Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
বর্তমানে প্রায় অধিকাংশ মানুষ এলার্জি বা চুলকানির সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর্লাজি আমাদের যেনো এখন নিত্য দিনের সঙ্গী। প্রায়ই নানান জনের কাছ থেকে আমরা এই রোগের নাম শুনতে পাই। বন্ধুদের গ্রুপের সাথে কোথাও খেতে গেলে কিংবা অফিসের গেটটুগেদার এ কারও না কারও এই এর্লাজি বিষয়ে সমস্যা হয়েই থাকে।
এমনকি আমরা অনেক সময় নিজেরাও জানিনা আমাদের কোন জিনিসে এর্লাজি, আমরা কি খেতে পারি আর কি পারি না। আপাতত দৃষ্টিতে এর্লাজির লক্ষণ খুব ছোট হলেও এটা কিন্তু গুরুতর রূপ নিতে পারে, যা শুধু সময়ের ব্যাপার। এজন্য আমাদের প্রতেকেরই এই এর্লাজি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা থাকা জরুরি।
তো আজকের এই লেখাতে আমরা জানবো এলার্জি কি, এলার্জির প্রকারভেদ, এলার্জির কারণ, ও এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
এলার্জি কি?
এলার্জি বলতে সাধারণ ভাষায় বোঝায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি। অর্থাৎ আমাদের শরীরে সাধারণত কোন পরজীবী, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রবেশ করলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়াকে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন বলে। কিন্তু স্বাভাবিক জিনিস মানে সাধারণ মানুষের কাছে যেগুলো সাধারণ বিষয় এগুলোর প্রতি যখন আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে তখন এটাকে বলা হয় এলার্জি।
যেমন আমরা মাছ মাংস ডিম দুধ খেয়ে থাকি। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের এই সাধারন খাবার খেলে তাদের দেহের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ তাদের এসব খাবারের প্রতি এলার্জি আছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরোপের জনসংখ্যার মধ্যে ২০% মানুষের দৈনন্দিন এলার্জি বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছে। WHO জানিয়েছে যে কোন দেশের মোট মানুষের ১০% থেকে ৪০% মানুষের এলার্জি আছে এবং পুরো পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার ৩০% মানুষ এলার্জি বা এ সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ভারতবর্ষে ভারতীয় মোট জনসংখ্যার ২০% থেকে ৩০% মানুষ বিভিন্ন রকমের এলার্জি রোগে ভোগেন। যে সকল অক্ষতিকর বহিরাগত বস্তুর ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি লড়াই করে তাদের এলার্জেন বলা হয়। শিশুদের সাধারণত এলার্জি সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি ঠিক হয়ে যায় কারণ তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এমনকি অনেক প্রাপ্তবয়স্ক আছে যাদের কোন খাবার বা জিনিসের প্রতি পূর্বে এলার্জি ছিল না কিন্তু হঠাৎ করে তৈরি হয়েছে।
এলার্জিজনিত রোগ
এলার্জি দীর্ঘ সময় ধরে আপনার দেহের ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। এর ফলে আপনার দেহ সহজেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে দেহে বাহিরের কোন ক্ষতিকর বস্তু যেমন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার গ্রহণের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ ভাইরাসজনিত ভাইরাস। সর্দি, নাক, হাঁচি এবং কাশি এসব সৃষ্টি করে।
এলার্জিতে হাঁচি থেকে শুরু করে খাদ্য ও ওষুধের ভীষণ প্রতিক্রিয়ার সাথে মারাত্নক শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বিদ্যমান হাঁপানির সাথে এলার্জির উদ্ভব বা নতুনভাবে ব্যক্তির মধ্যে হাঁপানির সৃষ্টি হলে একে এলার্জি হাঁপানি বলে। সেই এলার্জি হাঁপানি রোগীর অবস্থা আরো খারাপ করে তুলে। ভারত ও বাংলাদেশের অ্যালার্জি এবং অ্যাজমা ফাউন্ডেশন অনুমান করে হাঁপানির প্রায় ৬০% লোককে এই এলার্জি হাঁপানি প্রভাবিত করে।
