তলপেটে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার । ২০২৪

তলপেটের ব্যথা

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

আমাদের তো প্রায়ই তলপেটে ব্যথা হয় তাই না? আমরা প্রায় সবাই কখনো না কখনো এই সমস্যায় ভুগে থাকি। ছেলেদের থেকে মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় তলপেটে ব্যথার সমস্যা। পরিসংখ্যান বলে, প্রতি পাঁচ জন নারীর মধ্যে, একজনের মধ্যে হলেও এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য সব ছোটখাটো সমস্যার মত, এই সমস্যাটা আমরা এড়িয়ে যাই।

গবেষণায় জানা যায় যে বেশিরভাগ পুরুষ যারা তলপেটে ব্যথা অনুভব করেন তারা কখনই চিকিৎসা নেন না। এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? আপনি জানেন কি তলপেটে ব্যথার কারণ কি? এটি কতটা ভয়াবহ হতে পারে? আর এই সমস্যার প্রতিকার কি?

কথায় আছে “বাঁচতে হলে জানতে হবে” তাহলে চলুন আজকে জেনে নেই ছেলে মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও এই সমস্যা থেকে মুক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত।

তলপেটে ব্যথার কারণ

আগেই বলেছি তলপেটে ব্যথা মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। মাসিক হলে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কম দেখা গেলেও একদমই যে দেখা যায় না এমন না। এই সমস্যাটি উভয় লিঙ্গের মানুষের নানাবিধের কারণে হয়ে থাকে।

সমস্যাটি সবার হয় না এবং যাদের হয়, তাদের ক্ষেত্রে সমান মাত্রারও হয় না, সাথে সাথে হওয়ার কারণগুলোও ভিন্ন হয়ে থাকে। তলপেটে ব্যথা হতে পারে বড় কোন সমস্যার লক্ষণ, আবার হতে পারে ছোট কোন সাধারণ সমস্যার জন্যও। যে কারনেই হোক না কেন, এই সমস্যাকে অবহেলা করা কখনোই উচিত না।

যেসব কারণে আপনার তলপেটে ব্যথা হতে পারে-

এন্ডোমেট্রিওসিস

এন্ডোমেট্রিওসিস হল জরায়ুর বাইরে কোষের (এন্ডোমেট্রিয়াম) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা সাধারণত থাকে জরায়ুর ভিতরে। এই এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ, যদি বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ওই জায়গা থেকে প্রত্যেক মাসিকের সময় রক্তক্ষরণ হয়, তখন সেখানে ছোট ছোট সিস্ট হতে পারে, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় চকলেট সিস্ট। এটি হলে পেটে চিন চিন ব্যথা থাকে। যখন মাসিক হয় তখন অনেক ব্যথা থাকে। মাসিক চলাকালীন এই ব্যথা বাড়তেই থাকে এবং মাসিক শেষ হয়ে গেলেও এই ব্যথা থেকে যায় কারো কারো ক্ষেত্রে। এ সমস্যার সমাধান একটু জটিল হয়ে থাকে।

ফাইব্রয়েড

ফাইব্রয়েড হল জরায়ুর মাংসপেশীর অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া। একে এক ধরনের টিউমারও বলা যায়, যা জরায়ুর মসৃণ পেশি কোষ থেকে তৈরি হয়। এই মাংসপেশী, জরায়ুর বাইরের দিকে অথবা মাংসের ভিতরে কিংবা জরায়ুর ক্যাভিটির ভিতরে যদি অতিরিক্ত মাংস হিসেবে বৃদ্ধি পায় তাহলে তাকেই মেডিকেল সাইন্সের ভাষায় ফাইব্রয়েড বলে হয়ে থাকে।‌ এই ফাইব্রয়েড যদি ছোট থাকে তাহলে তেমন কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না‌। কিন্তু এটি বড় হলে অথবা জরায়ুর ভিতরে থাকলে মাসিকের সময় এটি অতিরিক্ত ব্যথার কারণ হতে পারে।

