বিয়ের পর সহবাসের নিয়ম, সহবাসের পদ্ধতি, সহবাসের দোয়া | ২০২৪

সহবাসের নিয়ম নীতি

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

আর তার নিদর্শনবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের সঙ্গিণীদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। – (সূরা আররুম ২১)

উপরের আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় স্ত্রী সহবাস হচ্ছে শান্তির জায়গা, তবে এই শান্তি পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে সহবাসের নিয়ম নীতি সম্পর্কে জানতে হবে। বিয়ের পর সহবাস নিয়ে আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত থাকি, অনেক সময় ভুলে যাই ইসলাম আমাদের জন্য কি কি বৈধ করেছে ও কি কি করতে নিষেধ করেছে।

তো আজকের লেখায় আমরা জানবো ইসলামিক সহবাসের নিয়ম নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত A To Z। এই লেখা পড়া শেষে আপনি জানবেন একজন মুসলিম হিসাবে সহবাসের যত রকমের আদেশ নিষেধ দেওয়া হয়েছে, এবং ধাপে ধাপে কিভাবে ইসলামিক নিয়ম কানুন মেনে দীর্ঘ সময় স্ত্রীর সাথে সহবাস করবেন।

আমরা আরো জানবো সহবাসের দোয়া, সহবাস করার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি, সহবাসের সময় স্বামী ও স্ত্রীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে দেরী না করে চলুন শুরু করা যাক।

স্ত্রী সহবাসের নিয়ম

চলুন জেনে নেই স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম ও পদ্ধতিগুলি।

নিয়ত করা

স্ত্রী সহবাসের প্রথম ধাপ হলো মনে মনে মনোস্থির করা, যাকে বলে নিয়ত করা। সহবাস হলো দুটি নর নারীর পবিত্র মিলন, যার মাধ্যমে দুনিয়াতে আমরা আমাদের অনাগত সন্তানদের আসার সুযোগ সৃষ্টি করি। সহবাস ছাড়া সন্তান জন্মদান অসম্ভব।

এবং দৈহিক ও মানসিক শান্তির জন্যে সহবাসের রয়েছে অনেক উপকারিতা। তাই সহবাসের আগে অবশ্যই এই নিয়ত করতে হবে যেনো আল্লাহ তাওয়ালা উভয়কে হারামের হাত থেকে রক্ষা করেন, এবং শয়তানদের দূরে রাখেন।

নামাজ পড়া

এবং প্রথম সহবাসের দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে নামাজ বা সালাত আদায় করা। তার আগে বিভিন্ন হাদিসে এসেছে বাসর ঘরে ডুকে স্ত্রীর সাথে সদয় ব্যবহার করা এবং স্ত্রীর মাথায় হাত রাখা ও তার জন্যে দোয়া করা। পরে দুধ বা শরবত পান করা।

আর উচিত হল যে, বাসরের বা তার পূর্বে স্বামী তার হস্তকে স্ত্রীর মাথার অর্গভাগে রাখবে। এবং আল্লাহ তাবারকা ওয়াতা’আলা এর নাম নিবে ও বারকাতের দু’আ করে। আল্লাহর রসূল এর বাণীতে যা এসেছে তা বলবে।

নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তোমাদের কেউ যখন কোন মহিলাকে বিবাহ করবে অথবা চাকর ক্রয় করবে, সে যেন তার কপাল ধরে এবং আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা-এর নাম পড়ে ও বারকতের দু’আ করে । আর যেন সে বলে, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট তার মঙ্গল ও যে মঙ্গলের উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা প্রার্থনা করছি। আর তার অমঙ্গল ও যে অমঙ্গলের উপর তাকে পয়দা করেছেন তা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।

এর পর স্বামী স্ত্রী উভয়েই দুই রাখাত মুস্তাহব নামাজ পড়বে। এই নামাজের সঠিক কোন নিয়ম নাই, এবং কোন বড় দলিলও নাই যে নামাজ পড়তেই হবে। তবে আমি অনেক বই ঘাটাঘাটি করে দুইটি হাদিস পেয়েছি যে, বাসর রাতে নামাজ পড়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

নামাজ পড়া
সহবাসের আগে স্বামী স্ত্রীর নামাজ

প্রথম হাদিসঃ আবূ উসাইদের মাওলা আবূ সাঈদ থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, (আমি দাস অবস্থায় বিবাহ করলাম। অতঃপর নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের (রাঃ) একটি ছোট দলকে দাওয়াত দিলাম। তাদের মধ্যে ইবনু মাসউদ, আবূ যার এবং হুযাইফা (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সলাতের ইকামাত দেয়া হল । তিনি বলেন, অতঃপর আবূ যার সামনে যেতে শুরু করলেন, অতঃপর তাঁরা বললেন, সাবধান! যাবেন না। তিনি বললেন, অনুরূপ কি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ।(১) তিনি বলেন, আমি তাদের সামনে গেলাম । অথচ আমি একজন দাস । অতঃপর তাঁরা আমাকে শিক্ষা দিয়ে বললেন, (যখন তোমার স্ত্রী তোমার কাছে আসবে তখন দু’রাক’আত সলাত পড়বে। তারপর তোমার কাছে যে প্রবেশ করেছে আল্লাহর কাছে তার মঙ্গল প্রার্থনা করবে এবং তার খারাপী থেকে আশ্রয় চাবে। তারপর তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপার।

দ্বিতীয় হাদিসঃ  শাকীক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : জনৈক ব্যক্তি আগমন করল, তাকে আবূ হারীয বলে ডাকা হত। তারপর তিনি বলেন, নিশ্চয় আমি একজন যুবতী কুমারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। আর আমি ভয় করছি যে, সে আমাকে অসন্তুষ্টি করবে। 

তারপর আবদুল্লাহ অর্থাৎ ইবনে মাসউদ বললেন, নিশ্চয় বন্ধুত্ব ভালবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে আর রাগ অসন্তুষ্টি শাইতনের পক্ষ থেকে। শাইতন ইচ্ছা করছে যে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বৈধ করেছেন তা সে তোমাদের নিকট ঘৃণা সৃষ্টি করবে । 

সুতরাং সে যখন তোমার কাছে আসবে তখন তাকে জামা’আত সহকারে তোমার পিছনে দু’ রাক’আত সলাত পড়তে নির্দেশ দিবে। ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর অন্য বর্ণনায় বৃদ্ধি আছে, তিনি বলেছেন : তুমি বল :

হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দান কর এবং তাদের স্বার্থে আমার মাঝে বরকত দিন। হে আল্লাহ! আপনি যা ভাল একত্রিত করেছেন তা আমাদের মাঝে একত্রিত করুন। আর যখন কল্যাণের দিকে বিচ্ছেদ করবেন – তখন আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ করুন।