এছাড়াও যখন কোন ব্যক্তি এলার্জেনের সংস্পর্শে আসে তখন তার শ্বাসনালী শক্ত হয়ে কাশি হতে পারে। এর সাথে শ্বাসকষ্ট এবং বুক শক্ত হওয়াও হতে পারে। এমনকি এই এলার্জেনের প্রতিক্রিয়া বেড়ে গেলে আপনার খড় জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে আপনার জ্বরের সাথে অবিরাম হাঁচি, কাশি হতেই থাকবে। অ্যালার্জির ফলাফলে ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। এতে আপনি যদি তীব্র ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হন এটি সাধারণত কয়েক দিন বা সপ্তাহ পরে শেষ হয়।
কিন্তু আপনি যদি দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হন এটি সম্ভবত কয়েক মাস ধরে দীর্ঘায়িত হতে পারে। এমনকি এটি ঘন ঘন ফিরেও আসতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়া, বায়ু দূষণ, ধুলো, রাসায়নিক ধোঁয়া এই এলার্জেনের সংস্পর্শ সাধারণত ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের প্রথম কারণ। মারাত্মক এলার্জির কারণে অ্যানাফিল্যাক্সিস হতে পারে। যা আপনার জীবননাশের কারণ হতে পারে।
এলার্জির প্রকারভেদ
ইমিউন সিস্টেমের কাজ হল ক্ষতিকারক রোগজীবাণুগুলির সাথে লড়াই করে দেহকে সুস্থ রাখা। কিন্তু এটি অনেক সময় অক্ষতিকর জিনিসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এটি মূলত এলার্জি। এলার্জি বহু রকমের হতে পারে। যথাঃ
- ডাস্ট অ্যালার্জি
- এলার্জিক রাইনাইটিস
- আর্টিকেরিয়া বা আমবাত
- আর্টিকেরিয়া বা আমবাত
- সংস্পর্শজনিত এলার্জিক ত্বক প্রদাহ
- অ্যাকুয়োজেনিক আর্টেকেরিয়া
- এটপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা
- এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস
- সাধারণ এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস
- ভারনাল এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস
- ফুড এলার্জি
- সান এলার্জি
- ল্যাটেক্স এলার্জি
চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন এলার্জি আমাদের শরীরে কি কি ধরনের উপসর্গ নিয়ে হাজির হয়, বা কোন এলার্জির কি কাজ।
ডাস্ট অ্যালার্জি
যদি ঘরের কোনো জিনিসে ধুলোর আস্তরণ পড়ে থাকে যেমন বইপত্র, তোশক, বালিশ, পুরোনো কাপড়, পুরানো বাড়ি সেখান থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।
এলার্জিক রাইনাইটিস
এলার্জিক রাইনাইটিস রোগটি হল এলার্জিজনিত নাকের প্রদাহ। যা দুই ধরনের হয়। একটি সিজনাল এলার্জিক রাইনাটিস যেটি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয়। আরেকটি পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস। এই এলার্জিক রাইনাইটিস সারা বছর ধরে হয়। অস্ট্রেলিয়াতে শতকরা ৩০% মানুষ এই এলার্জিতে ভুগছেন। যেটি আমাদের দেশে আনুমানিক ১০% থেকে ১৫%।
আর্টিকেরিয়া বা আমবাত
বিভিন্ন প্রকার এলার্জির মধ্যে ত্বকের আর্টিকেরিয়া বা আমবাত অন্যতম। একে ইংরেজিতে RASH বলে। শতকরা ২০ জন জন্মগতভাবে আর্টিকেরিয়ার রোগী। আর্টিকেরিয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি একিউট আর্টিকেরিয়া। এতে দ্রুত উপসর্গ দেখা যায় আবার খুব দ্রুতই মিলিয়ে যায়।
আরেকটি ক্রনিক আর্টিকেরিয়াএতে ৬ সপ্তাহের বেশি বা কারও কারও মাসের পর মাস এর উপসর্গ দেখা যায়। স্বল্পস্থায়ী আর্টিকেরিয়া সাধারণত বাচ্চাদের মধ্যে এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বড়দের মধ্যে দেখা যায়।
এলার্জি কি? কত প্রকার?
