Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি? কিভাবে বুঝবেন আপনি অন্তঃসত্ত্বা কিনা? প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ একজন নারীর জীবনে অন্যরকম আনন্দের মুহুর্ত। তাই প্রত্যেক নারীই চান যথাসময়ে এ বিষয়টি জানতে। আর শুরু থেকেই নিজের অনাগত সন্তান ও নিজের যত্ন নিতে। কিন্তু অনেক সময়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার পর জানা যায় অলরেডি দুই-তিন মাস রানিং!
তবে ভয়ের কিছু নাই, আজকের এই লেখাতে আমরা জানবো এ সম্পর্কে বিস্তারিত, দেখবো প্রেগন্যান্সির লক্ষণ কি কি, এবং কিভাবে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী?
তাহলে দেরী না করে চলুন দেখে নেই প্রথমে কোন সময় প্রাথমিক লক্ষণগুলি ধরা দেয়।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়?
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কখন দেখা যায়? গর্ভাবস্থা শুরু হতে সহবাসের পর প্রায় ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। কিছু নারীর গর্ভাবস্থা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের প্রথম দিকে গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার কয়েক মাস পর্যন্তও লক্ষণগুলি বুঝতে পারেন না।
কিছু মহিলা ৫ দিনের মধ্যেও পরিবর্তন অনুভয় করেন। যদিও এতে নিশ্চিতভাবে জানা যায় না যে সে গর্ভবতী কিনা। প্রাথমিক উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ইমপ্লান্টেশনের রক্তপাত বা ক্র্যাম্প। যা শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার ৫-৬ দিন পরে ঘটতে পারে।
অনেকে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ টের পান। আপনি গর্ভবতী কিনা তা নিশ্চিত ভাবে জানার জন্য গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি তা এক নজরে দেখে নিন।
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
অনেক নারীই সময়মত গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ধরতে পারেন না। ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা। কখনও হয়ত না জেনেই ভারী কাজ করে ফেলেন। কখনই আবার এমন কিছু খেয়ে ফেলেন যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত না।
এতে করে নিজের ও সন্তানের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে ফেলেন। এজন্য যথাসময়ে প্রেগন্যান্সি নির্ধারণ করাই উত্তম।
তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক যেভাবে বুঝবেন আপনি কনসিভ হয়েছেন।
মর্নিং সিকনেস
গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং বমি সাধারনত মর্নিং সিকনেস নামে পরিচিত। এটি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে খুবই কমন একটা ব্যপার। বমি বমি ভাব দিনে বা রাতের যেকোনো সময় আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে৷ বা আপনি সারাদিন ই অসুস্থ বোধ করতে পারেন। সকালের অসুস্থতার সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির মধ্যে আরো রয়েছে
- অতিরিক্ত গন্ধ পাওয়া ,
- মশলাদার খাবারে অনীহা,
- সকালে হঠাৎ দেহের তাপ মাত্রা বৃদ্ধি ,
- মুখে অতিরিক্ত লালা আসা বা
- খালি পেটে বমি
- প্রায়শই কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।
প্রথম ত্রৈমাসিকের সময় সকালের অসুস্থতা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভধারণের নয় সপ্তাহের মধ্যে মর্নিং সিকনেস শুরু হয়।সকালের এই অসুস্থতা খুবই অপ্রীতিকর। মনিং সিকনেস আপনার দৈনন্দিন জীবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
বমি
