সাদা স্রাব নিয়ে কপালে ভাজ? জানুন সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় | ২০২৪

সাদা স্রাব

Last Updated on 3rd September 2024 by Mijanur Rahman

মহিলাদের যৌনরোগ গুলোর মধ্যে সাদা স্রাব খুবই সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যা। অনেকে এটাকে রোগ বলে, যা মোটেও সঠিক নয়। সাদা স্রাব মোটেও কোনো রোগ নয়, যোনিপথের স্বাভাবিক অবস্থা। তাই সাদা স্রাব নিয়ে অহেতুক ভয় পাবার কিছু নেই।

তবে আপনার যদি অতিরিক্ত সাদা স্রাব হয় যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি তবে, তাহলে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মতান্ত্রিক চলেফেরার মাধ্যমে সহজেই অতিরিক্ত সাদাস্রাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আমাদের আজকের লেখা সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় নিয়ে ও এ সম্পর্কে বিস্তারিত যা যা আপনার জানা দরকার তার খুঁটিনাটি নিয়ে। এই লেখা শেষে আপনি সাদা স্রাব নিয়ে একটা পরিপূর্ণ ধারণা পাবেন।

তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে নেই মহিলাদের সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়, অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার ঔষধ ও সাদা স্রাব এর ঘরোয়া চিকিৎসা কি কি।

Table of Contents

সাদা স্রাব

সাদা স্রাব কি? এসম্পর্কে বেশিরভাগ মেয়েদের ভালো ধারণা নেই। তবুও সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। যা মোটেও ঠিক নয়। সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া হল যোনিপথের ঘন, সাদা বা হলুদাভ স্রাব। ১২ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মেয়েদের যোনিপথের এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা। মহিলারা যোনিপথে স্রাব অনুভব করলে প্রথমে খুব বিব্রত ও দুশ্চিন্তা বোধ করতে থাকে।

যদিও বেশিরভাগ মহিলারা এটিকে একটি রোগ হিসাবে ভয় পান এবং মনে করেন, সাধারণত এটি কোনো সংক্রমণের লক্ষণ। মাসিকের কয়েকদিন আগে (একজন মহিলার প্রথমবারের মতো তার পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে), পিরিয়ডের ঠিক আগে এবং যৌন কল্পনা বা যৌন উদ্দীপনার সময় যোনিপথ থেকে স্রাব হওয়া স্বাভাবিক।কিছু স্রাব স্বাভাবিক এবং যোনি তৈলাক্তকরণের জন্য অপরিহার্য।

জরায়ু ভেজা রাখার জন্য এই স্রাব খুবই সাধারণ। তবে যোনিপথে সংক্রমণের কারণে স্রাবের পরিমাণ বাড়তে পারে এবং বর্ণ, গন্ধের পরিবর্তন হতে পারে। এই অবস্থাটি বেশ বিব্রতকর। কখনো কখনো দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব নিঃসৃত হয়। কখনো কখনো সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া বিভিন্ন গাইনোকোলজিকাল রোগ এবং বন্ধ্যাত্বের নির্দেশক হতে পারে।

সাদা স্রাবের কারণ

সাদা স্রাব দেখলেই একজন মহিলা কতটা বিব্রত হোন একমাত্র তারাই জানে! ইতস্ততবোধ করে কাউকে বলতে পারে না, খুঁজতে থাকে সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়। সাদা স্রাবে পরিবর্তন কখনো কখনো কোনো কঠিন রোগকেও ইঙ্গিত করে। আর এই পরিবর্তনের পেছনে কিছু কারণও থাকে। যেমন:

  • অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড ব্যবহার
  • ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস, যৌন সম্পর্কের সময় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি
  • সার্ভিকাল ক্যান্সার
  • ক্ল্যামাইডিয়া বা গনোরিয়া (এসটিডি), যৌনবাহিত সংক্রমণ
  • ডায়াবেটিস
  • যৌনাঙ্গে কোনো জেল, ক্যামিকেল বা সাবান ব্যবহার
  • অস্ত্রোপচারের পরে পেলভিক সংক্রমণ
  • পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পিআইডি)
  • ট্রাইকোমোনিয়াসিস (পরজীবী সংক্রমণ)
  • যোনি অ্যাট্রোফি, মেনোপজের সময় যোনির দেয়াল পাতলা হয়ে শুকিয়ে যাওয়া
  • ভ্যাজাইনাইটিস, যোনিপথে বা তার আশেপাশে জ্বালা
  • খামির সংক্রমণ
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব
  • নিম্নমানের খাদ্যভ্যাস
  • হরমোনের ভারসাম্যহীন
  • মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
  • যোনিপথে কোনো আঘাত
  • গর্ভপাত করার সময় জরায়ু বা জরায়ু মুখে আঘাত