সংস্পর্শজনিত এলার্জিক ত্বক প্রদাহ
বহিঃস্থ উপাদান বা এলার্জেনের সংস্পর্শে যদি ত্বকে কোথাও শুকনো, খসখসে, ছোট ছোট দানার মতো হয়ে ওঠে তাহলে তাকে এলার্জিক কনটাক্ট ডারমাটাইটিস বলে।
অ্যাকুয়োজেনিক আর্টেকেরিয়া
পানির কারণে এ ধরনের এলার্জি হয়ে থাকে। পানি শরীরে লাগলে বা গোসলের পর এই এলার্জির উদ্ভব হয়।
এটপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা
বাংলাদেশে এই রোগটি স্থানীয়ভাবে পামা, বিখাউজ, কাউর ঘা ইত্যাদি নামে পরিচিত। এটির অন্যতম কারণ বংশগত। সাধারণত ত্বক কোনো কিছু সহ্য করতে না পারলে ইরিটেশন থেকে একজিমা হতে পারে।
এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস
এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস সাধারণত ঘটে যখন একজন ব্যক্তির চোখ এলার্জেনের সংস্পর্শে আসে। এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস দুই ধরনের হয়ে থাকে।
সাধারণ এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস
এটি সাধারণত দেহের ভিতরের বা বাহিরের কোন এলার্জির জন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাহিরের এলার্জেনের মধ্যে ফুলের পরাগ, ধূলা-বালি ইত্যাদি রয়েছে এবং ভিতরের এলার্জেনের মধ্যে রয়েছে দেহের কোন স্থানের সংক্রামিত অংশের জীবাণু বিশেষ বিশেষ করে স্ট্যাফাইলোকক্কাস।
ভারনাল এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস
এটি সাধারনত এক ধরণের হাইপার সেনসিটিভিটি রিএকশনের জন্য হয়ে থাকে। বাহিরের এলার্জেনের জন্য অর্থাৎ বাতাসে ফুলের রেণু ও ধূলা-বালি এই রোগের প্রধান কারণ। যেহেতু ভারনাল এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস গ্রীষ্ম ও বসন্ত কালে বেশী হয় সেহেতু গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় বসবাসকারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। ৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের মানুষ সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয়।
ফুড এলার্জি
খাবার থেকে যেমন ডিম, দুধ, ময়দা, সি-ফুড ইত্যাদি থেকে এলার্জি হতে পারে। উন্নত বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪% থেকে ৮% লোকের কমপক্ষে একটি করে খাবারে ফুড এলার্জি আছে। এটা বাচ্চাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে বেশি এবং এর অনুপাত দিন দিন আরও বাড়ছে। এতে সাধারণ ছেলে শিশুরা মেয়ে শিশুদের থেকে বেশি আক্রান্ত হয়। এই এলার্জি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩-৬% শিশু এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১-২% প্রাপ্তবয়স্কদের আক্রান্ত করে।
সান এলার্জি
কারো সূর্যের আলো সহ্য না হলে তার সান এলার্জি হতে পারে। সাধারণত এই রোগটি যাদের বয়স ৩৫ বছর সেই তরুণদের মধ্যে শুরু হয় তবে নবজাতক বা বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেও এটি দেখা যায়। এটি ছেলেদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
ল্যাটেক্স এলার্জি
রাবার বা ইলাস্টিক থেকে অনেক সময় এলার্জি হতে পারে। ল্যাটেক্স অ্যালার্জি হল প্রাকৃতিক রাবারের ল্যাটেক্সে পাওয়া কিছু প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া। সাধারণত রাবার গাছ থেকে বিভিন্ন রাবার বা ইলাস্টিক জাতীয় পণ্য তৈরি করা হয়। ফলে রোগীদের এসব পণ্য ব্যবহারের সময় ল্যাটেক্স এলার্জি দেখা দেয়।
এলার্জির কারণ
এলার্জি যে কোন বয়সে শুরু হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ খাবারের এলার্জি অল্প বয়স এবং বয়স্ক মানুষদের বেশি হয়। পরিবেশগত এলার্জি যে কোনো সময় শুরু হতে পারে।বিকাশ করতে পারে। এমনকি প্রাথমিক এক্সপোজার বা সংবেদনশীলতার সময় জন্মের আগে থেকেই শুরু হতে পারে।
