল্পে সুগন্ধি হিসেবে, রান্নায় অম্লাীয় উপাদান হিসাবে বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বালসামিক ভিনেগার এবং মল্ট ভিনেগার সহ বিভিন্ন ধরণের ভিনেগার মশলা বা গার্নিশ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। এতে থাকে নানা ধরণের দরকারী পুষ্টি উপাদান। যেমন বি ভিটামিন এবং ভিটামিন সি ইত্যাদি।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সালাদ, ড্রেসিং এবং রান্নায় ও জনপ্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি অনেক সময়ে ঐতিহ্যগতভাবে ওষুধ হিসাবেও কাজে লাগানো হয়। খাবারের পরে রক্তে জমে থাকা শর্করার মাত্রা কমাতেও এটি ব্যপক সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার স্থূলতা, ডায়াবেটিস, অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্স, কিডনিতে পাথর এর মত অন্যান্য অনেক কাজেও ব্যবহৃত হয়।
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা অনেক। আর আপনি বিভিন্ন উপায়ে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারবেন। যেনে নিন আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন-
রান্নায় উপকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগার একটি বহুমুখী উপাদান। রান্নার ক্ষেত্রে যার ব্যবহার ব্যপক। কখনও বা আচার তৈরিতে, কখনও সবজি রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। ভিনাইগ্রেট বা মেরিনেড তৈরি করতে একে অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন। খাবারের স্বাদ পরিবর্তনেও কিন্তু এর ভুমিকে আছে। মোট কথা রান্নার বিভিন্ন সেক্টরে আপেল সিডার ভিনেগার নিঃসন্দেহে ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কোন রান্নায় কিভাবে ব্যবহার করবেন আপেল সিডার ভিনেগার? –
আচার তৈরিতে আপেল সিডার ভিনেগার
আচার তৈরীতে আপেল সিডার ভিনেগার এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। আচারকে বেশিদিন সংরক্ষণ করতেই মূলত আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। টক ফল বা সবজি যেটি দিয়েই আচার তৈরী করা হোক না কেন, বেশ কিছুদিন পরই ফাংগাস বা ব্যকটেরিয়া আক্রমণ করে। বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। আপেল সিডার ভিনেগারে থাকা এসিটিক এসিড এইসব মাইক্রো অর্গানিজম কে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। ফলে খাবারটি বেশি দিন ভাল থাকে ও খাবার উপযোগী হয়। আচার তৈরীতে যেভাবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করবেন-
- যে সবজি বা ফল দিয়ে আচার তৈরি করবেন সেটি ভাল করে ধুয়ে স্লাইস করে নিন
- একটি ছাঁকনি দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন ও এতে লবণ ছিটিয়ে দিন। ৩০ মিনিট এভাবে রাখলে ভালভাবে পানি ঝড়াতে সাহায্য করবে।
- এরপর লবণ ও প্রয়োজনীয় মশলা মিশ্রিত খাবারকে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন
- এরপর দুইটেবিল চামচ ভিনেগার, লবন, চিনি ও পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন
- যে পাত্রে আচার সংগ্রহ করবেন সেখানেও আপেল সিডার ভিনেগার ছিটিয়ে দিতে পারেন

খাবার মেরিনেট করতে
আচার ছাড়াও বিভিন্ন খাবার সংরক্ষণ করতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। খুব দ্রুত ম্যারিনেট করা প্রয়োজন পরলে, সারারাত ধরে ম্যারিনেট করা পসিবল না হলে তখন আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। খাবারের পরিমাণের সাথে সামঞ্জস্য রেখে লবণ ও আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে সংরক্ষণ করা সম্ভব সবজি থেকে শুরু কর মাংসও।
কেক কিংবা বিস্কুট তৈরিতে
অনেক ডেজার্ট আইটেমের একটি সাধারণ উপাদান হল আপেল সিডার ভিনেগার। এটি আসলে কেক বা কুকিজ এ ব্যবহৃত বেকিং সোডার সাথে বিক্রিয়া করে। এ সময়ে কার্বন ডাই অক্সাইড বুদবুদ তৈরি করে। বেকাররা কেক এবং অন্যান্য বেকড পণ্যগুলিকে অতিরিক্ত তুলতুলে করতে ভিনেগার ব্যবহার করে। অনেকে আপেল সিডার ভিনেগার বেছে নেয় কারণ এর আছে খুব মিষ্টি এবং ফলের মত একটা গন্ধ। উপরন্তু, ভিনেগারের খাবারের স্বাদ আনতেও ব্যবহার করা হয়।
