আখরোটের উপকারিতা ও অপকারিতা । ২০২৪

আখরোট

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

সুস্থ থাকতে ডায়েটে বাদাম রাখা খুবই উপকারী। কাজু (Cashew nut), কাঠবাদাম (Almond), পেস্তা (Pistachio),আখরোট (Walnut) সব ধরনের বাদামই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্য বাদামের মতোই আখরোট ও প্রচুর স্বাস্থ্যগুণসম্পন্ন। আখরোট বাদাম জাতীয় একটি ফল। এতে প্রচুর আমিষ এবং ফ্যাটি এসিড আছে।

এই লেখাতে আমরা জানবো আখরোট এর উপকারিতা, আখরোট খাওয়ার নিয়ম, আখরোট ও মধুর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত, তাহলে দেরী না করে চলুন জেনে নেই আখরোট এর উপকারিতা

বাহ্যিক বিবরণ

ফলটি দেখতে গোলাকার এবং একটি বীজ সম্পন্ন।পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দেয়ার পর ভেতরের শক্ত খোলসযুক্ত একটি বীজ পাওয়া যায়।এর ভিতরে থাকে দুইভাগে বিভক্ত করা বাদাম।বাদামের উপর এন্টি-অক্সিডেন্ট (Antioxidant) সমৃদ্ধ বাদামী রঙের আবরন থাকে। বীজটা কিছুটা তৈলাক্ত থাকে।

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

জগৎ
Plantae
শ্রেণী
Magnoliopsida
বর্গ
Fagales
পরিবার
Juglandaceae
গণ
Juglans লি.

(উইকিপিডিয়া হতে প্রাপ্ত)

পুষ্টিগুণ

আখরোট অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি বাদাম। আখরোটে প্রোটিন, স্নেহ ফাইবার থাকে। আখরোটের পুষ্টিমান নিচের ছকে বিস্তারিত দেয়া হলোঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটে-

উপাদান
পরিমান
শক্তি
২,৭৩৮ কিলো জুল (৬৫৪ kcal)
শর্করা
১৩.৭১
শ্বেতসার
০.০৬
চিনি
২.৬১
খাদ্য আঁশ
৬.৭
স্নেহ পদার্থ
৬৫.২১
প্রোটিন
১৫.২৩
ভিটামিন এ সমতুল্য
১ মাইক্রো গ্রাম
বিটা-ক্যারোটিন
১২ মাইক্রো গ্রাম
লুটিন জিয়াক্সানথিন
৯ মাইক্রো গ্রাম
২০ IU ( International unit – আন্তর্জাতিক ইউনিট)
থায়ামিন (বি১)-
০.৩৪১ মিলি গ্রাম
রিবোফ্লাভিন (বি২)
০.১৫ মিলি গ্রাম
নায়াসিন (বি৩)
১.১২৫ মিলি গ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫)
০.৫৭০ মিলি গ্রাম
ভিটামিন বি৬
০.৫৩৭ মিলি গ্রাম
ফোলেট (বি৯)
৯৮ মাইক্রো গ্রাম
১.৩ মিলি গ্রাম
০.৭ মিলি গ্রাম
ভিটামিন কে
২.৭ মাইক্রো গ্রাম
আখরোটের উপকারিতা
আখরোট

খনিজ পদার্থ / মিনারেলস (Minerals)

উপাদান
পরিমান
ক্যালসিয়াম
৯৮ মিলি গ্রাম
লৌহ (Fe)
২.৯১ মিলি গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
১৫৮ মিলি গ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ (Mn)
৩.৪১৪ মিলি গ্রাম
ফসফরাস (P)
৩৪৬  মিলি গ্রাম
সোডিয়াম (Na)
২ মিলি গ্রাম
জিংক (Zn)
৩.০৯ মিলি গ্রাম
পানি
৪.০৭

এছাড়াও এতে আছে ফাইবার,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পলিফেনলস,ইউরোলিথিন,ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড,কপার, মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট।