হাদিসের রেফারেন্সঃ মুসান্নাফে আবূ বাকার বিন আবি শাইবাহ, মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক (৬/১৯১/১০৪৬০- ১০৪৬১) তার সানাদ সহীহ। তাবারানী ৩/২১/২ সহীহ সনদদ্বয়ে বর্ণনা করেছেন।

বাসর রাতের নামাজের নিয়ত

বাসর রাতের নামাজের নিয়ত অন্যান নফল নামজের নিয়তের মতই করতে হবে। এই নামাজের নির্দিষ্ট কোন নিয়ত নাই। তাই আপনি আমি যেভাবে নফল নামাজ পড়ি সেভাবে বাংলাতে এই নামাজের নিয়ত করা যাবে এই বলে 

“হে আল্লাহ আমি আপনার দরবারে স্ত্রী সহবাসের আগে দুই রাকাত নফল নামাজের জন্যে দাড়ালাম, আমার নামাজকে আপনার দরবারে কবুল করে নিন, এবং আমাদের নেক সন্তান দান করুন”

সহবাসের দোয়া পড়া

এই পর্যায়ে এসে সহবাসের আগে নিচের দোয়াটি পড়া সুন্নত। চলুন দেখে নেই সহবাসের দোয়াটি।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে যদি উক্ত দো’আ বলে তারপর তাদের কিসমতে কোন সন্তান থাকলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ৷

বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্ শাইত্বা-না ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বা-না মা রাঝাক্বতানা।

আরবী উচ্চারণ: بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

বাংলা অর্থ: ‘আল্লাহ্র নামে আরম্ভ করছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ’। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৩০৪ ।

সহবাসের সময় আদর সোহাগ করা

সহবাসের দোয়া পড়ার পরে স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে আদর সোহাগ করবে, এই বিষয়ে স্পষ্ট হাদিস আছে যা আমরা পরের সেকশনে দেখবো, স্ত্রী সহবাসের আগে অবশ্যই একে অপরকে আদর সোহাগ করা উচিত, যেমন একে অপরের হাত ধরা, কপালে চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি।

সহবাসের আগে এসব দুজনকে মিলনের প্রতি বেশি আগ্রহী করে তুলবে, যার ফলে সহবাস হবে খুব মধুর ও রঙ্গিন।

ইসলামিক সহবাসের পদ্ধতি বা পজিশন

আমারা সবাই মোটামুটি কমবেশি চিন্তত কোন অবস্থানে সহবাস করবো, বা কোন দিক দিয়ে সহবাস করা হালাল, চলুন এবার দেখে নেই এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা ও নবী কিভাবে আদেশ নিষেদ করেছেন।

আর স্বামীর জন্য বৈধ যে, সে তার স্ত্রীর সম্মুখভাগে যে দিক দিয়ে চায় সামনে বা পিছনের দিক দিয়ে সহবাস করবে। আল্লাহ তাবারকা ওয়া তা’আলা এর বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে:

অর্থাৎ “তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের জন্য শষ্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার করো”- (সূরা আল-বাকারাহ ২২৩)। অর্থাৎ যেমনভাবেই ইচ্ছা কর। সামনের দিক দিয়ে ও পিছনের দিক দিয়ে ।

আর এ ব্যাপারে অনেক হাদীস রয়েছে। দু’টি উল্লেখের মাধ্যমে যথেষ্ট মনে করছি। 

প্রথম হাদীসঃ 

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদীরা বলতো, যদি স্বামী স্ত্রীর পিছন দিক দিয়ে তার সম্মুখভাগে সহবাস করে তাহলে সন্তান ট্যারা হবে। 

অতঃপর অর্থাৎ “তোমাদের স্ত্রীরা হল তোমাদের জন্য শষ্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার করো”- (সূরা আল-বাকারাহ ২২৩)। 

এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারপর বললেন, সম্মুখ ও পিছন উভয় দিক দিয়ে করা যাবে যদি তা লজ্জাস্থান হয়। বুখারী ৮/১৫, মুসলিম ৪/১৫৬

দ্বিতীয় হাদীসঃ 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আনসারী মূর্তি পূজকদের এ গোত্রটি ইয়াহুদী আহলে কিতাবদের এ গোত্রের সাথে বসবাস করতো। আর আনসারগণ জ্ঞানের দিক দিয়ে ইয়াহুদীদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই অনুসরণ করতো । আর আহলে কিতাবদের একটি অভ্যাস ছিল যে, তারা শুধুমাত্র তাদের স্ত্রীদের এক দিক দিয়েই সহবাস করতো। আর স্ত্রী তার দ্বারা সবচেয়ে বেশি আবৃত হতো । 

সুতরাং আনসারদের এই গোত্রটি ইয়াহুদীদের ঐ কাজটি গ্রহণ করেছিল। আর কুরাইশদের এ গোত্র তাদের মহিলাদেরকে নিকৃষ্টভাবে খোলাখুলি করতো এবং তাদেরকে সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, চীৎ করে, উপভোগ করতো । অতঃপর মুহাজিরগণ যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন একজন কুরাইশী ব্যক্তি আনসারী এক মহিলাকে বিবাহ করলেন। সে তার স্ত্রীর কাছে তাদের নিয়মে কাজ করলেন। 

কিন্তু মহিলা তা খারাপ মনে করলেন এবং বললেন, আমাদেরকে শুধুমাত্র একদিক দিয়েই সহবাস করা হয় । সুতরাং তুমি তা-ই কর নতুবা আমার থেকে দূরে থাক । 

এমনকি তার ব্যাপারটি বিরাট আকার ধারণ করল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সংবাদ পৌছাল । অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এই আয়াতটি নাযিল করলেন। “তোমাদের “তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ, তোমরা যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারো”- (সূরা আল-বাকারাহ ১২৩) 

অর্থাৎ সম্মুখ করে, পিছনে করে ও চীৎ করে। মূল উদ্দেশ্য তার দ্বারা সন্তান হওয়ার স্থান যেন হয়। এই দুই হাদিস দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে যেকোন পজিশনে সহবাস করা যাযেজ,তবে সেটা হতে হবে যৌনাঙ্গ, কোনভাবেই নিতম্বের রাস্তা না। এ নিয়ে অন্য এক সাহাবী যখন মহানবী (সাঃ) কে বলেন তখন তার উত্তর ছিলো এমন, চলুন দেখে নেই 

ইসলামিক সহবাসের পদ্ধতি বা পজিশন
ইসলামিক সহবাসের পদ্ধতি বা পজিশন

হাদিসটিঃ

“খুযাইমাহ বিন সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় এক ব্যক্তি নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহিলাদের নিতম্বে সহবাস করা সম্পর্কে বা পুরুষ মহিলার নিতম্বে সহবাস করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল।

নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন যে, বৈধ। অতঃপর যখন সে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা করল, নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন । বা তাকে ডাকার আদেশ করা হল, সুতরাং তাকে ডাকা হল।  নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কেমন বললে? 

