মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা, এবং মধু খাওয়ার নিয়ম

Honey

Last Updated on 26th May 2023 by Mijanur Rahman

মধু (Honey) একটি উচ্চ ওষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ তরল পদার্থ যা মিষ্টি স্বাদযুক্ত। মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে মধু তৈরি করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধুতে রয়েছে একাধিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা যা আমরা কম বেশি প্রায় সবাই জানি। মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না, মধু প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার হিসেবে পরিচিত, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ এখন চিনির বদলে মধু ব্যবহার করে থাকেন। বহুকাল থেকেই ক্ষত সারানোর কাজে মিশর ও গ্রিসে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মধুতে একাধিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে। পিত্ত থলির সংক্রমণ রোধ, বাতের ব্যথায়,শরীরের বাড়তি ওজন কমাতেও মধু খুবই কার্যকরী উপাদান।

মধু হলো প্রাকৃতিক একটি ঔষধ এবং খাদ্য। বাংলাদেশে সুন্দরবন, বান্দরবন, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে মধুর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ, রং, সুগন্ধ এবং ঔষধিগুণাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন হয়ে থাক। সাধারনত সুন্দরবনের মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে। মধুর অন্যতম একটি গুণ হল এটি কখনো নষ্ট হয় না, হাজার বছরেও মধুর গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।

Table of Contents

মধুর ভৌত বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী “মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই” মধু চিনির চাইতে অনেক মিষ্টি।মধুতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, তাই তরল মধু নষ্ট হয় না। মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প পরিমানে হওয়ায় বায়ুবাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না। সাধারনত প্রাকৃতিক এবং অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪%- ১৮% আর্দ্রতা থাকে। আর্দ্রতার মাত্রা ১৮% এর নিচে থাকলে মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইজ করা মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী তুলনামূলক কম থাকে।

মধু
মধু ও এভোকাডো

মানুকা হানি

নিউজিল্যান্ডের মানুকা নামক একপ্রকার ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদের ফুল থেকে উৎপন্ন মধু “মানুকা হানি” নামে পরিচিত। এই মানুকা হানিকে বাজারের অন্যান্য মধুর চেয়ে বেশি ঔষধিগুণ সম্পন্ন হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। স্পেনের ফরএভার বী হানি বিশ্বের সেরা মধুর খেতাব অর্জন করেছে, এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও ঔষধিগুন সম্পন্ন মধু।

মধু যেভাবে তৈরি হয়

সাধারণভাবে বলা যায়, মধু হলো লাখ লাখ মৌমাছির অক্লান্ত শ্রমের ফসল।মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রস সংগ্রহ করে  তা পাকস্থলীতে জমা রাখে। তারপর মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়। এরপর মৌমাছি মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে এই মধু জমা করে। পৃথিবীতে মধু বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায়।

  • ক্রিমি মধু ( Creamy honey)
  • ড্রাই মধু  (Dry honey)
  • পাস্তুরাইজড মধু
  • র মধু (Raw honey)

পাস্তুরাইজড মধু আমাদের দেশে সংরক্ষণ করা হয় এবং এতে জীবাণু  সংক্রমণ হয় না।

মধুর পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে পুষ্টিমান-
উপাদান
পরিমাণ
শক্তি
১,২৭২ কিলো জুল (৩০৪ kcal)
শর্করা
৮২.৪ গ্রাম
চিনি
৮২.১২ গ্রাম
আঁশ
০.২ গ্রাম
প্রোটিন
০.৩ গ্রাম
ভিটামিন
উপাদান
পরিমাণ
রিবোফ্লাভিন (বি২)
০.০৩৮ মিলি গ্রাম
নায়াসিন (বি৩)
০.১২১ মিলি গ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫)
০.০৬৮ মিলি গ্রাম
ভিটামিন বি৬
০.০২৪ মিলি গ্রাম
ফোলেট (বি৯)
২ মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন সি
০.৫ মিলি গ্রাম
খনিজ (Minerals)
উপাদান
পরিমাণ
ক্যালসিয়াম (Ca)
৬ মিলি গ্রাম
লৌহ (Fe)
০.৪২ মিলি গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
২ মিগ্রা
ফসফরাস (P)
৪ মিলি গ্রাম
পটাসিয়াম (K)
৫২ মিলি গ্রাম
জিংক ( Zn)
০.২২ মিলি গ্রাম
পানি
১৭.১০ গ্রাম