ব্যক্তিদের মধ্যে সময়ের সাথে সাথে এলার্জির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এটা পুরোপুরি বোঝা যায় না কেন একজন ব্যক্তির এলার্জি হয় এবং অন্যজনের হয় না। তবে এলার্জির অবস্থার জন্য বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণ রয়েছে। এলার্জি কারণ নির্ণয় করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণগুলো হলঃ
- এলার্জি ও অ্যাজমা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পারিবারিক ইতিহাস, বা জেনেটিক্স। এটি একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যদি বাবা -মা বা ভাইবোনদের এলার্জি থাকে তাহলে এলার্জির হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- এলার্জিক অবস্থার বিকাশের জন্য আরও অনেক ঝুঁকির কারণ রয়েছে। নর্মালে প্রসব করা শিশুদের তুলনায় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের এলার্জির ঝুঁকি বেশি থাকে।
- সাধারণত এলার্জিক রাইনাইটিস দেখা দেয় পুরানো ধুলাবালি (যাতে মাইট থাকে), ছত্রাক বা পোষা প্রাণীর লোমের সংস্পর্শ এলেই।
- ঘরের ধুলোর আস্তরণ থেকে এলার্জি হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকের মাধমে এলার্জি হতে পারে। যেমনঃ শ্যাম্পু, লোশন, মেকআপ ইত্যাদি।
- ল্যাটেক্স এলার্জির সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল লেটেক-গ্লাভস, কনডম এবং বেলুন সহ ল্যাটেক্স ধারণকারী পণ্য স্পর্শ করা।
- ল্যাটেক্স পণ্য, বিশেষ করে গ্লাভস, ল্যাটেক্স কণা নিঃসরণ করে, যা বায়ুতে ছড়িয়ে গেলে আপনি শ্বাসের মাধ্যমে তা নিতে পারেন। এর ফলে আপনি ল্যাটেক্স এলার্জি হতে পারে। তবে আপনার গ্লাভসের ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে গ্লাভস থেকে ল্যাটেক্স কণা নিঃসরণ পরিমাণ পৃথক হয়।
- পারফিউম, জীবাণুনাশক, রঞ্জক বা অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহারের পরে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসলে সান এলার্জি হতে পারে।
- মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- অ্যান্টিজেনের এক্সপোজারের সময়, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং অন্যান্য অনেক কারণ, যার কিছু এখনও জানা যায়নি। এগুলো এলার্জির সৃষ্টি করে।
- কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী ওষুধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি, অ্যান্টিবায়োটিক (যেমনঃ টেট্রাসাইক্লিন), অ্যান্টিসাইকোটিকস (যেমনঃ ক্লোরপ্রোমাজাইন) ইত্যাদি খেলে সান এলার্জি হতে পারে।
- ঘুমের ওষুধ, পেনিসিলিন, অ্যাসপিরিন ও অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধ, সালফার গ্রুপের ওষুধ,, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ যেমন- বিটা ব্লকারস, এসিই ইলজিবিটর কারণে আর্টিকেরিয়া এলার্জি হতে পারে।
- রিউমাটরেড আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েড,হেপাটাইসি বি, ক্যান্সার, সূর্যরশ্মি ও ঠাণ্ডা থেকে আর্টিকেরিয়া এলার্জি হতে পারে।
- সাধারনত দুধ, ডিম, চিনাবাদাম, গাছ বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, শেলফিশ, সয়াবিন এবং গম খেলে ফুড এলার্জি হতে পারে। বাচ্চাদের ছোটবেলায় ডিমে এলার্জি থাকলেও সাধারণত বড় হওয়ার পরে সেটি ঠিক হয়ে যায়।
- শীতের দিনে সাধারণত কোল্ড এলার্জির প্রবণতা বেড়ে যায়। শীতের ঠাণ্ডা বাতাস বা আবহাওয়ার কারণে এটি বেশি হয়ে থাকে।
- এলার্জি পশ্চিমা দেশগুলিতে অনেক সাধারণ একটা বিষয়। তার তুলনায় কৃষিকাজের জীবনযাত্রার মানুষদের ক্ষেত্রে এটি অনেক কম দেখা যায়।
এলার্জির লক্ষণ
এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত আপনার এলার্জিযুক্ত কোন কিছুর সংস্পর্শে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিকশিত হয়, যদিও মাঝে মাঝে সেগুলি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে পারে। যদিও এলার্জি প্রতিক্রিয়া আপনার জন্য একটি উপদ্রব হতে পারে এবং আপনার স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তবে বেশিরভাগই এলার্জি প্রতিক্রিয়া হালকা ধরনের হয়।
