ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা ২০২৪

ডিম

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা অন্যতম একটি সুপারফুড হচ্ছে ডিম। ডিম পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। কখনো কি ডিমের উপকারিতা নিয়ে ভেবেছেন? ভাবেন নি নিশ্চয়ই? চলুন আজ ডিমের উপকারিতা কি? কি কি কারণে ডিম খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে নিয়ে জেনে নেই।

ডিম আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকা অন্যতম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য। এর উচ্চ পুষ্টিগুণের জন্য একে সুপার ফুড বলে অবিহিত করা হয়। তাই ডিমের উপকারিতা বিবেচনা করে আপনি নির্দ্বিধায় প্রতিদিন একটি ডিম গ্রহণ করতে পারেন।ডিম প্রোটিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস।

এছাড়া এটি নানা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের যোগান দিয়ে থাকে।মোটামুটি আপনার দেহের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানের যোগানদাতা এই ডিম।

তো যাইহোক চলুন এই লেখাতে জেনে নেই ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

Table of Contents

ডিমের পুষ্টিগুণ

ডিম ছাড়া কি হতো আমাদের বলুন তো? সকালের নাস্তা থেকে বিকালের সুস্বাদু স্ন্যাকসের অন্যতম প্রধান উপকরণ ডিম। কয়েক দশক ধরে ডিম নিয়ে কিছু ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে। অনেকে ডিমকে তাদের উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী করে আসছে, যা পুরোপুরি ভুল ধারণা। পুষ্টিগুণের দিক থেকে, ডিমকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। চলুন ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেই-

একটি সিদ্ধ ডিমে প্রায় ৭৫গ্রাম ক্যালরি রয়েছে। এছাড়া এতে রয়েছে –

প্রোটিন
৭ গ্রাম
চর্বি
৫ গ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট
১.৬ গ্রাম
লবণ
০.১৬ গ্রাম
সুগার
ট্রেস
পটাশিয়াম
৬৯মিলিগ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম
৬মিলিগ্রাম
ফসফরাস
৯৯ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম
২৮মিলিগ্রাম
আয়রন
০.৮মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৬
০.০৮ মিলিগ্রাম
ডিমের পুষ্টিগুণ

এছাড়া আয়রন, ভিটামিন-এ, ফোলেট, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি২, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং নানা ট্রেস নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আপনি শুনে অবাক হবেন,এতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাট যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

মোটকথা, খাদ্য হিসেবে ডিমের উপকারিতা অপরিসীম। ডিমের সাদা অংশে প্রায় ৬০%প্রোটিন পাওয়া যায়,অন্যদিকে কুসুমে থাকে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য বাকি উপাদান যা আপনার দৈহিক চাহিদা পূরণে অপরিহার্য। এতো পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাদ্য যদি আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় না রাখেন,তবে এটা হবে আপনার নিতান্ত বোকামি।

ডিমের উপকারিতা
ডিম

ডিমের উপকারিতা

আদর্শ খাদ্য হিসেবে ডিমকে ব্যতিরেকে আপনি কখনোই খাদ্য তালিকায় সঠিক পুষ্টিমান বজায় রাখতে পারবেন না। তাই চলুন ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

ডিম উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

ডিম প্রোটিন ও ভিটামিনে সমৃদ্ধ একটি আদর্শ খাদ্য।আকারভেদে আপনি একটি ডিম থেকে ৫ গ্রাম থেকে ৭ গ্রাম প্রোটিন পেতে পারেন। ডিম ব্যাপকভাবে মানসম্পন্ন প্রোটিনের একটি মূল্যবান উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রোটিন হল জীবনের বিল্ডিং ব্লক যা পেশী এবং টিস্যুর শক্তি এবং মেরামতের জন্য অপরিহার্য।।এমনকি দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানের যোগান দেয় ডিম।ডিমে নয়টি প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা কার্যকর পেশী বৃদ্ধি, পুনরুদ্ধার এবং রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে।