মধুতে রয়েছে ৪৫ টির ও অধিক  খাদ্যগুণ। তার মধ্যে কয়েকটি হল –

১। গ্লুকোজ (Glucose) – ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ

২। ফ্রুক্টোজ (Fructose)  – ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ

৩। সুক্রোজ (Sucrose)  – ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ

৪। মন্টোজ (Montose) – ৫ থেকে ১২ শতাংশ

৫। অ্যামাইনো অ্যাসিড (Amino Acid)- ২২ শতাংশ

৬। খনিজ লবণ (Minerals)  – ২৮ শতাংশ

৭। এনজাইম (Enzyme) – ১১ শতাংশ

৮। ক্যালরি (Calorie)- ৩০৩ (১০০ গ্রাম মধুতে)

৯। ভিটামিন বি১ (Vitamin B1)

১০। ভিটামিন বি২ (Vitamin B2)

১১। ভিটামিন বি৩ (Vitamin B3)

১২। ভিটামিন বি৫ (Vitamin B5)

১৩। ভিটামিন বি৬ (Vitamin B6)

১৪। আয়োডিন (I)

১৫। জিংক (Zn)

১৬। কপার (Cu)

১৭। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ( Antibacterial)

১৮। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান (Antimicrobial)

মধুর উপকারিতা

আগেই বলা হয়েছে মধুকে বলা হয় প্রাকৃতিক বুষ্টার, মধুর রয়েছে হরেক রকম ওষুধিগুন, যৌন দুর্বলতা থেকে শুরু করে আমাদের শরীরের নানান সমস্যায় মধু ওষুধের মতো কাজ করে, এই আর্টিকেলে আমরা মধুর উল্লেখ্যযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরবো। তাহলে চলুন দেখে নেই।

শক্তি প্রদান করে

মধু  শরীরে ভালো শক্তি প্রদান করে। মধু তাপ ও শক্তির উত্তম একটি উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে শরীরকে সুস্থ রাখে।বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাইয়ে দিলে সারাদিন তারা খুব এনার্জিটিক থাকবে এবং তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে

মধুর উপকারিতা
মৌমাছি ও মধু

হজমে সহায়তা করে

মধুতে ডেক্সট্রিন থাকে যা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে, ফলে মধুতে থাকা শর্করা খুব দ্রুত হজম হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

মধুতে বিদান ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। সকালবেলা ১ চা চামচ খাঁটি মধু  পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অম্লত্ব দূর হয়।

রক্তশূন্যতা কমায়

মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে তাই  এটি রক্তশূন্যতায় বেশ কার্যকরী।মধুতে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা হিমোগ্লোবিন গঠনে দ্রুত কাজ করে।

অনিদ্রার ওষুধ

আমাদের শরীরে মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন আছে, যা ঘুমের সময় আমাদের শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এটি ঘুমের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্কের ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘটে থাকে। তাই মধুতে থাকা শর্করা ও চিনি ঘুমের জন্যে অনেক উপকারি। প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে অনিদ্রা দূর হবে। (তথ্য সুত্র)

insomnia
ছবিঃ Insomnia

যৌন দুর্বলতায়

যৌন দুর্বলতায় মধু সবচেয়ে বেশি কার্যকর। মধু প্রাণের ফলে পুরুষ ও নারী উভয়ের শরীরে ও যৌনাঙ্গে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে বেশি হয়। যা পুরুষের মিলনের সময় বৃদ্ধি করে, এবং নারীর মিলন করে তুলে অনেক উপভোগ্য। যেসব পুরুষের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তারা প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খেলে নিশ্চিত উপকার পাবেন।

উত্তম পানীয়

হালকা গরম দুধের সঙ্গে  মধু মিশ্রিত করলে খুব ভালো একটি পানীয় হয়। দুধ ও মধু এক সাথে খেলে মিলনের সময় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও তাই বলে থাকেন।

মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে

মধু দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ হয়। অনেকের দাঁতে পাথর জমাট বাঁধে, মধু এই পাথর জমাট বাধা রোধ করে। মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। করে।মুখের ঘায়ে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।জিঞ্জাইটিস, রক্তপাত এবং ফলকসহ দাঁত ও মাড়ির রোগে  মধুর নিয়মিত ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঁচা মধু পানিতে মিশিয়ে মাউথওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করা যায়। আক্রান্ত মাড়িতে সরাসরি মধু মাখালে দাঁতের ব্যথা, প্রদাহ এবং অন্যান্য রোগ খুব দ্রুত সারে