আখরোটের প্রকারভেদ

আখরোট দুই ধরণের হয়।

  • কালো আখরোট।
  • বাদামী আখরোট।

আখরোট খাওয়ার নিয়ম

  • পুষ্টিবিদদের মতানুযায়ী, ৪-৫ টি আখরোট রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খেতে পারেন। এভাবে খেতে পারলে আখরোটের উপকার বেশি পাওয়া যাবে।
  • তাছাড়াও দুধ ও মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন, এতে আখরোটের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে।
  • আখরোট ব্রেকফাস্টে খেতে পারেন।
  • তেল ছাড়া কড়াইয়ে হালকা নেড়ে সন্ধ্যা বেলার স্নাক্স হিসেবে খেতে পারেন।
দুধের সাথে আখরোট
দুধের সাথে আখরোট

আখরোট এর উপকারিতা

নিয়মিত আখরোট খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। চলুন তবে জেনে নেয়া যায়, পুষ্টিগুন সম্পন্ন এই বাদামের নানান উপকারিতা-

হার্ট ভালো রাখে

আখরোট হৃদযন্ত্র বা হার্ট ভালো রাখার কাজে সাহায্য করতে পারে। এই বাদামে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের (Cardiovascular system) জন্য বিশেষ উপকারী। মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে আখরোট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।প্রতিদিন কয়েকটি করে আখরোট খেতে পারেন, এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে।আখরোট আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা উদ্ভিজ্জ Omega 3 ALA (Alpha-linolenic acid) হার্টের মধ্যে রক্তজমাট বাঁধার আশঙ্কা কমায়।

মস্তিষ্কের বিকাশে ঘটায়

আখরোট আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আখরোটের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের বিকাশে কাজ করে। আখরোটে থাকা ভিটামিন ই, মোলাটোন, ওমেগা ৩ এবং এন্টি অক্সিডেন্ট শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বিশেষ ভুমিকা রাখে। তাই বাচ্চাদের ও  আখরোট খাওয়াতে পারেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

আখরোটে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, পলিফেনলস এবং ইউরোলিথিন উপাদানসমূহ হলো অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। তাই আখরোট  স্তন, কোলন এবং প্রোস্টেট সহ আরো কয়েক ধরনের ক্যান্সার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

হাড় মজবুত করে

হাড় ভালো রাখতে নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন। আখরোটে আছে আলফা-লিনোলেনিক এসিড যা এক প্রকার ফ্যাটি এসিড। এই এসিড হাড়কে সুস্থ রাখে এবং হাড় শক্ত ও মজবুত করে।

গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা করে

আখরোটে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স – ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন, থিয়ামিন। এসব উপাদান গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। আখরোটে বিদ্যমান ফলিক এসিড গর্ভবতী নারী এবং গর্ভের সন্তান উভয়ের জন্য উপকারী। এটি গর্ভের শিশুর এলাৰ্জি প্রতিরোধেও সাহায্য করে

গর্ভবতী মা
গর্ভবতী মা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যার যত ভালো যে তত বেশি সুস্থ থাকে।আখরোটে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ইমিউন সিস্টেমকে বজায় রাখে। আখরোটে আছে ভিটামিন (ভিটামিন বি৬) এবং খনিজ পদার্থ (তামা) যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অনিদ্রা দূর করে

আখরোটে থাকা মেলাটোনিন ভালো ঘুমের জন্য কাজ করে। আখরোটে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, স্ট্রেস কমায়। ফলে ভালো ঘুম হয়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

আখরোট স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কোষকে সজীব রাখে।আখরোটে থাকা ভিটামিন বি স্ট্রেস কমিয়ে মেজাজ ভালো রাখে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ দূর করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে

যে কোনো ধরণের বাদামই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে আখরোট টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সক্ষম।

চুলের যত্নে

আখরোটে থাকা বায়োটিন চুল স্ট্রেট (Straight) করতে সাহায্য করে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। আখরোট ফ্যাটি এসিডের অন্যতম একটি উৎস । এগুলো চুলের ফলিকেলকে শক্তিশালী করে। আখরোটের তেল চুল পড়া কমায়, খুশকি দূর করে ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

