Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দিন দিন বেড়েই চলেছে। দিনে দিনে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ডায়রিয়া, আমাশয় বা পাতলা পায়খানার মত পেটের অসুখ ও বেড়েই চলেছে।
চিন্তার বিষয় হচ্ছে পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? এই দূষিত পানি এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা দিন দিন বিশাল আকার ধারন করছে। ডায়রিয়ায় প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সের ৫০০,০০০ শিশুর মৃত্যু হয়।
সারা বিশ্বে ডায়রিয়া শিশু মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। এই লেখাতে আমরা আজ জানবো পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি এবং এই রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা।
পাতলা পায়খানা বা উদরাময় কী?
পানির মত তরল ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলে। সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩ বার বা তার বেশি সংখ্যক বার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বা উদরাময় বলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে,৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এই ডায়রিয়া। প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৭০ কোটি শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। ডায়রিয়ার কারণে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। সুপেয় পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত টয়েলেট ব্যবহার করতে না পারার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে।
ডায়রিয়ার লক্ষণ (Symptoms)
ডায়রিয়া (Diarrhoea) বা উদরাময় বা পাতলা পায়খানা যাই বলেন না কেন, এই পাতলা পায়খানার রয়েছে নানান লক্ষণ, চলুন দেখে নেই পাতলা পায়খানার বা ডায়রিয়ার লক্ষণগুলি।
- পায়খানা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
- দিনে তিনবারের বেশি পাতলা পায়খানা হওয়া।
- তলপেটে তীব্র ব্যাথা অনুভব করা।
- পেট ফোলা।
- অনেক সময় বমি বমি ভাবও হতে পারে।
- শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- পেটের পেশীর সংকোচন।
- তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া, ঘন ঘন পানির পিপাসা পাওয়া।
- ওজন হ্রাস হওয়া।
- জ্বর আসতে পারে।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে মলে রক্তের উপস্থিতি।
সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে কিছু ভিন্ন লক্ষণ থাকতে পারে –
- পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।
- জ্বর আসতে পারে এবং ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
- মাথা ঘোরা।
- বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব থাকা।
বয়স অনুযায়ী ডায়রিয়ার লক্ষন কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন-
শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডায়রিয়ার একটি বিশেষ লক্ষণ হলো ঘন ঘন পিপাসা পাওয়া। স্বাভাবিকের চেয়ে তুলনামূলক কম প্রস্রাব হওয়া এবং এর পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতাও থাকে।
পানিশূন্যতা (Dehydration)
ডায়রিয়া হলে পায়খানা ও বমির পাশাপাশি মূত্র ও ঘামের সাথে শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইস (Electrolytes) যেমন – সোডিয়াম(Na) ক্লোরাইড(Cl), পটাশিয়াম(K) এবং বাইকার্বনেট বের হয়ে যায়। এই ইলেক্ট্রোলাইটের অভাবে শরিরে পানিশুন্য হয়ে পড়ে।
পানিশূন্যতার লক্ষণসমূহ
- ঘণ ঘণ পিপাসা লাগা।
- মুখ, জিহ্বা, গলা শুকিয়ে যাওয়া।
- স্বাভাবিকের চেয়ে তুলনামূলক কম প্রস্রাব হয় অথবা একবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- গাঢ় বর্নের প্রস্রাব হয়।
- ক্লান্ত বোধ করা।
- চোখ ডেবে যায় অর্থাৎ চোখ কোঠরে ঢুকে যায়।
- শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে।
- দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস হয়।
- নাড়ি (Pulse) খুব দ্রুত এবং ক্ষীণ হয়ে যায়।
- রোগীর শরির নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
- পেট ফুলে যায়।
- পানিশূন্যতা খুব বেশি হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- চোখে ঝাপসা দেখা।
ডায়রিয়ার কারণ : (Causes)
বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য কারন –
- জীবাণু সংক্রমনের মাধ্যমে।
