Last Updated on 6th April 2024 by Mijanur Rahman
প্রকৃতিক ভাবে রোগ নিরাময়ের জন্য সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন ধরণের ঔষধী গাছ সৃষ্টি করেছেন। সেগুলো ব্যবহার করে আমরা নানা রোগ-বালাই হতে আরোগ্য লাভ করি। মানবজাতির জন্য করুণাময়ের তেমন একটি উপহার হলো থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ হলেও এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। থানকুনি পাতার উপকারিতা জানলে আমরা খুব সহজেই কেমিক্যাল ঔষধের বদলে থানকুনি পাতা ব্যবহার করে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাবো। এখান থেকে আমরা থানকুনি পাতা কী? থানকুনি পাতার অজানা গুণ, থানকুনি পাতার উপকারিতা, থানকুনি পাতার ব্যবহার ইত্যাদি জেনে নিবো।
থানকুনি পাতা
থানকুনি পাতা হলো গুল্ম জাতীয় ছোট একধরনের উদ্ভিদ। এর পাতাগুলো দেখতে গোল আকৃতির। অনেকটা কয়েন বা মুদ্রার টাকার মতো। এই কারণে আমাদের দেশের অনেক স্থানে একে টাকা-পাতা বলা হয়। পুকুর বা জলাশয়ের ধারে কিংবা ঘাস হয় এমন যায়গায় হরহামেশাই দেখা মেলে থানকুনি পাতার।
নাম পরিচিতি
থানকুনি পতার বৈজ্ঞানিক নাম: Centella asiatica; এক ইংরেজিতে Indian pennywort বা ইন্ডিয়ান্ পেনিওর্ট্ নামে ডাকা হয়। আমাদের দেশে একে স্থানীয় ভাবে ডোলমানি বলা হয়। এছাড়াও মধুকপর্ণী বলেও একে অনেকে চেনে। এটি এক ধরনের খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ জাতীয় উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্ভিদ এটি। কারণ আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো খুব ভালো ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে । থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক পরিবাবের নাম ম্যাকিনলেয়াসি যাকে অনেকে এপিকেসি পরিবাবের উপপরিবার এর সদস্য হিসেবে মনে করেন।

উৎপত্তি
থানকুনি পাতা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত, সিংহল, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য বিভিন্ন দেশে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়। এর উপকারিতার জন্য সব দেশেই থানকুনি পাতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া ভেষজ ঔষধ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিকসহ অনেক দেশের চিকিৎসাবিদ্যায়।
রাসায়নিক গঠন
প্রকৃতিক ভাবে থানকুনি পাতাতে অনেক ধরণের উপকারি রাসায়নিক উপদান রয়েছে। যেসব রাসায়নিক পদার্থ আমাদের দেহের জন্য অনেক দরকারী। এতে যে সব উপাদান রয়েছে,
১) সেন্টেল্লায় এশিয়াটিকোসাইড। ২) ব্রাহ্মোসাইড এসিড।
৩) অ্যাসিইয়্যাটিক অ্যাসিড। ৪) ব্রাহ্মিক অ্যাসিড (ম্যাড্যাস্যাসিক অ্যাসিড)
৫) পেন্টাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েড
এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে সেন্টিলোজ, সেন্টেলোসাইড এবং ম্যাডেক্যাসোসাইড যা আমাদের জন্য খুব দরকারী উপাদান।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
আগেই বলা হয়েছে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা শাস্ত্রে থানকুনি পাতার অনেক ব্যবহার দেখা যায়। যে সময় আধুনিক চিকিৎসার প্রচলন উপমহাদেশে শুরু হয়নি তখন আয়ুর্বেদের উপর নির্ভর করতে হতো। তখন এটি ব্যবহারে অনেক রোগ মুক্তি হতো সে সময়। আধুনিকি চিকিৎসা বিজ্ঞান এই সময়ে এসে থানকুনি পাতার বিভিন্ন গুণাগুণ বের করলেও আদিকাল থেকে বোদ্দরা ( যারা ভেষজ উপাদান দিয়ে চিকিৎসা করতেন) এর ব্যবহার করে আসছেন। থানকুনি পাতার উপকারিতা সমূহঃ

