সিলেট মাজার সম্পর্কে জানা-অজানা সব তথ্য | ২০২৪

হযরত শাহজালাল মাজার

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

সিলেট মাজারঃ সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সিলেটের মাজারগুলো অন্যতম, বিশেষ করে হযরত শাহজালাল (রাঃ) এবং শাহপরান (রাঃ) মাজার। আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবা। সিলেট ভ্রমণের আগে আপনার মাথায় যেসব প্রশ্ন ঘুরপাক খায় সেগুলো নিয়েই আমাদের এই লেখা।

বহু বছর আগে মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে এই বাংলার মাটিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ওলী-আউলিয়া-পীরের মাধ্যমে। পরম্পরায় তাঁরা শায়িত আছেন দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্থানে। তাঁদের সমাধিফলকের স্থানে নির্মিত হয়েছে মাজার শরীফ। যা মূলত বাংলাদেশের পুণ্যতীর্থ বা আধ্যাত্মিক স্থাপনা। এসব মাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ইতিহাস বলে, ইরান, কাবুল, পারস্য, কান্দাহার, তেহরান,  ইয়েমেন, তুরস্ক, মিশর, জেরুজালেমসহ নানান দেশ থেকে আউলিয়াদের আগমন ঘটেছিলো এই বাংলায়।

যেমন কথিত আছে, প্রাচ্যদেশে আসার পূর্বে শাহজালাল (র.) এর মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (র.) তাঁকে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে পাবে সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।’হযরত শাহজালাল (র.) বিশিষ্ট শিষ্য শেখ আলীকে এই মাটির দায়িত্বে নিয়োগ করেন এবং নির্দেশ দেন যে, যাত্রাপথে বিভিন্ন জনপদের মাটির সাথে যেন এই জনপদের মাটির তুলনা করে তিনি দেখেন। পরে এই শিষ্যের উপাধি হয় চাষণী পীর। শহরের গোয়াইপাড়ায় তাঁর মাজার বিদ্যমান। সিলেটের মাটির সাথে আরবের মাটির মিল পাওয়ায় হযরত শাহজালাল (র.) সিলেটে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন।


আউলিয়ারা খলিফা, মুরিদ ও ভক্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন ও তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিতেন। সাধারণ মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন আউলিয়াগণ এবং তাঁদের মৃত্যুর এতো বছর পরও মাজারকে আগলে রেখে আজও তাঁদের স্মরণ করা হয়। যেহেতু বাংলাদেশ একটি ইসলাম প্রধান দেশ তাই এ দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মাজার জিয়ারত ও পরিদর্শনে গিয়ে থাকেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এসব মাজারে একসময় অলৌকিক আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তুর দেখা মিলতো ও প্রমাণ পাওয়া যেতো। আজও এসব মাজারকে পরিদর্শনের উল্লেখযোগ্য স্থান হিসেবে যত্নসহিত রাখা হয়েছে। 

সিলেট মাজারের ইতিহাস

“দু’টি পাতা একটি কুড়ির” এই সিলেট শহর ৩৬০ আউলিয়ার দেশ নামেও পরিচিত। সিলেটের অনেক স্থানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোটখাটো বিভিন্ন মাজার থাকলেও মূলত হযরত শাহজালাল (রঃ) ও হযরত শাহপরান (রঃ)- এর দুটি মাজারের জন্যই সিলেট বিখ্যাত। তাই লোকমুখে শোনা যায় সিলেটের স্থানীয় শিল্পীর লিখা জনপ্রিয় গান-

“আইছি সিলট, যাইমু সিলট
সিলট থাকমু শুইয়া,
যে মাটিত ঘুমাইয়া রইছইন,
তিনশো ষাইট আউলিয়া।”

ইতিহাস বলে, সিলেটে হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর মাধ্যমেই ইসলামের বহুল প্রচার ঘটে । সিলেট বিজয়ের পরে শাহ জালালের সঙ্গী-অনুসারীদের মধ্য হতে অনেক পীর-দরবেশ এবং তাদের পরে তাদের বংশধরগণ সিলেট সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস করেন। শাহজালালের সফরসঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। শাহজালালের সঙ্গী ছিলেন তাঁরই ভাগ্নে হযরত শাহপরান (রঃ)। ইতিহাসবিদগণের মতে, শাহজালাল (রঃ) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লী হতে এখানে এসেছিলেন ও হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেট-এ স্হায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মৃত্যুর পর শাহজালাল ও শাহপরান (রঃ)-কে সিলেটেই কবর দেয়া হয়।


হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রঃ) এর মাজার সিলেট শহরে খ্যাতনামা স্হান। আজ থেকে ৬০০ বছরেরও বেশি আগে তাঁরা মারা গিয়েছেন। তবুও মাজার জিয়ারত করার জন্য দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত বিভিন্ন স্হান থেকে এখানে আসেন ও পরিদর্শন করেন। সিলেটবাসী যেনো এই ইতিহাসের ছোঁয়ায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে নিজেদের, তাই তো মন গেয়ে ওঠে-

“সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে,
বাবা শাহজালালের দেশ সিলেট ভূমি রে,
বাবা শাহপরানের দেশ সিলেট ভূমি রে।”

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাজার হলঃ

চট্টগ্রামকে বলা হয় বারো আউলিয়ার ভূমি এবং সিলেটকে ৩৬০ আউলিয়ার ভূমি বলা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বহুকাল আগে অনেক ওলী-আউলিয়ারা বসবাস করেছেন এবং তাঁদের মাজারও আছে বিভিন্ন স্থানে। ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে আগত ইসলাম প্রচারক আওলিয়া-দরবেশদের মাজারগুলি এখনও বিদ্যমান, যথা:

  • আজমীরে খাজা মঈনউদ্দীন চিশতির মাজার,
  • দিল্লিতে নিযামউদ্দীন আওলিয়ার মাজার,
  • লাহোরে ফরিদউদ্দীন গঞ্জ-এ-শাক্কারের মাজার,
  • সিলেটে হযরত শাহ জালাল ও শাহপরানের মাজার,
  • রাজশাহীর শাহ মখদুম মাজার, ঢাকায় শাহ আলী বাগদাদীর মাজার,
  • খুলনায় খানজাহান আলীর মাজার ইত্যাদি।

চট্টগ্রাম মাজারের শহর হিসেবে খ্যাত, কারণ সেখানে বারো-আওলিয়ার মাজার আছে। এছাড়াও হযরত শাহরাস্তির মাজার, আদম কাশ্মীর মাজার, লালন শাহের মাজারও উল্লেখযোগ্য।

হযরত শাহজালাল মাজার

সিলেট মাজার: হযরত শাহজালাল মাজার
হযরত শাহজালাল মাজার

ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ ও পীর। সিলেট অঞ্চলে তাঁর মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার ঘটে। সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বোরহান উদ্দিন (র.) এর ওপর রাজা গৌড়গোবিন্দের অত্যাচার এবং এর প্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল (র.) ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উলেস্নখযোগ্য ঘটনা। শাহজালাল মাজার সিলেটের প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন ও স্থান। যেসব দৃশ্যাবলী দেখবেন সেখানে গিয়ে তা হলো মাজার শরীফ, চত্বরস্থ পুকুর ও সেখানকার গজার মাছ,
চত্বরে উড়ে বেড়ানো জালালী কবুতর, শাহজালারের আমলের রান্নার বিশালাকার ডেকচি, সংলগ্ন কবরস্থান, সংলগ্ন মাদ্রাসা।
এমন অনেক জনপ্রিয় বিষয়বস্তু ও তার পেছনে ব্যাখ্যা ঘিরে রয়েছে এই জায়গাজুড়ে। যেমন-

দরগা গেইটের সৌন্দর্য

এটি সিলেট শহরের ঠিক মধ্যস্থলে এবং ‘০’ পয়েন্টের ১ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এলাকাটিকে দরগা এলাকা এবং প্রবেশ পথটিকে দরগা গেইট বলা হয়। দেখলে মনে হয়, আভিজাত্যপূর্ণ এই দরগা গেইটই মাজারের পথে প্রবেশের ভাবমূর্তি ধরে রেখেছে। এই দরগা গেইটের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নেওয়া পাতাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য। এই গেইটের আশেপাশে পাতাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়েনের ফলে বৈদ্যুতিক কোন তার দৃষ্টিগোচর হয় না, সব তার মাঠির নিচে থাকায় দরগা গেইটের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গজার মাছ

হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার চত্বরের উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরে রয়েছে অসংখ্য গজার মাছ। এসব মাছকে পবিত্র জ্ঞান করে দর্শনার্থীরা ছোট ছোট মাছ খেতে দেয়। পুকুরের পশ্চিম কোণে ছোট মাছ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। পুকুরে অজুর ব্যবস্থাও আছে। ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বিষ প্রয়োগে পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশি গজার মাছ হত্যা করা হয়। ফলে পুকুরটি গজার মাছ শূন্য হয়ে পড়ে। মরে যাওয়া মাছগুলোকে মসজিদের পশ্চিম দিকের গোরস্থানে পুঁতে ফেলা হয়। পুকুরটি মাছ শূন্য হয়ে যাওয়ার পর হযরত শাহজালাল (র.) এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভীবাজারের শাহ মোসত্মফার (র.) মাজার থেকে ২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি ২৪ টি গজার মাছ এনে পুকুরে ছাড়া হয়। বর্তমানে পুকুরের গজার মাছের সংখ্যা কয়েক শ’তে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়।

জালালী কবুতর ও নিজাম উদ্দিন আউলিয়া

হযরত শাহজালাল (র.) এর আধ্যাত্নিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (র.) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ তিনি তাঁকে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর বা জালালী কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধর এবং জালালী কবুতর নামে খ্যাত। সিলেটে জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কেউই এ কবুতর বধ করে না এবং খায় না। বরং অধিবাসীরা এদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে থাকে। শাহজালালের (র.) মাজার এলাকায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতর উড়তে দেখা যায়। মাজার কর্তৃপক্ষ এসব কবুতরের খাবার সরবরাহ করে থাকেন।

জালালী কবুতর
জালালী কবুতর

ডেকচি:-

মাজারের পূর্ব দিকে একতলা ঘরের ভেতরে বড় তিনটি ডেকচি রয়েছে। এগুলো ঢাকার মীর মুরাদ দান করেছেন বলে জানা যায়। মীর মুরাদ ঢাকার হোসেনী দালান তৈরী করেন। যদিও ডেকচিগুলোতে রান্নাবান্না হয় না, তবুও কথিত আছে প্রত্যেকটিতে সাতটি গরম্নর মাংস ও সাত মণ চাল এক সাথে রান্না করা যায়। পূণ্যের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ডেকচিগুলোতে প্রচুর টাকাপয়সা দান করেন।

চিলস্নাখানা

মাজারের দক্ষিণ দিকে গ্রীলঘেরা তারকাখচিত ছোট্ট যে ঘরটি রয়েছে, এটি হযরত শাহজালালের (র.) চিলস্নাখানা। স্থানটি মাত্র দু’ফুট চওড়া। কথিত আছে যে, হযরত শাহজালাল (র.) এই চিলস্নাখানায় জীবনের ২৩ টি বছর আরাধনায় কাটিয়েছেন।

দরগাহ মসজিদ

বাংলার সুলতান আবু মুজাফ্ফর ইউসুফ শাহের মন্ত্রী মজলিশে আতার আমলে ১৪০০ সালে দরগাহ চত্বরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৭৪৪ সালে বাহরাম খাঁ ফৌজদারের সময় এটি পুনর্নির্মিত হয়। বর্তমানে এটি সিলেট শহরের অন্যতম একটি মসজিদ।

সিলেট মাজারে কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সিলেট, কিংবা দেশের বিভাগীয় অঞ্চল থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলটা দেখতে পারেন

সড়ক পথে ঢাকা হতে প্রথমে সিলেট যেতে হবে। অতঃপর সেখান থেকে মাজারে যেতে হবে। ঢাকা হতে সড়ক পথে সিলেটের দূরত্ব ২৪১ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে সিলেট রেল স্টেশনের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার। সিলেট এসে সেখান থেকে রিক্সা বা সিএনজি অটো রিক্সায় অতি সহজেই মাজারে আসা যায়। এছাড়াও, ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে সিলেটে আসার সরাসরি দুরপাল্লার এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস আছে। এগুলোতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে আল-মোবারাকা সোহাগ, হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক, মামুন, সাউদিয়া, গ্রীনলাইন, মিতালি প্রভৃতি পরিবহন কোম্পানীর বাস আছে প্রতি ১০ মিনিট পর পর।

সিলেটের মূল বাস স্ট্যান্ড কদমতলী বাস টার্মিনাল অথবা রেল স্টেশন থেকে দরগায় আসার জন্য ভাড়া হবেঃ রিক্সায় ৫০/- থেকে ৮০/- এবং