অমলেটে আপেল সিডার ভিনেগার
অমলেট তৈরীতেও আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার হয়। আপনি যদি একটু শক্ত ডিম পোচ খেতে চান তাহলে ডিম পোচের সময়ে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এতে ডিমের সাদা অংশ দ্রুত শক্ত হবে। রান্নাও তাড়াতাড়ি হবে।
খাবারের লবনাক্ততা কমাতে
আপনি কি কখনও ভুল করে খাবারে লবণ বেশি দিয়েছেন? চিন্তার কিন্তু কিছুই নেই কারণ আপেল সিডার ভিনেগার খুব সহজেই লবনাক্ততা কমাতে পারে। লবনের ব্যলেন্স ফিরিয়ে আনে। তাই রান্নায় টুকিটাকি ভুলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
ড্রিংকস এর স্বাদ পরিবর্তনে
যেকোনো ড্রিংকসে আপেল সিডার ভিনেগার স্প্লাস যোগ করে ড্রিংকসের স্বাদ পরিবর্তন করতে পাবেন। ব্রেকফাস্ট জুসে সামান্য আপেল সিডার ভিনেগার এড করে নিতে পারেন। এসিডিট সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য সারাদিনের স্বস্তি হতে পারে এটি।
সুস্বাস্থ্যে ভিনেগার এর অপকারিতা
শরীরের নানাবিধ সমস্যার সমাধানে যুগ যুগ ধরে আপেল সিডার ভিনেগার এর ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন রোগ বালাই এর প্রকোপ থেকে বাঁচতে, এবং সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার গুলো জেনে নিন-
ব্যাকটেরিয়া নিধনে আপেল সিডার ভিনেগার
ব্যাকটেরিয়া নির্মূলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আপেল সিডার ভিনেগার। শরীরের কোন স্থানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রামন করলে স্থান এটি ব্যবহার করা হয়। আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে সংক্রমিত যায়গাটি পরিস্কার করা হয়। তাছাড়াও অনেক সময়ে নখের মধ্যে অবস্থান নেয় বিভিন্ন ক্ষতিকর ছত্রাক। এগুলে নিধন করতেও আপেল সিডার ভিনেগার কাজে লাগানো হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে আঁচিল, মেছতা দূর করতে, উকুন, কানের বা গলার ইনফেকশন দূর করতে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে বছরের পর বছরে ধরে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হচ্ছে। খাবার সংরক্ষণ করতে তো এর জুড়ি নেই। বেশি দিন পরে থাকা বিভিন্ন খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায়। আপেল সিডার ভিনেগার এগুলো নির্মূল করতে পারে। ত্বকে অনেক সময়ে ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে ব্রণ ও অনেক র ্যাশ তৈরি হয়। এই সকল ব্যাকটেরিয়া নিরসনে করতেও আপেল সিডার ভিনেগার এর কার্যকরীতা ব্যাপক।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনেগার
আপনি কি ডায়াবেটিস এ ভুগছেন? বা আপনার কাছের কারো ডায়াবেটিস আছে? তাহলে আপেল সিডার ভিনেগার এস সাহায্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় গুলো তো আপনার না জানলেই নয়।
যেসব রোগীর টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে তারা চাইলে আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করতে পারবেন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে রাতের ঘুমের আগে মাত্রা দুই চামচ আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করলে অসাধারণ ফল পাওয়া যায়। এতে করে আপনার শরীরে শর্করা বৃদ্ধির মাত্রা ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। তাছাড়া একজন সুস্থ ব্যক্তিও চাইলে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। তবে অল্প মাত্রায়। এতে করে ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যাবে। তবে গ্রহনের আগে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে বহু লোক অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। অকাল মৃত্যুর একটি বড় কারণ হৃদরোগ। আর হৃদরোগের নানা করণের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হল রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল। রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ যত বাড়ে একজন ব্যক্তির হৃদরোগ আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর হার ও তত বাড়ে। তবে আপেল সিডার ভিনেগার এই হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে খুব ভাল কাজ করে। কারণ এটি রক্তের কোলেস্টেরল এর মাত্রা অনেক টা কমিয়ে দেয়। এবং সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় আপেল সিডার ভিনেগার