বমি বমি ভাব কিংবা ঘন ঘন বমি হওয়া গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষন। একটা সময় ছিল যখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট কোনো রকম কিট ছাড়াই ধারণা করা হত। বমি হওয়া এর মধ্যে বেশি প্রচলিত ছিল। কয়েক যুগ আগেও মানুষ বমি হওয়া কে কেন্দ্র করে প্রেগন্যান্সির অনুমান করত। তবে নির্ধারিত কিছু সময় আছে যখন বমি হয় বা বমি ভাব হয় । তখন বুঝতে পারবেন আপনি প্রেগন্যান্ট কিনা।
- আপনি যদি প্রতিদিন ই অল্প সময়ের জন্য বমি বমি ভাব অনুভব করেন।
- আবার একবার / দুবার বমি হয়ে যায়।
- স্পেশালি সকালের আরও গুরুতর অবস্থা হয়,
- বমি বমি ভাব প্রতিদিন কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয় পারে এবং
- বমি বেশি ঘন ঘন হয়
এসব সিম্পটম মিলে গেলে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা আছে।
কিছু গর্ভবতী মহিলার খুব বেশি বমি বমি ভাব এবং বমি হয়। এটি অনেক সময়ে খারাপ পর্যায়ে চলে যায়। তারা দিনে অনেকবার অসুস্থ হতে পারে। এবং খাবার বা পানীয় বেশিক্ষন পেটে রাখতে অক্ষম হতে পারে। যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভবতী নারীর এই অত্যধিক বমি বমি ভাব এবং বমি হাইপারমেসিস গ্র্যাভিডারাম (HG) নামে পরিচিত। অতিরিক্ত বমি হলে অবশ্যই হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
বডি টেম্পারেচার
আপনার গর্ভাবস্থার শুরুতে আপনার শরীরের হরমোনের অনেক ধরনের পরিবর্তন হয়। এই হরমোনের পরিবর্তনগুলি আপনার শরীরের তাপমাত্রাও অল্প পরিমাণে বাড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে বেশিও বেড়ে যেতে পারে। তখন শরীরে হালকা জ্বর জ্বর অনুভব হয়। তবে এটা শুধু একটা নরমাল সিম্পটম। এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
তাহলে একজন গর্ভবতী মহিলার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত? বিশেষজ্ঞ রা বলেন “এটি প্রায় ০.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়তে পারে,” উদাহরণস্বরূপ, যদি গর্ভাবস্থার পূর্বে আপনার বেসলাইন শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়। তাহলে গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে।
পিরিয়ড
পিরিয়ড হল গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ প্রকাশের প্রধান সূচক। অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড অফ হয়ে যাওয়াটাই মোটামুটি নিশ্চিত একটা সিম্পটম। যখন আপনার মাসিক হয়, তখন এর একটি টাইম টেবিল থাকে। অর্থাৎ তিন/চার দিন কিংবা এক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
কিন্তু গর্ভাবস্থায়?: কারো কারো জন্য, গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল যোনিপথে হালকা রক্তপাত। বা দাগ যা সাধারণত গোলাপী বা গাঢ় বাদামী। এটি সাধারণত গর্ভধারণের ১০ থেকে ১৪ দিন পরে ঘটে এবং সাধারণত প্যাড বা ট্যাম্পন পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ নরমালের থেকে খুব কম রক্তপাত হয়। এবং বন্ধ হয়ে যায়।
রিলেটেডঃ ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ইরেগুলার রক্তপাত
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে, আপনার কিছু হালকা। রক্তপাত হতে পারে। যাকে বলা হয় “স্পটিং”। এটি মোটেও ক্ষতিকর কিছু নয়। এটি তখনই হয় যখন বিকাশমান ভ্রূণটি আপনার গর্ভের প্রাচীরের মধ্যে গ্রো করা শুরু করে। এই ধরনের রক্তপাত প্রায়ই আপনার পিরিয়ডের সময় হয়। তাই ভয়ের কিছু নেই।
নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর আস্তরণে বৃদ্ধি পাবার সময় এটি হয়। নিষিক্ত হওয়ার ১ থেকে ২ সপ্তাহ পর হালকা রক্তপাত বা দাগ দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় জরায়ুমুখে সামান্য রক্তপাত হতে পারে। কারণ এই স্থানে আরও রক্তনালী তৈরি হতে থাকে।
মাথা ঘোরা বা মাথা ব্যাথা