আপনার দৈনিক  প্রয়োজনীয়তার ভিটামিন ডি ৮২%, ফোলেট  ৫০%, রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি 2) ২৫%, সেলেনিয়াম  ৪০%  যোগান দেয় ডিম।এছাড়াও ডিমে ভিটামিন A, E, B5, B12 এর পাশাপাশি আয়রন, আয়োডিন এবং ফসফরাসও রয়েছে যা আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও কিছু অন্যান্য খাবারের তুলনায় ডিমে আনুপাতিকভাবে বেশি প্রোটিন থাকে।

ডিম রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়

ডিম উচ্চ-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (HDL) মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে যা “ভালো কোলেস্টেরল ”  নামে সাধারণভাবে পরিচিত। কারণ এটি হৃদরোগের ঝুঁকিতে ফেলে না।

অন্যদিকে, লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL) – বা “খারাপ” কোলেস্টেরল – যা হার্টকে স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স-চর্বিযুক্ত খাবার যেমন ডুবো তেলে ভাজা খাবারগুলি, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাবার রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের  মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

রক্তে HDL বাড়ানোর জন্য ডিম খাওয়ার বিকল্প নেই। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুটি ডিম খেলে, রক্ত এইচডিএলের মাত্রা প্রায় 10% বৃদ্ধি পায়।

ডিম ভিটামিন ডি এর একটি বড় উৎস

ডিমের কুসুম হল মুষ্টিমেয় কিছু খাবারের মধ্যে একটি যাতে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি থাকে। প্রায় এক-চতুর্থাংশ অস্ট্রেলিয়ান প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা হালকা বা মাঝারি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছেন,এর অন্যতম কারণ ডিম না খাওয়া।

প্রতিদিন দুটি ডিম আপনার প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর ৮২% প্রদান করে।

কখনও কখনও ডিমকে ”সানশাইন ভিটামিন’ বলা হয়।ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে – এটি স্বাস্থ্যকর হাড় এবং দাঁতের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য । ভিটামিন ডি স্বাস্থ্যকর পেশী ফাংশন এবং ইমিউন সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে।

ডিম ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

ডিমের উপকারিতা অসংখ্য দিকের মধ্য অন্যতম হচ্ছে এর ওজন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। ডিম তুলনামূলকভাবে কম ক্যালোরি এবং মানসম্পন্ন প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার জন্য সেরা খাদ্য গুলোর মধ্যে একটি।

ডিমের উচ্চতৃপ্তি মাত্রা কম ক্ষুধা ও দিনে খাওয়ার ইচ্ছা অনেকাংশে কমের দিকে নিয়ে যায়।ফলে আপনি বারবার খাদ্যগ্রহনের অভ্যাস থেকে বিরত থাকবেন।

গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিম খাওয়ার ফলে আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষুধামন্দা অনুভব করতে পারেন। কারণ ডিম-

  • এমন একটি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা আপনাকে খাওয়ার পরে পেট ভরা বোধ করতে সহায়তা করে।
  • শক্তির মাত্রা বেশি রাখে
  • বিপাকীয় কার্যকলাপ বুস্টিং করে
  • দীর্ঘসময় পাকস্থলীতে থাকে

ডিম উচ্চ-মানের প্রোটিনে পূর্ণ, যা আপনার খাদ্যতালিকায় ওজন হ্রাসকারী খাদ্য হিসেবে ভূমিকা রাখবে। ডিম আপনার রক্তে গ্লুকোজ মাত্রার তারতম্য কমাতেও সাহায্য করতে পারে, যা হতে পারে আপনার ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘস্থায়ী নিয়ামক।

ভিটামিন ডি3
ভিটামিন ডি3

ডিম কোলিনের অন্যতম উৎস

কোলিন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যা লিভারে তৈরি হয়।তবে, যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত কোলিন তৈরি করতে পারে না। তাই এটি আপনার খাবারের মাধ্যমেও খাওয়া প্রয়োজন।