অস্বাভাবিক সাদা স্রাব চিহ্নিতকরণ

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় খুঁজার আগে আপনাকে জানতে হবে আপনার সাদা স্রাব স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক। অনেকেই না জেনে শুনে স্বাভাবিক স্রাব নিয়েই দুশ্চিন্তা করা শুরু করে। যা পুরোপুরি অহেতুক ও ভিত্তিহীন।

একেক ধরনের স্রাব একেক ধরনের রোগ বা শারীরিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ করে। তাই আপনার স্রাব আসলে কেমন দেখাচ্ছে, তার গন্ধ কেমন এইসব বিবেচনা করে যাচাই করুন তা কি বোঝাতে চাচ্ছে।

অস্বাভাবিক স্রাবের ধরন এবং তাদের সম্ভাব্য কারণ

স্রাবের ধরন
যা বোঝায়
অন্যান্য উপসর্গ
রক্তাক্ত বা বাদামী স্রাব
অনিয়মিত মাসিক চক্র, সার্ভিকাল বা এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার
যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত, ব্যথা
মেঘলা বা হলুদ স্রাব
পিরিয়ডের মধ্যে রক্তপাত, প্রস্রাবের অসংযম , পেলভিক ব্যথা
গন্ধ বা ফেনাযুক্ত, হলুদ বা সবুজ স্রাব
ট্রাইকোমোনিয়াসিস
প্রস্রাব করার সময় ব্যথা এবং চুলকানি
গোলাপী স্রাব
প্রসবের পর জরায়ুর আস্তরণের ক্ষরণ (লোচিয়া)
মোটা, সাদা, চিজি স্রাব
ছত্রাক সংক্রমণ
যোনির চারপাশে ফোলা এবং ব্যথা, চুলকানি, বেদনাদায়ক যৌন মিলন
মাছের গন্ধযুক্ত সাদা, ধূসর বা হলুদ স্রাব
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস
চুলকানি বা জ্বালা, লালভাব এবং যোনি বা যোনির চারপাশ ফুলে যাওয়া
অস্বাভাবিক স্রাবের ধরন এবং তাদের সম্ভাব্য কারণ

আপনার স্রাবের বর্ণ, গন্ধ অনুযায়ী সঠিকভাবে চিহ্নিত করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

সাদাস্রাবের প্রকারভেদ

সাদা স্রাব কখনো স্বাভাবিক, আবার কখনো কোনো রোগের লক্ষণ। কি একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন, তাই না? চলুন সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় জানার আগে এর প্রকারভেদ গুলো সম্পর্কে জেনে নেই। বিভিন্ন কারণের উপর ভিত্তি করে এই প্রকারভেদ করা হয়েছে।

শারীরবৃত্তীয়

শারীরবৃত্তীয় স্রাব মূলত যোনি থেকে প্রাকৃতিকভাবে নিঃসৃত রস। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে। সাধারণত যৌন উত্তেজনা, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে বা অল্পবয়সী মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে দেখা যায়। এছাড়াও, মাতৃ ইস্ট্রোজেনের কারণে শিশু জন্মের এক সপ্তাহ পরে এ ধরনের স্রাব লক্ষ্য করা যায়।

রোগগত

কিছু ধরনের স্রাব আবার কোনো রোগের সাধারণ লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। এই ধরনের স্রাবের ভিন্ন রঙ এবং গন্ধ আছে। খুব বাজে গন্ধ এবং দেখতে হলুদ রঙের হয়। প্রকৃতপক্ষে এই স্রাব কোনো অন্তর্নিহিত সংক্রমণের কারণে হয় এবং তার চিকিৎসার প্রয়োজন। কিছু রোগগত অবস্থা নিম্নরূপ:

সার্ভিসাইটিস – নীচের পিঠে ব্যথা এই অবস্থার একটি খুব সাধারণ লক্ষণ। এটি কোনো যৌন সংক্রামিত রোগ বা গর্ভনিরোধক বা অন্য কোন গর্ভনিরোধক পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস ব্যবহারের ফলে এই সংক্রমণ ঘটে। সাধারণত অ্যালার্জি ও জরায়ুর প্রদাহ দেখা যায়।

যোনিতে খামির সংক্রমণ – এটিকে ক্যানডিডিয়াসিসও বলা হয়। এটি সাধারণত ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত মহিলা বা যারা নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক এবং গর্ভনিরোধক বড়ি গ্রহণ করছেন তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। নিয়মিত গ্রহণের ফলে এই ঔষধ যোনির পিএইচ পরিবর্তন করে। এছাড়াও, দুর্বল স্বাস্থ্যবিধির কারণে এটি হতে পারে।

ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজিনাইটিস – এটি ট্রাইকোমোনিয়াসিস নামে সুপরিচিত। এই রোগে চুলকানি সহ ফেনাযুক্ত হলুদ স্রাব দেখা যায়। যৌনবাহিত রোগ বা দুর্বল স্বাস্থ্যবিধির কারণে এই সংক্রমণ দেখা দেয়। সংক্রমণের ২৩-২৫ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

সাদাস্রাবের লক্ষণ

কখন বুঝতে পারবেন আপনার সাদা স্রাব স্বাভাবিক নয়? বা শুধু কি অস্বাভাবিক স্রাব নাকি অন্য লক্ষণও দেখা দিতে পারে? আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এখানেই পেয়ে যাবেন। এই লক্ষণ গুলো দেখলে আপনি ধরে নিবেন যে আপনার সাদা স্রাব স্বাভাবিক নয়।

  • দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব, যা গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব বলেই পরিচিত।
  • মাথাব্যথা,
  • ক্লান্তি,
  • পেট এলাকায় ব্যথা এবং
  • কোষ্ঠকাঠিন্যও ইত্যাদি

যেহেতু এই উপসর্গগুলি যেমন বিব্রত, তেমন প্রচুর অস্বস্তিকরও। তাই বেশিরভাগ মহিলারা প্রাথমিক পর্যায়ে সাদা স্রাবের লক্ষণগুলো এড়িয়ে যান। অস্বাভাবিক সাদা স্রাব নিয়ে অহেতুক লজ্জা বা সংকোচ না রেখে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়
পেট এলাকায় ব্যথা

ডাক্তার কিভাবে অস্বাভাবিক স্রাব নির্ণয় করেন?

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় খুঁজতে হলে আপনাকে প্রথমেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। কারণ একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারই আপনার সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। প্রথমত ডাক্তার আপনার হিস্ট্রি নিবেন এবং কিছু প্রশ্ন করবেন, যদিও প্রশ্নগুলো খুবই অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। যেমন ধরুন-

  • অস্বাভাবিক স্রাব কখন শুরু হয়েছিল?
  • স্রাব কি রঙ?
  • কোন গন্ধ আছে কি?
  • আপনার কি যোনিপথে বা তার আশেপাশে কোনো চুলকানি, ব্যথা বা জ্বালাপোড়া আছে?
  • আপনার কি একাধিক যৌন সঙ্গী আছে?
  • আপনি কি দুশ্চিন্তা করেন?

এছাড়াও সম্প্রতি কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, আপনার নতুন যৌন সঙ্গী আছে কিনা, মেনোপজের লক্ষণ, ডায়াবেটিসের লক্ষণ এবং আপনার স্বাস্থ্য বা জীবনধারার অন্যান্য সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি সব ডাক্তার তালিকাবদ্ধ করবেন।

তারপরে আপনার পেলভিক পরীক্ষা হবে। ডাক্তার সরাসরি আপনার জরায়ুর পরিক্ষার জন্য স্পেকুলাম নামক একটি যন্ত্র ব্যবহার করবেন। পেলভিক পরীক্ষার সময়, স্রাবের একটি নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়। মাইক্রোস্কোপে স্রাব দেখে ডাক্তার আপনার স্রাব কি ইস্টের সংক্রমণ না ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস না ট্রাইকোমোনাস সংক্রমণ তা নির্ণয় করবেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করবেন।