প্রায়শই আমাদের মাথা ঘুরানো ও মাথা ব্যথা হতে পারে। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন এটা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কিনা? আপনি যদি গর্ভবতী হন, আপনি আপনার গর্ভাবস্থার প্রায় প্রথম সপ্তাহ থেকেই মাথা বেথার সমস্যা শুরু হবে। আর 9 সপ্তাহ এর মত আপনার মাথাব্যথা বৃদ্ধি লক্ষ্য করতে পারেন। হরমোনের পরিবর্তন, পাশাপাশি,
শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার মাথাব্যথা হতে পারে।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণ প্রকাশ
গর্ভবতী হলে অনেক মহিলারই ডায়াবেটিস লক্ষ করা যায়। এজন্য নিয়মিত রক্তের সুগার মেপে দেখতে হবে। গর্ভাবস্থায়, আপনার প্লাসেন্টা বিভিন্ন হরমোন তৈরি করে। যা আপনার রক্তে গ্লুকোজ তৈরি করে। সাধারণত, আপনার অগ্ন্যাশয় এটি পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট ইনসুলিন পাঠাতে পারে।
কিন্তু যদি আপনার শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না হয়? বা ইনসুলিনের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়? এসময়ে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এবং আপনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হন।
তবে এটি মোটেও ভাল লক্ষণ না। ডায়াবেটিস গর্ভাবস্থায় মহিলাদের এবং তাদের বিকাশমান শিশুদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। নয়ত গর্ভাবস্থায় জন্মগত ত্রুটি এবং অন্যান্য সমস্যার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে।
মুড সুইং
গর্ভাবস্থায় মেজাজের পরিবর্তন খুব সাধারণ। কিছু মহিলা গর্ভাবস্থায় অকারণে বিরক্তি কিংবা অতিরিক্ত রাগ অনুভব করেন। হরমোন পরিবর্তন এই মেজাজ পরিবর্তনের একটি কারণ। প্রতি মাসে পিরিয়ড আসার ঠিক আগে যেমন কিছু মহিলারা বিরক্তিকরতা অনুভব করেন। এই একই মহিলারা গর্ভাবস্থায় হতাশা এবং রাগের অনুভূতির সাথে লড়াই করেন।
একজন নারীর মেজাজের হঠাৎ অনেক বেশি পরিবর্তন হওয়াও তার আর্লি প্রেগ্ন্যাসির একটি সিম্পটম।
শারিরীক দুর্বলতা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আকস্মিক শারিরীক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করা রক্তে শর্করা ক্র্যাশ করতে পারে। যার ফলস্বরূপ, আপনি দুর্বল বা নড়বড়ে বোধ করতে পারেন। ডিহাইড্রেশন ও আপনাকে গর্ভাবস্থায় দুর্বল বোধ করতে পারে। আপনি যখন গর্ভবতী হন তখন আপনার শরীরে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যদি আপনি পর্যাপ্ত পান করতে ভুলে যান, তখন অলস বা ক্লান্তি বোধ করবেন।
সহজ কথায়, আপনি ক্লান্ত বোধ করছেন কারণ আপনার মধ্যে একটি শিশু বেড়ে উঠছে। হরমোনের পরিবর্তন ছাড়াও, শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনগুলি আপনার শক্তির মাত্রা কমিয়ে দেয়। এবং আপনাকে ক্লান্ত বোধ করায়। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে কয়েকটির মধ্যে রয়েছে: ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি। এগুলো গর্ভাবস্থায় আপনার শারীরিক ভাবে দূর্বল হবার কারণ।
মানসিক অবসাদ
মহিলারা গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথে বা গর্ভবতী থাকাকালীন এবং বাচ্চা হওয়ার পরের মাসগুলিতে বিষণ্নতার ঝুঁকিতে থাকেন। গর্ভাবস্থায়, হরমোনের পরিবর্তন মস্তিষ্কের রাসায়নিককে প্রভাবিত করতে পারে। এবং মানসিক বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। কখনও কখনও, গর্ভবতী মহিলারা বুঝতে পারেন না যে তারা বিষণ্ণ। অযথা মন খারাপ কিংবা সামান্য বিষয়ে হতাশা বোধ করেন।