এছাড়া অন্যান্য সময় যদি এটি বড় হয় অস্বাভাবিকভাবে অথবা যদি এতে কোন পরিবর্তন হয়, তখন এটি তলপেটে ব্যথার একটি কারণ হতে পারে। এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায় প্রজননক্ষম বয়সে। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাদের কাছে আসা গাইনি সমস্যায় জর্জরিত রোগীদের একটা বড় অংশ আক্রান্ত থাকে ফাইব্রয়েডে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য কখনো কখনো  আপনাকে অপারেশনও করার দরকার হতে পারে।

পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজেস)

এটি মূলত মহিলাদের প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণ। এক্ষেত্রে জরায়ুর ইনফেকশন যদি জরায়ুর মুখ থেকে ভিতরে অথবা জরায়ুর অন্যান্য জায়গায় যেমন টিউবে ছড়িয়ে পড়ে তখন এই পেলভিক প্রদাহজনিত রোগটি হয়ে থাকে। তখন তলপেটে ব্যথা অন্যান্য আরো অনেক সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ডাক্তাররা ইনফেকশন সৃষ্টিকারী জীবাণু ভেদে বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকেন।

ওভারিয়ান সিস্ট

এই নামটা শুনেনি এমন মানুষ আসলে কমই আছে। ছোট ছোট অনেক সিস্ট নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয় কে ঘিরে রেখে থাকে। এদের মধ্যে সব সিস্ট আসলে ক্ষতিকর না। কিন্তু কিছু সিস্টের অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি আপনার চিন্তার কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে এমন কিছু কিছু সিস্টের জন্য তলপেটে ব্যথা সহ আরো অনেক সমস্যা দেখা যায়।

আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিস্টেম)

এটি একটি খুবই পরিচিত এবং বিরক্তিকর সমস্যা। আমাদের চারপাশে প্রায় অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের একটি কার্যগত বা ফাংশনাল সমস্যা হল এই আইবিএস। এর ফলে নানান রকম পেটের সমস্যা দেখা যায়। ব্যক্তি ভেদে বিভিন্ন রকমের উপসর্গ দেখা যায় এই সমস্যার জন্য। যেমন পেটে অতিরিক্ত ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। সাধারণত যুবক বয়সেই এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে এবং শুরু হয়ে থাকে। সাধারণত নারীরা এই সমস্যা বেশি ভুগে থাকে।

IBS
IBS

ইনফেকশন

নারীদের ক্ষেত্রে মূত্রথলি অথবা মূত্রনালীর ইনফেকশন গুলো অনেক বেশি হয়। এর মূল কারণ হলো নারীদের প্রস্রাবের রাস্তা এবং মাসিকের রাস্তা একদম কাছাকাছি হওয়ার ফলে জীবাণুরা খুব সহজে প্রস্রাবের থলিতে চলে যেতে পারে। এবং জীবানু কখনো মূত্র থলিতে বা মুত্রনালীতে প্রবেশ করলে সংক্রমণ দেখা যায়। যার ফলে রোগী পেট ব্যথা অনুভব করেন। এছাড়াও নারীদের আরো অনেক ধরনের ইনফেকশন হতে পারে যেমন ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন।

এক্ষেত্রে  ইউরেটার, কিডনি কিংবা প্রস্রাবের থলিতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রেও রোগী তলপেটে ব্যথা অনুভব করে এবং তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়।

মূত্রনালীর পাথর

কিডনি, মূত্রথলী, পিত্তথলি, অগ্নাশয় সহ মানবদেহের আরো কয়েকটি স্থানে পাথর হয়ে থাকে। মানবদেহে এই পাথর আসলে কেন হয় তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত দিতে পারেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে পাথরগুলো যা দ্বারা তৈরি হয় যেমন ক্যালসিয়াম, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, অক্সালেট ইত্যাদি এসবের স্ফটিক গুলো ধীরে ধীরে জমে পাথরের সৃষ্টি  করে।

অতঃপর এই পাথর বড় হয়ে যখন সরু মূত্রনালীর ভিতর দিয়ে যায় তখন ওই নালীর ভিতরে বাধার সৃষ্টি করে এবং প্রস্রাবের গতি ব্যাহত করে। যার ফলে রোগী প্রচন্ড এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা অনুভব করে থাকেন।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস

সাধারনত পেটের ডান পাশের ব্যথা হওয়ার কারণ হলো এই অ্যাপেন্ডিসাইটিস। মানুষের বৃহদন্ত্রের সঙ্গে কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মত লেগে থাকা একটা সরু নলের নাম এপেনডিক্স। এটি থাকে  তলপেটের ডান দিকে এবং লম্বায় এটি ২ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্তও হতে পারে। এই অ্যাপেন্ডিক্সের যখন প্রদাহ হয়, তখন তাকেই অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলে।

এর ফলে নাভির চারপাশে অথবা নাভির একটু উপর থেকে ব্যথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে তলপেটের ডান দিকে ব্যথাটা ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথা তীব্র ও হালকা হতে পারে এবং এছাড়াও অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর জন্য জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে।

হার্নিয়া

হার্নিয়া: একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ হল ছিদ্র‌।‌ এটি একটি জটিল রোগ এবং এর মূল উপসর্গ হলো ব্যথা। হার্নিয়া পেটের অন্ত্রের একটি রোগ। এর কারণে মূলত পেটের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। অতঃপর সেই দুর্বল জায়গা থেকে অন্ত্র বেরিয়ে আসে। মানবদেহে নানা ধরনের হার্নিয়া দেখা যায়। এই সমস্যা বিশেষত পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, এবং সমস্যা সমাধানের জন্য অস্ত্রপচারের দরকার পড়ে। আগেই বলেছি এর প্রধান উপসর্গ হলো ব্যথা। কিন্তু হার্নিয়া হলেই সবসময় উপসর্গ দেখা যায় না।

মূত্রথলীর ক্যানসার

মানুষের শরীরে নানান ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকে। এদের মধ্যে একটি অতি সাধারণ ধরনের ক্যান্সার হল মূত্রথলির ক্যান্সার। সমীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে যত পুরুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকই মারা যান মূত্রথলির ক্যান্সারের জন্যই। এই ধরনের ক্যান্সার হলে নানান লক্ষণ এর মধ্যে তলপেটে ব্যথা হয় একটি অন্যতম লক্ষণ। একটু ভেবে দেখেন তো তাহলে, তলপেটে ব্যথা কি আসলেই সাধারণ একটা ব্যাপার? উত্তরটা, আপনার কাছেই থাক।

প্রোস্টাটাইটিস

প্রোস্টাটাইটিস হল প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ। প্রোস্টেট গ্রন্থি পুরুষদের মূত্রাশয়ের একদম নিচে অবস্থিত আখরেট আকারের একটি গ্রন্থি। যখন এই পোস্টেট গ্রন্থিতে প্রদাহ হয়, তখন তাকে প্রোস্টাটাইটিস বলে। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত অনেক ধরনের প্রোস্টাটাইটিস সনাক্ত করেছেন। এর ফলে প্রস্রাবের ব্যথা অনুভব হওয়া, তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবের নানাবিধ অসুবিধাও দেখা যায়। তবে সব ধরনের পোস্টাটাইটিসের ফলে উপসর্গ দেখা যায় না।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এটির কারণেও তলপেটের নিচের অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সম্পূর্ণ মলত্যাগের পর সাধারণত এই ব্যথা আর থাকে না।

মাথা ব্যথা
কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ফলে মাথা ব্যথা ও হয়ে থাকে

তলপেটে ডান পাশে ব্যথার কারণ

তলপেটে ডান পাশে ব্যথা অনেক কারণে হতে পারে, যেমন কিডনিতে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর, পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, মূত্রথলীর ক্যানসার, মূত্রথলীতে ইনফেকশন, হার্নিয়া, পোস্টেট গ্রন্থিতে প্রদাহ ইত্যাদি নানান কারণে তলপেটে ডান পাশে ব্যথা হতে পারে। যেকারণেই এই ব্যথা হোক না কেন দুই দিনের বেশি এই ব্যথা স্থায়ী হলে তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞড ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

তলপেটে বাম পাশে ব্যথার কারণ

তলপেটে ডান পাশে যেসকল কারণে ব্যাথা হয়ে থাকে ঠিক একই কারণে তলপেটে বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। যেমন কিডনিতে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর, পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, মূত্রথলীর ক্যানসার, মূত্রথলীতে ইনফেকশন, হার্নিয়া, পোস্টেট গ্রন্থিতে প্রদাহ ইত্যাদি নানান কারণে তলপেটে বাম পাশে ব্যথা হতে পারে