এছাড়া আপনার যৌনাঙ্গের কোমলতা, তার চারপাশের দেওয়াল, ত্বক দেখেও ডাক্তার আপনার সংক্রমণের কারন নির্ণয় করবেন। গনোরিয়া বা ক্ল্যামাইডিয়া নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, সেজন্য এটি কয়েক দিন সময় নিতে পারে। এছাড়া আপনার যোনি রস থেকে জীবাণু বা শ্বেতরক্তকণিকা গনণা করেও আপনার অস্বাভাবিক স্রাবের কারণ নির্ণয় করা হয়।

সাদা স্রাব কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় হচ্ছে আপনার স্রাবের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা। একেক ধরনের স্রাব একেক স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করে ফলে তার চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন হবার কথা, তাই না। যেমন ধরুন: খামির সংক্রমণে সাধারণত ক্রিম বা জেল সাজেস্ট করা হয়। আবার ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস অ্যান্টিবায়োটিক বড়ি বা ক্রিম দিয়ে চিকিত্সা করা হয়।

ট্রাইকোমোনিয়াসিস সাধারণত ওষুধ মেট্রোনিডাজল ( ফ্ল্যাজিল ) বা টিনিডাজল (টিন্ডাম্যাক্স) দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কখনো অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রীম বা ইনজেকশন দিয়ে এ রোগ নিরাময় করা হয়। অস্বাভাবিক সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় হিসেবে কখনো কখনো আপনার যৌন সম্পর্কের পার্টনারকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হয়।

সাদা স্রাব বন্ধ করার ঔষধ

লক্ষণীয়ঃ এখানে যেসব সাদা স্রাব বন্ধ করার ওষুধের নাম বলা হয়েছে এগুলো সেবন করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নিবেন।

এবার চলুন দেখে নেই মেয়েদের সাদা স্রাব বন্ধ করার ঔষধ, যেগুলো সাধারণত সাদা স্রাব চলাকালীন কাজে দেয়।

সাদা স্রাব মহিলাদের জন্য এক অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর শারীরিক অবস্থা। সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় খুজে না পেয়ে একসময় তারা ডাক্তারের পরামর্শ নেয়। গবেষণায় দেখা যায়, নিমোক্ত ঔষধগুলো ডাক্তাররা বেশি প্রেসক্রাইব করেন বা এই ঔষধগুলো বেশি কার্যকর। যেমনঃ

  • মেট্রোনিডাজল
  • ক্লিন্ডামাইসিন
  • লিউকোম্যাপ ক্যাপসুল
  • সিলভার মেটালিক ইউএম ৩০
  • নাইট্রিক এসিড

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

অস্বাভাবিক সাদা স্রাব দেখা দেওয়ার পর থেকে মহিলারা অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার ঔষধ মরিয়া হয়ে খুঁজেতে থাকে। কি করলে বা কি খেলে এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে শুধু তাই খুঁজতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কিছু সতর্কতা মেনে চললে এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। যেমন ধরুন:

  • একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা।
  • গর্ভনিরোধক কোনো ডিভাইস ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • বাইরের দিকে মৃদু, হালকা সাবান এবং উষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে যোনিপথ পরিষ্কার রাখুন। সরাসরি যোনিতে সাবান দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
  • যৌনাঙ্গে সুগন্ধযুক্ত সাবান এবং বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার না করা।
  • বাথরুমে যাওয়ার পরে, ব্যাকটেরিয়া যাতে যোনিতে প্রবেশ করতে না পারে এবং সংক্রমণ ঘটাতে না পারে সে জন্য সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • ১০০% সুতির আন্ডারপ্যান্ট পড়া এবং অতিরিক্ত টাইট পোশাক এড়িয়ে চলুন।