ক্যান্সার এখন এমন এক মরনব্যধি যা মানবজাতিকে গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। সময়মত ক্যান্সার নির্ধারণ করতে না পারলে বা চিকিৎসা না করাতে পারলে মৃত্যু সন্নিকটে। তাই ক্যান্সার থেকে আগে থেকেই নিজেকে রক্ষা করতে ব্যাবহার করতে পারেন নানা পদ্ধতি। তার মধ্যে একটি হল আপেল সিডার ভিনেগার। এতে ক্যান্সারের কোষ নিরাময় করার ক্ষমতা আছে। তাছাড়া অনিয়ন্ত্রিত কোষ ও টিউমারের ঝুঁকি কমাতেও আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।
লিভার এর যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার
খাবারে ফর্মালিন, খাবারের অনিয়মের কারণে নানা ধরনের লিভার জনিত সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে আপেল সিডার ভিনেগার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। লিভারের বিভিন্ন রোগ, ক্যান্সার, ইনফেকশন এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করা যায়৷ খাবারের সাথে নিয়মিত স্বল্প পরিমানে আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করলে অবিশ্বাস্য ফলাফল পাওয়া যায়৷ কিন্তু প্রতিদিন বা সপ্তাহে ঠিক কতটুকু ভিনেগার গ্রহন করবেন তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।

এসিডিটি কমাবে আপেল সিডার ভিনেগার
আপনার কি এসিডিটি প্রবলেম আছে? পেটে গ্যাস জমে? তাহলে আপনার ঘরেই পেতে পারেন এর সমাধান। আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করলে মাইল্ড এসিডিটি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এর জন্য এক টেবিল চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন। সকালের নাস্তায় এটি গ্রহণ করলে সবচেয়ে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
পিএইচ ব্যালেন্স
যেসব লোকের শরীরে পিএইচ এর মাত্রা খুবই কম তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক কম। যেকোনো রোগবালাই খুব সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার কিন্তু শরীরের পিএইচ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে
মুখের দুর্গন্ধ দূুর করতে আপেল সিডার ভিনেগার খুবই কার্যকরী। দাঁত ব্রাশ করার সময়ে পেস্ট এর সাথে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার এর সাথে পানি মিশিয়ে গরগরা করলে খুব সহজে মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মুখের ভেতরে ফ্রেশ অনুভব হয়। দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যকটেরিয়া কে মেরে ফেলে এটি দাঁতের যত্ন নেয়।
দেহের ক্লান্তি দূর করতে
সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর একটু রিফ্রেশমেন্ট এর জন্যও আপেল সিডার ভিনেগার এর ভুমিকা আছে। আপনি চাইলে বাইরে থেকে এসে জুস বা ড্রিংকসের সাথে সামান্য আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে রিল্যাক্স ফিল হবে। তাছাড়া অলিভ অয়েল এবং সামান্য আপেল সিডার ভিনেগার একসাথে করে বডি মাসাজ নিতে পারেন, এটি ক্লান্তি দূর করতে ভাল কাজ করে। চাইলে গোসলের পানিকে কুসুম গরম করে এতে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিতে পারেন৷ এটিও ক্লান্তি দূর করতে বেশ কার্যকর।
ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার
ওজন কমাতে অসাধারণ কাজ করে আপেল সিডার ভিনেগার। নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করলে মাসে তিন থেকে চার কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব। এজন্য খাবারের সাথে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। সবচেয়ে কার্যকর হবে যদি প্রতিদিন দুই চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। এটি দ্রুত তলপেটের মেদ কমিয়ে দেয়।
আপেল সিডার ভিনেগার কি, কেন, কিভাবে খাবেন?