- দূষিত পানি পান করলে।
- দূষিত খাবার বা পঁচা-বাসি খাবার খেলে।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে।
- খোলা জায়গায় মলত্যাগ করলে
- ছত্রাক ঘটিত কারণে ডায়রিয়া
- কৃমি ঘটিত কারণে ডায়রিয়া
- এন্টামিবা জাতীয় প্রোটোজোয়া ঘটিত ডায়রিয়া
প্যাথোজেনিক (Pathogenic) জীবাণুর সংক্রমণ ছাড়া অন্যান্য কিছু কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। যেমন –
১. হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism)
২. দুধের মধ্যে থাকা ল্যাক্টোজ সহ্য না হওয়া
৩. অন্ত্রের প্রদাহজনক রোগ
৪. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (Irritable bowel syndrome)
প্রকারভেদ
ডায়রিয়াকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়-
১. স্বল্প স্থায়ী পানির মতো ডায়রিয়া (মলের সাথে রক্ত যায় না)
২. স্বল্প স্থায়ী রক্ত যুক্ত ডায়রিয়া
৩. দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া ( দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া থাকলে)
স্বল্প স্থায়ী পানির মত ডায়রিয়া কলেরা সংক্রমণের কারণে হতে পারে। এর সাথে যদি রক্ত যায়,সেক্ষেত্রে এটাকে রক্ত আমাশয় (Bacillary Dysentery) ও বলা হয়।
সংক্রামক ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
ভাইরাসজনিত
যেমন : রোটা ভাইরাস (Rota virus), এস্ট্রো ভাইরাস,হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A) ভাইরাস,এন্টারিক এডেনোভাইরাস, নরোভাইরাস,সাইটোমেগালো ভাইরাস ইত্যাদি।
দূষিত পানিতে নরোভাইরাস,এস্ট্রো ভাইরাস, হেপাটাইটিস এ ভাইরাস এবং স্যাপোভাইরাস থাকে। হিমায়িত সবজিতে হেপাটাইটিস এ ভাইরাস থাকে। সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফলের মধ্যে নরোভাইরাস থাকে। খাদ্য ঠিকভাবে প্রসেস না করা হলে হেপাটাইটিস এ এবং নোরোভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত
যেমন : সালমোনেলা (Salmonella), শিগেলা Shigella flexneri), ইশ্চেরিচিয়া কোলাই / ই কলাই (Escherichia coli) , ব্যাসিলাস (Bacillus cereus), ভিব্রিও (Vibrio), ক্যামপাইলোব্যাকটর ইত্যাদি।
পরজীবীজনিত
যেমন : জিয়ারডিয়া (প্রটোজোয়া ঘটিত) ক্রিপটোসপরিডিয়াম, সাইক্লোসপরা ইত্যাদি।
অসংক্রামক ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
কিছু রোগঃ যেমন : ডাইভার্টিকুলাইটিস, পায়ুপথে বা অন্ত্রে ক্যান্সার, আইবিএস, আলসারেটিভ কলাইটিস ইত্যাদি।
কিছু ওষুধঃ যেমন : ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড, কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, জোলাপ ইত্যাদি।
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া
বিভিন কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে অনেক সময়ই দেখা যায় ২-৩ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওষুধ – স্যালাইন সহ আরো চিকিৎসার পর ও সহজে ডায়রিয়া ঠিক হচ্ছে না, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হওয়ার কারণ-
- জিয়ারডিয়া ইনটেসটিনাথিস
- স্ট্রংগিলয়ডিয়াসিস
- এনটারোপ্যাথিক ই. কলাই
- খাবার হজম না হওয়া
- অন্ত্রের কৃমি
পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এই পানিশূন্যতার কারণে অনেক সময় মৃত্যুও ঘটতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ভয়ানক রূপ ধারণ করে। ডায়রিয়া হলে শরির থেকে লবন ও পানি বের হয়ে যায়। এই লবন ও পানির ঘাটতি পূরন করা খুবই জরুরি। তাই রোগীকে বার বার খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার খাওয়ানো উচিত। পাশাপাশি যে কারণে ডায়রিয়া হয়েছে তার চিকিৎসা করতে হবে।
রোগীকে স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
অনেকে মনে করেন, শিশুদের ডায়রিয়া হলে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না। কিন্তু ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল। শিশুর ডায়রিয়া হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
এছাড়া শিশুদের মধ্যে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে –
- ২৪ ঘন্টার বেশি ডায়রিয়া হলে।
- জ্বর যদি ১০২ ডিগ্রী বা তার বেশি হয়।
- তলপেট বা মলদ্বারে বেশিব্যাথা অনুভুত হলে।
- মলের সাথে রক্ত গেলে বা মলের রঙ কালো হলে।
- পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে।