এলার্জিক রাইনাইটিস
সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গগুলো হল
- ঘন ঘন হাঁচি দেওয়া।
- নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া।
- নাসারন্ধ্র বন্ধ হয়ে গিয়ে শ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া।
- চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া।
- চোখে তীব্র ব্যথা অনুভব হওয়া।
পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গগুলো হল
পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গগুলো সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিসের মতই তবে এর তীব্রতা কম হয় এবং স্থায়িত্ব বেশি হয়।
এলার্জি হাঁপানি
এলার্জি হাঁপানির উপসর্গগুলো হলঃ
- বুকের ভেতর ঘন ঘন শ্বাসের সহিত সাঁই সাঁই আওয়াজ হয়।
- শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়।
- ঘন ঘন কাঁশি হওয়ার কারণে ফুসফুস ভরে দম নিতে পারে না।
- বুকে চাপ ধরে থাকে। সেজন্য দম বন্ধ ভাব হয়ে থাকে।
- রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না।
আর্টিকেরিয়া বা আমবাতের উপসর্গগুলো হল
- দেহের ত্বকে লালচে ফোলা ফোলা ভাব হয়।
- ত্বকে প্রচুর চুলকায়।
- মুখ, হাত-পা ফুলে যায়।
এলার্জির লক্ষণ
এটপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমার উপসর্গগুলো হল
এটপিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমাতে চুলকানি বা ফুসকুড়ি প্রথমে আসে। যখন ফুসকুড়ি তীব্র পর্যায়ে থাকে তখন চুলকানি বেড়ে যায়। এর ফলে সব সময় আঁচড়ানোর পরে দেহে ঘন ত্বকের ফলক হয়ে যায়। একে লাইকিনিফিকেশন বলে। বাচ্চা এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই ফুসকুড়িগুলি প্রায়শই কনুই এবং হাঁটু কেপের বিপরীতে ত্বকের ভাঁজগুলিতে উপস্থিত থাকে।
এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস উপসর্গগুলো হলঃ
সাধারণ এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গগুলো হলঃ
- চোখ ভীষণ চুলকায় এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
- চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে।
- কনজাংটিভার কেমোসিস হয়।
ভারনাল কনজাংটিভাইটিস উপসর্গগুলো হল
- চোখ ভীষণ চুলকায় এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
- চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে।
- চোখ জ্বালা পোড়া করে ও আলো অসহ্য লাগে।
- এটি সাধারণত চোখের পাতা ও চক্ষু গোলকে হয়। যার ফলে চোখের পাতার নীচে শক্ত উঁঁচু দানা দেখা যায়।
- উঁঁচু দানাগুলো দেখতে নুড়ী পাথরের মত। প্রচন্ড ব্যাথার সৃষ্টি হয় চোখে।
- এই রোগে চোখের কর্ণিয়াও আক্রান্ত হয়।
এলার্জিক কনটাক্ট ডারমাটাইটিস উপসর্গগুলো হল
- ত্বকে ছোট ছোট লালচে ফোঁসকা পড়ে।
- ফোঁসকাগুলো ভেঙে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে।
- ত্বকের বহিরাবরণ ওঠে ত্বক চুলকায়।
- চামড়া ফেটে আঁশটে হয়ে যায়।
ফুড এলার্জি উপসর্গগুলো হল
খাদ্য এলার্জিগুলো সাধারণত সেকেন্ড থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে দ্রুত শুরু হয়। এর উপসর্গগুলো হলঃ
- ত্বকে ছোট ছোট লালচে ফোঁসকা পড়ে।
- মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা, গলা, চোখ, ত্বকসহ বিভিন্ন জায়গায় চুলকানি হতে থাকে।
- খাবার গিলতে সমস্যা হয়। কিছু খেলে বমি বমি ভাব হয় বা বমিও হয় অনেক সময়।
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় এবং শ্বাসের সময় বাঁশির মত শব্দ হয়।
