Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
মানবদেহে সুস্থতা বজায় রাখার জন্য ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন সি অন্যতম। দেহে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দিলে তা থেকে নানাবিধ শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একারণে বিশেষজ্ঞরা ছোটকাল থেকেই সবাইকে একাধিক উপকারিতা বিশিষ্ট এ ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন৷ অনেকে মনে করেন, ভিটামিন সি ট্যাবলেট দিয়েই বুঝি দেহে এ ভিটামিনের যোগান দিতে হয়।
কিন্তু এটি সত্য নয়। আমাদের সবার পরিচিত এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমে দেহে ভিটামিন সি এর চাহিদা খুব সহজেই পূরণ করা যায়। আজকের লেখায় আমি মোট ২০ টি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার নিয়ে সবাইকে জানাবো। আশা করি, সবাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাটি পড়বেন।
ভিটামিন সি কাকে বলে?
ভিটামিন আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন রকম ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন এ,বি,সি,ডি ইত্যাদির নামই সবাই বেশি জানেন। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার সম্পর্কে জানার জন্য শুরুতেই এই ভিটামিনটি সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিৎ।
ভিটামিন সি হলো এমন একটি ভিটামিন যেটি সাধারণত পানিতে দ্রবণীয় হয়ে থাকে৷ ভিটামিন সি এর মূল উৎস হলো বিভিন্ন টক ফলমূল অথবা সবজি। এটিকে রসায়নের ভাষায় এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড নামে ডাকা হয়৷ ভিটামিন সি গ্রহণে দেহে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। এর পাশাপাশি ভিটামিন সি একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বটে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটি আমাদের দেহে বিদ্যমান অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, এ ভিটামিনটি দেহে বিভিন্ন কারণে হওয়া ক্ষত নিরাময় করতেও সহায়তা করে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কেন খাবেন?
দেহে যখন ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দেয়, তখন বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমনঃ দাঁতের মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যাথা, মাড়ি ফুলে গিয়ে সাথে রক্ত যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তপাত হওয়া, চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমন শুষ্কতা এবং আগা ফেটে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি৷ এসব সমস্যার সম্মুখীন যেন না হতে হয় সেজন্যে প্রত্যেককে নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। চলুন এবার ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলোর উল্লেখযোগ্য উপকারিতাগুলো জেনে আসা যাক।
- বিভিন্ন কারণে দেহে যে ক্ষতগুলো দেখা যায় সেগুলো সারিয়ে তুলতে ভিটামিন সি এর ভূমিকা কোনভাবেই অস্বীকার করার মতো নয়। এ ভিটামিন দেহে নতুন টিস্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে যেকোনপ্রকার ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি লক্ষণীয়ভাবে কমানো যায়। অর্থাৎ, যদি নিয়মিত এই ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে পারেন, তাহলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে যাবে।
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে চুলের বিভিন্ন সমস্যায় অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমনঃ অনেকের চুল পড়ে চুলের ঘনত্ব কমে যায়, অকালে চুল পেকে সাদা হয়ে যায়, আবার কারো চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে চুল হয়ে যায় রুক্ষ। এছাড়াও অনেকে খুশকির সমস্যায় ভোগেন। যদি নিয়মিতভাবে ভিটামিন সি এর উপস্থিতি রয়েছে এমন খাদ্য গ্রহণ করেন, তাহলে দেখবেন চুলের রুক্ষতা কমবে এবং এটি পূর্বের তুলনায় তুলনায় ঘন হবে। পাশাপাশি চুলের অকালে পেকে যাওয়ার হার কমবে এবং সবমিলিয়ে চুল সামনাসামনি দেখতেও ভালো লাগবে।
- অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগে থাকেন। তারা বুঝতে পারেননা কিভাবে এই অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ভিটামিন সি আমাদের দেহের বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ওজন কমতে শুরু করে। সুতরাং,যদি দেহের প্রয়োজন অনুসারে সঠিক পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
- প্রতিটি মানুষের কাছেই দাঁত অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় দাঁতের মাড়িতে জিঞ্জিভাইটিস নামের একটি রোগ হয়। ভিটামিন সি দাঁতের মাড়ির এই কঠিন সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শুধু দাঁতের মাড়ি ই নয়, দাঁতগুলোকেও ভালো রাখার জন্য এ ভিটামিনের প্রভাব রয়েছে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকার ওপরেই আমাদের সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে। কেননা যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকে, তখন দেহে সহজে কোন রোগ জীবাণু প্রবেশ করতে পারেনা। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, যার ফলে সর্দি, কাশি, ইত্যাদি সমস্যাও হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ইনফেকশনের হাত থেকেও রেহাই পাওয়া সম্ভব হয়।
- গবেষণায় দেখা যায়, ভিটামিন সি চোখের বিভিন্ন সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। বর্তমানে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেকের চোখেই ছানিজনিত সমস্যা দেখা যায়। ভিটামিন সি এই সমস্যাটির হার কমাতে সক্ষম। পাশাপাশি, এই ভিটামিনটি মানুষের চোখের রেটিনাতে যে কোষগুলো বিদ্যমান রয়েছে সেগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং, বলা যেতে পারে ভিটামিন সি মানুষের চোখ ভালো রাখতে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে।
আশা করি এখন বুঝতে পারছেন, ভিটামিন সি একজন মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করতে কতভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বেশি বেশি করে ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিৎ। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক যেসব সবজি, ফলে কিংবা ফলের শরবতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি জাতীয় ফল
নিচের টেবিলে যেসব ফলে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি রয়েছে তার একটি তালিকা দেওয়া হল।
নাম্বার | ভিটামিন সি জাতীয় ফলের নাম | ভিটামিন সি এর পরিমান (মিঃগ্রঃ) |
---|---|---|
১ | আমলকি | ৪৬৩ |
২ | পেয়ারা | ২২৮ |
৩ | করমচা | ১৩৫ |
৪ | জাম্বুরা | ১০৫ |
৫ | আমড়া | ৯২ |
৬ | ডেউয়া | ৬৬ |
৭ | কাগজি লেবু | ৬৩ |
৮ | পাকা পেঁপে | ৬২ |
৯ | কালোজাম | ৬০ |
১০ | মাল্টা | ৫৪ |
১১ | বরই | ৫১ |
১২ | মুসাম্বি | ৫০ |
১৩ | লেবু | ৪৭ |
১৪ | পাকা আম | ৪১ |
১৫ | কমলা | ৪০ |
১৬ | জলপাই | ৩৯ |
১৭ | আতা | ৩৮ |
১৮ | পাকা তাল | ৩৫ |
১৯ | আনারস | ৩৪ |
২০ | লিচু | ৩১ |
২১ | বেদানা | ২৬ |
২২ | বাঙ্গি | ২৬ |
২৩ | তরমুজ | ২৬ |
২৪ | জামরুল | ২২ |
ভিটামিন সি জাতীয় সবজি
নিচের টেবিলে যেসব সবজিতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি রয়েছে তার একটি তালিকা দেওয়া হল।
নাম্বার | ভিটামিন সি জাতীয় সবজির নাম | ভিটামিন সি এর পরিমান (মিঃগ্রঃ) |
---|---|---|
১ | কাঁচামরিচ | ১২৫ |
২ | উচ্ছে | ৯৬ |
৩ | করলা | ৯১ |
৪ | ফুলকপি | ৭৩ |
৫ | শজনে | ৭০ |
৬ | ওলকপি | ৫৩ |
৭ | ডাঁটা | ৩৬ |
৮ | মিষ্টি আলু | ৩৫ |
৯ | মুলা | ৩৪ |
১০ | কাঁচা টমেটো | ৩১ |
১১ | চালকুমড়া | ৩১ |
১২ | পাকা টমেটো | ২৭ |
১৩ | পেঁয়াজকলি | ২৭ |
১৪ | মিষ্টিকুমড়া | ২৬ |
১৫ | শালগম | ২৫ |
১৬ | অড়হড় | ২৫ |
১৭ | ফরাসি শিম | ২৪ |
১৮ | কাঁচা কলা | ২৩ |
১৯ | কাঁচা পেঁপে | ১৯ |
২০ | আলু | ১৯ |
২১ | পটল | ১৯ |
২২ | চিচিঙ্গা | ১৯ |
২৩ | ঢেঁড়স | ১৮ |
২৪ | মুলা | ১৭ |
২৫ | কলার মোচা | ১৬ |
২৬ | বাঁধাকপি | ১৬ |