জ্ঞানশক্তি বাড়াতে
থানকুনি পাতা আমাদের ব্রেনের জন্য অনেক উপকারি। ২০১৬ সালের একটি ছোট গবেষণায় বিশ্বস্ত উৎস( trusted Source) হতে পাওয়া যায় যে, স্ট্রোকের পরে জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতার নির্যাস এবং ফলিক অ্যাসিড উপকারি প্রভাব ফেলে। এই ছোট গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের তিনটি গ্রুপের উপর থানকুনি পাতার প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে,
- একজন প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম (mg) থানকুনি পাতা গ্রহণ করে।
- একজন প্রতিদিন ৭৫০ মিলিগ্রাম(mg) থানকুনি পাতা গ্রহণ করে
- একজন প্রতিদিন ৩ মিলিগ্রাম (mg) ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করে।
সেখানে দেখা যায় থানকুনি পাতা ফলিক এসিডের মতো ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। দুটোই জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বৃ্দ্ধি করতে কাজ করে। যদিও থানকুনি পাতা ও ফলিক অ্যাসিড সামগ্রিক জ্ঞানের উন্নতিতে সমান ভাবে উপকারী ছিল, তবে মেমরি ডোমেনের উন্নতিতে থানকুনি পাতা আরও বেশি কার্যকর ছিল।
এছাড়া আরো একটি পৃথক গবেষণায় দেখা যায়, ইঁদুরের উপর থানকুনি পাতার জলীয় নির্যাস প্রয়োগ করা পরে জ্ঞানীয়-বর্ধক প্রভাব ( cognitive-enhancing effect) দেখা গেছে। তরুণ এবং বৃদ্ধ উভয় ইঁদুরই মরিস ওয়াটার মেজ ব্যবহার করে নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতি দেখা গেছে। তবে বয়স্ক ইঁদুরের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বা কার্যকারিতা বেশি ছিল।
ব্রেনের ক্ষমতা বৃদ্ধি বা স্মৃতিশক্তি বৃ্দ্ধির জন্য যে ভাবে থানকুনি পাতার ব্যবহার করবেন: থানকুনি পাতা সংগ্রহ করে তা ধুয়ে নিতে হবে। তারপর সেগুলো পানি মিশিয়ে পিষে তা থেকে রস সংগ্রহ করবেন। প্রতিদিন একবার করে ৭৫০ থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম পরিমাণ রস ১৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করুন। স্ট্রোকের পরবর্তী জ্ঞান জটিলতা থেকে মু্ক্ত পাবেন।
আল্জ্হেইমার চিকিৎসায়
আল্জ্হেইমের (Alzheimer’s) রোগের চিকিৎসায় এটির ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা যায়। ২০১২ সালে ইঁদুরের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে থানকুনি পাতার নির্যাস আলঝেইমার (Alzheimer’s) রোগে ইঁদুরের আচরণগত অস্বাভাবিকতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
থানকুনি পাতার রস ল্যাবে পরীক্ষা এবং প্রাণীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের কোষগুলিকে বিষাক্ততা থেকে রক্ষা করার জন্য এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এটি অ্যালঝাইমারের সাথে যুক্ত প্লেক গঠন থেকে কোষগুলিকে রক্ষা করতে পারে।
তবে, আলঝেইমারের চিকিৎসায় থানকুনি পাতা কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তা নির্ধারণ করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। আপনি যদি আপনার চিকিৎসায় এটি যোগ করতে আগ্রহী হন তবে ব্যবহারের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
যদি বাড়িতে তৈরি করে নেন তবে ৩০ থেকে ৬০ ফোঁটা তরল থানকুনি পাতার নির্যাস দিনে ৩ বার নিন। আর যদি বাইরে থেকে কিনে ব্যবহার করেন তবে, বোতলে দেয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন। কারণ ডোজ নির্মাতাদের মধ্যে কিছু পরিবর্তিত হতে পারে।
উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে
অতিরিক্ত চিন্তা বা উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। দীর্ঘ সময় ধরে না ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীরে যে ক্লান্তি দেখা দেয় কিংবা বিভিন্ন ধরণের চিন্তা ভাবনার ফলে যে মানসিক স্ট্রেস এ ভুগি, থানকুনি পাতা তা থেকে আমাদের মুক্তি দেয়।
২০১৬ সালের একটি প্রাণী গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে থানকুনি পাতা পুরুষ ইঁদুরের উপর একটি উদ্বেগ-বিরোধী (anti-anxiety ) প্রভাব ফেলেছিল। সেখানে ৭২ ঘন্টা জেগে থাকা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। আমরা জানি যে , পরিমাণ মতো ঘুম না হয় বা ঘুমের অভাব উদ্বেগ, অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং নিউরোইনফ্লেমেশন হতে পারে। যার কারণে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
পরীক্ষায় দেখা যায়, ৭২ ঘন্টা জেগে থাকার আগে যে ইঁদুর গুলোকে টানা পাঁচ দিন থানকুনি পাতার নির্যাস দেওয়া হয়েছিল সে ইঁদুরগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কম উদ্বেগের মতো আচরণ অনুভব করেছিল। তাদের মধ্যে লোকোমোটর কার্যকারিতা বাড়তে এবং কম অক্সিডেটিভ প্রভাব পড়েছে। যার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে জেগে থাকার পরেও তাদের মাঝে অন্যান্য ইঁদুরের মতো ক্লান্তি বা উদ্বেগ (anxiety ) দেখা যায় নি।
এছাড়াও, ২০১৩ সালে একটি গবেষণায় অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ভেষজ ওষুধ সংস্থা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে থানকুনি পাতায় একটি তীব্র অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি প্রভাব রয়েছে। যা অ্যাংজাইটি বা উদ্বেগ নির্মূল করতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
আপনি যদি উদ্বেগ বা স্নায়ুবিক সমস্যায় ভুগেন তবে ৫০০ মিলিগ্রাম থানকুনি পাতার নির্যাস দিনে দুই বার করে ১৪ দিন পর্যন্ত নিন। চরম উদ্বেগের ক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত নিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরমর্শ নিয়ে নিবেন।
এন্টিডিপ্রেসেন্ট হিসাবে
এটি ডিপ্রেশন থেকে উত্তরনের জন্য কাজ করে। আপনি যদি ডিপ্রেশনে ভুগে থাকেন তবে থানকুনি পাতা আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর থানকুনি পাতার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এটির এ ধরণের কার্যকারিতার জন্য এটি একটি কার্যকর এন্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।
২০১৬ সালে একটি পরীক্ষায়, আংশিকভাবে সাধারণ উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত ৩৩ জনের উপর থানকুনি পাতা প্রয়োগ করা হয় । সেখানে অংশগ্রহণকারীদের ৬০ দিনের জন্য তাদের এন্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের পরিবর্তে শুধু থানকুনি পাতার নির্যাস নিতে বলা হয়েছিল। এই পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা হ্রাস করতে থানকুনি পাতা উল্লেখযোগ্য ভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
থানকুনি পাতা গ্রহণের পরে ভেষজ প্রতিকার শরীরের ওজন, শরীরের তাপমাত্রা এবং হার্টের সহ আচরণগত বিষণ্নতার কিছু উপাদানের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। যাতে করে এই সব কমতে থাকে

যেভাবে ব্যবহার করবেন