সাদা স্রাব বন্ধ করার ঘরোয়া প্রতিকার

অনেকের মনেই এই প্রশ্ন সাদা স্রাব কি খেলে ভালো হয়, বা সাদা স্রাব হলে করনীয় কি? যেহেতু সাদা স্রাব পুরোটাই মেয়েলি স্বাস্থ্যসমস্যা, তাই বিষয়টা খুব বেশি জন সম্মুখে আসে না।

ভুক্তভোগী মহিলারা যতটা সম্ভব ঘরোয়া টোটকা দিয়ে সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় বের করেন। এরকম কয়েকটি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার নিচে দেওয়া হলো:

১. ধনিয়া বীজ

ধনিয়া বীজ যোনি সংক্রমণ রোধের জন্য বেশ কার্যকর। এজন্য ধনিয়া বীজ কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিতে পারেন। খালি পেটে এই বীজগুলি খাওয়া আপনাকে সাদা স্রাবের উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

২. মেথি বীজ

মেথি বীজ আমাদের ঘরে বিদ্যমান একটি সহজলভ্য উপাদান। অনেক মহিলারা তাদের স্রাব নিরাময়ে এটি একটি প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহার করেন। আপনি মেথি বীজ গরম জলে ভিজিয়ে তা সেবন করতে পারেন।

৩. ঢেঁড়স

বেশিরভাগ মহিলারা খাদ্যতালিকায় সবজি হিসেবে ঢেঁড়স রাখেন। কেননা এটি সাদা স্রাব এবং সাদা স্রাবের গন্ধ দূরীকরণে বেশ কার্যকর। আপনি সিদ্ধ করে বা সবজি হিসেবে এই ঢেড়স গ্রহণ করতে পারেন।

৪.ইন্ডিয়ান গুজবেরি/আমলা

সাদা স্রাবের অপর নাম হল লিউকোরিয়া যা আমলা বা ইন্ডিয়ান গুজবেরি দিয়ে ভালোভাবে চিকিৎসা করা যায় বলে প্রমাণিত হয়েছে। আপনাকে অবশ্যই ভারতীয় গুজবেরি টুকরো টুকরো করে রোদে শুকাতে হবে। শুকনো আমলা পিষে গুঁড়ো করে নিন।

এবার ২ চা চামচ গুঁড়ো নিন এবং তাতে একই পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিন। একবার পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে, কার্যকর সমাধান পেতে এটি ব্যবহার করুন। ভাল ফলাফল পেতে আপনাকে অবশ্যই দিনে দুই বার প্রাকৃতিক প্রতিকারের এই পেস্টটি খেতে হবে।

৫. ডালিম

ডালিম একটি বিস্ময়কর প্রাকৃতিক ফল যা শুধু সুস্বাদুই নয়, এতে রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটি মহিলাদের সাদা স্রাব বন্ধ করার জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে বিবেচিত হয়। মহিলাদের সাদা স্রাব থেকে মুক্তি পেতে আপনি বীজের সাথে কাঁচা ডালিম খেতে পারেন বা এর থেকে রস বের করতে পারেন। এমনকি, ডালিম ফলের পাতা সাদা স্রাব বন্ধ করতে বিস্ময়করভাবে কাজ করে।

৬. তুলসী পাতা

তুলসি এমন এক বিস্ময়কর ভেষজ যার বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে, এটিকে যোনি স্রাবের চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। প্রথমে আপনাকে তুলসী পাতার রস তৈরি করে তাতে মধু মেশাতে হবে। সাদা স্রাবের সমস্যা পুরোপুরি দূর করার জন্য প্রতিদিন এটি দুবার পান করুন। এছাড়াও, আপনার সাদা স্রাবের সমস্যা দূর করতে  প্রতিদিন দুধের সাথে এটি খেতে পারেন। আপনি চিনি দিয়ে তুলসী রসের শরবত বানিয়েও পান করতে পারেন এবং যোনিপথের সাদা স্রাব থেকে দূরে থাকতে পারেন।

৭. ভাতের মাড়

সাদা স্রাব নিরাময়ে ভাতের মাড় বেশ ভালো কাজ করে। এই প্রতিষেধকের জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে আপনার রান্না করা ভাত থেকে মাড় আলাদা করে রাখা। নিয়মিত এই স্টার্চটি গ্রহণ করলে অবশ্যই আপনি সাদা স্রাব থেকে মুক্তি পাবেন।

