মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা ২০২৩

মেথির উপকারিতা

Last Updated on February 20, 2023 by Mijanur Rahman

মেথি কি আমরা সবাই কমবেশি জানি। বাংলাদেশে কিংবা দক্ষিণ এশিয়ায় মেথি খুবই পরিচিত এক মশলা কিংবা খাবার। এই মশালার রয়েছে নানাবিধ ব্যাবহার, উপকারিতা ভেষজ গুণাবলি। হাজার হাজার বছর ধরে মেথি চীনে ত্বকের যত্নে ও অন্যান্য রোগের ভেষজ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। মেথিতে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বস, ফ্যাট, আয়রন, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়ামের মত স্বাস্থ্য উপকারি উপাদান, যা মানব শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা, মেথির গুনাগুন, মেথির গুড়ার উপকারিতা, মেথি খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি।

মেথি (Fenugreek)

মেথি, এর  বৈজ্ঞানিক নাম – (Trigonella foenum – graecum) এটি একটি মৌসুমী গাছ। মেথির পাতা ও বীজ উভয়ই খাওয়া যায় এবং উপকারীও বটে। মেথিকে পথ্য, খাবার, মশলা সব ভাবেই ব্যাবহার করা যায়। গ্রামবাংলার মানুষ মেথির পাতাকে শাক হিসেবে খায়, পাশাপাশি মেথি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে, আচারের পাঁচফোড়নেও মেথি ব্যবহার করা হয়। ইউনানী, আয়ুর্বেদীক সহ লোকজ চিকিৎসায় মেথির ব্যবহার বহু প্রচলিত। মেথি থেকে ষ্টেরয়েডের উপাদান তৈরি হয়। মেথির এত সব গুনাগুনের কারণে মেথিকে সুপার ফুড (Super  Food)  ও বলা হয়ে থাকে।

মেথি (Fenugreek)
মেথি (Fenugreek) (Photo Source: www.gettyimages.com/)

মেথির বৈজ্ঞানিক নামটি দ্বিপদী নামকরনে করা হয়েছে। নিচে মেথির বৈজ্ঞানিক শ্রেনিবিন্যাস দেওয়া হল।

মেথি
বৈজ্ঞানিক শ্রেনিবিন্যাস
জগৎ
Plantae
বিভাগ
Magnoliophyta
শ্রেণি
Magnoliopsida
বর্গ
Fabales
গণ
Trigonella
প্রজাতি
T. foenum – graecum
দ্বিপদী নাম
Trigonella foenum – graecum

মেথি উৎপাদনকারী দেশ

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান,নেপাল, আফগানিস্তানে মেথির ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব দেশে মেথির ব্যাবহার ও বেশি হয়ে থাকে।

মেথিতে উপকারী উপাদানসমূহ

  • কার্বোহাইড্রেট
  • প্রোটিন
  • ফ্যাট
  • ফাইবার
  • আয়রিন
  • ম্যাংগানিজ
  • কপার
  • ফসফরাস
  • ভিটামিন বি ৬
  • ভিটামিন সি
  • নিয়াসিন

এছাড়াও অল্প পরিমাণে রয়েছে কোলিন, বায়োটিন, জিংক, সেলেনিয়াম, ফোলেট,ইনোসিটল,  ফলিক এসিড, রিবোফ্লাভিন, আইসোলিউসিন নামক এমিনো এসিড।

প্রতি ১০০ গ্রাম মেথিতে থাকেঃ

উপাদান
ক্যালরি পরিমাণ
পানি
৮.৮৪ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট
৫৭.৩৫ গ্রাম
প্রোটিন
২৩.০০ গ্রাম
লিপিড
৬.৪১ গ্রাম
ফাইবার
২৪.৬ গ্রাম
আয়রন
৩৩.৫৩ গ্রাম
মোট শক্তি
মোট শক্তি ৩২৩ কিলো ক্যালরি

মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা

মেথির অনেক গুনাগুন থাকলেও উপযুক্ত ব্যবহার না জানার ফলে আমরা অনেকেই এর যথাযথ ব্যবহার করতে পারি না। আসুন জেনে নেই মেথির বেশ কিছু উপকারিতা ও লাইফ সেভিং হ্যাকস।

১. খাদ্য হিসেবে

মেথির স্বাদ যদিও তিতা কিন্তু মেথির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়, শাক ভাজি বা পাতা ভর্তা করেও খাওয়া যায়।  প্রতি ১০০ গ্রাম মেথি শাকে ৫০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। মেথি শরিরের জন্য অনেক উপকারী।

সবজি হিসাবে মেথির পাতা
মেথির পাতা (Photo Source: https://www.gettyimages.com/ )

২. চিকিৎসা ক্ষেত্রে

চিকিৎসা ক্ষেত্রে মেথির উপকারিতা অনেক, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের মতো বিষয়ে মেথি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন চিকিৎসায় মেথি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে, বা মেডিকেল সাইন্স কি বলে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

ডায়বেটিস রোগীদের অনেক ধরনের ওষুধ খাওয়া লাগে যা তাদের কিডনির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এক্ষেত্রে মেথি অনেক উপকারে আসতে পারে। প্রতিদিন পরিমানমত মেথি সেবন করলে সুগার ও কার্বহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণে থাকবে।মেথির এমাইনো এসিড অগ্নাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরন করতে সাহায্য করে। মেথিতে উপস্থিত ফাইবার সুগার ও কার্বহাইড্রেট শোষণ করে নেয়। এক্ষেত্রে   ৫ থেকে ৫৫ গ্রাম মেথি গুড়া সেবন করা যেতে পারে।  টাইপ টু নামক ডায়বেটিস প্রতিরোধে মেথি অধিক কার্যকরী। মেথি স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতাও কমিয়ে আনে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

মেথিতে থাকা পটাশিয়াম ও ফাইবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পরপর কয়েকবার নিয়ম করে মেথি সেবন করলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকতে বাধ্য।  মেথি ব্যাড কোলেস্টেরল (Bad Cholesterol)  এবং ট্রাই গ্লিসারাইডকে কমিয়ে টোটাল লিপিড প্রোফাইল ঠিক রাখে।

লিভার সুস্থ রাখে

ক্ষতিগ্রস্ত  লিভার রিকভার করতে সাহায্য করার পাশাপাশি ফ্যাটি লিভার নামক রোগ সারাতেও মেথির ব্যবহার অপরিসীম। রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং যাবতীয় দূষিত পদার্থ শরির থেকে বের করতে সাহায্য করে।

কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়

মেথি কিডনির কিছু কিছু পাথরও গলাতে সাহায্য করে। যেমন : ক্যালসিয়াম অক্সালেট জাতীয় পাথর।

ক্যন্সার নিরাময়ে

যারা নিয়মিত মেথি সেবন করে থাকে, তাদের ক্যান্সার  হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসে। মেথির ট্রাই গ্লিসারাইড এস্ট্রোজেন ক্যান্সারের জীবানু ধ্বংস করতে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে কোলন ও স্তনক্যান্সারে মেথি বেশি উপকারে আসে।

গ্যস্ট্রিক রোধে মেথি

গ্যাস্ট্রিক রোধে মেথি অনেক উপকারী। মেথিতে থাকা ফাইবার শরিরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ফলে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসে। বদহজমের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পেপটিক আলসার ও সারিয়ে তোলার ক্ষমতা রয়েছে মেথির।

রক্তস্বল্পতা

মেথিতে আয়রনের আধিক্য রয়েছে, তাই মেথি খেলে শরিরের আয়রনের ঘাটতি পুরণ হয়। এনিমিয়া ( Anaemia) রোগীর পথ্য হিসেবে মেথির বহুল ভুমিকা রয়েছে।