৫০০ মিলিগ্রাম থানকুনি পাতার নির্যাস দিনে দুই বার করে একটানা ১৪ দিন পর্যন্ত নিন। তীব্র বিষণ্নতার সময় আপনি প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেন।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে
থানকুনি পাতার রস গ্রহণ করা ফলে ফোলা স্থান কমাতে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। অনেকের দেখা যায় দীর্ঘ সময় ধরে বিমানে চড়ার ফলে পায়ের গোড়ালি ফুলে যায় এবং রক্ত চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর কারণ মূলত দীর্ঘ সময় একটানা বসে থাকার কারণে। দীর্ঘ সময় এক স্থানে নড়াচড়াহীন ভাবে বসে থাকার কারণে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল ব্যহত হয়। থানকুনি পাতার রস সে সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে থানকুনি পাতার রস গ্রহণ করার ফলে, গোড়ালি ফুলে যাওয়া কম হয়। তিন ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলা ফ্লাইট করার ফলে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে থানকুনি পাতার রস রক্ত চলাচলের সমস্যা কমাতে পারে।
যে সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা ভেরিকোজ শিরা সহ হালকা থেকে মাঝারি স্তরের ভেনাস রোগের সম্মুখীন হয়েছিল তাদের ফ্লাইটের দুই দিন আগে, তাদের ফ্লাইটের দিন এবং তাদের ফ্লাইটের পরের দিন থানকুনি পাতা খেতে বলা হয়েছিল।
ফলাফলে গবেষকরা দেখেছেন যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা পরিপূর্ণভাবে থানকুনি পাতা গ্রহণ করেন তাদের তুলনায় যারা কম পরিমাণে গ্রহণ করেছেন, তাদের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেছে এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া অনুভব করেছেন।
পুর্বের একটি গবেষণা থেকে আরও দেখা যায় যে, থানকুনি পাতা ভ্যারোজোজ শিরাগুলির চিকৎসায় কার্যকর হতে পারে। কারণ থানকুনি পাতার রস ভাস্কুলার প্রাচীরের সংযোগকারী টিস্যুতে একটি ইতিবাচক বিপাকীয় প্রভাব ফেলে। যা এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
যেকোনো ফ্লাইটের আগে এবং পরে মিলিয়ে এক সপ্তাহের জন্য দিনে ৩ বার ৬০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম থানকুনি পাতার নির্যাস নিন । এছাড়াও আপনি 1 শতাংশ থানকুনি পাতার নির্যাস দিয়ে তৈরি একটি টপিকাল ক্রিম দিয়ে আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে ভালো ফলাফল পাবেন।
যেভাবে ত্বকের প্যাচ পরীক্ষা করবেন
এই ধরণের ট্রপিকার ক্রিম ব্যবহারের আগে ত্বকের প্যাচ পরীক্ষা( patch test) করা জরুরি। এটি করলে কোন ঝুঁকি থাকে না । এ পরীক্ষা করার জন্য আপনার বাহুর কোন এক যায়গায় অল্প পরিমাণে ক্রিম লাগিয়ে আলতো করে ঘষুন। এতে যদি আপনি যদি 24 ঘন্টার মধ্যে কোনও জ্বালা বা প্রদাহ অনুভব না করেন তবে এটি অন্য কোথাও ব্যবহার করা নিরাপদ । কিন্তু যদি জ্বালা অনুভব হয় তবে এটি ব্যবহারে বিরত থাকুন। আর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া
আমাদের অনেকেরই রাত জাগার বদ অভ্যাস আছে । যাদের বা রাতে খুব সহজে ঘুম আসে না তাদের জন্য থানকুনি পাতা আশীর্বাদ স্বরূপ। থানকুনি পাতা ব্যবহারে আপনি অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কারণ আমাদের ঘুমের ব্যাঘাতের জন্য মানসিক স্ট্রেস ও দীর্ঘ সময় ধরে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার দায়ী। প্রতিদিন অনেক সময় ধরে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার ফলে তা আমাদের মস্তিস্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা কারণে আমাদের ঘুমের সমস্যা হয়। থানকুনি পাতা মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। যাদের এই সমস্যা আছে তারা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে থানকুনি পাতার রস গ্রহণ করলে মস্তিস্কের এই সমস্যা দূর হবে এবং আপনার অনিদ্রার প্রভাব কেটে যাবে। অনেক ডাক্তারা অনিন্দ্রার জন্য ঔষধের পরিবর্তে থানকুনি পাতা প্রেসক্রাইব করে এর ফলাফল দেখে থাকেন।