কোন দুই ছিদ্রতে পিছন থেকে সম্মুখে হাঁ এটা বৈধ, না পিছন থেকে পিছনে, না বৈধ না। নিশ্চয় আল্লাহ্ হাক্ক-এর ব্যাপার লজ্জাবোধ করেন না। তোমরা মহিলাদের নিতম্বে সহবাস করোও না।” ইমাম শাফেয়ী ২/২৬০, আল বায়হাকী ৭/১৯৬

সুতারাং এদ্বারা এটাই বুঝা যায়, নিতম্বে সহবাস করা হারাম কাজ, তাই যাদের এ ধরনের ইচ্ছা আছে বা যাদের স্বামী নিতম্বে সহবাস করার ইচ্ছা পোষণ করে তাদের নিরুৎসাহিত করতে হবে।

সারমর্ম

ইসলামিক সহবাসের পদ্ধতি বা পজিশন নিয়ে যারা খুব বেশি চিন্তিত, তাদের জ্ঞাথার্তে, উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটাই প্রামাণিত স্ত্রীর সাথে সহবাস যেকোন ভাবে করা যাবে, দাঁড়িয়ে, শুয়ে, বসে, হামুগুড়ি দিয়ে, কোলে নিয়ে, সোফায় বসে। তবে শর্ত একটাই কোন হারাম পন্থায় সহবাস করা যাবে না।

মিলনের সময় নারীর করনীয়

সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক। সহবাসের প্রস্তুতি সহবাসের মতোই দরকারি। মিলনের আনন্দ পুরোপুরি পেতে প্রস্তুতিতে অবহেলা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে। চলুন এই ধাপে দেখে নেই মিলনের সময় নারীর করনীয় বিভিন্ন হাদিস ও রেফারেন্স।

নিজের কোন স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করার সময় মুখ ও দাঁত মিসওয়াক করা নবিজির অভ্যাস ছিল। শুরাইহ ইবনু হানি বলেন, আয়িশাকে জিজ্ঞেস করলাম, নবি ঘরে ঢুকে প্রথম কোন কাজটি করতেন?” তিনি বললেন, “সবার আগে মিসওয়াক করতেন।”

লম্বা সফর থেকে ফিরে আসার পর নবি ও তাঁর সাহাবারা হুট করেই ঘরে ঢুকে পড়তেন না। বরং তার আগে তাঁরা ঘরে খবর পাঠাতেন যেন স্ত্রীরা নিজ নিজ স্বামীর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে পারেন। 

জাবির বলেন, ‘একবার আমরা এক অভিযানে নবিজির সঙ্গে ছিলাম। আমরা মাদিনায় ঢুকে যে যার বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। 

নবি বললেন,

‘একটু দাড়াও। আমরা রাতে বা সন্ধ্যার পরে বাড়িতে যাব। তাতে (স্ত্রীরা তাদের) এলো চুল আঁচড়ে নেবে। লজ্জাস্থানের চুল পরিষ্কার করতে পারবে। সহিহ মুসলিম ২৫৩, সহিহ বুখারি ৪৯৪৯

অন্য এক প্রসঙ্গে নবি বলেছেন, 

“[সফর থেকে] তোমাদের কেউ রাতে ফিরলে সে যেন হুট করে বাড়িতে উপস্থিত না হয়। স্ত্রী যেন লজ্জাস্থানের চুল পরিষ্কার করা এবং এলো চুল আঁচড়ানোর সময় পায়।”” সহিহ মুসলিম ৪৯৪৮

‘সাইদুল-খাতির’ বইতে ইমাম ইবনুল-জাওজি পরামর্শ দিয়েছেন, প্রত্যেক দম্পতির উচিত সহবাসের জন্য দিন বা রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা। তা হলে সে সময়ে দুজনেই শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারবে। এটা তাদের তৃপ্তি বাড়াবে। শারীরিক বা মানসিকভাবে দুজনের কারও অপ্রস্তুত থাকার সম্ভাবনা দূর করবে। এছাড়াও সহবাসের আগে যে বিষয়গুলি নারীর করণীয় তা হলঃ

পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকা

পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখে। মুসলিমের প্রধান ইবাদাত সালাতের চাবি হলো পবিত্রতা। পবিত্রতাই আল্লাহর সন্তুষ্টি আনে। আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন। ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।”

নবি বলেছেন,  “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক”

তাই প্রত্যেক মুসলিমেরই, বিশেষ করে বিবাহিত অবস্থায়, পবিত্র থাকা অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, অনেক নারী ঘরে নিজেদের স্বামীর সামনে পরিষ্কার হয়ে থাকেন না।  কিন্তু তারাই বাইরের কোন অনুষ্ঠানে অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সাজগোজ করে যান। আবার অনেকেই বিয়ের আগে খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকার চেষ্টা করেন। বিয়ের পরে সন্তান হওয়ার পর সেই পরিষ্কার পরিচ্ছনতা আর থাকে না।

সহবাসের চরম সুখ পেতে হলে স্বামী স্ত্রী দুজনকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন থাকতে হবে, এতে সহবাসের আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যাবে।

সাজগোজ করা

সহবাসের প্রস্তুতির প্রধান একটা অংশ হলো স্বামীর জন্য স্ত্রীর সাজগোজ। মানুষ স্বভাবতই সুন্দর জিনিস দেখতে ও অনুভব করতে খুব পছন্দ করে। এমনকি ইসলাম আমাদের এও শিক্ষা দেয় যেন আমরা সার্বজনীন উৎসব বা অনুষ্ঠানে সুন্দর ও পরিষ্কার পুষাক পরে বের হই।

পোশাক আশাক

মিলনের জন্য আবেদনময়ী কিংবা ছোট ছোট পোশাক বা অন্তর্বাস পড়ে স্বামীর সামনে আসা যাবে। এগুলো ধার্মিকতা বা শালীনতার পরিপন্থি নয়। কার্যত নিজেকে আর নিজের স্বামীকে পূত-পবিত্র করার বিশুদ্ধ নিয়তে এমন করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পাবারও প্রচুর সম্ভাবনা আছে ইন শা আল্লাহ। কিন্তু শর্ত হলো, অবশ্যই তা হবে শুধু স্বামীর জন্য। এবং অন্য কোন তৃতীয় পক্ষ সেখানে একদমই উপস্থিত থাকতে পারবে না।