বি ভিটামিনের কার্যকারিতার মতো, কোলিন স্বাভাবিক কোষের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের বিকাশে এটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। শিশুদের ব্রেনের বিকাশ সাহায্য করে। এটা আসলেই দুঃখজনক যে,এখন পর্যন্ত সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে কোলিনের ভূমিকা মূলত উপেক্ষা করা হয়।

ডিম কোলিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা অন্যান্য সাধারণ খাবারের তুলনায় প্রায় 100 গ্রাম বা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি কোলিন সরবরাহ করে। তাই বলাবাহুল্য, আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানের একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং সহজ উপায় হচ্ছে ডিম খাওয়া।

ডিম ওমেগা-৩ এর একটি ভালো উৎস

ওমেগা-৩ হল বিশেষ ধরনের পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আপনার দেহের প্রয়োজনীয় চর্বি এর একটি হিসেবে পরিচিত। ওমেগা-৩ আপনার কোষেঝিল্লির কাজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আপনার চোখ রক্ষা করার সাথে সাথে হৃদয় এবং মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যও বজায় রাখে। যেহেতু আপনার শরীর নিজে থেকে সীমিত পরিমাণে ওমেগা -3 তৈরি করে, তাই বিভিন্ন খাদ্য উৎসের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে সেগুলি গ্রহণ করা দরকার।

ডিম হল প্রাকৃতকভাবে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অবিশ্বাস্য এবং ভোজ্য উৎস।ধারণা করা হয়, ২টি ডিম হতে প্রায় ১৮০ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। এর মধ্যে, ১১৪ মি.গ্রা হল ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের লং-চেইন ধরনের – যা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গ্রহণমাত্রা 71-127%।

তৈলাক্ত মাছ হল ওমেগা-৩-এর সবচেয়ে সুপরিচিত উৎসগুলির মধ্যে একটি। তবে, যারা মাছ এড়াতে চান বা খেতে পারেন না, তাদের জন্য ডিম এই ধরনের স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলির একটি বিশেষ উপযোগী উৎস।

ডিমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের জন্য উপকারী

ডিমে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম সহ বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো চোখের স্বাস্থ্য, রেটিনার কার্যকারিতা এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে অবক্ষয়জনিত দৃষ্টি প্রতিরোধে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

ডিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটেইন এবং জেক্সানথিন রয়েছে, যা চোখের ছানি এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় সহ চোখের কিছু রোগের ঝুঁকি কমাতে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে। গবেষনা বলে যে, আমাদের শরীর এই প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি উদ্ভিদ উৎসের তুলনায় ডিম থেকে ভালভাবে শোষিত হয়।তাই আপনার চোখের সুস্থতার জন্য ও ডিম খাওয়া প্রয়োজন।

ডিম বয়স্কদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়

ডিম একটি সহজলভ্য, লাভজনক এবং সহজে হজমযোগ্য উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন। এমনকি এটি দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস।।ডিমের উপকারিতার কারণে,  বয়স্ক অস্ট্রেলিয়ানরা তাদের আদর্শ খাদ্যতালিকায় ডিমকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ডিম বয়স্ক লোকদের জন্য পুষ্টির পরিমাণ বাড়ানোর একটি সহজ উপায়। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের ঘাটতি এবং বার্ধক্যকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সহায়ক হয়।

এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লিউসিন রয়েছে,যা  একটি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড। লিউসিন পেশী চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যামিনো এসিড। এছাড়া ভিটামিন ডি এবং ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি কোলিন, মানব মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ডিম মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে

আপনার শারীরিক ও মানসিক উভয়ই সুস্থতার জন্যই সুষম খাদ্য প্রয়োজন। আপনার সঠিক খাদ্যতালিকা নির্বাচনই আপনাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখবে।আর যখন সুষম খাদ্য নিয়ে কথা হচ্ছে, তখন ডিম সবার চেয়ে এগিয়ে থাকে। ডিম স্ট্রেস হ্রাস ও ভালো মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। অবসাদ, উদ্বিগ্নতা, দুশ্চিন্তার মতো নানা মানসিক সমস্যার প্রভাব হ্রাস করে ও আপনার কর্মক্ষমতা অপ্টিমাইজ করে।