এগুলো গবেষণা থেকেও প্রমাণিত যে, থানকুনি পাতা ঘুমের সমস্যাগুলোর চিকিৎসা করতে সাহায্য করতে পারে, তবে এই ফলাফলগুলো শতাভাগ নিশ্চিত করার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন।

যেভাবে ব্যবহার করবেন
৩০০ থেকে ৬৮০ মিলিগ্রাম থানকুনি পাতার নির্যাস দিনে ৩ বার একটানা ১৪ দিন পর্যন্ত নিন। যদি সমস্যা গুরুতর হয় তবে থানুকনি পাতা ব্যবহারের আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন।
কোন দাগ বা চিহ্ন কমাতে
থানকুনি পাতার ব্যবাহার আপনার দেহের কোন দান বা চিহ্ন কমাতে সাহায্য করে। দেহে যখন কোন চিহ্ন বা দাগ দিনে দিনে বাড়তে থাকে তখন থানকুনি পাতার ব্যবহার তা কমিয়ে আনতে পারে।
২০১৩ সালের একটি পর্যালোচনা অনুসারে, থানকুনি পাতা ত্বকের মধ্যে প্রসারিত চিহ্নের (appearance of stretch marks) উপস্থিতি কমাতে পারে। থানকুনি পাতায় টেরপেনয়েড পাওয়া যায়। এই টেরপেনয়েড শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। যা ত্বকে নতুন করে প্রসারিত চিহ্নগুলি গঠন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে সেইসাথে বিদ্যমান চিহ্নগুলি নিরাময় করতে সহায়তা করে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
প্রতিদিন কয়েকবার আক্রান্ত স্থানে ১ শতাংশ গোটু কোলা নির্যাস যুক্ত একটি টপিকাল ক্রিম প্রয়োগ করুন।
কীভাবে ত্বকের প্যাচ পরীক্ষা করবেন
কোন সাময়িক ওষুধ ব্যবহার করার আগে একটি প্যাচ পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি করার জন্য, আপনার বাহুটির ভিতরের দিকে অল্প পরিমাণ ক্রিম ঘষুন। যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার কোনও জ্বালা বা প্রদাহ অনুভব না করেন তবে এটি অন্য কোথাও ব্যবহার করা নিরাপদ ।
ক্ষত নিরাময়ে
ক্ষত স্থান নিরাময় করতে থানকুনি পাতার ব্যবহার রয়েছে। থানকুনি পাতার তৈরি ট্রপিক্যাল ক্রিম ব্যবহারে ক্ষত স্থান সেরে যায়। সেই সাথে ক্ষত স্থানে সৃষ্ট দাগ থেকেও আপনাকে মুক্তি দিবে। এটি ব্যবহারে দ্রুত সময়ে উন্নত ফলাফল পাবেন।
ইঁদুরের উপর 2015 সালের একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে থানকুনি পাতা যুক্ত ক্রিম ক্ষত স্থানে ক্ষত নিরাময় করতে একাধিক ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধারালো বস্তু দ্বারা পরিষ্কার কাটা, ভোঁতা-কিছুর আঘাতের কারণে থেতলে যাওয়া এবং সংক্রমিত টিস্যু ইত্যাদিতে থানকুনি পাতার উপকারিতা রয়েছে। এই ফলাফলগুলো কাজের হলেও , এই ফলাফলগুলো শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
১ শতাংশ থানকুনি পাতার নির্যাস যুক্ত একটি মলম দিনে কয়েকবার আক্রান্ত স্থানে লাগান। যদি আপনার ক্ষত গভীর বা অন্যথায় গুরুতর হয় তবে ব্যবহারের আগে আপনার ডাক্তারকে দেখিয়ে নিবেন।
মনে রাখাবেন এখানেও ক্রিম ব্যবহারের আগে পূর্বের মতো করে প্যাচ পরীক্ষা করে নিবেন। কারণ আপনার ত্বক যদি থানকুনি পাতা সহ্য করতে না পারে তবে আপনার ত্বক জ্বালাপোড়া সহ নানা সমস্যা দিতে পারে। তাই এই ধরণের ক্রিম ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