ত্বক ও মুখের যত্নে মধু

মধুতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং গুনাবলি তাই এটি ত্বকে ব্যবহার করার উপযোগি।বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু সেরা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। ত্বকে মধু  প্রয়োগ করা খুব সহজ। মধু শীতের সময়  ঠোঁট  ফাটা নিরাময় করে।মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হওয়ায় ক্ষত, ঘা, কাটা-ছেড়া,  পোড়াসহ  অন্যান্য সংক্রমণের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।

পাকস্থলীর সুস্থতায়

মধু পাকস্থলীর যাবতীয় কাজকে ত্বরান্বিত করে এবং হজমের সমস্যা দূর করে। মধু পাকস্থলীর হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিড (HCl) ক্ষরণ কমিয়ে দেয় ফলে বমিভাব ও বুকজ্বালা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে

মধু চোখের জন্যও অত্যন্ত ভালো। গাজরের রসের ও  মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

ক্ষত নিরাময়ে মধু

কাঁচা মধু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে ধ্বংস করতে সক্ষম। মধুতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল (Antibacterial),  অ্যান্টিফাঙ্গাল (Antifungal)  এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) রয়েছে।মধুর এসব গুনাবলীর মাধ্যমেই ক্ষত নিরাময় হয়।

সাইনুসাইটিসের (Sinusitis) সমস্যা রোধে

আজকাল অনেকেক সাইনাস সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন। মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াম (Anti bacterium)  এবং অ্যান্টি-সেপটিক( Anti septic) হওয়ায় সংক্রমণ পরিষ্কার করে  এবং প্রদাহ কমায়। মধু কাশি কমায় এবং শক্তিশালী  প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে সাইনাস সংক্রান্ত সমস্যা কমে।

ওজন কমাতে

যেহেতু মধুতে কোনো চর্বি বা ফ্যাট নেই, তাই মধু খাওয়া শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী। মধু পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায় ফলে ওজন কমে।প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু ও লেবু মিশিয়ে খেলে আপনার মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং  ওজন কমাতে সক্ষম হবে। চিনির বিকল্প হিসেবে মধু খাওয়া উত্তম। মধুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স চিনির চেয়ে কম।সুতরাং যারা  ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চান তাদের জন্য মধু অতি উত্তম।

ওজন কমানোর উপায়
ওজন কমানোর উপায়

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে

মধু স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মধু সেবন মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং দীর্ঘকালীন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

কাশি সারায়

শিশুদের কম বেশি ঠান্ডা কাশিজনিত সমস্যা হয়ে থাকে।এটি শিশুদের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ সমস্যা। ঠান্ডা কাশির জন্য অনেক ওষুধ পাওয়া গেলেও তা সবসময় কার্যকর হয় না এবং এসব ওষুধের অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও (Side effect) হতে পারে। মধু বিশেষত বাচ্চাদের কাশির জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার  হিসেবে বিবেচিত হয়, ঘুমের সময় কাশি উপশমে সাহায্য করে। তবে  এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু না খাওয়ানোই উত্তম।

অ্যাকজিমা নিয়ন্ত্রণ

অ্যাকজিমা হচ্ছে ত্বকের প্রদাহ, যাতে ত্বক লালচে হয়ে  ফুলে ওঠে। সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি। সাধারণত অল্প বয়সী শিশু-কিশোররা এই রোগে ভোগে। কাঁচা মধু এবং জলপাইয়ের তেল দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের ময়লা অপসারিত হয়ে ত্বককে মসৃণ ও নরম করে। এটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার(Cleanser) হিসাবে কাজ করে।ওটের সাথে মধু মিশ্রিত করে ত্বকের এক্সফোলিয়েশনের জন্যও ব্যবহার করা যায়। এটি মৃত কোষ অপসারণ করে। মধুর নিয়মিত ব্যবহার অ্যাকজিমা হওয়া রোধ করে  বা আবার ফিরে আসতে বাধা দেয়।

তারুণ্য ধরে  রাখতে

তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। এটি  একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বলিরেখা, বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।