ছেলেদের তলপেটে ব্যথার কারণ

তলপেটে ব্যথা শুধু মাত্র কোন একটি কারণে দেখা দেয় না, এর পেছনে ভিন ভিন্ন কারণ হতে পারে, আবার ছেলেদের ক্ষেত্রে যেসব কারণ হয়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠিক একই কারণে ব্যথা হয় না, একেক জনের একেক কারণে তলপেটে ব্যথা দেখা দেয়।

তার মধ্যে সচারাচর যেসব কারণে ছেলেদের তলপেটে ব্যথা হয় তা হলঃ পেটে গ্যাস, অন্ডকোষে ইনফেকশন যাকে আমরা টেস্টিকুলার পেইন বলেও চিনি, কোন কিছুর আঘাত, কিডনিতে পাথর বা ইনফেকশন, লিভারের সমস্যা, অ্যাপেন্ডিসাইটিস, ফুড ইনফেকশনের ফলে ছেলেদের তলপেটে ব্যথা হয়।

মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ

মেয়েদের তলপেটে ব্যথার অন্যতম কারণ হলো রজঃস্রাব বা মাসিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের কারণে কোমর ও তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে, এছাড়াও কিডনিতে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর, পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, মূত্রথলীর ক্যানসার, মূত্রথলীতে ইনফেকশন, হার্নিয়া, পোস্টেট গ্রন্থিতে প্রদাহের ফলে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হয়।

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথার কারণ

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হওয়া খুব স্বাভাবিক, মেয়েদের শরীরে অনেক ধরণের টিস্যু থাকে, লিগামেন্ট হলো সুতার মতো কিছু টিস্যু। শরীরের বিভিন্ন হাড় ও জয়েন্ট (গিরা) লিগামেন্ট এর মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে। গর্ভাবস্থায় শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করতে প্রাকৃতিকভাবেই এসব লিগামেন্ট নরম ও ঢিলেঢালা হয়ে যায়। ফলে কোমর ও কোমরের নীচের অংশের হাড়গুলোর ওপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যার ফলে গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা হয়।

তলপেটে ব্যথার প্রতিকার

আমরা তলপেটে ব্যথা হওয়ার মোটামুটি সব কারণগুলো সম্পর্কে জেনেছি। এদের মধ্যে কিছু আছে খুবই সাধারণ কারণ, আবার আমরা এমন কিছু কারণ সম্পর্কে জেনেছি যা খুবই মারাত্মক। এখন প্রশ্ন হল এর থেকে প্রতিকারের উপায় কি? চলুন এবার জেনে নেই তল পেটে ব্যাথা হলে করনীয় কিছু প্রতিকার সম্পর্কে।

  • তলপেটে ব্যথা হলে সব সময় নিশ্চিন্ত থাকা উচিত না। আমাদের দেশে সাধারণত তলপেটে ব্যথা কে একটি মামুলি সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সব সময় তলপেটের ব্যথাই যে খুব ছোট সমস্যা এমন কিন্তু না। অনেক অনেক সময় অনেক মরণ ব্যাধির প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে এই তলপেটে ব্যথা হওয়া। তাই খুব বেশি ও লম্বা সময় ধরে তলপেট ব্যথা করলে, মোটেই‌ হেলাফেলা করবেন না। সাবধান থাকতে হবে আপনাকে। অবস্থা খারাপ বুঝলে অবশ্যই চিকিৎসাকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • মেয়েদের ক্ষেত্রেও দল পেটের তীব্র ব্যথাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। ব্যথা যদি খুব তীব্র হয় এবং আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে, সাথে ব্যথার স্থায়িত্ব বাড়তে থাকলে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে যদি হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে আপনি মাসিকের শেষ তারিখের সাথে আজকের তারিখটা মিলিয়ে দেখুন। ব্যথাটি গর্ভপাত বা ডিম্বনালিতে ভ্রণের ব্যথা কিনা, সে সম্পর্কে সচেতন থাকুন। আর আপনাকে অবশ্যই প্রচুর পানি পান করতে হবে।
  • প্রস্রাব আটকে রাখার বদ অভ্যাস থেকে, পরবর্তীতে অনেক বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই কখনোই প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই প্রস্রাব করে ঘুমাতে হবে যাতে মূত্রথলি‌ খালি থাকে।

বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা

সমস্যার ধরন ভেদে তলপেটে ব্যথার চিকিৎসার ধরণও ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন অনেক সমস্যার সমাধানের জন্য অস্ত্রপ্রচারের প্রয়োজন পড়তে পারে, আবার অনেক সময় অল্প কিছুদিনের চিকিৎসায়ও তলপেটে ব্যথা হওয়ার অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে তলপেটে ব্যথা দেখা দিলে, শুরুতেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া অতি উত্তম।

  • আপনার তলপেটে ব্যথার কারণটি যদি হয়ে থাকে এন্ডোমেট্রিওসিস, তাহলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এর চিকিৎসা হিসেবে ডাক্তাররা কখনো কখনো হরমোনাল ট্রিটমেন্ট অথবা কখনো কখনো অপারেশনও করে থাকেন।
  • ফাইব্রয়েড এর কারণে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকলে ডাক্তাররা হরমোনাল ট্রিটমেন্ট অথবা কিছু ব্যথার ওষুধ সাজেস্ট করে থাকেন। পরবর্তীতে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ফাইব্রয়েড ফেলার অপারেশনও করে থাকেন।
  • হার্নিয়া হলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হয়। নয়তো পরবর্তীতে এটি থেকে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর মূল চিকিৎসা হল অস্ত্রোপচার। কিন্তু হার্নিয়া হলে অনেকেই নানান ধরনের কবিরাজি চিকিৎসা ও অপচিকিৎসার শরণাপন্ন হয়। এতে করে জটিলতা কমার চেয়ে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এজন্য হার্নিয়া হলেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • হার্নিয়ার মতোই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মূল চিকিৎসা হলো অস্ত্রপচার। একটি মানবদেহে একবার সংক্রমিত হলে বারবার সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সনাক্ত হওয়ার সাথে সাথেই অস্ত্রোপচার করাই উত্তম। তবে রোগির শারীরিক সক্ষমতা ও সংক্রমণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক অন্যান্য পরামর্শও দিতে পারেন।
  • আপনার তলপেট যদি সবসময় ব্যথা হয়েই থাকে, তাহলে সেটা স্টোনের কারণেও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং সমস্যা গুরুতর হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্টোন বা পাথর দূর করতে হবে।
  • আপনার যদি কখনও  ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস এর জন্য তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে এই অপ্রিয় সত্যটা মেনে নিতে হবে যে, আপনার এই সমস্যার পুরোপুরি কোন সমাধান নেই। কিন্তু আপনি চাইলে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে আনতে হবে খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন। যেসব খাবারে পেটের সমস্যা বাড়ে সেসব খাবার এড়িয়ে আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে‌।

এছাড়াও নিয়মমাফিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, আগে থেকেই সতর্ক থাকা ইত্যাদি আপনাকে এই তলপেটে ব্যথাসহ আরও অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে পারে।

শেষ কথা

পরিশেষে বলবো, শরীরের কোন সমস্যাকেই আসলে ছোট করে দেখা উচিত না। আর তলপেটে ব্যথার সমস্যা? সেটি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি হয়ত এতক্ষণে খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই, সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে ছেলে মেয়ে উভয়েই তলপেটে ব্যথা থেকে দূরে থাকতে পারে।

তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকে আমাদের লেখা ছেলে মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কিসের লক্ষণ, ছেলে ও মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণ, কোমর ও তলপেটে ব্যথার ঘরোয়া ও প্রথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে কিংবা এই লেখা সম্পর্কে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

সবাই ভালো থাকবেন, আজকের মতো এখানেই বিদায়।

তথ্যসুত্রঃ

১। https://shohay.health/pregnancy/pregnancy-backache
২। https://www.parents.com/pregnancy/my-body/aches-pains/pregnancy-abdominal-pain/
৩। https://www.healthline.com/health/stomach-cramps-in-men

Author

Scroll to Top