যখন ডিমের উপকারের কথা আসে, তখন বলতেই হয় যে,ডিমে বিদ্যমান ভিটামিন বি 2, বি 12, কোলিন, আয়রন এবং ট্রিপটোফ্যানের সংমিশ্রণ সবই উদ্বেগের ঝুঁকি, বিষণ্নতার মতো লক্ষণ কমিয়ে আনে এবং স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে সহায়তা করে।মোটকথা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হলেও আপনার ডিম খাওয়া প্রয়োজন।

মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য

ডিম ত্বকের সতেজতা ধরে রাখতে সাহায্য করে

ডিমের উপকারিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে এতে বিদ্যমান ভিটামিন ই। আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন,ত্বকের সৌন্দর্যের পিছনে এর ভূমিকা কতখানি।

ভিটামিন ই ত্বকের ফ্রি-রেডিকেল ধ্বংস করে,নতুন কোষ সৃষ্টি করে।ফলে সহজে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না।ত্বক থাকে সুন্দর,সতেজ ও নমনীয়। এমনকি এটি ত্বকের ক্যন্সার হতেও আপনাকে রক্ষা করবে।আপনি যদি আপনার ত্বকের যত্ন নিতে চান,তাহলে সর্বপ্রথম ডিমকে আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।

ডিম কি প্রোটিনের ভালো উৎস?

ডিম হল প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস যা আপনার দেহের পেশী ও টিস্যুর পুর্নগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো এসিডের যোগান জদিয়ে থাকে। আকারভেদে প্রতি একটি ডিম থেকে আপনি ৫ গ্রাম থেকে ৮ গ্রাম  প্রোটিন পেতে পারেন। আর আপনার দেহ গঠনের একক হচ্ছে প্রোটিন,যাতে দেহের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত অ্যামিনো এসিডগুলো বিদ্যমান থাকে। তাই ডিমের উপকারিতা নিয়ে আর সংশয় থাকার কথা নাহ।

ডিম কি আপনার কোলেস্টেরল বাড়ায়?

বর্তমান গবেষণা  প্রমাণ  করে যে, খাদ্যতালিকায় থাকা ডিম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের রক্তের কোলেস্টেরল বাড়ায় না।  তার মানে এই প্রতিফলিত হয় যে, পরিমিত পরিমাণে ডিম গ্রহণ করলে তা কখনোই একজন সুস্থ ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে না।

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি দল দ্বারা সাম্প্রতিক প্রকাশিত গবেষণা বলে, যে সপ্তাহে 3টির বেশি ডিম খায়,তার হৃদরোগের ঝুঁকি 25% এর উপরে বাড়াতে পারে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ স্বীকার করেছেন যে, খাদ্যের কোলেস্টেরল দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য ততটা ক্ষতিকর নয় যতটা স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট, যা রক্তের কোলেস্টেরলের উপর আরও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

কথায় আছে,‘বেশি ভালো, ভালো না’ -তাই পরিমিতভাবে ডিম খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি আপনি ইতিমধ্যেই উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন, প্রতিদিন একটি ছয় ডিমের অমলেট আপনার কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উপর অবিলম্বে প্রভাব ফেলবে, তবে একটি বা দুটি ডিম অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্টের অংশ হতে পারে

বাদামী ডিম কি সাদা ডিমের চেয়ে স্বাস্থ্যকর?

না! ডিমের রঙ কখনো এর গুণমান, পুষ্টি বা স্বাদের সূচক নয় । বরং, রঙ নির্ভর করে মুরগির জাতের উপর। যেমন: সাদা পালকের মুরগি সাদা ডিম পাড়ে, আর বাদামি পালকের মুরগি বাদামি ডিম পাড়ে। আপনি যদি ভাবছেন কেন বাদামী ডিমের দাম প্রায়শই বেশি হয়, তবে এটি কেবল কারণ বাদামী পালকের মুরগি বড় এবং বড় করাও  ব্যয়বহুল।

শুধু কি ডিমের সাদা অংশ খাওয়া উচিত?