- অনেকসময় রক্ত সংবহনতন্ত্র আক্রান্ত হয়। একে অ্যানাফিল্যাক্সিস বলে। এর ফলে রোগীর রক্ত সঞ্চালন কমে পালস দুর্বল হয়ে যায়। চামড়া সাদা হয়ে যায় এবং রোগী ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়।
৫ টি সাধারণ এলার্জেন
এলার্জেন হল এমন পদার্থ যাকে ইমিউন সিস্টেম অস্বাভাবিক এবং হুমকিস্বরূপ স্বীকৃতি দেয় এবং এতে এলার্জি প্রতিক্রিয়া ঘটে। দুর্ভাগ্যবশত, এলার্জেন, যাকে সাধারণত এলার্জি ট্রিগার বলা হয় এটি সারা বিশ্বে প্রচলিত এবং খাদ্য এবং পোষা প্রাণী সহ বিভিন্নভাবে আসতে পারে। তাই এলার্জি আক্রান্তদের জন্য এই এলার্জেনগুলোর প্রাথমিক জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ যাতে তাদের প্রভাব কীভাবে কমানো যায় বা কিভাবে এগুলো পুরোপুরি এড়ানো যায় তা তারা জানতে পারবে।
পরাগ
এটি প্রচুর পরিমাণে বাতাসে বিদ্যমান থাকে। তাই পরাগ অন্যতম এলার্জেনগুলির মধ্যে একটি। পরাগ সাধারণত গাছ, ফুল, ঘাস এবং আগাছা সহ বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এর হালকা টেক্সচার বাতাসের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করা এবং বিভিন্ন পৃষ্ঠতলে এর অবতরণ করাকে অনেক সহজ করে তোলে।
এই কারণে পরাগকে এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল দীর্ঘ সময়ের জন্য বাহিরে না থাকার চেষ্টা করা। বিশেষত পরাগ উৎপাদনকারী উদ্ভিদের অঞ্চলের কাছাকাছি না থাকা। এলার্জি ভুক্তভোগী হিসাবে, পরাগের সংস্পর্শে আসার ফলে প্রায়ই কাশি, শ্বাসকষ্ট, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাঁচি এবং নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
মোল্ড
মোল্ড হল পরাগ এবং ধূলিকণার মত একটি অন্যতম এলার্জেন। যাইহোক মোল্ড এমন একটি পদার্থ যা জল এবং অন্যান্য ধরণের আর্দ্রতা থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে। তাই মোল্ড বাথরুম, লন্ড্রি এলাকা, বেসমেন্ট এবং বিশেষত বাইরের অঞ্চল যেমন ঘাসের মতো জায়গায় পাওয়া যায়। সঠিক বায়ুচলাচল মাধ্যমে মোল্ডের বিকাশ কমাতে এবং প্রতিরোধ করা যায়।
খাদ্য
চিনাবাদাম, দুগ্ধজাত দ্রব্য এবং সামুদ্রিক খাবার অনেক ধরণের খাদ্য এলার্জির মধ্যে কয়েকটি। যেহেতু এগুলি খুব সাধারণ। এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকাঃ
- দুধঃ দুধ প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য দরকার হলেও এতে অনেকেরই এলার্জির সমস্যা হয়। সাধারণত শিশুদের মধ্যে তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের আড়াই শতাংশ এই এলার্জিতে ভুগে। এটি আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
- ডিমঃ অধিকাংশ শিশুর ডিমের এলার্জিতে ভোগে। এটি সাধারণত হয় ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিন থেকে।
- বাদামঃ অনেকেরই কাজু, পেস্তা, আমন্ড, আখরোট, ব্রাজিল নাট, এই ধরনের গাছ বাদাম খেলে এলার্জি হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ৪% থেকে ৮% শিশু এবং ১% থেকে ২% চিনাবাদাম এলার্জি বয়স্কদের উপর প্রভাব ফেলে। তবে এক ধরনের বাদামে এলার্জি থাকা মানেই সব বাদামে এলার্জি হবে এটা না হতে পারে।
- শেল ফিশঃ শেল ফিশ মানে চিংড়ি, কাঁকড়া, ওয়েস্টার, শামুক জাতীয় খাবার খেলে প্রায় ৬০% মানুষ এলার্জিতে ভুগে।
- গমের আটাঃ গমের আটা, পাউরুটি খেলে অনেক মানুষ এলার্জিতে ভুগে।
- সয়াবিনঃ সাধারণত সয়া বিনস, সয়া মিট এবং সয়া মিল্কে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুদের এলার্জি দেখা যায়। যা ১০ বছর পরে কমতে থাকে।
- মাছঃ অনেকের স্যালমন, টুনা, ম্যাকরলে জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খেলে এলার্জি হয় আবার অনেকের ইলিশ মাছ খেলে এলার্জি দেখা যায়।
ধূলিকণা
