Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
অলিভ ওয়েল (Olive oil) বা জলপাই তেল বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত একটি তেল, দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। প্রাচীনকাল থেকে অলিভ অয়েলকে তরল সোনা (Liquid gold) হিসেবে গণ্য করা হয়ে আসছে।
অলিভ অয়েল মূলত জলপাই ফল থেকে তৈরি এক ধরণের তেল ৷ যা অনেকেই রান্নায় ব্যবহার করে থাকেন। সাদা তেল (সয়াবিন তেল) বদলে স্বাস্থ্য সচেতনরা এখন অলিভ ওয়েল বেছে নিচ্ছেন।
শুধু রান্না নয়,আরও বহু ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর চাহিদাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলপাই তেলে মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে তা শরিরের জন্য অধিক উপকারী।
আজকের লেখায় আমরা জানবো বহুগুণের অধিকারী অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা, ও অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম।
অলিভ অয়েল (Olive Oil)
অলিভ অয়েলে রয়েছে উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল – হাই ডেনসিটি লাইপ্রোটিন ( HDL- High density Lipo protein) যা পরিপাক প্রক্রিয়ায়-সহায়ক ভূমিকা রাখে। অলিভ অয়েলে এন্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) উপাদান থাকায় ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে ।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের লোকেরা, যেখানে জলপাইয়ের তেল সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় এবং সর্বাধিক ব্যবহার করা হয়, সেখানে হৃদরোগজনিত রোগে মৃত্যুর হার সারা বিশ্বের তুলনায় সবচেয়ে কম হয়। প্রসঙ্গত, এই অলিভ সবথেকে বেশি জন্মায় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ৷ সাধারণত ৮-১৫ মিটার দীর্ঘ হয় এই অলিভ গাছ ৷ পৃথিবীর মধ্যে গ্রীসে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় অলিভ অয়েল বলে জানা যায় ৷
প্রাকৃতিক এই তেলে রয়েছে ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ নামক ফ্যাটি অ্যাসিড । অলিভ অয়েলে এলিক অ্যাসিড নামক মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। গবেষণায় হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী , এলিক অ্যাসিড প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিও আটকাতে পারে এই এলিক এসিড।

জলপাই তেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বৈজ্ঞানিক নাম –Olea europaea L.(ওলেয়া ইউরোপিয়া) অন্যান্য নাম –
- জাইতুন কা তেল (হিন্দি)
- অলিফ অলি (আফ্রিকান)
- জায়েত আলজায়াতুন (আরবি)
অলিভ অয়েলের প্রকারভেদ:( Types of Olive Oil)
বাজারে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলের প্রকারভেদ রয়েছে, এটি মূলত পাঁচ প্রকারের হয়ে থাকে-
- এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল (Extra virgin olive oil)
- ভার্জিন অলিভ অয়েল (Virgin Olive Oil)
- রিফাইন্ড অলিভ অয়েল (Refined Olive Oil)
- পিওর অলিভ অয়েল (Pure Olive Oil)
- লাইট এন্ড এক্সট্রা লাইট অলিভ অয়েল (Light and extra light olive oil)
এক্সট্রা ভারজিন অলিভ অয়েল
এটি সবচেয়ে বেশি গুন সম্পন্ন ও ভালো তেল। কারণ এটি ফ্রেশ জলপাই থেকে কুলিং কমপ্রেস (Cooling Compress) এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো, এটি সালাদের সাথে খাওয়ার জন্য অনেক উপকারী।এই তেল তৈরির পর আর কোন কেমিকেল (Chemical) ব্যবহার করা হয় না যার ফলে এই তেলের স্বাদ এবং গন্ধ বেশি থাকে।এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল রিফাইন করা হয় না, তাই এর স্বাদ কিছুটা তিতা হয়ে থাকে। এই তেলের রঙ হালকা সবুজ বা গোল্ডেন টাইপ হয়ে থাকে। এর দাম তুলনামূলক একটু বেশিই হয়ে থাকে।
ভারজিন অলিভ অয়েল