গর্ভাবস্থায় কিছুটা উদ্বেগ স্বাভাবিক। সর্বোপরি, গর্ভধারণ আপনার জন্য সম্পূর্ণ নতুন। আপনি অতীতে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ত হন নি। তাই শারীরিক পরিবর্তন ও হরমোনাল চেঞ্জ আপনাার মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। কিন্তু যদি এই উদ্বেগগুলি দৈনন্দিন জীবনে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া যাবে না। কারন অতিরিক্ত মানসিক অশান্তি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ বা আঠালো সাদা স্রাব লক্ষ করতে পারবেন। গর্ভাবস্থায় যোনিপথে বেশি সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক। এটি যোনি থেকে গর্ভ পর্যন্ত ভ্রূণের যেকোনো সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর যোনি স্রাবকে লিউকোরিয়া বলা হয়। এটি প্রতিদিনের স্রাবের মতো। যার অর্থ এটি পাতলা, পরিষ্কার বা দুধের মত সাদা। এবং গন্ধ শুধুমাত্র হালকা বা একেবারে গন্ধহীন।
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে, স্রাবের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহে বা তার বেশি সময়ে, এতে আঠালো, জেলির মতো গোলাপী শ্লেষ্মা থাকতে পারে।
খাবারের রুচি পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে খাবারের রুচি পরিবর্তন খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। গর্ভাবস্থায় ডিসজিউসিয়া, বা আপনার স্বাদের অনুভূতিতে অনেক পরিবর্তন হয়। মূলত গর্ভাবস্থার হরমোনের নিঃসরণের কারণে ঘটে। এটি আপনাকে এমন একটি খাবার ঘৃণা করাতে পারে যা আপনি সাধারণত পছন্দ করেন বা আপনি সাধারণত অপছন্দ করেন এমন খাবার উপভোগ করতে পারেন।
কখনও কখনও এটি আপনার মুখের মধ্যে একটি টক টক বা তিক্ত স্বাদ সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি আপনি যদি আপনি কিছু না খান, খালিপেট থাকেন তখনও হতে পারে।
রিলেটেডঃ গর্ভবতী মায়ের ১-১০ মাসের খাবার তালিকা
ব্রেস্ট চেঞ্জ
স্তনের কোমলতা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের মতে, গর্ভধারণের ১-২ সপ্তাহের মধ্যে স্তন কালশিটে বা ভারী হয়ে যেতে পারে। স্তনের বোঁটায় স্পর্শকাতর বা পেইনফুল ফিল হতে পারে।
আপনি সম্ভবত গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে থেকে কোমলতা এবং স্থিতিশীলতা অনুভব করবেন। এসময়ে স্তন বড় হওয়ার সাথে সাথে ত্বকের নীচে শিরাগুলি আরও লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। স্তনের বোঁটা এবং স্তনের চারপাশের এলাকা (আরিওলা) গাঢ় ও বড় হয়। এরিওলাতে ছোট ছোট দাগ ও দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য
অনেক গর্ভবতী মহিলা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের কথা বলেন। কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শক্ত, শুষ্ক মল থাকা। প্রতি সপ্তাহে তিন বারের ও কম মলত্যাগ। এবং বেদনাদায়ক মলত্যাগ। গর্ভাবস্থার কারণে উচ্চ মাত্রার হরমোন হজমকে ধীর করে দেয়। এবং অন্ত্রের পেশী শিথিল করে। ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
এসিডিটি প্রবলেম
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি প্রাথমিক লক্ষণ হল আপনার হজমের পরিবর্তন, যেমন অম্বল বা এসিডিটি। বিশেষ করে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর যদি আপনি বুক জ্বালাপোড়া অনুভব করেন। এটি রান্নার সমস্যা নাও হতে পারে। এটি এসিডটি হতে পারে যা গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত।
গর্ভাবস্থা আপনার অম্বল বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রথম ত্রৈমাসিকের সময়, আপনার খাদ্যনালীর পেশীগুলি খাবারকে আরও ধীরে ধীরে পেটে ঠেলে দেয়। তাই আপনার পেট খালি হতে বেশি সময় নেয়। এটি আপনার শরীরকে ভ্রূণের জন্য পুষ্টি শোষণ করার জন্য আরও সময় দেয।, তবে এর ফলেই এসিডিটি হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী কি না? এই ৮ টি লক্ষণ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দেখা যাবে