২৭ | লাল শিম | ১২ |
ভিটামিন সি জাতীয় শাক
নিচের টেবিলে যেসব শাকে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি রয়েছে তার একটি তালিকা দেওয়া হল।
নাম্বার | ভিটামিন সি জাতীয় শাকের নাম | ভিটামিন সি এর পরিমান (মিঃগ্রঃ |
---|---|---|
১ | শজনেপাতা | ২২০ |
২ | নটেশাক | ১৭৯ |
৩ | ধনেপাতা | ১৩৫ |
৪ | ডাটাশাক | ৮৩ |
৫ | গাজরপাতা | ৭৯ |
৬ | করলাশাক | ৭৮ |
৭ | বিটশাক | ৭০ |
৮ | মুলাশাক | ৬৯ |
৯ | পুঁইশাক | ৬৪ |
১০ | কালো কচুশাক | ৬৩ |
১১ | ছোলাশাক | ৬১ |
১২ | শর্ষেশাক | ৬০ |
১৩ | বরবটিপাতা | ৫৭ |
১৪ | বরবটিপাতা | ৫৪ |
১৫ | মেথিশাক | ৫২ |
১৬ | লাউশাক | ৪৮ |
১৭ | সবুজ কচুশাক | ৪৮ |
১৮ | লালশাক | ৬৩ |
১৯ | বতুয়াশাক | ৪১ |
২০ | কলমিশাক | ৩০ |
২১ | পালংশাক | ৩০ |
ভিটামিন সি জাতীয় শরবত
যেসব শরবতে পাওয়া যাবে প্রচুর পরিমানে “ভিটামিন সি”
- লেবুর শরবত
- মিল্ক শেইক (Milk Shake)
- জাম্বুরার শরবত
- ভেষজ চা
- কমলালেবুর শরবত
- জামের শরবত
- আমের শরবত
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এবং তাদের কাজ
বিভিন্ন উপকারিতা বিদ্যমান থাকায় বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখা উচিৎ। এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে বলে রাখা ভালো,আমাদের দেহ ভিটামিন সি সংরক্ষণ করে রাখতে পারেনা। একারণে দেহের প্রয়োজন অনুসারে এ ভিটামিনের চাহিদা মেটাতে প্রত্যেকের উচিৎ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্যগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা। কি?আরো জানতে ইচ্ছা করছে তাইনা? তাইতো এখন আমি আপনাদের জানাবো ২০ টি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এবং তাদের কাজ সম্পর্কে।
০১। টমেটো
টমেটো আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সবজিগুলোর মধ্যে একটি। ছোট-বড় সবাই ই টমেটো খেতে অত্যন্ত ভালোবাসেন। টমেটো বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। যেমনঃ কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসেবে কিংবা সেদ্ধ অবস্থায় বিভিন্ন রান্নাতে। যেসব টমেটোগুলোর বর্ণ উজ্জ্বল লাল রঙের সেগুলোতে অধিক মাত্রায় ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম লাল টমেটোতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ হলো প্রায় ২৩ মিলিগ্রাম। বেশি করে টমেটো খেলে চুল এবং ত্বক ভালো থাকে।
০২। পেঁপে
পেঁপে খেতে অনেকে পছন্দ না করলেও পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। শুধু তাই নয়, পেঁপেতে আরো রয়েছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন এ। প্রতি এক কাপ পেঁপে খেলে সেখান থেকে প্রায় ৮৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। পেঁপে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করার পাশাপাশি এটি খেলে স্বাস্থ্যগত উন্নতিও নিশ্চিত হয়।
০৩। লিচু
বাংলাদেশে গরমকালের সাথে যে ফলের নাম ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত সেটির নাম লিচু। লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি৷ রসালো এবং সুস্বাদু একেকটি লিচুতে রয়েছে ৭ মিলিগ্রাম সমানুপাতের ভিটামিন সি। লিচু আমাদের রক্তনালি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি রক্ত চলাচল যেন স্বাভাবিক থাকে তা নিশ্চিত করে।
০৪। জাম
জাম খেতে সবাই ভালোবাসলেও এটি যে একটি ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের উৎকৃষ্ট উৎস সেটি অনেকেই জানেননা। প্রতি আধা কাপ জাম থেকে ১০১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়াও এটিতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন। জাম খেলে হার্টের রোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।
০৫। পেয়ারা