এক্সট্রা ভারজিন অলিভ অয়েল এর তুলনায় সামান্য পরিমান নিম্ন মানের। এই তেল ও কুলিং কম্প্রেসের মাধ্যমে তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি রান্না এবং সালাদ দুটিতেই ব্যবহার করা যায়। এই তেল ত্বক এর তারুন্য বজায় রাখতে এবং চুলের যত্নে সবচেয়ে বেশি উপযোগী।এই তেলের রঙ হাল্কা হলুদ হয়ে থাকে।
রিফাইন্ড অলিভ অয়েল
বিশেষভাবে রিফাইন করে ভেতরের ন্যাচারাল এসিডিটি বাদ দিয়ে এই তেল তৈরি করা হয়।এটিকে রিফাইন করার ফলে এই তেলের মাঝে ভার্জিন ও এক্সট্রা ভার্জিন তেলের মত কোনো স্বাদ বা গন্ধ থকে না। এটি রান্নার জন্য বেশ ভাল কিন্তু সালাদের জন্য ততোটা উপযোগী না।এই তেলের রঙ উপরের দুটির চেয়ে কিছুটা হাল্কা।
পিওর অলিভ অয়েল
নামে পিওর হলেও এটি কিন্তু আসলে পিওর না। এক্সট্রা ভারজিন অলিভ অয়েল ও ভারজিন অলিভ অয়েল এর সংমিশ্রণে পিওর অলিভ অয়েল বানানো হয়। এতে উচ্চমাত্রায় এসিড থাকে।এটি সালাদ বা স্কিন কেয়ার এর জন্য উপযোগী না হলেও রান্নার জন্য ভাল।এই তেলের তেমন কোন গন্ধ নেই এবং কালার রিফাইন অলিভ অয়েলের মতোই।
লাইট অলিভ অয়েল
এটি সবগুলো অলিভ অয়েলের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন মানের অলিভ অয়েল। এই তেলের মধ্যে কোন এন্টি অক্সিডেন্ট (antioxidant) বা অন্যান পুস্টি গুন থাকেনা। এই অলিভ অয়েল শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
শরীরের অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক, দুই দিকই ঠিক রাখতে অলিভ অয়েলের সঠিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে ৷ খাবারে অলিভ অয়েলের ব্যবহার শরীরে ভালো এবং মন্দ উভয় ধরনের কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তেমনই ছোট-বড় রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে৷ত্বক ও চুলের যত্নেও অলিভ অয়েল খুবই ফলপ্রসূ।
অলিভ অয়েলের প্রকারভেদ তো জানলাম। চলুন, তবে জেনে নেয়া যাক, অলিভ অয়েলের দারুণ সব গুনসমূহ-
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা
অলিভ অয়েল তেলের রয়েছে বহুমূখি ব্যবহার ও উপকারিতা, তাহলে চলুন দেখে নেই
হৃদরোগের ঝুকি কমায়
অলিভ অয়েলে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয়।প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন ই এবং কে। বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমায়।রক্তের কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন অলিভ অয়েল শরীরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম। হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক জীবাণু পেটে বাসা বেধে আলসার এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার সৃষ্টি করে।এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল এসব ব্যাকটেরিয়া সারাতে সাহায্য করে।
এন্টি ইনফ্লেমেটরি (Anti-inflammatory) বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী রোগ সারায়
অলিভ অয়েলে থাকা উপাদানসমূহ প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ। এসব উপাদানসমূহ দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন- হৃদরোগ, ক্যান্সার, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, আলঝেইমার, আর্থ্রাইটিস সারাতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের মতে,এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রদাহনাশক হিসেবে অনেকটা ওলিওকান্থাল আইবুপ্রোফেন ওষুধের মত কাজ করে।
স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করে
রক্ত জমাট বাঁধার কারণে বা রক্তক্ষরণের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে যার ফলে স্ট্রোক হয়।অলিভ অয়েলে বিদ্যমান মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে যারা জলপাই তেল নিয়মিত গ্রহণ করে থাকে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক কমে যায়।
শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়
শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল- লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (LDL- Low density lipo-protein) জারণ থেকে রক্ষা করে অলিভ অয়েল। রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগ থেকে বাঁচায় অলিভ অয়েলে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো। অলিভ অয়েল খাদ্য হিসেবে গ্রহণের ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং রক্তচাপের ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমে আসে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
ওজন বাড়া বা কমার সাথে অলিভ অয়েলের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু প্রচুর পরিমানে অলিভ অয়েল খেলেও ওজন তেমন বাড়েনা, অন্যদিকে সয়াবিন তেল খেলে প্রচুর পরিমানে ওজন বাড়ে। জলপাই বা অলিভে মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা শরীরের ভিতরের ফ্যাট জাতীয় কোষকে ভাঙতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে অ্যাডিপন্সটিন নামের এক জাতীয় প্রোটিন ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি খাবার রক্তে এন্টি অক্সিডেন্টের পরিমান বাড়ায় যা ওজন কমার সাথে কিছুটা সম্পৃক্ত।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন, অনেক ধরনের ওষুধও খেতে হয়। কিন্তু অলিভ অয়েলের মাধ্যমেও এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। অলিভ অয়েলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ভিটামিন ই, কে, আয়রন, ওমেগা-৩ এই উপাদানগুলি আপনার হজম শক্তিতে ভালো প্রভাব ফেলবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করবে। এক কাপ গরম দুধে এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল মিশিয়ে খালি পেটে তা পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেতে পারেন, এতেও অনেক সমস্যার সমাধান হবে প্রতিদিন এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন ভোরে খালি পেটে এক গ্লাস কমলালেবুর রস ও এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পান করুন, ধীরে ধীরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।
টাইপ টু ডায়বেটিসের ঝুকি কমায়
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, অলিভ অয়েল রক্তে শর্করা ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত অলিভ অয়েল গ্রহণের ফলে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমতে পারে।
হাড়ের দৃঢ়তা বজায় রাখে
শুধুমাত্র ক্যালশিয়াম নয়, অলিভ অয়েল ও হাড়ের দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ৷ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রয়োজন অস্টিওক্যালসিন নামের একটি হরমোনের, যা অলিভ অয়েলে বিদ্যমান।
ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে
অলিভ অয়েলের গ্রহণের ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করা যায়।এই তেলে অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান যা ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে ক্যান্সারের অন্যতম চালিকাশক্তিকে ধ্বংস করে। জলপাই তেলের যৌগগুলো ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
নিয়মিত যারা অলিভ অয়েল খাদ্যতালিকায় রাখেন তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় ৷বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে, অলিভ অয়েলে থাকা অলেরোপিয়ান নামক এক প্রাকৃতিক উপাদানই মূলত এই কাজ করে থাকে। পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত অলিভ অয়েল গ্রহণ করলে কলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
আলঝেইমার রোগের ঝুকি কমায়