পেটে ব্যাথা
অনেক মহিলা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের পেটের ভিতরে ব্যথা অনুভূতি অনুভব করেন। তাদের পেশীতে টান বা পেটের পেশি প্রসারিত হওয়ার মত অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কখনও কখনও একে ‘অ্যাবডোমিনাল টুইঙ্গস’ হিসাবে সজ্ঞায়িত করা হয়। এই টিংলসগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
এগুলো মূলত ভ্রুণের গ্রোথের কারণে হয়। এই ব্যথা গর্ভাবস্থার শুরুতে শুরু হতে পারে এবং জরায়ুতে ও পেটের নাভীর চারপাশে চাপের অনুভূতি হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব বেগ
গর্ভাবস্থা শরীরের তরল মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিডনির কার্যকারিতা আগের থেকে বেড়ে যায়। কারণ এসময়ে জরায়ু ফুলে যায়। এটি মূত্রাশয়ের বিরুদ্ধে চাপ দেয়। ফলস্বরূপ, বেশিক্ষন তরল পদার্থ ধরে রাখা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ মহিলা গর্ভবতী হওয়ার প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও ঘন ঘন প্রস্রাব অনুভব করতে শুরু করেন।
তবে এটি কত তাড়াতাড়ি শুরু হতে পারে তা বলা যায় না। প্রতিটি মহিলার জন্য এটি আলাদা কিন্তু আপনি গর্ভাবস্থার প্রায় ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে প্রায়শই এটি হয়তো লক্ষ করতে পারেন।
অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
গর্ভাবস্থার খুব প্রাথমিক লক্ষণগুলি মধ্যে শরীরে অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দেখা যায়। যেমন গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং সেনসিটিভ স্তন। আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে থেকেই এসব সিম্পটম দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণের কয়েকদিন পরেই, অর্থাৎ শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর থেকেই আপনার শরীর বেশি স্পর্শকাতর ও সেনসিটিভ হয়ে উঠতে পারে।
অনিয়মিত ঘুম
বেশিরভাগ মহিলারা গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা অনুভব করেন। গর্ভবতী মহিলারা তাদের প্রথম ত্রৈমাসিকে বেশি ঘুমাতে থাকে। কিন্তু তাদের ঘুমের রুটিনে একটি বড় পরিবর্তন অনুভব করে। দেখা যাচ্ছে যে গর্ভাবস্থা আপনাকে সারাদিন ক্লান্ত বোধ করতে পারেন। এটি রাতে অনিদ্রার কারণ হতে পারে।
যদিও গর্ভাবস্থায় অনিদ্রা একটি সাধারণ ঘটনা তবে এটি অনেক সময়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। কেননা শরীরে ভ্রুনের বৃদ্ধি শুরু হবার সাথে সাথে অতিরিক্ত যত্ন, রেস্ট ও রিল্যাক্সের প্রয়োজন। এসময়ে অপর্যাপ্ত ঘুম আপনার মানসিক অশান্তি তৈরি করতে পারে। তাছাড়া অনিদ্রার কারণে মেজাজ খিটখিটে ও ক্লান্তি অনুভব হয়।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো সব সময়ে সুনিশ্চিত ফলাফল নাও দিতে পারে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে বিভিন্ন সিম্পটম মিলে যেতে পারে। তাই একটি দুটি লক্ষণ দেখেই আসলে বোঝা যায় না আপনি গর্ভবতী কিনা। তাই উপরের বলা লক্ষণ গুলির তিন চার টা মিলে গেলেই মোটামুটি ধারণা করা যেতে পারে। তবে একদম পুরোপুরি নিশ্চিত হতে দরকার হয় প্রেগন্যান্সি টেস্টের।
একটি প্রেগ্ন্যাসি পরীক্ষা আপনার প্রস্রাব বা রক্তে একটি নির্দিষ্ট হরমোন পরীক্ষা করে। এটি নিশ্চিত ভাবে আপনি গর্ভবতী কিনা তা বলতে পারে। এই হরমোনটিকে মানব কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (এইচসিজি) বলা হয়।