চুলের যত্নে মধু

খুশকির জন্য সেরা প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার হচ্ছে মধু।

চুল স্প্রের নমুনা
চুল স্প্রে

ব্যবহার বিধি : ২

টেবিল চামচ মধু ও সমপরিমাণে  তেল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানান।এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক চুলকে পুষ্টি সরবরাহ করবে এবং পাশাপাশি চুলকে করবে মসৃণ এবং নরম।

হাড় ও দাঁত গঠনে

মধুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো  ক্যালসিয়াম(Ca)। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়সহ  চুলের গোড়া শক্ত করে।নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও নখের ভঙ্গুরতা রোধ করে।

হাঁপানি রোধে

আধা গ্রাম গোলমরিচের গুড়ার সঙ্গে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মিশিয়ে দিনে তিনবার এই মিশ্রণ পান করলে  হাঁপানি রোধ হয়।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রণ খাবেন। নিয়মিত এই মিশ্রণ খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমবে। প্রতিদিন সকালে খাওয়ার  আগে  এই মিশ্রণটি খাবেন। মধু এবং পেয়াজের রস ও এক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী।

রক্ত পরিষ্কারক

এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। সকালবেলা খালি পেটে এই মিশ্রণ পান করুন।এটি  রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, তা ছাড়া রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার রাখে।

রক্ত উৎপাদনে সহায়ক

মধুতে রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি-RBC/Red blood cell, ডব্লিউবিসি- WBC/White blood cell,প্লাটিলেট- Platelet) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে তোলে।

হৃদরোগে

এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের জন্য উপকারী।এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

রোগ প্রতিরোধের শক্তি বাড়ায়: মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধের  শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে। মধুর এন্টিব্যাকটেরিয়াল (Antibacterial) উপাদান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

মধুর উপকারিতা ও ব্যবহার

মধুর সাথে একেক উপাদানের সংমিশ্রণে একেক রকমের উপকার পাওয়া যায়, চলুন জেনে নেয়া যাক, কোন উপাদানের সাথে মধু মিশ্রিত করলে কি কি উপকার পাওয়া যায় এবং কোন সময়ে মধু খেলে কি উপকার হয়:

মধু ও লেবু

শরীরের টক্সিক পদার্থ বের করে দেওয়ার জন্য লেবু ও মধুর ভূমিকা অতুলনীয়।

  • লেবু ও মধুর মিশ্রণ খেলে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের হয়ে যায়
  • অলসতা কমায়, শরীরকে কর্মক্ষম রাখে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • গলাব্যাথা দূর করে
  • দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে
  • ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে
  • কাশি  ভালো হয়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • মেটাবলিজম বা হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়
  • শরীর থেকে শ্লেষ্মা বের করে

কালোজিরার মধুর উপকারিতা

বলা হয়ে থাকে, কালোজিরা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ওষুধ। নিয়মিত মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক-

  • রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হয়
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
  • হাপানী ও শ্বাসকষ্ট দূর করে
  • মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে

মধু ও আদা

আদা ও মধু খাওয়ার প্রচলন বহু যুগ ধরেই চলে আসছে। আদা ও মধু খাওয়ার উপকারিতাগুলোঃ

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হয়
  • অপ্রকাশিত রোগ ভালো হয়

রাতে মধু খাওয়ার উপকারিতা

  • রাতে মধু খেলে গভীর ঘুম হয়
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
  • দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে

সকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা

  • হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়
  • পেটের অম্লতাভাবে দূর করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

শীতকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা

  • সর্দি কাশিতে ভালো হয়।
  • শরির গরম রাখে

 গ্রীষ্মকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা

  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে
  • উচ্চ রক্তচাপ ‍নিয়ন্ত্রণে থাকে
  • খাওয়ায় রুচি আনে।

আখরোট ও মধুর উপকারিতা

মধুঃ মধুতে বোরন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। একটি সুস্থ যৌনজীবন এবং লিবিডোর জন্য হরমোনের ভারসাম্য অপরিহার্য, মধু হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে প্রচীন কাল থেকেই পরিচিত।

আখরোটঃ আখরোটের চামরায় থাকা ভিটামিন ই, মেলাটোনিন ও পলিফেনন পুরুষের শুক্রানুর গতি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে পুরুষের যৌনজীবনে নিয়ে আসে বিচিত্রতা, রোধ করে দ্রুত বীর্যপাতসহ নানান যৌন সমস্যা।