৮. পেয়ারা পাতা

সাদা স্রাব এবং যৌনপথের  চুলকানির সমস্যার অন্যতম প্রাকৃতিক প্রতিকার হল পেয়ারা পাতার ব্যবহার। গাছ থেকে কিছু পেয়ারা পাতা তুলে পানিতে সেদ্ধ করুন যতক্ষণ না পানি অর্ধেক হয়ে যায়। সিদ্ধ পাতা ছেঁকে নিয়ে সিদ্ধ পানি পান করলে যোনিপথের স্রাবের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। এটি দিনে দুবার পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।

৯. আদা

শুকনো আদা ব্যবহার সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া সমস্যা নিরাময়ে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। প্রথমে, আপনাকে একটি গ্রাইন্ডার ব্যবহার করে আদা টুকরো টুকরো করতে হবে। এটি থেকে একটি পাউডার তৈরি করুন এবং সাদা স্রাবের প্রতিকার হিসাবে এটি ব্যবহার করুন।

এজন্য আপনাকে ২ চা চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো নিতে হবে এবং অপর্যাপ্ত পরিমাণ জলে সিদ্ধ করতে হবে। পরবর্তী ধাপে পানিতে আদা ফুটিয়ে ফুটানো পানি অর্ধেক হয়ে গেলে সেই পানি পান করুন। তিন সপ্তাহ ধরে নিয়মিত এই পানি পান করুন, এর ফলাফল আপনি নিজ চোখে দেখতে পাবেন।

১০. আপেল সিডার ভিনেগার

সাদা স্রাব নিরাময়ে আপেল সিডার ভিনেগার মূলত অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার যোনি পথের পিএইচ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ভালো ব্যাবটেরিয়া জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে।

গর্ভাবস্থার সময় সাদা স্রাব নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব অনেকটাই স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায়। তবে কখনো কখনো এটা স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এই অবস্থায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন এবং কিছু কার্যকর টিপস মেনে চলবেন:

  • ঘনঘন স্নান করুন এবং স্বাভাবিক বাতাস চলাচল করতে পারে এমন আন্ডারপ্যান্ট ব্যবহার করুন। এগুলো সবসময় শুকনো এবং পরিষ্কার রাখবেন তাতে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক না জন্মায়।
  • প্যান্টি বা প্যাড পরুন। এটি অতিরিক্ত স্রাব শোষণ করে এবং আরও আরামদায়ক বোধ করতে সহায়তা করে।
  • ওয়াইপস ব্যবহার করবেন না। আপনার যোনির একটি স্ব-পরিষ্কার ক্ষমতা আছে। যার ফলে এটি যৌনাঙ্গে পিএইচ পরিবর্তন করতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে। ওয়াইপস এ নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা আপনার যৌনাঙ্গের পিএইচ পরিবর্তন করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

সাদা স্রাবের রোগীর জন্য ডায়েট

সঠিক খাদ্যভাসের কারণে সাদা স্রাব হওয়ার ঝুকি অনেক বেশি থাকে। সঠিক ডায়েট চার্ট সাদা স্রাব চিকিৎসা ও প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই লিউকোরিয়া প্রতিরোধে আপনি কি খাবেন এবং কি খাবেন না তা অবশ্যই জেনে রাখুন। যা যা অবশ্যই খাবেন- কলা, ক্র্যানবেরি, কমলা, লেবু, কালো বরই, ওকরা, শাকসবজি, পেঁয়াজ, বাদামী ভাত, দই।

সেইসাথে স্বাস্থ্যকর ভেষজ এবং মশলা যেমন: আদা, রসুন, মেথি এবং এছাড়াও অনেক খাদ্যদ্রব্য আপানার সাদা স্রাবের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই যদি ইতোমধ্যই আপনি সাদা স্রাবে ভুগছেন, তবে এই খাবার গুলো এড়িয়ে চলবেন:

  • ডিম,
  • মাংস,
  • রুটি
  • মাশরুম,
  • মিষ্টি এবং
  • মশলাদার এবং ভাজা খাবার
  • সাদা আটার তৈরি খাবার
  • সাদা চিনি জাতীয় পণ্য
  • চা, কফি, অ্যালকোহল
  • টিনজাত/টিনজাত খাবার

কখন একজন ডাক্তারকে কল করবেন?