প্রাপ্ত বয়স্কদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়রিয়া হলে বার বার খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিলে।সরাসরি একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত :
- ডায়রিয়া ২ দিনের বেশি থাকলে।
- ১০২ ডিগ্রী বা তার বেশি জ্বর থাকলে।
- বার বার বমি হলে।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ বার বা তার অধিক সংখ্যক বার পায়খানা হলে।
- তলপেট বা মলদ্বারে গুরুতর ব্যাথা অনুভুত হলে।
- মলের সাথে রক্ত গেলে বা মলের রং কালো হলে।
- পানিশূন্যতা দেখা দিলে।
শরিরের পানিশূন্যতা পূরণের উপায়
ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানি বের হয়ে যায় ফলে শরিরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এসময় শরিরের পানিশূন্যতা রোধের জন্য বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন :
- খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো।
- ইন্ট্রাভেনাস (Intravenous) স্যালাইন (শরির অতিরিক্ত পানি শূন্য হলে বা খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে পানিশুন্যতা দূর করা না গেলে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন দেয়া উচিত)
খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম
ডায়রিয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথেই খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো শুরু করতে হবে।যত বার পায়খানা বা বমি হবে ততবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। বমি হলেও স্যালাইন খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। অনেক সময় স্যালাইন খাওয়ার সাথে সাথেই বমি হয়।এমন হলে অল্প অল্প স্যালাইন খাওয়াতে হবে। কিন্তু ডায়রিয়া সম্পুর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত স্যালাইন খাওয়াতে হবে।কিন্তু ২ দিনের বেশি ডায়রিয়া হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
শিশুদেরকে চামচ দিয়ে অল্প অল্প করে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশুকে কখনোই শোয়ানো অবস্থায় পানি, দুধ বা স্যালাইন খাওয়ানো উচিত না। শিশুর মাথা কিছুটা উচু করে তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
প্যাকেট স্যালাইন কিনে সেটা তৈরি করলে তা ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়।প্যাকেটের গায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্যালাইন বানানো ও খাওয়ানো উচিত।
বাড়িতে বানানো স্যালাইন ৬ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে।৬ ঘন্টা পর বাসায় বানানো স্যালাইন খাওয়ানো যাবে না।
খাওয়ার স্যালাইন তৈরির উপায়
ডায়রিয়া রোগীকে সাধারণত ৩ ধরনের খাবার স্যালাইন খাওয়ানো হয়-
- প্যাকেট স্যালাইন (ওরাল স্যালাইন বা Oral saline)
- লবন গুড়ের স্যালাইন
- চালের গুঁড়োর স্যালাইন
প্যাকেট স্যালাইন
বর্তমানে বাজারে খাওয়ার স্যালাইন প্যাকেটে বাজারজাত অবস্থায় পাওয়া যায়।প্যাকেটের নির্দেশ অনুযায়ী, আধা লিটার ফুটানো ঠাণ্ডা খাওয়ার পানিতে এক প্যাকেট খাবার স্যালাইনের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়ার স্যালাইন তৈরি করা যায়। এই স্যালাইন সাধারণত ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। ১২ ঘন্টা পর অবশিষ্ট অংশ ফেলে দিতে হবে।
লবণ গুড়ের স্যালাইন
একটি পরিষ্কার পাত্রে আধা লিটার ফুটানো পানির সাথে তিন আঙুলের এক চিমটি লবণ এবং একমুঠ গুড় অথবা চিনি মিশাতে হবে। বাড়িতে বানানো এ স্যালাইন ৬ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়া যায়।
চালের গুঁড়ার স্যালাইন
একটি পরিষ্কার পাত্রে চালের গুড়া নিন।চালের গুড়া না থাকলে একমুঠ আতপ চাল বা অন্য যে কোনো চাল ১০ থেকে ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, তারপর এই চাল পিষে নিন।আধা কেজি পানিতে চালের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর আরো আধা কাপ পানি মেশান। এই মিশ্রনটি চুলায় ১০ মিনিট গরম করুন। মিশ্রনটি অনবরত নাড়তে থাকবেন যেন পাত্রের নিচে লেগে না যায়।মিশ্রনটি ফুটে উঠলেই নামিয়ে ফেলুন। মিশ্রনটি ঠান্ডা হয়ে গেলে এতে এক চিমটি লবন মেশান। এই স্যালাইন ৮ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়া যাবে।
আজকাল প্যাকেটজাত রাইস স্যালাইন দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশ অনুযায়ী স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াতে পারেন।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