মধুর অপকারিতা

এতোক্ষণ আমরা জানলাম মধুর উপকারিতা, মধু যে শুরু উপকারি তা ভাবলে হয়তো ভুল করবেন, প্রত্যেক জিনিষের রয়েছে কোন না কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, তাহলে চলুন দেখে নেই মধুর অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি হয়ে থাকতে পারে।

  • শিশুদের বটুলিজম: ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধু দেওয়া উচিত নয়। মধুতে কিছুটা ধূলিকণা রয়েছে যা ব্যাক্টেরিয়ার স্পোর বহন করতে পারে। শিশুদের জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, যার ফলে তারা খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে যায়।
  • এলার্জি: মধুতে পরাগায়নের ফলে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে। তাজ যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা মধু গ্রহণে  সতর্ক  থাকবেন।
  • ওজন বৃদ্ধি: হালকা গরম জল বা লেবুর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে তা ওজন হ্রাসকে উৎসাহ করে,তবে অতিরিক্ত পরিমানে খেলে তা হীতে বিপরিত হতে পারে।
অতিরিক্ত মধু বেশি খেলে কী হয়?

নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো মধু খাওয়া ভালো। তবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মধু খাওয়া শরীরের জন্য খারাপ। নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলিতে গ্লুকোজ তৈরি হয় যা  সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই খারাপ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য

জন্মের পর অনেকই বাচ্চার মুখে মধু দেয় কিন্তু এটা কোনোভাবেই উচিত না। মধুর অনেক স্বাস্থ্যকর হলেও এক বছরের নিচের বাচ্চাকে মধু খাওয়ানো উচিত না। ডায়াবেটিক রোগীর মধু খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারর পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। নিয়ম মেনে সঠিক উপায়ে সঠিক পরিমাণে মধু গ্রহণ করলে আপনি উপকৃত হবেন।

খাটি মধু চেনার উপায়

মধি শরীরের জন্য ভালো, তবে সেটি হতে হবে খাটি মধু।খাটি মধু চেনার উপায় সমূহ:

  • খাটি মধু অনেক ভারী হয় কিন্তু নকল মধু অনেকটা পাতলা হয়ে থাকে।
  • খাটি মধুর ঘ্রাণ খুব সুমিষ্ট হয়ে থাকে।
  • খাটি মধু হাতে নিয়ে ঘষা দিলে মসৃণ ভাব পাওয়া যায়।

মধু খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন এক চামচ করে মধু খাওয়া যেতে পারে।  এছাড়াও নিচের উপায় অনুসরণ করেও খেতে পারেন:

  • ফল অথবা সবজির সালাদের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়।
  • চা অথবা কফিতে চিনি ব্যবহার না করে মধু ব্যবহার করা যায়।
  • দুধে মধু মিশিয়ে পান করা যায়
  • গরম পানিতে এক চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যায়।
  •  মধু, আদার রস ও লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে পানীয় হিসেবে পান করা যায়।
  • দারচিনি ও মধু
  • কালোজিরার সাথে মধু
  • লং এর সাথে মধু
  • কচি বেলের সাথেও মধু খাওয়া যায়
  • তুলসি পাতার সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়।


মধুর ধর্মীয় তাৎপর্য

মধুর ধর্মীয় তাৎপর্য

ইসলাম ধর্ম মতে,রাসুল (সা.) মধুকে উত্তম ওষুধ হিসেবে গণ্য করেছেন। প্রাচীন গ্রীক ধর্মে, জিউস এবং অলিম্পাসের বারো দেবতার খাদ্য ছিল অমৃত, মধুতে তারা অমৃত হিসেবে গন্য করত। হিন্দু ধর্মে, মধু জীবনের পাঁচটি অমৃতের মধ্যে একটি (পঞ্চামৃত)। মন্দিরে, মধু অভিষেক নামক একটি রীতি পালন করা হয়।

বিঃদ্রঃ এই ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করুন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।

এই ব্লগের কোন স্বাস্থ বিষয়ক পোস্টের পরামর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবেন, আমরা স্বাস্থ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ না, আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। সুতারাং কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার অবশ্যই আমরা নিবো না। ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।

Author

Scroll to Top