হাড়ের জয়েন্টের ব্যথায়
আপনার যদি হাড়ের জোড়ায় ব্যথা থাকে তবে থানকুনি পাতা আপনার সে সমস্যা দূর করতে পারে। কারণ থানকুনি আপনার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় কার্যকারী ভূমিকা পালন করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ইঁদুরের কোলাজেনের কারণে সৃষ্ট আর্থ্রাইটিসের উপর ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, থানকুনি পাতা হাড়ের জয়েন্টের প্রদাহ, তরুণাস্থি ক্ষয় এবং হাড়ের ক্ষয় হ্রাস করেছে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব ইমিউন সিস্টেমের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
সুতরাং গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, থানকুনি পাতা হাড়ের জয়েটের ব্যথা কমানোর জন্য ও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা অপরিসীম।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
৩০০ থেকে ৬৮০ মিলিগ্রাম থানকুনি পাতার নির্যাস দিনে ৩ বার করে একটানা ১৪ দিন পর্যন্ত নিন।
বিষাক্ততা কমাতে
আমরা খাবারের সাথে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের বিষাক্ত (Toxic) উপাদান গ্রহণ করছি। এগুলো মাত্রায় কম হলেও দীর্ঘদিন ধরে শরীরে জমতে থাকলে শরীরে মারাক্তক প্রভাবে ফেলতে পারে। থানকুনি পাতা সমস্যা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। থানকুনি পাতায় রয়েছে আইসোনিয়াজিড অ্যান্টিবায়োটিক। যা দেহ বিষমুক্ত করতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতার রস বিষাক্ত উপাদাগুলোকে প্রসাবের সাথে বের করে দিয়ে দেহকে বিষমুক্ত করে।
গবেষণায় দেখা যায় লিভার এবং কিডনির বিষাক্ততার উপর থানকুনি পাতা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২০১৭ সালের এক প্রাণী গবেষণা অনুসারে, থানকুনি পাতায় থাকা অ্যান্টিবায়োটিক আইসোনিয়াজিড বিষাক্ততার প্রভাবে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দমন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। আইসোনিয়াজিড অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত যক্ষ্মা চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
এই পরীক্ষায় ইঁদুরকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে ৩০ দিনের জন্য ১০০ মিলিগ্রাম থানকুনি পাতা দেওয়া হয়েছিল। এই ইঁদুরগুলি সামগ্রিকভাবে কম বিষাক্ততা অনুভব করেছিল। যে ইঁদুরগুলি লিভার এবং কিডনিতে বিষাক্ততা অনুভব করেছিল তাদের থানকুনি পাতা খাওয়ানোর কারণে বিষাক্ততা স্বাভাবিক স্তরে ফিরে আসে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
৩০ থেকে ৬০ ফোঁটা তরল থানকুনি পাতার নির্যাস দিনে ৩ বার টানা ১৪ দিন পর্যন্ত নিন। বাইরে থেকে কিনে ব্যবহার করলে অবশ্যই বোতলে দেয়া নির্দেশিকা পালন করেতে হবে। কারণ থানকুনি পাতার সাথে অন্যান্য উপাদান মেশানোর কারণে অনুপাত পরিবর্তিত হতে পারে।
ঠান্ডা কমাতে
ঠান্ডা লাগলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য থানকুনি পাতার রস অনেক উপকারে আসে। থানকুনি পাতা থেতলে তা থেকে রস বের করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এগুলো ছাড়াও থানকুনি পাতার আরো উপকারিতা রয়েছে। আপনার যদি পেটের সমস্যা থেকে থাকে তবে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস গ্রহণ করলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