সিল্কি চুল
সিল্কি চুল

হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করে

ভেজানো আখরোটে খেলে তা আপনার হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। আখরোটে আলফা লিনোলেনিক এসিড থাকে যা হাড়কে শক্তিশালী করে।

ফাংগাল ইনফেকশন (Fungal infection) সারাতে

কালো আখরোট ফাংগাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। ত্বকের এলার্জির সমস্যাও কমিয়ে আনে

ত্বককে আর্দ্র রাখে

আখরোট থেকে প্রাপ্ত তেল শুষ্ক ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বকে পুষ্টি জোগায়। আখরোটের প্যাক বানিয়ে তা ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।

টাক পড়া প্রতিরোধ করে

সপ্তাহে তিনদিন আখরোটের তেল স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। এটি আপনার মাথায় টাক পড়া থেকে প্রতিরোধ করবে।

ডার্ক সার্কেল (Dark circle) থেকে মুক্তি দেয়

আখরোটের তেল হালকা গরম করে চোখের নিচে লাগালে ডার্ক সার্কেল (Dark circle) হালকা হয়। খেয়াল রাখবেন তেলটা যেন খুব বেশি গরম না হয়।

পেটের জন্য উপকারী

ফাইবার পেটের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। আখরোটে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

নিয়মিত আখরোট খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে রয়েছে ওমেগা ৩, প্রোটিন ও ফাইবার, যা দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। আখরোটে কার্বোহাইড্রেট তেমন নেই, তাই সকালে, বিকালে বা নাস্তার সাথে কিছু আখরোট খেতে পারেন। এতে আপনার পেট ও ভরবে কিন্তু ওজন ও বাড়বে না।


আখরোট খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

আখরোট ও মধুর উপকারিতা

মধুঃ মধুতে বোরন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। একটি সুস্থ যৌনজীবন এবং লিবিডোর জন্য হরমোনের ভারসাম্য অপরিহার্য, মধু হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে প্রচীন কাল থেকেই পরিচিত।

আখরোটঃ আখরোটের চামরায় থাকা ভিটামিন ই, মেলাটোনিন ও পলিফেনন পুরুষের শুক্রানুর গতি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে পুরুষের যৌনজীবনে নিয়ে আসে বিচিত্রতা, রোধ করে দ্রুত বীর্যপাতসহ নানান যৌন সমস্যা।

আখরোটের অপকারিতা

আখরোট অনেক পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও উপকারী বাদাম কিন্তু পরিমানমত ও নিয়মমাফিক আখরোট না খেয়ে অতিরিক্ত ও অনিয়মিত ভাবে আখরোট খেলে বা ব্যবহার করলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে –

  • অ্যালার্জি হতে পারে।
  • ফুসকুড়ি।
  • হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • লিভারে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • কালো আখরোটে থাকে ফাইটেটস যা শরীরের আয়রন শুষে নিতে পারে। যার ফলে  শরীরে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে।

আখরোট সংরক্ষণের উপায়

সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে শুকনো ও শীতল জায়গায় একটি কৌটোয় আখরোট সংরক্ষণ করতে পারেন। এভাবে তিন মাসের পর্যন্ত আখরোট সংরক্ষণ করতে পারবেন। শেল ছাড়া আখরোট সর্বোচ্চ ছয় মাস ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারবেন।

তো বন্ধুরা এই ছিলো আখরোটের উপকারিতা ও অপকারিতা, আখরোট শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। নিয়মিত ও নিয়ম মেনে আখরোট খেলে অনেক উপকার পাবেন। এই লেখা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

বিঃদ্রঃ  এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও কমপ্লেইন করা হবে।

Sylhetism ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।

Sylhetism ব্লগের কোন স্বাস্থ বিষয়ক পোস্টের পরামর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবেন, আমরা স্বাস্থ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ না, আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। সুতারাং কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার অবশ্যই আমরা নিতে পারবো না। ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।

Author

Scroll to Top