পেয়ারা আমাদের দেশীয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফল। বিশেষ করে ঝাল-মশলা দিয়ে পেয়ারা মাখিয়ে খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। এই পেয়ারা খেতে যেমন সুস্বাদু, ঠিক তেমনিভাবে পেয়ারাতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন সি। একজন মানুষ প্রতিটি সাধারণ আকৃতির পেয়ারা থেকে ১২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পেয়ে থাকেন। পেয়ারার সবচেয়ে বড় কাজগুলোর একটি হলো ক্যান্সার নামক দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধ করা। এছাড়াও, পেয়ারা খেলে ব্লাড প্রেশার কমে। এই ফলটি দেহে বিদ্যমান ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় যা বিভিন্ন হৃদরোগ থেকে আমাদেরকে রাখে সুরক্ষিত।
০৬। লেবু
আমাদের দেশের সর্বাধিক পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে লেবু অন্যতম। লেবু টক জাতীয় ফল হওয়ায় এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। নিয়মিত লেবু খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের হজমশক্তি স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। এটি খেলে পেটও পরিষ্কার থাকে। নিয়মিত লেবু খেলে তা খাবার খাওয়ার রুচি বাড়ায়। ওজন কমাতেও লেবু কার্যকরীভাবে সাহায্য করে। সর্বোপরি লেবু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
০৭। কাকড়ু বরই
কাকড়ু বরই জাতে বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশের মানুষ এ ফলটি খেতে পছন্দ করে। আকারে ছোট এবং স্বাদে টক এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আপনারা জেনে হয়তো অবাক হবেন, প্রতি ১০০ গ্রাম কাকড়ু বরইয়ের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে ৫৩০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। তাই বলা যায়, এ ফলটি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলোর তালিকার মধ্যে প্রথম সারিতেই অবস্থান করে। এ ফলটি দাঁতের সুরক্ষার জন্য খুবই উপকারী।
০৮। আনারস
আমাদের দেশে সারা বছরেই আনারস পাওয়া যায়। দেখতে সুন্দর এবং খেতে টক মিষ্টি স্বাদের এই আনারস ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারস থেকে পাবেন প্রায় ৪৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। জ্বর কিংবা সর্দি-কাশি হলে উপকার পেতে আনারস খেতে পারেন চোখ বন্ধ করে।
০৯। কাঁচা মরিচ
যদি আমি সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার নিয়ে বলতে যাই, তাহলে কাঁচা মরিচের নাম আসবে একদম শুরুর দিকে। সবার বাড়িতে সবসময় থাকা এই কাঁচামরিচে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভিটামিন সি। প্রত্যেক ১০০ গ্রাম কাঁচামরিচ থেকে পাওয়া যায় ২৪২.৫ গ্রামের মতো ভিটামিন সি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটি কি পরিমাণ পুষ্টিসমৃদ্ধ। কাঁচামরিচ আমাদের হার্ট ভালো রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
১০। স্ট্রবেরি
আগে আমাদের দেশে অত জনপ্রিয় না হলেও বর্তমানে স্ট্রবেরির স্বাদ নেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা৷ স্ট্রবেরি এমনিতে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি বিভিন্ন ডেজার্ট তৈরিতেও ব্যবহার করা যায়৷ কেউ প্রতিদিন ১০০ গ্রাম স্ট্রবেরি খেলে সেখান থেকে ৫৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পেতে পারবেন। স্ট্রবেরি হার্ট ভালো রাখতে ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
১১। সবুজ ক্যাপসিকাম
ক্যাপসিকাম তো আমরা সবাই খেয়েছি, কিন্তু এটি যে ভিটামিন জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম সেটি কতজন জানি? প্রতিটি মাঝারি আকারের সবুজ ক্যাপসিকামে রয়েছে ৯৫ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি। সবুজ ক্যাপসিকামে আরো রয়েছে ভিটামিন এ, কে এবং বি৬। ক্যাপসিকাম যেকোন ধরণের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়।
১২। কিউই ফল
কিউই ফল সম্পর্কে সেভাবে কেউ না জানলেও এই ফলটি ভিটামিন সি এর বেশ ভালো একটি উৎস। এই ফলের প্রতি ১০০ গ্রামে বিদ্যমান রয়েছে ৯ মিলিগ্রামের মতো ভিটামিন সি। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য কিউই ফল উপকারি। এছাড়া এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কাজ করে থাকে।