- থানকুনি পাতার তেমন কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া নেই। থানকুনি পাতার উপকারিতা এর চেয়ে অপকারিতার মাত্রা খুব কম। তবে কিছু ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার ব্যবহারে, মাথাব্যথা, পেট খারাপ এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা দিতে পারে। তাই যদি আপনি থানকুনি পাতার ব্যবহার নতুন শুরু করেন তবে প্রথম কম ডোজ দিয়ে শুরু করবেন এবং ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন। এভাবে পুরো ডোজ গ্রহণ করলেও আপনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
- আপনি যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা ব্যবহার করে থাকেন তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। আপনি একটানা সর্বোচ্চ দুই থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য থানকুনি পাতা খেতে পারবেন। এর বেশি একটানা খাওয়া উচিত নয়। যদি আবার শুরু করতে চান তবে, মাঝে দুই সপ্তাহের বিরতি নিতে ভুলবেন না
- টপিক্যাল ক্রিম হিসেবে প্রয়োগ করা হলে, থানকুনি পাতা ত্বকের জ্বালা সৃষ্টি করার সম্ভাবনা রাখে। থানকুনি পাতার ক্রিম ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ পরীক্ষা করা উচিত। কারণ ভেষজগুলি FDA দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয় না এবং দূষিত মাটিতে জন্মানোর কারণে থানকুনি পাতায় ভারী ধাতুর বিপজ্জনক মাত্রা পাওয়া গেছে। যা আপনার ত্বকের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ব্যবহারের পূর্বে প্যাচ পরীক্ষা অবশ্যই করে নিবেন। এছাড়া ক্রিম কেনার আগে ভালো করে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। কোন ফুতপাত কিংবা এ ধরণের কোন যায়গা থেকে না কিনে কোন নির্ভরযোগ্য কোম্পানির ক্রিম ব্যবাহার করবেন।
যাদের ব্যবহার করা উচিত নয়
- গর্ভবতীঃ এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো আপনার সন্তানের ওপর পড়েতে পারে। কারণ শিশুদের জন্য এর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়নি।
- বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেনঃ বুকের দুধ পান করানোর কারণে তার প্রভাব শিশু সন্তানের উপর পড়তে পারে।
- হেপাটাইটিস বা অন্যান্য যকৃতের রোগ আছেঃ এই ধরণের রোগের ক্ষেত্রে প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। তাই যদি এই রোগ থেকে থাকে তবে বিরত থাকুন।
- অস্ত্রোপচার করানোর আগেঃ যদি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনার একটি নির্ধারিত অস্ত্রোপচার করা হবে তবে থানকুনি পাতা ব্যবহার করবেন না।
- ১৮ বছরের কম বয়সীঃ আপনার বয়স ১৮ এর কম হলে জটিল রোগের ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার ব্যবহার করা উচিত নয়।
- ত্বকের ক্যান্সারের ইতিহাস আছেঃ পূর্বে যদি ত্বকের ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে থানকুনি পাতার ক্রিম ব্যবহারে থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনার ত্বক তা সহ্য করতে পারবে না।
ব্যবহারে আগে
যে সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন
- লিভার রোগ থাকলে।
- আপনার ডায়াবেটিস আছে।
- উচ্চ কোলেস্টেরল এর সমস্যা আছে।
- ঘুম বা দুশ্চিন্তার জন্য সেডেটিভের মতো ওষুধ সেবন করছেন।
- মূত্রবর্ধক গ্রহণ করা হয়।
এইগুলো থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
থানকুনি পাতার রেসিপি
থানকুনি পাতার বড়া