আপনি যদি দিনে একাধিকবার ডিম খান,তবে এটি আপনার জন্য। আপনি যদি পুরো ডিমের পরিবর্তে ডিমের সাদা অংশ অদলবদল করে গ্রহন করেন,তবে তা অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এড়াতে সাহায্য করবে। এমনকি তা রুচি ধরে রাখারও একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে। তবে আপনি যদি সপ্তাহ জুড়ে মাঝে মাঝে ডিম খেয়ে থাকেন, তবে পুরো ডিমই খেতে পারেন।

কুসুমে বেশিরভাগ প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে এবং এগুলির মধ্যে থাকা চর্বি আপনার শরীরকে সেগুলি শোষণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ডিমে পাওয়া প্রোটিনের 40% কুসুম ধারণ করে।তাহলে বুঝেই নিন কি গ্রহণ করবেন আর কি না।

প্রতিদিন কয়টা ডিম গ্রহণ করা উচিত?

বর্তমান স্বাস্থ্য নির্দেশিকা দেখায় যে, প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। কেনার পর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের জন্য আপনি নিরাপদে আপনার রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে পারেন। এছাড়া ডিম দিয়ে নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করে খেতে পারেন।ডিমের স্বাদ দ্বিগুণ করার জন্য এই খাবারগুলোর সাথেও খেতে পারেন-

ডিমে কি স্যালমোনেলা নামক জীবাণু আছে?

ডিম নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে একটি হচ্ছে এতে নাকি স্যালমোনেলা নামক জীবাণু আছে। মূলত এর সূত্রপাত ঘটে আশির দশকের দিকে। তৎকালীন ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডিমে স্যালমোনেলা আছে এরূপ মন্তব্য করলে তা সমগ্র পৃথিবীতে এক ভয়ের সৃষ্টি করে।তখন এরূপ পরিস্থিতি হয়েছিল মানুষ এক প্রকার ডিম খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছিল।

পরবর্তীতে খামারিরা টীকা কর্মসূচির মাধ্যমে ডিমে এই জীবাণু ধ্বংস নিশ্চিত করেছেন।তাই আপনি বর্তমানে নির্ভয়ে ডিম খেতে পারেন।


Health benefits of eggs 

ডিম কীভাবে খাওয়া উচিত?

চিকিৎসকদের মতে, ডিম খাওয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর উপায় হচ্ছে পানিতে সিদ্ধ করা বা পানিতে পোচ করে খাওয়া।কিন্তু ডিমের জীবাণু নিয়ে সন্দিহান থাকলে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। যদি কাচা ডিম গ্রহণে অসুবিধা না থাকে, তবে কাচা ডিমও খেতে পারেন। তবে,ডিম তেলে ভাজলে এতে বিদ্যমান স্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।তাই চিকিৎসকরা, তেলে ভাজা ডিম খেতে নিষেধ করেন।

এছাড়া আপনি ডিম দিয়ে নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করে খেতে পারেন,শুধু খেয়াল রাখবেন মুখরোচক করতে যেয়ে এর পুষ্টিমান যেন কমে না যায়।ডিম যেভাবেই গ্রহণ করুন না কেন তা আপনার উপকারে আসবেই।

নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম আমাদের জন্য খুবই সহজলভ্য ও সুস্বাদু একটি খাবার।ডিমের উপকারিতা নিয়ে কোনো সন্দেহ প্রকাশ করবার অবকাশ নেই।এই সুপারফুড শুধু আপনার ক্ষুধাই নিবারণ করে না,আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করে থাকে।তাই আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রতিদিন ডিম গ্রহণ করা প্রয়োজন।

রেফারেন্সঃ

১। www.australianeggs.org.au/nutrition/cholesterol

Author

Scroll to Top