সুগন্ধি

সুঘ্রাণ মানুষের উপর লক্ষণীয় প্রভাব ফেলে মনকে আন্দোলিত করে। সুন্দর ঘ্রাণ পেলে ভালো লাগে। এটা মানুষের স্বভাব। গায়ে সুগন্ধি লাগানো সব নবিদের অভ্যাস ছিল। নবি বলেছেন, “চারটি জিনিস নবিদের চিরাচরিত সুন্নাত। লজ্জা, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক আর বিয়ে ।” সহিহ বুখারী ৫৫৮৫

স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বেলাতেও সুগন্ধির আবেদন অনেক। স্নিগ্ধ সৌরভ আকর্ষণ বাড়ায়। আনন্দ বাড়ায়। জৈবিক মিলনের সময় স্ত্রীর সাজপোশাকের অংশ হিসেবে সুগন্ধি মাখা কর্তব্য। যেসব পারফিউমের ঘ্রাণ স্বামীর ভালো লাগে, সে-ধরনের পারিফিউম ব্যবহার করা উচিত। তা ছাড়া সারাদিনের কাজকর্মের পরে শরীরে বা কাপড়ে দুর্গন্ধ থাকলে, সুগন্ধি লাগানোয় তা দূর হবে।

অলংকার

স্ত্রীর এই সাজ-সজ্জার মধ্যে গহনাগাটিসহ অন্য বিষয়ও প্রযোজ্য। সে চাইলে মেকআপ লিপস্টিক ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো হাতে-পায়ে মেহেদি আর চোখে কাজল দেয়া। কারণ তা সুন্নাহ থেকে বর্ণিত। নিজের চুল আঁচড়িয়ে গুছিয়েও যত্ন নেয়া উচিত। চুলে রঙ বৈধ যদি তাতে হালাল উপাদান ব্যবহার করা হয়। সুগন্ধির ব্যখ্যাগুলোও এখানে প্রাসঙ্গিক।

ফিট থাকা

স্ত্রীর সৌন্দর্যের আরেকটি দিক হলো নিজের শরীরকে ফিটফাট, সুস্থ রাখা। নিজেকে শারীরিকভাবে ফিট রাখা অত্যন্ত জরুরি। এতে স্বামীর অনুরাগ পাবার পাশাপাশি নিজের সুস্থতাও রক্ষা হবে।

নারীসুলভ আচরণ

সহবাসের জন্য মানসিক প্রস্তুতির আগে স্ত্রীকে বুঝতে হবে তার নম্রতা ও লজ্জাশীলতা অর্থাৎ সামগ্রিক নারীসুলভ আচরণই স্বামীকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে। রুক্ষতা আর পুরুষালী আচরণ স্বামীকে উল্টো দূরে ঠেলে দেয়।”

মিলনের সময় নারীর করনীয় সারমর্ম

মিলনের সময় নারীর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুব জরুরী, সাজগোজ করে আকর্ষণী হওয়া, ভালো সুগন্ধি ব্যবহার করা অন্যতম। এসব মিলনকে করে তুলে দুজনের কাছে উপভোগ্য।

সহবাসের উত্তম সময়

সাধারণত ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলন করা না করার ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়নি। যদি অন্য কোন বাঁধা না থাকে যেমন নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ এখনো পড়া হয়নি কিংবা স্ত্রীর মাসিক চলছে তবে দম্পতি চাইলে দিন বা রাতের যেকোন সময় বেঁছে নিতে পারে নিজেদের জন্য।

বিশুদ্ধ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত, নবি দিনের বিভিন্ন সময়ে তাঁর স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়েছেন। যখন দম্পতি একজন আরেকজনের প্রতি টান অনুভব করে তখনই সহবাস সম্ভব। তাছাড়া যেহেতু তাদের কাজের সময়, ঘুম, সহবাসের ইচ্ছে এসবের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে তাই কোন সময় বেঁধে দেয়া বেমানান।

সহবাসের উত্তম সময়
সহবাসের উত্তম সময়

সম্ভোগের সবচেয়ে অনুকূল সময় যখন শরীর-মন শান্ত, মেজাজমর্জি ভালো। যেকোন ধরনের মানসিক দুশ্চিন্তা, স্নায়বিক চাপ, উদ্বেগ, ক্ষুধা, পিপাসা, ক্রোধ, অসুস্থতা ইত্যাদি মিলনের আবেগকে নীরস করে দেয়। এমনকি এমন সময়ে সহবাস শরীরের জন্য ক্ষতিকারকও বটে। 

কারও কারও জন্য অনুকূল সময় রাতের বেলা। স্বামী তখন দিনের নানা কাজের চাপ থেকে মুক্ত। কারও কারও জন্য আবার সকাল বেলা। ঘুম থেকে উঠে তখন চনমনে থাকে।

অনেক আলিম বলেন, শেষরাতের দিকে সহবাস করা ভালো। কারণ তখন পেট খালি থাকে, আর ঘুমুতে যাবার আগে পেট থাকে ভরা। ভরা পেটে সহবাস করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই খাবার পুরোপুরিভাবে হজম হয়ে যাওয়ার পরেই মিলন অধিকতর উপযোগী। এটা নবিজিরও অভ্যাস ছিল। যদিও অন্য সময়ে মিলন করার বর্ণনাও পাওয়া যায়।

ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ সময়

কুরআনের স্পষ্ট আয়াত ও অগণিত হাদিসের মাধ্যমে নিচের সময়গুলিতে সহবাস করা সম্পুর্ণরূপে হারাম করা হয়েছে। তাই স্ত্রী সহবাসের ক্ষেত্রে কখনো নিচের সময়গুলিতে সহবাস করা যাবে না।

  • স্ত্রীর মাসিকের সময়
  • রোজা থাকা অবস্থায়
  • ইত্তেকাফের সময়,
  • হজ্জের ইহরাম বাঁধা অবস্থায়,
  • স্ত্রীর গর্ভপাতের ৪০ দিন সময় পর্যন্ত

চুম্বন ও স্ত্রীর স্তন চোষা

সুখী দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য প্রণয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কখনো অবহেলা করা যাবে না। আনন্দদায়ক মিলনের জন্য একজন আরেকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা উচিত।