সিএনজিতে ৮০/- থেকে ১২০/- টাকা।

হোটেল ভাড়া

দরগা এলাকায়ই থাকার জন্য প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে যেগুলোতে সিলেট ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক অবস্থান করে। এসি এবং নন-এসি – এই উভয় ধরনের রুমের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ এসকল হোটেলে মান ও বর্ডার ভেদে ভাড়া নেয়া হয় ৩০০/- হতে ২,৫০০/-। এছাড়াও থাকার জন্য আশেপাশেই কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কিছু উন্নতমানের হোটেলও রয়েছে।

মাজারের আশেপাশে খাওয়ার ব্যবস্থা

মাজার গেইট এলাকায় প্রচুর হোটেল – রেস্তোরা আছে খাওয়া – দাওয়া করার জন্য। স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আখনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। আরও কিনতে পারবেন স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু, কাঠাল, চা-পাতা, তাজা মাছ। 

স্থানীয় হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে এসকল দ্রব্যাদির তৈরি নানারকম খাদ্যও পাওয়া যায়। দরগার খুব নিকটেই রয়েছে কিছু উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট

  • পানসি রেস্টুরেন্ট সিলেট, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট
  • পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট; 
  • ভোজন বাড়ি রেস্টুরেন্ট, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট; 
  • রয়েলশেফ : মির্জাজাঙ্গাল, সিলেট ইত্যাদি।
  • Woondaal King Kabab, East Zindabazar, Baruthkhana Rd
  • ইষ্টি কুটুম রেস্টুরেন্ট Hazrat Shahjalal Rd

শাহ পরাণের মাজার

হযরত শাহপরাণ (রঃ) সিলেট শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে দক্ষিনগড় পরগণার খাদিমনগরে খানকাহ স্থাপন করে সূফী মতবাদভিত্তিক আধ্যাত্মিক চর্চা ও কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সিলেট অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের প্রচারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। শাহপরান মাজার অবস্থিত সিলেটের মেজরটিলা এলাকাটি খানিকটা পেরিয়ে। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দক্ষিণগাছের খাদিমপাড়ায় এই মাজার। ইতিহাস বলে, ইয়েমেনের হাদরামুতে জন্মগ্রহণকারী হযরত শাহপরাণ (রঃ) ছিলেন হযরত শাহজালালের বোনের ছেলে। তিনি তাঁর মামা হযরত শাহজালালের সাথে ভারতে আসেন এবং ১৩০৩ সালে শাহজালালের নেতৃত্বে সিলেট অভিযানে অংশ নেন।

মাজার পরিক্রমা:- সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিমনগর এলাকায় টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নিচে রয়েছে শাহ পরাণের কবর। মাজার টিলায় উঠা নামার জন্য উক্ত মাজার প্রাঙ্গনে উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি আছে। যা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু দেখায়। এই সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত বলে লোক মুখে শোনা যায়। মাজারের পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাদের স্থাপত্বকীর্তিতে নির্মিত তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদে প্রায় ৫ শত মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। মাজার টিলা থেকে প্রায় ১৫/২০ ফুট দহ্মিণ পশ্চিমে মহিলা পর্যটকদের জন্য এক ছালা বিশিষ্ট দালান ঘর রয়েছে। উক্ত দালানের অল্প পরিসর দহ্মিণ পুর্বে আরেকটি ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘরখানা মুলত বিদেশাগত পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই ঘরের পাশেই একটি পুকুর রয়েছে, যা অজু গোসলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

যেভাবে আসা যাবে:- ঢাকা থেকে সিলেট আসার বিস্তারিত বর্ণনা প্রথমেই উল্লেখ করেছি। ঠিক একইভাবে অন্য শহর থেকে সিলেট আসার পর কিংবা সিলেট শহর থেকেই শাহপরান মাজারে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা অথবা লোকাল বাসে আপনি মেজরটিলায় পৌঁছাতে পারবেন। আর ওই এরিয়ার দিকেই শাহপরান মাজারের অবস্থান। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত শাহপরান (রঃ) এর দরগা সিলেট শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মেজরটিলার দিকে অবস্থিত।

আরো পড়ুনঃ ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা বিস্তারিত ইতিহাস এই আর্টিকেলে।

