Last Updated on 8th April 2024 by Mijanur Rahman
আমাদের যোনি শরীরের অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অংশ। তবে আমরা অনেকেই জানিনা কিভাবে গোপনাঙ্গের যত্ন নিতে হয়। সঠিক যত্নের অভাবে নানা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে আমাদের প্রস্রাবের রাস্তায় চুলকানি হতে পারে এবং এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক। কারন আমরা যখন তখন যেখানে সেখানে জরায়ুতে চুলকানি হলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে পারি না। ফলে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। যোনিতে চুলকানি নানা কারণেই হতে পারে।
এ রোগে আক্রান্ত হলে আমরা অনেকেই পাত্তা দিতে চায় না, এমনকি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় না। ফলে আস্তে আস্তে সমস্যা আরো গুরুতর হতে থাকে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ দূর করা সম্ভব, এবং এটি খুবই স্বল্প ব্যয়ের চিকিৎসা।
তো সে যাইহোক, এই লেখাতে আমরা জানবো যোনিতে চুলকানির কারণ, যোনিতে চুলকানি কেনো হয় এবং যোনিতে চুলকানি দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত।
তাহলে দেরী না করে চলুন জেনে নেই যোনিতে চুলকানি দূর করার ঘরোয়া চিকিৎসা কি কি।
যোনিতে চুলকানি কেন হয়?
যোনিতে চুলকানি নানা কারণে হতে পারে, অনেক সময় বিভিন্ন রোগের কারণে আপনার যোনিতে চুলকানি হতে পারে। যেমন নিউরোডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, হারপিস এই ধরনের রোগ হলে মেয়েদের যৌনাঙ্গে চুলকানি হতে পারে।
প্রস্রাবের রাস্তায় চুলকানির সমস্যা বিশেষ করে গরমকালে দেখা দেয় ও সচরাচর টাইট জামা কাপড় পড়লে বা অন্তর্বাস পড়লে যৌনাঙ্গে চুলকানি দেখা দেয়। এছাড়া গরমে পায়ের দুই পাশের ত্বক ঘেমে ঘর্ষণের মাধ্যমে ঘামে চুলকানি হতে পারে। যোনিতে চুলকানির সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে যদি কোন রকম কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য যোনিতে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের কেমিক্যাল পণ্য পাওয়া যায়। আর এই সকল পণ্য না বুঝেই মানুষ ব্যবহার করছে। আমাদের যোনি এমন ভাবে তৈরি যে এটি নিজে নিজেই পরিষ্কার হতে পারে। তাই যোনি পরিষ্কার করার জন্য আলাদা কোন বাজারের কেমিক্যাল পণ্য ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। এগুলো ব্যবহার করার ফলে যোনির ত্বক লালচে হয়ে যায় ফুসকুড়ি ওঠে এবং যোনিতে চুলকানি শুরু হয়।
তাছাড়া আমরা অনেকেই গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করে থাকি, সাবানে ক্ষার থাকে। আমাদের যোনিতে একপ্রকার উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা বাইরের ব্যাকটেরিয়াদেরকে আমাদের যোনিতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
সাবান ব্যবহার করার ফলে সাবানে থাকা ক্ষার আমাদের যোনির উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মেরে ফেলে। ফলে বাইরের ব্যাকটেরিয়া গুলো সহজেই যোনিতে প্রবেশ করতে পারে। এবং এই সকল ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের যোনিতে চুলকানি হয়। নিচে সংক্ষেপে যোনিতে চুলকানি হওয়ার সকল সম্ভাব্য কারণগুলি হলো।
- সুগন্ধি প্যাড এবং লাইনারের অতিমাত্রায় ব্যবহার
- সুগন্ধি টয়লেট পেপার বা টিস্যুর ব্যবহার
- সাবান, জেলের ব্যবহার
- ডিটারজেন্ট
- যোনিতে স্প্রের ব্যবহার
- গর্ভনিরোধক পিল, জেল, কাপ ইত্যাদির ব্যবহার
- ক্রিম, লোশন এবং মলমের নিয়মিত ব্যবহার
যোনিতে চুলকানির লক্ষণ
যোনিতে চুলকানি হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। বিশেষ করে গরমে ঘেমে গেলে এরকম গুলো বেশি দেখা দেয়। চলুন জেনে নিন যোনিতে চুলকানি হলে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে-
- যোনির চারপাশে ফুলে যাওয়া
- যোনিতে ফুসকুড়ি ওঠা
- ত্বক লাল বেগুনি বা হলুদ রং ধারণ করা
- সাদা স্রাব নির্গত হওয়া
- যোনির চারপাশে দুর্গন্ধ হওয়া
- প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া
- যৌন মিলনের সময় ব্যথা পাওয়া
- মিলনের পর অতিরিক্ত চুলকানি হওয়া
রিলেটেডঃ দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, ৩ দিনে দূর করুন চুলকানি । ২০২৩
যোনিতে চুলকানি দূর করার উপায়