প্রণয় উভয়ের জন্যই দরকার। তবে স্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করতে স্বামীর জন্য এটা করা বেশি প্রয়োজন। নারীরা পুরুষদের মতো মুহূর্তেই উত্তেজিত হয় না। তাদের অনেক বেশি সময় লাগে। তাই স্ত্রীকে অপ্রস্তুত করে সহবাস করলে সে নিজের চাহিদা মেটাতে পারলেও, তার চাহিদা পূরণ হবে না। সব সময় এরকম হলে স্ত্রী হতাশ হবে। দাম্পত্য সম্পর্কে চিড় ধরবে।

স্ত্রীকে উত্তেজিত করতে স্বামীর একটু ধৈর্য ধরে সময় নেয়া উচিত। যখন সে দেখবে স্ত্রী তাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত শুধু তখনই সে মিলিত হবে। স্ত্রীকে অসন্তুষ্ট রেখে শুধু নিজের চাহিদা পূরণ করা স্বামীর অহংকার প্রকাশ করে। এরকম স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের আসলে ভালোবাসে না। তারা কেবল নিজের আনন্দ নিয়েই সন্তুষ্ট।

এক বর্ণনায় নবি বলেছেন,

“তির ছোড়া, নিজের ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া, স্ত্রীর সাথে খেলাধুলো ছাড়া মুসলিমদের সব খেলাধুলো অনর্থক। ওগুলো প্রশংসনীয় কাজ।” সহিহ বুখারী ১৯৯১

ইমাম গাজ্জালি ‘ইহ্ইয়া উলুমুদ্দিন’, ইমাম দায়লামি ‘মুসনাদ আল- ফিরদাউস’ বইতে উল্লেখ করেছেন, নবি বলেছেন,

“তোমাদের কেউ যেন তার স্ত্রী কাছে ‘বার্তাবাহক’ ছাড়া পশুর মতো না আসে।” জিজ্ঞেস করা হলো, বার্তাবাহক কী? তিনি বললেন, ‘চুম্বন ও [প্রণয়ঘটিত] কথা।

সঙ্গীকে চুমু দেয়া প্রণয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নবিজির সুন্নাহ। 

আয়িশা বলেছেন, “নবি তাঁর এক স্ত্রীকে চুম্বন করে [বাড়িতে] অজু না করেই মাসজিদে চলে গেলেন।”

বর্ণনাকারী উরওয়া মা আয়িশাকে জিজ্ঞেস করেন, সেটা নিশ্চয় আপনি? কথাটি শুনে আয়িশা মুচকি হাসেন।*

হাদিসটি স্ত্রীকে চুমু দেবার প্রতি উৎসাহিত করার পাশাপাশি ঘরে ঢোকার ও বের হবার সময়ে তাকে চুমু দেবার গুরুত্বের প্রতিও নির্দেশ করে। প্রিয় নবিজির সুন্নাহও ছিল এটি। 

অতএব বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে স্নেহভরে চুমুর মাধ্যমে অভিবাদন করা উচিত। ঘরে ঢুকেই খাবার প্রস্তুত কিনা বা কেউ ডেকেছিল কিনা এমন প্রশ্ন করা বেমানান । আবেগমাখা চুম্বন নবিজির সুন্নাহ। আয়িশা বলেছেন “নবি রোজা থাকা অবস্থায় তাকে চুমু দিতেন। তার জিহ্বা চুষতেন ।” সুনানে তিরমিজ ৮৬, সুনানে আবু দাউদ ১৮১, সুনানে নাসায়ী ১৭০

ঠিক এভাবে স্বামী-স্ত্রী দুজনের উচিত প্রণয়ের সময় আবেগসহ একজন আরেকজনকে চুমু দেয়া। আর এতে লালা আদান-প্রদান হলেও সমস্যা নেই। এমন অবস্থায় একজন আরেকজনের জিহ্বা চোষা শুধু অনুমোদিতই নয়, নবিজির সুন্নাহ। সে হিসাবে স্ত্রীর স্তন চোষাও যায়েজ। তবে অবশ্যই খিয়াল রাখতে হবে স্তন থেকে যেনো দুধ বের না হয়। স্ত্রীর দুধ খাওয়া হারাম।

চাইলে ঠোঁটের উপর বা নিচের অংশও চোষা যেতে পারে। এমনকি অন্যজন ব্যাথা না পেলে হালকা কামড়ও দেয়া যেতে পারে। চুম্বন শুধু ঠোঁট আর মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। চাইলে গাল, কপাল, নাক, কানের পেছনে বা কানের লতি চোষা, চোখের পাতা, ঘাড়ের পেছনে, হাতের তালু, কব্জি, আঙুল, বাহু, পেট, নাভি, বুক, স্তন, পিঠ, হাঁটুর পেছনের অংশ, ঊরু ও পা-সহ শরীরের অন্য অঙ্গেও চুমু দেয়া যায়। অর্থাৎ, সঙ্গীর পুরো শরীরে চুমু দেয়া যাবে। চুমুর পাশাপাশি চোষাও অনুমোদিত।

লজ্জাস্থানের আশপাশে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অপবিত্র কিছু মুখে না লাগে। কারণ, অপবিত্র বস্তু গিলে ফেলা সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। তাই লজ্জাস্থানের বেশি কাছে মুখ নিয়ে না যাওয়াই উত্তম। 

সারমর্ম

যাদের চুম্বন লেহন মর্দন নিয়ে এখনো প্রশ্ন আছে তাদের জ্ঞাতার্থে, চুমু ও মর্ধন সম্পূর্ণ রুপে বৈধ। চোষার ক্ষেত্রে পাক না পাক বস্তু সম্পর্কে পূরিপুর্ণ ধারণা থাকতে হবে, নাপাকি কিছুই ইসলাম সাপোর্ট করে না।

লজ্জাস্থান চোষা

মুখ বা জিহ্বা ব্যবহার করে কাউকে উদ্দীপিত করাকে ওরাল সেক্স বলা হয়। এটা লজ্জাস্থান চুম্বন থেকে শুরু করে, মুখে নেয়া, যৌন তরল গিলে ফেলা পর্যন্ত অনেক কিছু হতে পারে। ওরাল সেক্সের সময় কী করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করবে ইসলামি দিকনির্দেশনা কী হবে।

যদি স্বামীর লজ্জাস্থান মুখে নেয়ার ব্যাপারটা এমন হয় যে বীর্য অথবা বীর্যপাত-পূর্ব তরল স্ত্রী গিলে ফেলে, মুখে নেয়, তা হলে তা পাপের কাজ হবে। স্বামীও যদি স্ত্রীর জননরস মুখে নেয়, গিলে ফেলে সেটাও পাপের কাজ হবে। এমন হবার কোনো সম্ভাবনা থাকলে ওরাল সেক্স নিষেধ।

ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা ও অপবিত্র বস্তু গিলে ফেলা কিংবা মুখে নেয়ার অনুমোদন ইসলামে নেই। এসবের মধ্যে পড়ে পুরুষ ও মহিলার যৌনাঙ্গ থেকে নির্গত সকল প্রকার তরল যেমন প্রশ্রাব, বীর্যপাত-পূর্বক তরল, বীর্য এবং মাঝে মাঝে প্রশ্রাবের আগে অথবা পরে বের হওয়া সাদা ও ঘোলা তরল। 

শাফিয়িদের মতো অনেক আলিম বীর্যকে নাপাক বা অপবিত্র মনে করেন না। কিন্তু তারপরেও তারা বলেন, তা গিলে ফেলা নিষিদ্ধ। অতএব, স্বামী কিংবা স্ত্রীর যেকোনো জননরস গেলা হারাম।

শাফিয়ি মাজহাবের ইমাম নাওয়াউই ‘আল-মাজমু’-তে লিখেছেন, “সঠিক ও সুবিদিত মত হলো বীর্য গেলা নিষেধ কারণ এটি নোংরা [যদিও নাপাক নয়]। 

মহান আল্লাহ বলেন, “…এবং তিনি তাদের জন্য নোংরা জিনিস হারাম করেছেন।”

যদি যথেষ্ট সতর্কতার সাথে ওরাল সেক্স করা হয় যে কোনভাবে জননরস মুখের ভেতর যাবে না, যেমন লজ্জাস্থানে হাল্কা চুম্বন, তবে তার অনুমোদন আছে। কিন্তু তারপরও কাজটা অশোভন, অপছন্দের।

No
No

যেহেতু দম্পত্তির শরীরের সকল স্থানে চুম্বন বৈধ, তাই একে এক প্রকার প্রণয়ও বলা চলে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, লজ্জাস্থানে ধার্মিকতার সাথে সামঞ্জস্য নয়। হানাফি ফিক্‌হের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ফাতওয়া হিন্দিয়া’তে উল্লেখ আছে, 

“স্বামী স্ত্রীর মুখে নিজের লজ্জাস্থান ঢোকালে এটাকে অপছন্দনীয় (মাকরুহ) বলা হয়। তবে অন্যেরা একে অপছন্দনীয় মনে করেন না।”

হানাফি ফিক্‌হের প্রধাণতম গ্রন্থের এই স্পষ্ট বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যায়, স্ত্রীর মুখে লজ্জাস্থান রাখার বৈধতার ব্যাপারে আলিমদের মতভেদ আছে। কেউ একে অপছন্দ করেন আবার কেউ এর অনুমোদন দেন। কিন্তু দুপক্ষ শর্ত দেন, মুখের ভেতর কোনো জননরস যেতে পারবে না।

সাধারণ অবস্থায় এমন শর্ত মেনে চলা সহজ কাজ নয়। এই কারণে, এবং যেহেতু এটা মুসলিমের যথাযত আচরণের পরিপন্থি—তাই, সমসাময়িক আলিমেরা একে অপছন্দনীয় বলে থাকেন।

মুখ মানব শরীরের একটি সম্মানিত অঙ্গ। এর মাধ্যমে আমরা কুরআন তিলাওয়াত করি, আল্লাহর নাম স্মরণ করি, নবিজির প্রতি সালাত ও সালাম পাঠাই। তাই এই একই মুখ দিয়ে লজ্জাস্থান উত্তেজিত করা অবমাননাকর।

এই বিষয়ে শেষ কথা, যদি কারো সঙ্গী তার কাছ থেকে ওরাল সেক্স দাবি করে তবে তা মানতে সে বাধ্য নয়—যত সতর্কতার সাথেই হোক না কেন। স্ত্রী শুধু স্বামীর সাথে মিলিত হতে বাধ্য। আর এদিকে স্ত্রীর পবিত্রতা ও চরিত্র রক্ষার জন্য স্বামীর জন্য তার সাথে যথেষ্ট সংখ্যক বার অন্তরঙ্গ হওয়া আবশ্যক।

সারমর্ম

চোষা বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে, তাই স্বামী স্ত্রীর লজ্জাস্থান চোষার বিষয়ে অবশ্যই ভালো আলেম ওলামার পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্ত্রী সহবাসের পর ফরজ গোসলের নিয়ম

বীর্যপাতের ফলে শারীরিক যে-অপবিত্রতার সৃষ্টি হয় তাকে ‘জানাবা’ বলে। আর অপবিত্র ব্যক্তিকে বলে ‘জুনুব’। জুনুবি ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করার আগ পর্যন্ত সালাত আদায়, কুরআন স্পর্শ অথবা তিলাওয়াত, মসজিদে প্রবেশসহ অন্য ইবাদত করতে পারবে না। আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা অপবিত্র অবস্থায় থাকো তবে ভালোভাবে নিজেদের পবিত্র করো।” আল কোরআন ৭৫ঃ৩৬-৪০

নবি বলেছেন, “প্রতিটি চুলের নিচে নাপাকি আছে। অতএব চুলগুলো ভালো করে ধোও। শরীর ভালো করে পরিষ্কার করো।”

এমনকি শুধু পুরুষের লজ্জাস্থান নারীর যোনিপথে প্রবেশ করলে বীর্যপাত না হলেও দুজনের গোসল ফরজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ অপবিত্রতা অর্জনের জন্য অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কিংবা বীর্যপাত দুটো একটা আরেকটা থেকে স্বাধীন বা পৃথক। মিলন ছাড়া যৌন উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হলে যেমন গোসল ফরজ হয়, তেমনি বীর্যপাত না হলেও শুধু মিলনের কারণে গোসল করতে হবে। 

নবি বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি যখন স্ত্রীর চার অঙ্গের মাঝে বসে, তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে, তখন গোসল করা বাধ্যতামূলক।” সুনানে তিরমিজ ১০৬, সুনানে আবু দাউদ ২৫২

বর্ণনাকারী মাতারের বর্ণনায় ‘যদিও বীর্য বের না হয়’—এই কথাটি আছে। এছাড়া নবি বলেছেন,

‘এক লজ্জাস্থান অপর লজ্জাস্থানে অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব।

অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেছেন,

‘দুই বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ অদৃশ্য হয়ে গেলে গোসল ওয়াজিব।”

অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ছাড়া শুধু বীর্যপাতের কারণে গোসলের তাপরিহার্যতার জন্য এই হাদিসটি উল্লেখযোগ্য। সাহাবা আলি বলেন, ‘আমি নবিজিকে [অন্য একজনের মাধ্যমে] বীর্যপূর্ব তরল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, “বীর্যপূর্ব তরল বের হলে উজু করতে হবে। বীর্যপাত হলে গোসল করতে হবে।”

মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে তাকেও ফরজ গোসল করতে হবে। সাহাবা আবু তালহার স্ত্রী উম্মু সুলাইম নবিজিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আল্লাহর রসুল, সত্য বলতে আল্লাহ লজ্জা করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে কি ফরজ গোসল করতে হবে?