বেশিরভাগ মহিলারা গর্ভাবস্থার স্রাব অনুভব করেন, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এর অর্থ এই নয় যে এটি কখনও উদ্বেগজনক হতে পারে না। আপনার যদি নিম্নলিখিতগুলি লক্ষণ থেকে থাকে, তবে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা উপদেষ্টার সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন:

  • চাঙ্কি
  • প্রচুর পরিমাণে স্রাব
  • ভারী স্রাব বা ঘন স্রাব
  • দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব

উপরের পরিবর্তনগুলি নানা সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। তাই এরকম দেখা দিলে লজ্জা না পেয়ে ডাক্তার দেখানো উচিত। যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের আরো খোলামেলা মনমানসিকতার প্রয়োজন।

পরিশেষে

আপনার যোনি স্রাবের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব একটি সাধারণ শারীরিক অবস্থা কিন্তু অস্বাভাবিক স্রাব চিকিৎসা না করা হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

অতএব, আপনার সন্দেহ হলে বা যোনি স্রাবের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি সঠিক খাদ্যভাস ও যোনিপথের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাও মেনে চলা উচিত। তাই শুধু মাত্র সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায় না খুঁজে সঠিক খাদ্যাভাস ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন।

তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকে আমাদের লেখা সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়, অতিরিক্ত সাদা স্রাব বন্ধ করার ঔষধ, সাদা স্রাব বন্ধ করার ট্যাবলেট ইত্যাদি নিয়ে এক বিস্তারিত আলোচনা। যদি এই লেখা নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব কি স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক?

মাসিক চক্র, যৌন উত্তেজনা, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এবং বয়ঃসন্ধির সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে লিউকোরিয়া স্বাস্থ্যের উপর কেমন প্রভাব ফেলে না। যদি যোনি স্রাব হলুদাভ হয় এবং দুর্গন্ধযুক্ত হয়, তবে এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ (যৌন সংক্রমণ) এর কারণে হয়।

যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) এবং বন্ধ্যাত্বের মতো গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সাদা স্রাব কি প্রাথমিক গর্ভাবস্থার লক্ষণ?

গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যোনি স্রাব পাতলা এবং দুধ সাদা হয়। আপনি যদি আপনার পিরিয়ড মিস করে থাকেন এবং লিউকোরিয়া হয় তবে আপনি সম্ভবত গর্ভধারণ করছেন।

যদি গর্ভাবস্থার পরীক্ষার ফলাফল না বোধক হয়, তাহলে এই উপসর্গগুলির কারণ হতে পারে অন্য কোনো সংক্রমণ বা যৌনরোগ। এই অবস্থায় আপনার যত দ্রুত সম্ভব একজন গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

সাদা স্রাব হওয়া কি স্বাভাবিক?

লিউকোরিয়া সাদা, পাতলা এবং কিছুটা গন্ধহীন না হলে চিন্তার কিছু নেই। যদি স্রাবের গন্ধ থাকে বা শ্রোণীতে ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গের সাথে থাকে, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন, কারণ এটি সংক্রমণের লক্ষণ।

সাদা স্রাবের কারণ কী?

যোনি স্রাব বা সাদা স্রাব একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হতে পারে বা এটি ট্রাইকোমোনাল ভ্যাজাইনাইটিস, ক্যানডিডিয়াসিস এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণের কারণে হতে পারে।

সাদা স্রাব কি দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে?

লিউকোরিয়া সাধারণত দুর্বলতা সৃষ্টি করে না। মূত্রনালীর সংক্রমণ, গর্ভাবস্থা, একটোপিক গর্ভাবস্থা, শ্রোণী প্রদাহজনিত রোগ, সার্ভিকাল ক্যান্সার বা যৌনবাহিত রোগ (STD) এর কারণে দুর্বলতা এবং অন্যান্য উপসর্গের দেখা দেয়। মূলত স্বাভাবিক সাদা স্রাবে কোনো দুর্বলতা সৃষ্টি হয় না।

Author

Scroll to Top