থানকুনি পাতার ভর্তা
উপকরণ
থানকুনি পাতা ২০০ গ্রাম বা ২/৩ আটি, পেঁয়াজকুচি ২টি, রসুনকুচি ১টি, কাঁচামরিচ ২/৩টি, আদাকুচি, আলু সেদ্ধ ১/২টি, লবণ ও সরিষার তেল পরিমাণমত।
থানকুনি পাতার ভর্তা যেভাবে তৈরি করবেন:
১) প্রথমে থানকুনি পাতা ভালভাবে ধুয়ে নিন, এরপর কুচি কুচি করে কেটে নিন।
২) থানকুনি পাতাকুচি, পেঁয়াজকুচি, রসুন, আদা, লবণ একসাথে মিশিয়ে শিল পাটায় বা ব্লেন্ডারে পিষে নিন।
৩) তেল মিশিয়ে নিলেই হয়ে গেল থানকুনি পাতা ভর্তা।
আলুর সাথে থানকুনি পাতার ভর্তা
উপকরণ:
থানকুনি পাতা ২০০ গ্রাম বা ২/৩ আটি, পেঁয়াজকুচি ২টি, রসুনকুচি ১টি, কাঁচামরিচ ২/৩টি, আদাকুচি, আলু সেদ্ধ ১/২টি, লবণ ও সরিষার তেল পরিমাণমত।
আলুর সাথে থানকুনি পাতার ভর্তা যেভাবে তৈরি করবেন:
১) থানকুনি পাতা ভালভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কাটবেন।
২) সেদ্ধ আলু ভর্তা করুন। আলু ভর্তার সাথে থানকুনি পাতার কুচি, পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, আদাকুচি, লবণ একসাথে মিশিয়ে নিন।
৩) এবার তেল দিয়ে পুনরায় মেখে নিন। তারপর পরিবেশন করুন।
থানকুনি পাতার বড়া
উপকরণ
থানকুনি পাতা ১০০ গ্রাম বা ৩/৪ আটি, পেঁয়াজকুচি ২টি, রসুনকুচি ১টি, কাঁচামরিচ কুচি ২/৩টি, হলুদ ১ চামচ, মরিচ ১ চামচ, বেসন ১০০ গ্রাম, লবণ ও তেল পরিমাণমত।
থানকুনি পাতার বড়া যেভাবে তৈরি করবেন:
১) থানকুনি পাতা ভালভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
২) থানকুনি পাতাকুচি, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, বেসন ও লবণ ভালভাবে মিশিয়ে মাখিয়ে নিন।
৩) শেষে ডুবো তেলে, বড়া বা পিঁয়াজুর মত করে ভেজে পরিবেশন করুন।
থানকুনি পাতার ভাজি
উপকরণ:
থানকুনি পাতা পরিমাণ মতো, পেঁয়াজকুচি ১টি, রসুনকুচি ১টি, কাঁচামরিচ কুচি ২/৩টি, লবণ ও তেল পরিমাণমত।
থানকুনি পাতার ভাজি যেভাবে তৈরি করবেন:
১) থানকুনি পাতা ভালভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
২) পাত্রে তেল দিয়ে গরম করে পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ দিয়ে নাড়ুন।
৩) কিছুক্ষন পর থানকুনি পাতাকুচি ও লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন, ৫/৬ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন। হয়ে গেল থানকুনি পাতা ভাজি। এটা অনেকটা শাক রান্নার মতো।
শেষ কথা
থানকুনি পাতার অনেক ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। আর থানকুনি পাতার উপকারিতা তো আমরা উপরে দেখলামই । আমরা যদি একটু সচেতন হয়ে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থানকুনি পাতা ব্যবহার করি তবে খুব সহজেই কেমিক্যাল জাতীয় ঔষধ ছাড়াই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবো। আমরা সকলেই জানি যে, কেমিক্যাল জাতীয় ঔষধ আমাদের নানা সমস্যা করে । কিন্তু প্রকৃতিক ভাবে পাওয়া থানকুনি তেমন সমস্যা করে না। এর অপকারিতার অন্যতম কারণ হলো দূষিত মাটি। এটি যদি ভালো স্থানে চাষ করা যায় তবে সে সমস্যা আর থাকবে না। তখন থানকুনি পাতার অপকারিতাও অনেক কমে যাবে। তবে এখন বিভিন্ন স্থানে থানকুনি পাতার চাষ হচ্ছে। কিন্তু তত বড় পরিসরে হচ্ছে না। আযুর্বেদ শাস্ত্রে থানকুনি পাতাকে যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এলোপ্যাথিতে ততটা দেয়া হচ্ছে না। আমাদের উচিত থানকুনি পাতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা ।
তথ্যসূত্র:
১) https://www.healthline.com/health/gotu-kola-benefits
২) রেসিপি: ইউটিউব