নবি বললেন, ‘হাঁ, যদি সে তরল দেখে।’

ইমাম ইবনু কুদামাহ বলেন,

‘জাগ্রত অথবা ঘুমন্ত যে অবস্থায় হোক না কেন, যৌন উত্তত্তেজনায় ও সজোরে বীর্য নির্গত হলে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যে গোসল প্রযোজ্য হয়, এটা আইনবিদগণের বক্তব্য। ইমাম তিরমিজি বলেছেন, এই ব্যাপারে আমরা কোনো মতভেদ সম্পর্কে জানি না।’

মোদ্দাকথা, অন্তরঙ্গ মুহূর্তের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনে গোসল করবেন। এক্ষেত্রে বীর্য না বের হলেও গোসল করতে হবে। এমনকি ঘুমের মধ্যে অথবা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের পূর্বে আলিঙ্গন বা প্রণয়ের সময় বীর্যপাত হলেও গোসল করতে হবে। এক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে যেন শরীরের প্রতিটি অঙ্গে পানি পৌঁছায় এবং কোনো অংশ বাদ না যায়। ফরজ গোসলের নিয়ম না জেনে থাকলে তা হলে সঠিকভাবে শিখে নিতে হবে।

এক রাতে কতবার মিলন করা যায়? 

এক রাতে যতবার খুশি ততবার মিলন করা যায়, এতে ইসলামিক কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। এক রাতে একাধিকবার মিলিত হতে চাইলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকলে ইসলাম তাতে কোনো সমস্যা দেখে না। তাই আপনার শরীর যতবার মিলন করতে সক্ষম ততবার এক রাতে মিলন করতে পারবেন।

ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওজিয়্যা ‘আত- তিব্বুন-নাবাউই’তে বলেছেন, শুধু জৈবিক চাহিদার প্রয়োজন হলে যেন স্বামী-স্ত্রী অন্তরঙ্গ মুহূর্তে লিপ্ত হয় অন্যথায় না। এক্ষেত্রে স্বামীর লজ্জাস্থান স্বাভাবিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে, অন্য কিছু দেখে বা চিন্তা করার কারণে না। নিজের উপর জোর করে কামেচ্ছা প্রয়োগ করা ঠিক নয়।

তাই যদি আন্তরিক জৈবিক চাহিদা জন্মায় তা হলে সেটা মেটাতে অসুবিধা নেই। নইলে শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্য একজন আরেকজনের ইচ্ছা, চাহিদা, বাসনা, শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে লক্ষ রাখা জরুরি যেন জোরপূর্বক কিছু না হয়।

অনেকে আবার চিন্তা করতে পারেন সপ্তাহে কতবার সহবাস করা উচিত? এর উত্তর হবে, আপনার মন, শরীর যদি সায় দেয়, সেই শক্তি দেহে থাকে তাহলে যতবার খুশি ততবার সহবাস করতে পারবেন।

স্ত্রী সহবাস ও ওযু

আলিমদের মধ্যে পুরোপুরি ইজমা প্রতিষ্ঠিত আছে যে পরপর দুবার মিলিত হলে দ্বিতীয়টির আগে ফরজ গোসল করা জরুরি না। নবিজি দ্বিতীয়বার মিলিত হবার আগে গোসল করতে পছন্দ করতেন। তবে না করারও প্রমাণ আছে। 

সাহাবা আনাস বলেছেন, ‘নবি এক গোসলে তাঁর স্ত্রীদের কাছে যেতেন। সহিহ মুসলিম ৩০৯

তার মানে এক বা একাধিক স্ত্রীর সাথে ধারাবাহিকভাবে মিলিত হলে আলাদা আলাদা করে গোসল করার প্রয়োজন নেই। গোসল করে নিলে ভালো হয় যদিও। 

আবু রাফি : বলেছেন, ‘নবি একদিন তাঁর স্ত্রীদের কাছে গেলেন। এবং একবার একবার করে গোসল করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আল্লাহর রসুল, আপনি শেষে একবার গোসল করলেই তো পারতেন?” ‘তিনি বললেন, “এটা বেশি পরিষ্কার, ভালো আর পবিত্র।”

দ্বিতীয়বার মিলনের আগে ওজু করা মুস্তাহাব কিন্তু ওয়াজিব নয়। নবি বলেন, ‘তোমাদের কেউ একবার মিলিত হরার পর পুনরায় মিলিত হবার ইচ্ছা করলে সে যেন উজু করে নেয় ।

চার মাজহাবের বেশিরভাগ আলিমদের মতে এই ওজু করার আদেশটি মুস্তাহাব পর্যায়ের, ওয়াজিব নয়। সহিহ ইবনু খুজায়মাতেও এই হাদিসটি আছে। তাতে ‘…কারণ, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য শক্তি যোগাবে…’—এই অংশ যোগ করা আছে।

মা আয়িশা রাআ. বলেছেন, “নবি অন্তরঙ্গ হতেন। এরপর আবার হতেন উজু না করেই”

কেউ যদি উজু করতে না পারে, অন্তত লজ্জাস্থান ধুয়ে নেয়া উচিত। 

ইমাম নাওয়াউই বলেন,

‘যদি কেউ একজন স্ত্রীর পরে অন্য স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ হতে চায় তা হলে তাকে লজ্জাস্থান ধুয়ে নিতে হবে।

দীর্ঘ সময় মিলন করার ইসলামিক পদ্ধতি

দীর্ঘ সময় মিলন করতে হলে আপনাকে আগে উপরের স্ত্রী সহবাসের বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে। সহবাসের ক্ষেত্রে পুরুষ মানুষ খুব দুর্বল হয়ে থাকে। তবে পুরুষকে সঠিকভাবে উত্তেজিত করতে পারলে সে দীর্ঘ সময় মিলন করতে পারবে। এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট হাদিস আমি পাইনি। তবে বৈজ্ঞানিক অনেক জার্নাল ও মেডিকেল বইয়ে দেখেছি মিলনের আগে চুম্বন, লেহন, মর্দন ইত্যাদিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবং ভাল ভাল খাবার যেমন, গরুর গোশত, ফলমুল, মেথি, রসুন, লবাঙ্গ ইত্যাদি খেতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার
ভিটামিনযুক্ত ফল