শরীরের ব্যথা নিরাময়ে

মেথি খেলে জয়েন্টের ব্যথা, মাংস পেশিতে ব্যথা, মাংস পেশিতে টান কমে। এছাড়াও  যেকোনো তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।

মশলা হিসাবে মেথি
মশলা হিসাবে মেথি (Photo: https://www.gettyimages.com/)

কৃমি দূর করে

বিশেষ করে বাচ্চারা কৃমির সমস্যায় ভুগে বেশি। মেথি এই সমস্যা দূর করতে পারে। নিয়মিত পরিমান মত মেথি খেলে কৃমি দূর হয়।

গলা খুসখুস ও জ্বরে মেথি

জ্বর ও গলা খুসখুসের জন্য লেবুর রস ও মধুর সাথে মেথি মিশিয়ে খেলে জ্বর ও গলা খুসখুসানি সারে। মেথিতে মুসিলেজ নামক এক ধরনের যৌগ থাকে যা গলা খুসখুস সারাতে কাজ করে। প্রদাহ বিরোধী ও নিরাময়ের ক্ষমতা থাকার কারণে মেথির বহুল প্রচলন রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া বিরোধী   ও ভাইরাস বিরোধী ( অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি-ভাইরাল)  গুনাগুন থাকার ফলে শ্বাসনালির সংক্রমণ এর  মাইক্রো অর্গানিজম ধ্বংস করতে সাহায্য করে। মিউকাস মেমব্রেন শীতল করে ও শ্লেষ্মা নির্গমনে সাহায্য করে। মেথির গরম প্রভাব শ্বাসনালির বিভিন্ন অসুখ সারায়, সর্দি-কাশি থেকে আরাম দেয়। মেথির মিউকিল্যাগ নামক উপাদান গলা ব্যথা সারায়।

৩. চুলের যত্নে মেথি

চুলের খুশকি রোধে

আপনি যদি চুলে খুশকির সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে মেথি আপনার জন্য উত্তম। মেথিতে উপস্থিত প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড চুলের গোড়া মজবুত করার পাশাপাশি চুলের খুশকিও দূর করবে। তিন – চার চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন, ভেজানো মেথি ব্লেন্ড করে এর সাথে এক কাপ দই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে চুলে লাগিয়ে এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে   ভালোমত ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে সপ্তাহে অন্তত একভার হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করুন, আপনার খুশকি দূর হবে, চুলের গোড়া মজবুত হবে, চুল পড়া কমবে।

চুল পেকে যাওয়া রোধ

আজকাল তুলনামূলক দ্রুত চুল পেকে যাচ্ছে। চুলের গোড়ায় আয়োডিন ও ভিটামিনের অভাবে চুল পেকে যায়। অকালে চুল পাকা রোধে মেথির ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অকালে চুল পাকা রোধে মেথি ব্যবহারের নিয়ম –

তেলের মধ্যে একদিন মেথি ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর তেল হালকা গরম করে চুলের গোড়ায়  ভালভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো মত চুল ধুতে হবে।

নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে

মেথিতে উপস্থিত লেসিথিন নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে। মেথি গুড়া ও সরিষা পেস্ট মিশিয়ে হেয়ারপ্যাক বানিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করবেন। নারকেল তেলের মধ্যে সারারাত মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই তেল চুলে ম্যাসাজ করলে অতি দ্রুত নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে

৪. সৌন্দর্য বর্ধনে মেথি

চোখের নিচের বলিরেখা কমিয়ে চেহারা টানটান রাখে। স্কিনের গ্লো বাড়ায় এবং ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে  তারুন্যকে বজার রাখতে সহায়ত করে, বুড়িয়ে যাওয়ার গতি ধীরে করে। ব্রণের দগ, ফুসকুড়ি কালো দাগ সারাতে সাহায্য করে। চোখের নিচের কালো দাগ সহ মুখের কালচে ছাপ প্রতিরোধ করে।

