Last Updated on 19th March 2023 by Mijanur Rahman
হাতের লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য। ইদানীং বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হাতের লেখার প্রচলন ও প্রয়োজন কিছুটা কমে আসলেও এখনো হাতের লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দলিল ছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হাতে লিখে রাখার প্রয়োজন হয়। তাই হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া অতি জরুরি। আমরা সবাই চাই আমাদের হাতের লেখা সুন্দর ও আকর্ষণীয় হোক। কারো কারো হাতের লেখা খুব বিশ্রী ও কুৎসিত হয়ে থাকে, যার ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফলসহ নানান জায়গায় বিপদের সম্মুখীন হওয়া লাগে।
এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার অবশ্যই হাতের লেখা সুন্দর করায় উপায় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। আজকের লেখাতে আমরা আলোচনা হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল ও হাতের লেখা সুন্দর করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে। তাহলে দেরী না করে চলুন দেখে নেই হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল কি কি!
হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল (হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়)
- ধৈর্য্য
- সুবিধামত আরামদায়ক কলম
- যে কোনো কাগজ বা খাতা (মার্জিন করা খাতা উত্তম)
- স্কেল
- অক্ষর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা ( বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, মাত্রা ইত্যাদি)
- কলম ধরার কৌশল
হাতের লেখা সুন্দর করতে হলে কি কি প্রয়োজন তা তো জেনে নিলাম। চলুন, তাহলে জেনে নেয়া যাক, হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও উপায় – রিলেটেডঃ যেভাবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবেন
সঠিক উপাদান বাছাই করা
লেখা শুরুর আগে এমন সামগ্রী নির্বাচন করুন যেগুলো ব্যবহার করে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। আগে অনেকেই মনে করতেন সুন্দর হাতের লেখার জন্য ‘ফাউন্টেন পেন’ প্রয়োজন। আসলে লেখার জন্য এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি আপনার মনমত একটি কলম বা পেন্সিল বেছে নিন যা আপনার আঙুলের সঙ্গে সহজে মানিয়ে যাবে, যেটা ব্যবহারে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করবেন।আর এমন কাগজ ব্যবহার করতে পারেন যাতে হিসেবে লাইন টানা থাকে, এতে করে আপনার লেখার সঠিক ধারা বজায় থাকবে।
হাত এবং কবজির সামঞ্জস্য বজায় রাখা
হাত ও কবজি সঠিক ভাবে সামঞ্জস্য করতে না পারলে লেখা তো সুন্দর হবেই না, উলটো আপনি দীর্ঘক্ষন লিখতে পারবেন না, আপনার হাত ব্যথা হয়ে যাবে। হাতের অবস্থান ঠিক বা থাকলে কিছুক্ষণ লেখার পর আপনি হাতের মাংসপেশিতে জড়তা অনুভব করবেন। তাই লেখার সময় হাত ও কবজির সঠিক অবস্থান ও সামঞ্জস্য রাখা অতি জরুরি।
অঙ্গবিন্যাস ঠিক রাখা
লেখার সময় অবশ্যই সোজা হয়ে বসুন এবং আপনার অনভ্যস্ত হাতটিকে (যেমন ডানহাতিদের ক্ষেত্রে বাম হাত এবং বামহাতিদের ক্ষেত্রে ডান হাত) কাগজ বা খাতাটিকে ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করুন। এটা আপনাকে স্থির থাকতে এবং ডান হাতের ওপর ( অভ্যস্ত হাতের উপর) নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করবে। অঙ্গবিন্যাস ঠিক রাখার জন্য অবশ্যই চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করবেন।
সঠিকভাবে কলম বা পেন্সিল ধরুন (কলম ধরার সঠিক নিয়ম)
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় কলম বা পেন্সিল এর নিবের কাছাকাছি ধরে লিখলে লেখা সুন্দর হয়, তবে খুব বেশি শক্তভাবে ধরবেন না। অবশ্য নিবের কাছাকাছিই ধরে লিখতে হবে এমন না, কারন কলম ধরার কোনো নিয়ম নেই। আপনি যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন,সেভাবেই কলম ধরুন। কিন্তু যেভাবেই কলম ধরুন না কেন খেয়াল রাখবেন যেন খুব বেশি শক্ত করে না ধরেন। কলম বা পেন্সিল খুব শক্তভাবে ধরলে আঙ্গুলের অগ্রভাগ ব্যথা হতে পারে এবং দাগ পড়তে পারে। এতে আপনার লেখা শুরুর দিকে ভালো হলেও কিছুক্ষন পর লেখা বোঝাই যাবে না।
সঠিক কলম বাছাই করুন
কেউ মোটা কালির কলম দিয়ে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, কেউ বা চিকন কালি। আপনার সুবিধা অনুযায়ী কালির কলম বেছে নিন। আপনি যেই কালির বা যেই ধরনের কলম দিয়ে লিখতে অভ্যস্ত সবসময় সেই কালির কলমই ব্যবহার করুন। তবে কখনোই ভারি কলম বা অতিরিক্ত মোটা কলম ব্যবহার করবেন না। এতে করে আপনার দ্রুত হাত ব্যথা হয়ে যাবে এবং লেখা খারাপ হবে। রিলেটেডঃ সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, ফ্রি গাইডলাইন
তুলনামূলক ধীরে লেখার অভ্যাস করুন
বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দ্রুত লেখার প্রবণতা থাকে। তাড়াতাড়ি লেখা শেষ করার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে লেখা সুন্দর হওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উত্তম। একটু ধীরে লেখার চেষ্টা করুন এবং প্রতিটি অক্ষর যেন সঠিক ভাবে বুঝা যায় সেদিকে লক্ষ রাখুন। অক্ষরকে সুন্দরভাবে রূপ দিতে চাইলে প্রথমে বড় বড় করে লেখার অভ্যাস করুন। এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লেখার স্টাইলে ফিরে আসুন। দ্রুত লিখলে হাতের লেখা সুন্দর ও হয় না, অক্ষর গুলো অস্পষ্ট হয়। তাই হাতের সুন্দর করতে হলে ধীরে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সবগুলো অক্ষর একই সাইজের (আকার) লিখবেন
একই লাইনে একটি অক্ষর বড়, আরেকটি ছোট, এটি দেখতেই ভালো দেখায় না। তাই সবসময় অক্ষরগুলো একই আকারের রাখার চেষ্টা করবেন। এতে লেখাগুলো আরো সুন্দর হয়ে উঠবে। রিলেটেডঃ ইংরেজি শেখার সহজ উপায়, আল্টিমেট গাইডলাইন
অক্ষর বা বর্ণগুলো সঠিক ভাবে লিখুন
স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ গুলোর মধ্যে মাত্রাসহ, মাত্রহীন, অর্ধমাত্রা এমন ভাগ রয়েছে। লেখার সময় অক্ষরগুলোর মাত্রা, আকার সব ঠিক রেখে লেখার চেষ্টা করবেন। দেখবেন, এতে করে আপিনার লেখা স্পষ্ট ও অনেকটা গোছানো মনে হবে।
লাইনগুলো সমান্তরাল রাখার চেষ্টা করবেন
একটি লাইনের সাথে আরেকটি লাইন সমান্তরালে রেখে লিখবেন। অনেক সময় দেখা যায় লেখার লাইনটি উপর থেকে নিচের দিকে নামছে, বা নিচ থেকে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এতে লেখার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তাই সবসময় লাইনগুলো সমান্তরালে রেখে লেখার চেষ্টা করবেন।
নির্দিষ্ট পরিমান জায়গা রেখে লিখুন
শব্দ থেকে শব্দ এবং লাইন থেকে লাইনের মাঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা রাখুন। এটা।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ একটি উপায়। ধরুন,হাতের লেখা সুন্দর কিন্তু আপনার লেখার মধ্যে প্রয়োজনীয় গ্যাপ নেই, সব অক্ষর লাইন মিলেমিশে একাকার, এতে কিন্তু আপনার যতই সুন্দর হোক না কেন, তা দেখতে ভাল লাগবে না এবং লেখা পড়ার ও অযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই লেখার মাঝে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাপ রাখবেন।
মনোযোগী হতে হবে (হাতের লেখা সুন্দর করার নিয়ম)
হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে। লেখার ধরন, বর্ণ, অক্ষর,শব্দ, লাইন সব সঠিভবে হচ্ছে কিনা এদিকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। লেখার প্রতি মনোযোগ থাকলে সহজেই নিজের ভুলগুলো নিজে ধরতে পারবেন এবং শুধরাতে পারবেন।
মার্জিন টানবেন
মার্জিন আপনার পুরো খাতার নকশাই বদলে দিতে পারে। পেন্সিল, কালো কালির কলম অথবা নীল কালির কলম দিয়ে আপনি মার্জিন টানতে পারেন।আরেকটু আকর্ষণীয় করতে চাইলে আপনি পাশাপাশি দুটো মার্জিন টানতে পারেন অর্থাৎ ডাবল লাইন টেনে মার্জিন করতে পারেন। মার্জিনের ফলে ফলে আপনার লেখা আরো আকর্ষণীয় দেখাবে। ! রিলেটেডঃ অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম, অ্যাসাইনমেন্ট লেখার পদ্ধতি ও গাইডলাইন
একটানে ভুল সংশোধন করুন
কোন শব্দ বা বাক্য ভুল হলে সেটাকে হিজি বিজি করে না কেটে,একটি হালকা দাগ দিয়ে কেটে দিন। এতে আপনার লেখা পরিষ্কার দেখাবে।
হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল
অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই
হাতের লেখা ভালো করার জন্য অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। সব নিয়ম মেনে প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে। আস্তে আস্তে অনুশীলনের পরিমান বাড়াতে হবে। অনুশীলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আপনি এই লেখায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন।
উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে হাতের লেখা সুন্দর হতে বাধ্য। এছাড়াও আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী হাতের লেখা অনুশীলন করতে পারেন। সুন্দর হাতের লেখা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি গুনাবলী। আশা করি, উপরের টিপসের মাধ্যমে আপনাদের উপকার হবে।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও কমপ্লেইন করা হবে।
Sylhetism ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।
Sylhetism ব্লগের কোন স্বাস্থ বিষয়ক পোস্টের পরামর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবেন, আমরা স্বাস্থ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ না, আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। সুতারাং কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার অবশ্যই আমরা নিতে পারবো না। ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।