জরায়ুতে নিষিক্ত ডিম্বাণু ইমপ্লান্ট করার পর একজন মহিলার প্লাসেন্টায় HCG তৈরি হয়। এটি সাধারণত শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় তৈরি করা হয়। এটি ইউরিন বা ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। এবং সহজেই আপনি গর্ভবতী কিনা জানা যায়।
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ বা পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি হলোঃ
- পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অনত্যম লক্ষণ হল মাথা ব্যাথা
- হরমোনের পরিবর্তনের ফলে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- অন্তঃসত্ত্বা হলে সাধারণত ব্লাড প্রেশার কমে যায়, ফলে মাথা ঘুরা গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।
- স্মেল সেন্স বেড়ে যাওয়া, সবকিছুতেই বাজে ও বিরক্তিকর গন্ধ পাওয়া
- ক্লান্তি ও অবসাদ বেড়ে যাওয়া
- স্তন ফুলে যাওয়া ও স্তনে ব্যথা হওয়া গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের প্রধান লক্ষণ
- সাদা স্রাব বেড়ে যাওয়া, সেই সাথে স্বভাবিকের তুলনায় আঠালো হওয়া
- শরীরের তাপমাত্রার স্বাভাবিকেরচেয়ে বেড়ে যাওয়া, এবং এই তাপমাত্রা যদি টানা কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে তাহলে এটি পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?
সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার ১-৩ দিনের মধ্যেই আপনি প্রেগন্যান্ট কি না বুঝা যাবে, এজন্যে আপনাকে উপরের পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলি মিলিয়ে দেখতে হবে। যদি দেখেন অধিকাংশ লক্ষণই মিলে যাচ্ছে তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেছেন। এছাড়া আপনি যদি ১০০% নিশ্চিত হতে চান তাহলে আপনার উচিত প্রেগন্যান্সি কিট কিনে নিজে নিজে পরীক্ষা করা। অথবা কোন হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল টেস্ট করা।
লক্ষন ছাড়া গর্ভবতী হওয়া সম্ভব?
এটার সঠিক উত্তর বলা মুশকিল, তবে ৯৯% মহিলার ক্ষেত্রে কনসিভ হওয়ার কোন না কোন লক্ষণ ধরা পড়বেই। আপনি যদি লক্ষন ছাড়া গর্ভবতী হওয়ার কোন সম্ভবাবনা অনুভব করে থাকেন তাহলে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে যত তারাতারি সম্ভব কোন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সহায়তা নিতে পারেন, এ ব্যপারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারাই আপনাকে পরিপূর্ণ সহায়তা করতে পারবে।
গর্ভাবস্থায় শরীর জ্বালাপোড়া হয়?
গর্ভাবস্থায় শরীরে অনেকের ই জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে, তবে এই জ্বালাপোড়া সবার ক্ষেত্রে একইভাবে হয় হয় না। কারো ক্ষেত্রে অনেক বেশি জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে আবার কারো ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় শরীর জ্বালাপোড়া একবারেই হয় না। এটা নির্ভর করে মেটাবলিজম হরমোনের উপর, যদি এই হরমোন আপনার ক্ষেত্রে বেড়ে যায় তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে, যার ফলে গর্ভাবস্থায় শরীর জ্বালাপোড়া হতে পারে।
আবার যদি মেটাবলিজম হরমোন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, সেক্ষেত্রে শরীর জ্বালাপোড়া করবে না।
শেষ কথা
গর্ভবতী হওয়া একজন নারীর জন্য একটি নতুন জীবনের সূচনা। নিজের ও পরিবারের দায়িত্বের পাশাপাশি যোগ হয় নতুন একটি প্রাণের। যার বৃদ্ধি, পুষ্টি, সর্বোপরি আপনার ওপর নির্ভর করে। অন্তত আপনার গর্ভে থাকা পর্যন্ত আপনার স্বাস্থ্যের ওপর অনাগত শিশুর শারিরীক অবস্থা পুরোপুরি নির্ভরশীল।
এজন্য প্রেগ্ন্যাসির শুরুর দিকেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো ধরতে পারা খুবই জরুরি। আশা করি আমাদের দেয়া লক্ষণ গুলো থেকে আপনি যথাসময়ে আপনার গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।