এর ফলে স্বামী স্ত্রী উভয়েই বেশি উত্তেজিত হয়। দুজন যতবেশি উত্তেজিত হবে তাদের লজ্জাস্থানে তত বেশি রক্ত চলাচল করবে। ফলে দীর্ঘ সময় মিলন করা যায়। ঠিক একইভাবে স্ত্রী স্বামীকেও উত্তেজিত করতে পারবে। এ সব কিছুই ইসলামে যায়েজ আছে, যার ফলে দীর্ঘ সময় মিলন করা সম্ভব।

সহবাসের পরে করণীয়

স্বামী-স্ত্রী মধ্যকার অন্তরঙ্গ মুহূর্ত শেষ হবার সাথে সাথে কিন্তু মিলন শেষ হয়ে যায় না। বরং এর পরও অনেক কিছু করার আছে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের পরের সময়টা তার আগে করা আলিঙ্গন, প্রণয় এমনকি খোদ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কিছু আদব কেতা ও বিধান খেয়াল রাখতে হবে। চলুন দেখে নেই সহবাসের পরে করণীয় কাজগুলি।

প্রেমাদর

পুলকের পরপর নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলা ঠিক নয়। বরং কিছুক্ষণ সে অবস্থায় থাকলে দুজনে বিশেষ করে স্ত্রী নিজের চাহিদা পূর্ণ মাত্রায় মিটিয়ে নিতে পারবে। ইসলাম আমাদের সবসময় একে অন্যের প্রতি দয়াশীলতা, ভালোবাসা ও স্নেহের শিক্ষা দেয়। 

মিলন শেষ হবার সাথে সাথে স্বামীর নির্লিপ্ত ভাব স্ত্রীর মনে ভুল ধারণা জন্ম দিতে পারে। শুধু মিলনের প্রতি স্বামীর সকল আগ্রহ নারীর নরম মন যেন এমন ভেবে না বসে তা খেয়াল রাখতে হবে। অন্তরঙ্গ মুহূর্ত শেষ হলেও তা স্ত্রীর সাথে প্রেমময় ব্যবহার করতে হবে স্বামীকে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

অন্তরঙ্গ মুহূর্তের পর পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে নিজেদের মুছে ফেলতে হবে। আগে আগে একটি আলাদা চাদর বিছিয়ে রাখা উচিত। তা হলে সেটা দিয়েও পরে মুছে নেয়া যায়। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারপরও অনেক দম্পতি এটা নিয়ে হেলাফেলা করেন।

তাদের বিছানার চাদর কিংবা কাপড় যে অপবিত্র হয়ে যেতে পারে এটা নিয়ে যেন তাদের কোনো বিকার নেই। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের আগে তাই বিছানায় আলাদা চাদর বিছিয়ে নিতে হবে। তা হলে সাথে সাথে ধোবার জন্য সরানো যাবে। কারণ কাপড়ে জননরস লাগলে সেটা অপবিত্র হয়ে যায়। 

ধুয়ে পরিষ্কার করে না নিলে সেটা পরে নামাজ আদায় হবে না। মনে রাখা প্রয়োজন, বিছানার তোশকে জননরস লাগলে সেটাও বদলাতে হবে।

প্রশ্রাব

চিকিৎসকেরা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের পর প্রশ্রাব করতে উৎসাহ দেন। এতে লজ্জাস্থানের ভেতর কোনো বীর্য রয়ে থাকলে বের হয়ে যায়। ধোবার সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।

ফরজ গোসল

বীর্যপাতের ফলে শারীরিক যে-অপবিত্রতার সৃষ্টি হয় তাকে ‘জানাবা’ বলে। আর অপবিত্র ব্যক্তিকে বলে ‘জুনুব’। জুনুবি ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করার আগ পর্যন্ত সালাত আদায়, কুরআন স্পর্শ অথবা তিলাওয়াত, মসজিদে প্রবেশসহ অন্য ইবাদত করতে পারবে না। এ বিষয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ফরজ গোসল
ফরজ গোসল

স্ত্রী সহবাসের নিয়ম – হারাম ও মাকরুহ কাজ

আমারা স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়মকানুনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি, এবার আমরা দেখবো হারাম ও মাকরুহ কাজসমুহু কি কি। যেগুলো করলে গুনাহ হবে এবং ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।

  • কোনো বৈধ কারণ ছাড়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের প্রতি স্ত্রীর অস্বীকৃতি জানানো।
  • স্ত্রীকে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।
  • মাসিক ও প্রসব-পরবর্তী রক্তস্রাবের সময় মিলন।
  • ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীর দুধপান [হানাফি মাজহাব অনুযায়ী] প্রণয়ে খাদ্য ব্যবহার [মাকরুহ]
  • বাদ্যযন্ত্রের সাথে যৌন উত্তেজক নৃত্য
  • উত্তেজনার জন্য পর্নোগ্রাফি দেখা
  • প্রশ্রাব ও নোংরা বস্তু থেকে যৌন আনন্দ লাভ
  • প্রকাশ্যে প্রেম ও অন্তরঙ্গ হওয়া
  • একজন আরেকজনের অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও তোলা
  • অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সময় অন্য কাউকে নিয়ে যৌন চিন্তা
  • পায়ুগমন বা টয়লেটের রাস্তায় মিলন।
  • ওরাল সেক্স [জননরস মুখে না গেলে মাকরুহ, আর মুখে গেলে হারাম]
  • নিজেদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের গোপন কথা অন্যের কাছে প্রকাশ

শেষকথা

নতুন দম্পতির জন্য বাসর রাত (লাইলাতুল যুফাফ) সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতে সঠিকভাবে নৈতিকতা ও শিষ্টাচার প্রদর্শন না করতে পালে সঙ্গীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ কথায় আছে, প্রথম দেখায় যে-অনুভূতি হয়, সেটা মনে দাগ কেটে যায়।

আদর্শ পরিস্থিতিতে আগে কখনও ঘনিষ্ঠ না হবার কারণে তারা হবে একজন আরেকজনের কাছে প্রায় অপরিচিত। তাই অন্তরে লজ্জা ও অদ্ভুত অনুভূতি অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। এই অবস্থায় যুগলের দুজনের সহবাসের নিয়ম নীতি জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা নতুন বিবাহ করেছেন, বা করবেন তাদের জন্যে সহবাসের নিয়ম নীতির এই স্টেপ বাই স্টেপ গাইড অনেক উপকারী হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

এই লেখাটি লেখতে আমি অনেকগুলি বইয়ের সাহায্য নিয়েছি, সুতারাং এই লেখাটা আমার ব্যাক্তিগত ভাষা নয়, তাই কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে আমাকে ইমেইল করতে পারেন। আমি যত তারাতারি সম্ভব লেখাটা হালনাগাদ করে দিবো।

Author

Scroll to Top