১৩। ব্রকলি
ব্রকলি একটি সবুজ রঙের শীতকালীন সবজি যেটি সালাদ কিংবা চাইনিজ আইটেমে ব্যবহৃত হয়। ব্রকলিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি। প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলি থেকে আপনারা ৯৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পেতে পারেন। দেহ থেকে অতিরিক্ত মেদ দূর করতে ব্রকলি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এটি অ্যালার্জিজনিত সমস্যা কমায়।
১৪। কমলালেবু
শীতকালে কমলালেবু আমাদের পছন্দের ফলের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে। টক মিষ্টি স্বাদের এই ফলটির প্রতি ১০০ গ্রামে ৭০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। কমলালেবু আমাদের ত্বক ভালো রাখতে কাজ করে। পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধেও রয়েছে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
১৫। আম
ফলের রাজা আম খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার হিসেবে এর রয়েছে আলাদা কদর। আম খেলে হজম ক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
১৬। জাম্বুরা
জাম্বুরা ভিটামিন সি পাওয়া যায় এমন খাবারের মধ্যে অন্যতম। ১০০ গ্রাম জাম্বুরা থেকে প্রায় ৬১ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়৷ জাম্বুরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যতেও উপকার পাওয়া যায়।
১৭। আমড়া
আমড়া একটি দামে সস্তা এবং ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ একটি ফল৷ আমড়া যেমন কাঁচা খাওয়া যায়, তেমনি চাইলে এটি রান্না করেও খেতে পারবেন৷ আমড়া হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে আমাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে। এটি দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রেও বেশ উপকারী।
১৮৷ সরিষা শাক
যারা শাক খেতে ভালোবাসেন, তাদের কাছে সরিষা শাক একটি পরিচিত নাম। প্রতি এক কাপ সরিষা শাকে প্রায় ১১৭ ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। সরিষা শাক দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কোলোন ও ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
১৯। ফুলকপি
শীতকাল সবজি হলেও এখন সারাবছরই ফুলকপি কিনতে পাওয়া যায়। ফুলকপি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। এটি খেতেও বেশ সুস্বাদু। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং এটি আমাদের দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে থাকে।
২০। পালং শাক
পালংশাক একটি সবুজ শাক যেটি ভিটামিন সি তে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পালং শাক যেমন ভাতের সাথে খাওয়া যায়, তেমনি নুডলস কিংবা পাস্তাতে দিয়েও খাওয়া যায়। পালং শাক হাড়ক্ষয় রোধ করে ও দাঁতকে ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে৷
এটুকুই ছিলো ভিটামিন সি জাতীয় খাবার নিয়ে আজকের আলোচনা। বলে রাখা ভালো, যেসব খাবারে ভিটামিন সি পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগের মূল্যই সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের ভেতর। তাই, বেশি করে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন এবং নিজের সুস্থতা নিশ্চিত করুন। তথ্যসুত্রঃ প্রথম আলু
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও কমপ্লেইন করা হবে।
এই ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করুণ, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।
এই ব্লগের কোন স্বাস্থ বিষয়ক পোস্টের পরামর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবেন, আমরা স্বাস্থ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ না, আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। সুতারাং কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার অবশ্যই আমরা নিবো না।
ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।
আপনি বেশী রকম কৃপণ, যা ঠিক না।