কোথায় থাকবেন এবং হোটেল ভাড়া

সিলেটে থাকার জন্য বেশকিছু ভালমানের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের বেশীরভাগ মাজার রোড, আম্বরখানা, এবং জিন্দাবাজারে অবস্থিত। এসব হোটেলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ

১. হোটেল গুলশান।

২. হোটেল দরগা ভিউ।

৩. হোটেল ইস্টার্ন গেইট এন্ড পানাহার রেস্টুরেন্ট

৪. গ্রিনল্যান্ড হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট।

৫. হোটেল সিটি লিঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল।

৬. সুরমা ভ্যালী রেস্ট হাউজ।

৭. হোটেল বাহারাইন রেসিডেনসিয়াল।

৮. হোটেল কুরাইশি রেসিডেন্স।

৯. হোটেল আজমীর।

১০. হোটেল পায়রা।

১১. হোটেল সুপ্রিম।

১২. হোটেল পলাশ।

১৩. হোটেল ওয়েস্টার্ন।

১৪. হোটেল আল-আমীন।

১৫. হোটেল গার্ডেনস ইন।

১৬. হোটেল পানামা।

১৭. হোটেল গ্রীন।

১৮. হোটেল হিলটাউন।

১৯. হোটেল রোজভিউ।

২০. হোটেল স্টার প্যাসিফিক।

এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা আছে। তাই এখানে পরিদর্শনে আসলে রাত্রিযাপনের জন্য দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

খাবারের সুবিধা

দূর থেকে মাজার শরীফ পর্যটনে আসলে খাবারের কেমন সুবিধা রয়েছে সেদিকটিতে তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাবোধ করেন। এখানে আসলে শাহ পরাণের দরগার আশেপাশে আপনি বেশকিছু মানসম্পন্ন রেস্টুরেন্ট এবং খাওয়ার হোটেল পাবেন। তাই খাবারের ব্যবস্থা আছে কি না এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

সিলেট মাজার ভ্রমণের আগে যেসব জিনিস জানা উচিত

  • মাজার শরীফ জায়গাটি তীর্থ স্থান হলেও অনেক কপোট লোকজনের দেখা পাওয়া যায় এখানে। যেহেতু দূর দূরান্ত থেকে লোকজন পরিদর্শনে আসেন তাই টাকা-পয়সা, মোবাইল-ফোন এবং সাথে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো সাবধানতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে৷ নয়তো যেকোনো সময় চুরি হয়ে যেতে পারে।
  • মাজার শুধুমাত্র পরিদর্শনের স্থান ছাড়াও পবিত্র স্থান বটে। তাই পর্যটকদের শালীনতা বজায় রেখে এ স্থানে আসা উচিৎ।
  • অনেকেই মাজার ভ্রমণে এসে ভন্ড-প্রতারক চক্রের শিকার হয়। বিভিন্ন সুবিধা বা বিশেষ কিছুর কথা বলে পর্যটকদের থেকে টাকা নিয়ে এই চক্র প্রতারণা করে থাকে। তাই এমন অপরিচিত ভন্ড লোকদের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। তা না হলে মাজার ভ্রমণে এসেই বিপদে পড়তে হবে।
  • মাজারের শিন্নীর নাম ক’রে যে কারো দেয়া যেকোনো কিছু যাচাই না করে খাবেন না। এতে করে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
  • মাজার পরিদর্শনে এসে সেখানকার কোনো দর্শনীয় জিনিস নষ্ট করবেন না দয়া করে।

আমাদের দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের, যেনো পরবর্তী প্রজন্মও এসব ইতিহাস দেখতে ও জানতে পারে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মেরও উচিৎ এসব ইতিহাস জানা ও সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া। মাজার শরীফ পরিদর্শন ক’রে বাংলাদেশের অনেক লেখকই ভ্রমণের অনুভূতি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহকারে বই লিখেছেন পবিত্র মাজার শরীফ নিয়ে। তাই সকলেরই মাজার শরীফ পরিদর্শন করতে আসা উচিৎ পূর্বের ইতিহাস নিজ চোখে দেখার জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাস এভাবেই বেঁচে থাকুক, এটাই আমাদের কাম্য।

বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও অভিযোগ সাবমিট করা হবে।

ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।

 

Author

Leave a Comment

Scroll to Top