৪০ বছর বয়সের পর থেকে অনেকেই আলঝেইমার নামক রোগে ভুগে থাকেন। এটি এমন একটি রোগ যে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সবকিছু ভুলে যায়। অলিভ অয়েল এই আলঝেইমার রোগের ঝুকি কমায়।আলঝেইমার রোগটি বিশ্বের সর্বাধিক নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার (Neurodegenerative disorder)।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির মস্তিষ্কের কোষের ভেতর অ্যামাইলয়েড বিটা নামক একধরনের প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ে। ইঁদুরের উপর করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জলপাই তেলে থাকা উপাদানসমূহ ক্ষতিকর অ্যামাইলয়েড বিটা নামক প্রোটিনের বৃদ্ধির হার কমায়।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের (Rheumatoid arthritis) সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়
বয়স হলে অনেকেই রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সমস্যার ভুগেন।বয়স হলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা বেড়ে যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগটি হলো একটি অটোইমিউন রোগ (Auto immune disease)। অলিভ অয়েলে বিদ্যমান এন্টি ইনফ্লেমেটরি (Anti inflammatory) উপাদানসমুহ বাতব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। অলিভ অয়েল ও ফিশ অয়েল জয়েন্ট এবং বাতজনিত রোগ সারাতে সাহায্য করে।
জলপাইয়ের তেল বা অলিভ অয়েলের উপকারিতা
নাক ডাকা প্রতিরোধ করে:
অলিভ অয়েলের ঔষদি গুনাবলি কন্ঠনালীকে পিচ্ছিল করে নাক ডাকা প্রতিরোধ করে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক চামচ অলিভ অয়েল খেয়ে নিন, এতে নাক ডাকার সমস্যা কমে আসবে।
কানের সমস্যা দূর করে
কানের চুলকানীসহ আরো কিছু যাবতীয় সমস্যা দূর করতে কটনবাডে অলিভ অয়েল লাগিয়ে সাবধানতার সাথে কানে ব্যবহার করতে পারেন।
একনি বা ব্রণ প্রতিরোধ করে
মুখে ছোট ছোট ব্রণ এখন খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। বিভিন্ন কারণে নিজের ত্বকের যত্ন নিতে না পারার কারণে, দুষনের কারনে এই ব্রণ বা একনির সমস্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু অলিভ অয়েল এই ব্রণের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
কিছুটা অলিভ অয়েলে লবন মিশিয়ে নিন এবং এটি কিছুক্ষন মুখে মাখিয়ে রাখুন।এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সাধারণত স্ক্রাবারের (Scrub) কাজ করে। সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এইভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে
দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে দূষণের শিকার হয়ে থাকি ফলে আমাদের ত্বকে এর প্রভাব পড়ে। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করা, অলিভ অয়েল আমাদের চেহারার কোন ক্ষতি তো করেই না বরং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে ।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে একটু অলিভ অয়েল মুখে হাতে এবং পায়ে আলতো করে ম্যাসেজ করে নিন। এই নিয়মে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে।
মশ্চারাইজারের (Moisturizer) কাজ করে:
অলিভ অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে সুরক্ষা প্রদান করে, অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট (Anti oxident) ত্বককে প্রাণবন্ত ও সজীব রাখে ৷ সূর্যের অতি-বেগুনি (UV ray – Ultra violet ray) রশ্মির হাত থেকেও আপনার ত্বককে রক্ষা করে ৷ অনেক সময় তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেল ক্ষতিকারক হতে পারে। কিন্তু অলিভ অয়েল সব ধরণের ত্বকের জন্যই মানানসই।
মেক আপ (Make up) তুলতে অলিভ অয়েলের ব্যবহার :
অল্প বেশি যেটুক ই মেকাপ ব্যবহার করুন না কেন, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেকাপ তোলা উচিত। আজকাল মেকাপ তোলার জন্য অনেক ধরনের ক্যামিকেল, প্রোডাক্ট পাওগা যায়, তবে আপনি যদি ন্যাচারাল কোনো উপায়ে মেকাপ তুলতে চান তাহলে অলিভ অয়েল ই সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে।এতে করে আপনার ত্বক ও সুরক্ষিত থাকবে এবং আপনার ত্বক অলিভ অয়েলের গুনাবলীও পাবে।