৫. ওজন কমাতে মেথি

মেথিতে আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট যা ওজন কমাতে কার্যকরী,  মেথি ফ্যাট মেটাবোলিজমে সহায়তা করে ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মেথির বীজ গরম পানিতে ভিজিয়ে মেথির চা হিসেবে খাওয়া যায়, এতে  ওজন দ্রুত কমতে সাহায্য করবে । এছাড়াও মেথি গুড়ার সাথে মধু মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মেথি চিবিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য উত্তম।

৬. মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা

মেথিতে রয়েছে সাইটো – ইস্ট্রোজেন,  যা নারী দেহে প্রোলেকটিন নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই হরমোন নারীদেহকে সুগঠিত করতে সাহায্য করে। PCOS ( Poly Cystic Ovarian Syndrome)  ও PCOD ( Poly Cystic Ovarian Disease) নামক রোগ নিরাময়ে মেথি কাজে লাগে। মেথি মাসিক নিয়মিতকরনে ভুমিকা রাখে। মেথি সন্তান প্রসবকালে জরায়ুর সংকোচন প্রসারনের যন্ত্রণা কমাতে সহায়ত করে মেথি, তবে অতিরিক্ত পরিমানে মেথি গ্রহণ করা হলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা আছে৷ তাই গর্ভকালীন সময়ে বুঝে শুনে মেথি ব্যবহার করা উত্তম। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। দৈনিক ১৮০০-২৭০০ মিলিগ্রাম প্রথম তিনদিন এবং মাসিকের পরের দিনগুলোতে ৯০০ গ্রাম করে খেলে ব্যথা উপশম হয়। মেথি মাসিকচক্র নিয়ন্ত্রণ করে। মেনোপজ হলে নারীর দেহে নানা পরিবর্তন আসে, এসময় মেথি অত্যাধিক কার্যকরী। এছাড়াও নারীদেহের আরো বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়ত করে মেথি। তাই বলা যায় নারীর জন্যে মেথির উপকারিতা অপরসীম।

৭. মাতৃদুগ্ধ  বাড়াতে

মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে মেথি। সহ্য মা হওয়া নারীদের জন্য মেথি অনেক উপকারী।

৮. পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা

নিয়মিত মেথি খেলে পুরুষ হরমোনের ( টেস্টোস্টেরন)  পরিমান বাড়ে,  এতে করে  স্পার্ম এর কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি উভয়ই বৃদ্ধি পায়। মেথির রসে রয়েছে সাপোনিস ও ডায়োজেনিন নামক এক প্রকার যৌগ। এসব উপাদান দেহে হরমোনের পরিমান বাড়ায়। যার ফলে প্রতিদিন মেথির রস খেলে পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়ে।

৯. ওষুধ তৈরীতে

কিছু ওষুধ তৈরিতে মেথিকে এডিটিভ এজেন্ট  হিসেবে ইউজ করা হয়। এতে করে ওষুধের অন্যান্য উপাদানের স্বাদ ও গন্ধ চাপা পড়ে এবং মেথির জন্য সুন্দর একটি ঘ্রাণ আসে।

মেথি গুড়া করার নিয়ম

মেথি সঠিক নিয়মে গুড়া করতে না পারার ফলে অনেক সময় এর কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে আসে। ফলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত ফলাফল পাই না। চলুন জেনে নেই, মেথি গুড়া করার সঠিক নিয়ম –

মেথি ভালো মতো ধুয়ে তা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। সরিষার তেল দিয়ে হালকা আঁচে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে ব্লেন্ডার বা শিলনোড়ায় গুড়া করে নেয়া যায়। এয়ারটাইট কন্টেইনারে ভালোভাবে সংরক্ষন করলে দীর্ঘদিন  ভালো থাকবে এবং প্রয়োজন মত ব্যাবহার করা যাবে।

এছাড়াও মেথি কড়া রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে ব্যবহার করা যায়।


মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মেথির ব্যবহার

বিভিন্ন ভাবে মেথির ব্যবহার

অনেক জিনিসের সাথে বিভিন্নভাবে মেথি ব্যবহার করা যায় –

১. মেথির জল:  সারারাত মেথির দানা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে মেথির জল খেলে উপকার পাওয়া যায়। ওজন হ্রাসের ক্ষেত্রে এটি সর্বোচ্চ উপযোগ।

২. মেথি চা: ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মেথি চা অনেক ভালো কাজ করে। অল্প পানি দিয়ে মেথি বেটে মেথির পেস্ট করে নিতে হবে। একটি প্যানে ফুটন্ত গরম পানির সাথে এই পেস্টটি মেশাতে হবে। সাথে আদা, লং, এলাচ সহ আরো কিছু মশলা মিশাতে পারেন। পাত্রটি ঢেকে কিছুক্ষন জাল দিয়ে ছেকে নামিয়ে নিলেই হয়ে যাবে মেথির চা।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে  এই চা খেলে ডায়বেটিস রোগীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমবে। অন্যান্য ওষুধের উপর নির্ভরতা কমে যাবে।

৩.মেথি ও মধু: মেথিতে একটি করা গন্ধ থাকে,মেথির এই গন্ধ যদি আপনার পছন্দ না হয়ে থাকে, তবে আপনি মেথির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে মধুর পুষ্টি গুন ও পাবেন আর মেথির স্বাদ ও বাড়বে।

মেথির পেস্ট গরম পানিতে দিয়ে তা দিয়ে চা বানিয়ে কিছুক্ষন রেখে দিন, এরপর এর সাথ লেবু ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। উপযুক্ত ফলাফল পাওয়ার জন্য  প্রতিদিন সকালে এটি পান করতে পারেন।

মেথি সেবনের মাত্রা

বয়স, লিঙ্গ, ওজন সহ আরো কিছু দিক বিবেচনা করে মেথি গ্রহণের মাত্রা নির্বাচন করা হয়। সাধারণ মাত্রা  দৈনিক ৫ – ১৫ গ্রাম।  খাওয়ার আগে মেথির গুড়ো খাওয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।  ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ( উচ্চমাত্রা)  প্রদাহ বিরোধী উচ্চমাত্রার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এই উচ্চমাত্রার ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উত্তম।

আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন, তবে হাইপোগ্লিসেমিয়া রাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসক অথবা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতীত খাবেন না।

মেথির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা

মেথির অনেক গুনাগুন থাকা স্বত্তেও এটি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উত্তম। কারণ মেথিতে রয়েছে নানান অপকারিতা কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, চলুন দেখে নেওয়া যাক মেথির যেসব অপকারিতা রয়েছে।

যেহেতু মেথি দেহের রক্তের গ্লূকোজের পরিমান কমিয়ে দেয়, তাই এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেয়া উচিত। এছাড়াও আরো কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন –

১. পেট খারাপ

২. ডায়রিয়া

৩.পেটে গ্যাস

৪.মাথা ব্যথা

৫. মাথা ঘোরা

দেহ যদি মেথির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে নিচের সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে-

১. জোরে জোরে নিশ্বাস পড়া

২. চোখ মুখ ফুলে যাওয়া

৩. নাক বন্ধ

৪. কাশি

কাদের মেথি খাওয়া নিষেধ?

গর্ভকালীন সময়  অতিরিক্ত মেথি ব্যবহারের ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এই সময়ে মেথি না খাওয়াই ভালো।

শিশুদের জন্য মেথি সবসময় উপিকারী নাও হতে পারে,  ডায়রিয়া বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তাই অন্তঃসত্তা ও শিশুদের মেথি না খাওয়াই ভালো।

ত বন্ধুরা এই ছিলো মেথি নেয়ে আজকের লেখা মেথির উপকারিতা ও মেথির অপকারিতা, যদি আপনাদের এই আর্টিকেল ভালো লেগে থাকে, কিংবা কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন।

Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top