রূপচর্চায় আপেল সিডার ভিনেগার
শুধু স্বাস্থ্য রক্ষায় না রূপচর্চায় ও আপেল সিডার ভিনেগার এর প্রচুর ব্যবহার। ঘরে বসে চুল ও ত্বকের যত্নে আপেল সিডার ভিনেগার –
চুল সিল্কি করতে
চুলের জন্য ভাল একটি কন্ডিশনার খুজতছেন? যেটি চুলকে সিল্কি ও শাইনি করবে? তাহলে আপেল সিডার ভিনেগার কিন্তু আপনার জন্য একদম উপযুক্ত চয়েজ হবে। শ্যম্পু করার পরপর ই চুলে আপেল সিডার ভিনেগার ইউজ করলে খুব ভাল ফল পেতে পারেন। এটি মুলত কন্ডিশনার এর বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
খুশকি দূর করতে, চুল পরা কমাতে, চুল ঘন করতে এবং নতুন বেবি হেয়ার গ্রো করতেও এটি খুব ভাল কাজ করে। এজন্য এক কাপ পানিতে তিন চামচ এর মত আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিবেন। এরপর শ্যম্পু করা হয়ে গেলে এটি চুলে স্প্রে করবেন। তাতে সহজেই সিল্কি ও সফট চুল পাবেন।
সুন্দর ত্বক
একটি সুন্দর ও হেলদি ত্বক কে না চায়? ত্বক সুন্দর করতে এর ডেড সেল রিমুভ করতে আপেল সিডার ভিনেগার ইউজ করা যায়। আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকের পোরস গুলে মিনিমাইজ করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। খুব সহজেই ত্বকে কোমল ও গ্লোসি করে তুলে। তুলতুলে নরম ফেস পেতে উপটান বা ফেস প্যাক এর সাথে তরল পদার্থ হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে দেখুন। নিঃসন্দেহে ভাল ফলাফল পাবেন। ত্বক উজ্জ্বল করতেও খুবই ইফেক্টিভ এটি। মোট কথা সুন্দর ও আকর্ষণীয় ত্বক পেতে আপেল সিডার ভিনেগার এর জুড়ি নেই।
পেডিকিওর
পায়ের যত্নেও আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। পেডিকিওর এর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হল এটি। এটি পায়ের ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। কুসুম গরম পানির মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সপ্তাহে দুই দিন ইউজ করতে পারবেন।
ত্বকের পিএইচ বয়ালেন্স করতে
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়ে যায় শুধু পিএইচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই। সিজনাল চেঞ্জ এ যাদের ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স পরিবর্তন হয় তাড়া আপেল সিডার ভিনেগার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
সানট্যান কমাতে
রোদে পোরা ত্বক খুব সহজেই স্কিনে বলিরেখা তৈরি করে। এজিং তাড়াতাড়ি হয়। তাই সানট্যান রিমুভ করতেও আপেল সিডার ভিনেগার ইউজ করতে পারেন। রোদ থেকে এসে এটি অলিভ বা ভা পানির সাথে মিশিয়ে স্কিনে এপ্লাই করতে পারেন।
হলুদ দাঁতের সমাধান
হলুদ দাঁত পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করতেও আপেল সিডার ভিনেগার খুবই কার্যকর। এটি দাতের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং মুখের থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
আফটার শেষ হিসেবে
ছেলেরা আফটার সেভ হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। কারণ বাজারে বিক্রিত কমার্শিয়াল আফটার শেভ এর থেকে এটি ভাল কাজ করবে। কারণ এটি আপনার ত্বকের অয়েল ও পিএইচ ব্যালেন্স এ রাখে
🚫 পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 🚫
- অতিরিক্ত আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন থেকে বিরত থাকুন। এতে আইসোফ্যাগাস, দাঁতে ক্ষয়, স্টোমাক লাইনিং ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
- ভোরে আপেল সিডার ভিনেগার খেলেও একদম খালি পেটে খাবেন না। আগে হাল্কা কোনো খাবার খাবেন
- আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পর অনেক সময় ধরে কিছু না খেয়ে থাকা উচিত নয়।
- আপেল সিডার ভিনেগার সরাসরি খাবেন না। পানি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে মিশিয়ে গ্রহণ করবেন
সুস্বাস্থ্য, রুপচর্চা ও টুকিটাকি ঘরোয়া সমাধানের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা। সঠিক ভাবে এর ব্যবহার করতে জানলে আপনিও নানা কাজে আপেল সিডার ভিনেগার অভিনব ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করি আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহন করলে কোনো রকম ক্ষতির আশংকা থাকবে না। আপনি নির্দ্বিধায় আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা গুলো দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পারবেন।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও কমপ্লেইন করা হবে।
এই ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করুন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।
এই ব্লগের কোন স্বাস্থ বিষয়ক পোস্টের পরামর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবেন, আমরা স্বাস্থ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ না, আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। সুতারাং কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার অবশ্যই আমরা নিবো না। ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।