একটি তুলোতে অল্প করে ভার্জিন অলিভ অয়েল নিয়ে ধীরে ধীরে মেকাপ তুলে ফেলুন।
ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ কমায়
জলপাই তেল আপনার ত্বক কুঁচকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে৷ দুই চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে এক চামচ পাতি লেবুর রস, এক চিমটে লবণ মিশিয়ে মিশ্রণটি মুখে, হাতে, পায়ে, গলায়, ঘাড়ে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে তা পানি দিয়ে ধুয়ে তুলে ফেলতে হবে। এতে আপনার ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ দূর হবে।
ত্বকের সার্বিক রক্ষা
ত্বককে নানান রকমের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা ভিটামিন ই এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ত্বকের সার্বিক রক্ষার জন্য এক তৃতীয়াংশ কাপ দই, এক চতুর্থাংশ মধু এবং দুই চামচ অলিভ এয়েল নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।এবার এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবেম মিশ্রনের আস্তরণটি পুরু করে মুখে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে দুই দিন এইভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে উপকার পাবেন ৷
ডার্ক সার্কেল (Dark Circle) দূর করে
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সামান্য অলিভ অয়েল তুলোয় করে চোখের নিচে ম্যাসাজ করুন। চোখের নিচের কালি কমে যাবে।
ঠোঁটের যত্নে অলিভ অয়েল
ঠোঁট মুখমণ্ডলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ অলিভ অয়েল আপনার ঠোঁটকে রাখবে নরম এবং সুন্দর। ঠোঁটে অলিভ অয়েল ব্যবহারের পদ্ধতি: ব্রাউন সুগার গুড়ো করে, এতে কয়েক ফোটা অলিভ অয়েল ও একটু লেবুর রস দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণটি পাঁচ মিনিট ঠোঁটে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। এই মিশ্রণটি স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করবে এবং পাশাপাশি আপনার ঠোঁটকে নরম করে তুলবে। মিশ্রণটি কিছুক্ষন রেখে এরপর নরম তুলো দিয়ে ধীরে ধীরে ঠোঁট পরিষ্কার করে ফেলুন।
চুলের যত্নে অলিভ অয়েল
চুলের বৃদ্ধিতে অলিভ অয়েল
শ্যাম্পু করার আগে অলিভ অয়েল হালকা গরম করে মাথায় ম্যাসাজ করে নিন। শ্যাম্পু করার সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। এই পদ্ধতিতে আপনার চুল পড়া কমবে, চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুলের মশ্চারাইজেশন ও বজায় থাকবে। অলিভ অয়েল চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ই চুল পড়া বন্ধ করার পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধিও ঘটায়।
খুশকি নিরাময়ে অলিভ অয়েল
খুশকির সমস্যা ইদানিং বেড়েই চলেছে।অলিভ অয়েলের সাথে আরো কিছু উপাদান যোগ করলে চুলের খুশকি দূর হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি
অলিভ অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তা দিয়ে মাথায় ও চুলের গোড়ায় ভালো করে মাসাজ করতে হবে ৷তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফেলুন। এইভাবে বেশ কয়েকবার অলিভ অয়েল ব্যবহারের পর আপনার চুলে খুশকি একদম দূর হয়ে যাবে।
চুল স্বাস্থে অলিভ অয়েল
চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে অলিভ অয়েল বিশেষ উপকারী। অলিভ অয়েলের সাথে ডিমের কুসুম এবং মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা হয় ৷ ডিমে থাকা প্রোটিনের গুণাগুণ এবং মধুতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম (Mg), জিঙ্ক (Zn),সালফার(S), ক্যালশিয়াম(Ca) ভিটামিন বি (Vitamin B) চুলের জন্য খুবই উপকারী।
প্রয়োগের পদ্ধতি-
হাফ কাপ অলিভ অয়েলের সঙ্গে দুই চামচ মধু এবং একটি ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি চুল্র লাগিয়ে তা ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর কুসুম গরম পানি ফিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে চুলের যত্ন নিলে দীর্ঘদিন সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে।