ডায়রিয়া বেশি মাত্রায় হলে তা ভয়াবহ রূপ ধারন করতে পারে। ডায়রিয়া হলে শরির পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং অনেক দূর্বল হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত ডায়রিয়া যেন না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখা।
ডায়রিয়া প্রতিরোধের কিছু উপায় নিম্নে আলোচিত হলো-
- বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পান করুন।
- বেশি বেশি পান করুন।
- অত্যধিক গরম পরিবেশে কাজ করবেন না। অত্যাধিক গরমের ফলে শরির পানিশুন্য হয়ে পড়ে।
- ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। (যেমন- পায়খানা থেকে বের হয়ে এবং খাবার আগে হ্যান্ড ওয়াশ অথবা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নিয়মিত নখ কাটা, পরিষ্কার কাপড় পরা, পরিধান নিয়মিত গোসল করা ইত্যাদি )
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও পঁচাবাসি খাবার গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার গ্রহন করবেন না।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করবেন না।
- রান্না করার আগে এবং পরে ভালোভাবে হাত ধোয়া
- শিশু এবং বয়স্কদের তাদের বয়স অনুযায়ী খাবার দিন।
- খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খান।
- মশলাযুক্ত খাবার কম গ্রহন করুন।
- সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
- খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুবেন।
- মলত্যাগের পর সাবান দিয়ে হাত ধুবেন। UNICEF এর তথ্যানুযায়ী, মলত্যাগ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধুলে ডায়রিয়ার সম্ভবনা ৪০% কমে আসে।
- শিশুদের জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান। বুকের দুধ ব্যতিত অন্য কোনো খাবার খাওয়াবেন না।
- সম্ভব হলে রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।
- স্বাস্থ্য সচেতন হোন।
পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি দেখে নিন
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- অনেকে ভেবে থাকবেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা ওরস্যালাইন খেতে পারবে না, কারণ স্যালাইনে লবণ আছে,ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায় এবং এই লবন পানির অভাব পূরণ না হলে রোগীর শরির পানিশূন্য হয়ে পড়বে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাক উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ওরস্যালাইন খাওয়ায় কোনো বাধা নেই।
- ওরস্যালাইনে সামান্য চিনি বা গ্লুকোজ থাকে এবং এটা অন্ত্রে লবণ শোষণের কাজে খরচ হয়ে যায়। তাই ওরস্যালাইন ডায়বেটিসের রোগীর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
- ডায়রিয়ার রোগীদের স্যালাইনের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার ও খেতে হবে। ডায়রিয়ার সময় স্বাভাবিক খাবার খাওয়া নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে থাকেন। ঘরের তৈরি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন। বুকের দুধ খাওয়া শিশুদের কোনো ভাবেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না। বুকের দুধের পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়াবে।
- অনেক সময় ফুড পয়জনিংয়ের কারণে বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। কিন্তু এটা কখনোই করবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধই খাবেন না।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই এন্টিবায়োটিক গ্রহন করবেন না।
- অনেক ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার পানিশুন্যতা এত ভয়াবহ মাত্রা ধারণ করে যে খাওয়ার স্যালাইনের মাধ্যমে এই অভাব পূরন সম্ভব হয়ে উঠে না। তখন শিরায় স্যালাইন নেয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও কমপ্লেইন করা হবে।
Sylhetism ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।
Sylhetism ব্লগের কোন স্বাস্থ বিষয়ক পোস্টের পরামর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবেন, আমরা স্বাস্থ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ না, আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। সুতারাং কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার অবশ্যই আমরা নিতে পারবো না। ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।