যোনিতে চুলকানি দূর করার ঘরোয়া বেশ কিছু উপায় রয়েছে। অনেকেই এই সকল রোগ হলে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। তারা প্রথম অবস্থায় ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন। তবুও যদি কোন সুফল না পান অবশ্যই দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। চলুন যোনিতে চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিন:
নিমপাতা:
আমরা সকলেই জানি নিমপাতা ঔষধি গুন সম্পূর্ণ একটি পাতা। এবং নিম পাতা সকল প্রকার দাদ বা চুলকানি, খোস পাচরা দূর করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বহুকাল আগে থেকেই মানুষ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিম পাতার ব্যবহার করে আসছে।
যোনিতে চুলকানি হলে প্রতিদিন কিছু নিমপাতা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করুন। এভাবে প্রতিদিন নিম পাতার পানি দিয়ে যোনির এলাকা পরিষ্কার করলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলো মরে যাবে।
নারকেল তেল:
চুলকানি দূর করতে নারকেল তেল অসাধারণ কাজ করে থাকে। ২০১৬ সালে একটি গবেষণা থেকে জানা যায় নারকেল তেল যে কোন ছত্রাকের আক্রমণ রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন রাতে নারিকেল তেল মেখে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনেকাংশেই কমে যাবে।
লবণ গরম পানি:
এটি একটি অব্যর্থ মহৌষধ। এমনকি ডাক্তাররাও এটি অনুসরণ করতে বলেন। পানিতে পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে তা গরম করে নিন। এবার এই কুসুম গরম পানি দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার যোনি পরিষ্কার করুন। লবণ পানিতে ব্যাকটেরিয়া বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না। তাই লবণ পানি ব্যবহারের ফলে আপনার যোনিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলো মরে যাবে।
দই:
দইয়ে ল্যাকটবেসিলাস নামক এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়ার কাজ হচ্ছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলা। আক্রান্ত স্থানে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য দই লাগিয়ে রাখুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে দুইবার লাগানোর চেষ্টা করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে যোনির চুলকানি কমে গিয়েছে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার:
ভিনেগার ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সক্ষম, প্রতিদিন এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দুই টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে ওই পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আস্তে আস্তে যোনির চুলকানি দূর হয়ে গেছে।
ঘি:
ঘি চুলকানি দূর করতে দারুন ভাবে সহায়তা করে। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলেন চুলকানি হলে ওই স্থানে ঘি লাগিয়ে রাখলে আস্তে আস্তে চুলকানি দূর হয়ে যায়। এবং যোনির শুষ্কতা দূর হয়। প্রতিদিন যোনিতে একবার হলেও ঘি লাগিয়ে রাখুন। দেখবেন চুলকানি অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।
বরফ:
চুলকানি বা জ্বালাপোড়া থেকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি পেতে বরফ ঘষতে পারেন। এটি আপনাকে তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধেও সাহায্য করবে। তাই তীব্র চুলকানি হলে সেই স্থানে বরফ লাগাতে পারেন।
রিলেটেডঃ সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়, সহজ ও ঘরোয়া সমাধান
যোনিতে চুলকানি দূর করার ঔষধ
যোনিতে চুলকানি দূর করার বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে। তবে এই সকল ঔষধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ গ্রহণই ঠিক নয়। চলুন জেনে নেই যোনিতে চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম।
১. যোনিতে ছত্রাক আক্রমণ করলে সাধারণত এন্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন: miconazole, ketoconazole, tioconazole। আরো বেশ কিছু এন্টিফাঙ্গাল ওষুধ রয়েছে। এই সকল ওষুধ সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন সেবন করতে দেওয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের ডোজ জেনে নিতে হবে। এই ওষুধগুলি যোনিতে অবস্থান করা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। ফলের যোনির চুলকানি দূর হয়ে যায়।
২. যোনিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে সাধারণত এন্টিবায়োটিক ড্রাগস খেতে হয়। ডাক্তাররা আপনার সমস্যা বুঝে আপনাকে এন্টিবায়োটিক ড্রাগস দিবে যা আপনাকে পাঁচ থেকে সাত দিন সেবন করতে হবে।
৩. যোনিতে প্যারাসাইটের সংক্রমণ হলে metronidazole সেবন করতে দেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ক্রিম লাগাতে দেওয়া হয়। যেমন: vaginal clindamycin cream।
৪. চুলকানি তীব্র হলে আক্রান্ত স্থানে lidocaine নামক জেল লাগাতে দেওয়া হয়। এতে সাথে সাথেই আপনি কিছুটা আরাম পাবেন। তবে শুধু এই জেলে কাজ হবে না এর সাথে আপনাকে এন্টিফাঙ্গাল ঔষধও সেবন করতে হবে।
৬. এছাড়াও যোনিতে চুলকানির কারণে জ্বালাপোড়া কমাতে fexofenadine, loratadine খেতে দেওয়া হয়। এবং steroid cream আক্রান্ত স্থানে লাগাতে দেওয়া হয়।
৭. মাসিকের পর চুলকানি হলে ইস্ট্রোজেন সাপোজিটরি যোনিপথে ব্যবহার করতে দেয়া হয়।
এই ওষুধগুলো কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না বা ব্যবহার করবেন না।
রিলেটেডঃ প্রসাবে জ্বালাপোড়া ঘরোয়া চিকিৎসা, কারণ ও লক্ষণ
যোনিতে চুলকানি প্রতিরোধের উপায়
যেকোনো রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। আগে থেকে সতর্ক থাকলে এই ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই আপনারা জেনে গেছেন যোনি পথে চুলকানি কেন হয়। এবার আপনাদেরকে জানাবো যোনিপথের চুলকানির রোগ কিভাবে প্রতিরোধ করবেন:
- সুগন্ধি যুক্ত কোন সাবান বা পণ্য যোনিতে ব্যবহার করবেন না। এই সকল পণ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যাল পদার্থ থাকে। যা যোনিপথে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
- বাজারে বর্তমানে অনেক ধরনের হাইজিন স্প্রে পাওয়া যায়। অনেকেই ভাবেন এ সকল স্প্রে অনেক বেশি উপকারী। মনে রাখবেন আমাদের যোনি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই যোনিতে কখনোই এই ধরনের স্প্রে ব্যবহারের চেষ্টা করবেন না।
- ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকার ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। তারপর বা ব্যায়াম করে ঘেমে যাওয়ার পর দ্রুতই সেই ভেজা কাপড়টি পাল্টে ফেলবেন। এবং যোনি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। তাহলে চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন।
- যোনি সবসময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। শুধুমাত্র পানি দিয়েই পরিষ্কার করবেন। এবং সামনে থেকে পিছনের দিকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন। বিশেষ করে পায়খানার পর। কারণ পায়খানাতে ক্ষতি করে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা সহজেই যোনিতে প্রবেশ করতে পারে। তাই সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করলে এই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না।
- সপ্তাহে এক দুই দিন হলেও দই খাওয়ার চেষ্টা করুন। দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
- অন্তর্বাস হিসেবে সুতি কাপড়ের ব্যবহার করুন। সিল্ক বা যেকোন খসখসে কাপড় পড়া থেকে বিরত থাকুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
সবশেষে
যোনিতে চুলকানি হলে ঘাবড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ সারানো যায়। যোনি অনেক নরম ও ভেজা এবং স্যাঁতসেঁতে থাকার কারণে খারাপ ছত্রাকের আক্রমণ খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই লেখাতে যোনিতে চুলকানি হলে করনীয় উপয়াগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে এইসব সমস্যা ঘরেই সমাধান করা যায়।
যদি তাতেও ভালো না হয় তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। ডাক্তাররা সাধারণত যোনিতে চুলকানি দূর করার কিছু ক্রিম বা ওষুধ, মলম দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সঠিক মলম বা ক্রিম দিয়ে চুলকানি ১/৭ দিনের মাথায় ই দূর করা সম্ভব।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকে আমাদের লেখা যোনিতে চুলকানি হলে কি করা উচিত, বা যোনিতে চুলকানি দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। যদি লেখাটি নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
আজকের মতো এখানেই বিদায়, দেখা হবে আগামী লেখাতে।
তথ্যসুত্রঃ