চোখের যত্নে অলিভ অয়েল
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিনের প্রয়োজন হয় তার অনেকটাই রয়েছে অলিভ অয়েলে।রাতকানা রোগ, গ্লুকোমাসহ চোখের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অলিভ অয়েল অত্যন্ত কার্যকরী।
নখের যত্নে অলিভ অয়েল
নখের যত্নেও অলিভ অয়েলের উপকারিতা অনেক।মূলত অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ই নখের যত্নে কাজে আসে। ২-৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিন,তেলে ভেজানো তুলো দিয়ে প্রতিটি নখ মুড়ে ফেলুন।৩০ মিনিট পর জল দিয়ে হাত-নখ ধুয়ে ফেলুন ৷
অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
রান্না,রূপচর্চাসহ আরো বিভিন্ন কাজে অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হয়, অলিভ অয়েল ব্যবহারের আগে কিছু বিষয় মাথা রাখা উচিত- এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সর্বাধিক দামী হওয়ায় এতে ভেজালের পরিমান ও বেশি হয়ে থাকে। ভালো ব্র্যান্ড ও তেলের সময়সীমা উভয় দেখে কেনা উত্তম। এছাড়াও অন্যান্য অলিভ অয়েল কেনার সময় স্বাদ, গন্ধ,রঙ দেখে কেনা উচিত।
আসল অলিভ অয়েল চেনার উপায়
আসল অলিভ অয়েল চেনার জন্য ” ফ্রিজ টেস্ট ” অত্যন্ত কার্যকরী। একটি পাত্রে অলিভ অয়েল নিয়ে তা দুই ঘন্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। ফ্রিজ থেকে বের করার পর তেল যদি একদম জমে যায় বা একদম তরম থাকে তাহল বুঝবেন তেলটি খাটি না। আর যদি হালকা হালকা জমে যায় বা হালকা ঘন হয়ে যায় তাহল বুঝবেন তেলটি খাটি।
আরেকটি পদ্ধতি, কোনো পাত্রে অলিভ অয়েল নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিন। কোনো ধোয়া ছাড়াই যদি পুড়তে শুরু করে তবে বুঝবেন এটি খাটি অলিভ অয়েল।
অলিভ অয়েল সংরক্ষণ
অলিভ অয়েল কম আঁচেই তাড়াতাড়ি পুড়ে যায়, তাই বেশি গরম করলে এর সব পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অলিভ অয়েল সবথেকে অন্ধকার,পরিষ্কার এবং ঠান্ডা স্থানে রাখুন। ফ্রিজেও রাখা যেতে পারে। বোতলের ছিপি খুলে ব্যবহার করে তা আবার সঠিক সময়ে সঠিকভাবে লাগিয়ে দিন যাতে এর স্বাদ,গন্ধ বজায় থাকে।

ক্ষতিকারক দিক
অলিভ অয়েল ব জলপাই তেলের যেমন গুণ অনেক, তেমনই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে।তবে প্রতিদিনের খাবারে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যের পক্ষে নিরাপদ৷ যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের অলিভ অয়েল ব্যবহারে আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে।
ত্বকে অলিভ অয়েলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কারো কারো অলিভ অয়েল থেকে অ্যালার্জি বা র্যাশ হতে পারে৷ এই দিকটা লক্ষ রেখে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা উত্তম।
স্বাস্থ্যে অলিভ অয়েলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রতিদিন দুই টেবিল চামচের বেশি এই তেল ব্যবহার না করাই ভালো। আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হন তাহলে অলিভ অয়েল ব্যাবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
মাত্রাতিরিক্ত অলিভ অয়েল ব্যবহারে রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে, এছাড়া গলব্লাডার ব্লকেজসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে৷ শরীরে কোনও ক্ষতস্থানে অলিভ অয়েল লাগাবেন না। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের বেশি অলিভ অয়েল গরম করবেন না, নাহলে এর সমস্ত গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে।
অলিভ অয়েলের যেমন প্রচুর গুন, তেমনই এর সঠিক ব্যবহার না করলে এর উল্টোটাও হতে পারে৷ তাই সবদিক দেখে শুনে বিচার করে তবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন ৷