ধূলিকণা সবচেয়ে সাধারণ ইনডোর এলার্জেনগুলির মধ্যে একটি যা এড়ানো কঠিন। এই ধরণের এলার্জেন কাপড়ের উপরিভাগ যেমন বেডিং, ড্রপার, কার্পেট এবং আসবাবের সাথে লেগে থাকে। ধুলোবালি এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল ঘরের পরিবেশ পরিপাটি এবং ধুলামুক্ত রাখা। ধুলোবালি সাফ করা, বিছানা পরিবর্তন করা এবং সাপ্তাহিক ভিত্তিতে কার্পেট ভ্যাকুয়াম করা আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করবে।
মৌমাছি কাঁটা ফোটা
অনেকেই মৌমাছির খুব বড় ভক্ত নন কিন্তু বিশেষ করে যারা এলার্জিতে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে এটি ভয়ংকর হয়। পোকামাকড় যখন কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন যে বিষ তার দেহে উৎপন্ন হয় তা কিছু ব্যক্তির মধ্যে এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। মৌমাছির দংশনের ফলে আরো গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
গুরুতর প্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাস নিতে অসুবিধা, জিহ্বা, মুখ এবং গলা ফোলা, চুলকানি, আমবাত এবং নিম্ন রক্তচাপ। যারা মৌমাছির দংশনের ফলে গুরুতর এলার্জি প্রতিক্রিয়া অনুভব করে, তাদের অবিলম্বে চিকিৎসা করা উচিত। মৌমাছির দংশনে প্ররোচিত এলার্জি প্রতিক্রিয়ার জন্য সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি হল এপিনেফ্রিন।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
সঠিক চিকিৎসার পরিকল্পনা করার জন্য দরকার সঠিক এলার্জি টেস্ট এবং সুনির্দিষ্ট এলার্জেনগুলোকে শনাক্ত করা। এটি প্রত্যক্ষভাবে নির্ধারণ করে দেয় যে কিসে কিসে ব্যক্তির এলার্জি এবং কিসে কিসে এলার্জির ভয় নেই। প্রথমে ডাক্তার আপনাকে আপনার লক্ষণগুলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন যেমনঃ আপনি কোন অস্বাভাবিক খাবার খেয়েছেন বা কোন পদার্থের সংস্পর্শে এসেছেন কিনা। তারপরে আপনাকে শারীরিক পরীক্ষা করবেন। এর জন্য উনি এলার্জি টেস্ট করতে বলেন। এলার্জি টেস্টের প্রকারভেদঃ
স্কিন প্রিক পদ্ধতিঃ
ডাক্তার রোগীর দেহে গুরুতর এলার্জি প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন থাকলে নির্ণয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে রোগীর ত্বকের মধ্যে সামান্য পরিমাণ এলার্জেন প্রবেশ করিয়ে দেন। অ্যালার্জি রোগীদের শরীরে অ্যালার্জি ইমুনোগ্লোবিউলিন-ই বা আইজি-ই নামক এন্টিবডি থাকে। যার ফলে দেহের ত্বক ফুলে ওঠে ও লাল হয়ে যায়। এই জায়গায় এলার্জেন প্রবেশ করানো হলে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ২০-৩০ মিনিট লাগে। ফলে রোগী অচিরেই রেজাল্ট পেয়ে যায়।
স্ক্যাচ টেস্টঃ
এই টেস্টে রোগীর শরীর বা ত্বকে আঁচড় কেটে এলার্জেন ঢেলে দেওয়া হয়।
চ্যালেঞ্জ টেস্টঃ এই টেস্টে অ্যালার্জেন রোগীকে খাইয়ে দেওয়া হয়।
রক্তের আরএএসটি (রাস) টেস্টঃ আরএএসটি (রাস) টেস্ট বা রেডিও অ্যালারগোসোরবেন্ট টেস্ট ৫ বছরের কম, বৃদ্ধ রোগী এবং যাদের স্কিন প্রিক টেস্ট করতে ভয় পান তাদের জন্য করা হয়।
এলার্জির প্রাথমিক চিকিৎসা
এলার্জির চিকিৎসায় প্রায়শই অ্যান্টিহিস্টামাইন জাতীয় ওষুধ লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। আপনার এলার্জির তীব্রতার উপর নির্ভর করে আপনার চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ এবং ওষুধ দিবে। এলার্জি চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেঃ
অ্যালার্জেন পরিহার
এলার্জি প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ এবং উপসর্গ কমানোর ক্ষেত্রে এটি সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আপনাকে প্রথমেই মনে রাখবেন এলার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। যেহেতু ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে এটার সম্পর্ক। আপনার ডাক্তার আপনাকে এলার্জি ট্রিগার সনাক্ত করতে এব এইসব এড়াতে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। তাই আপনার যেসব বস্তু বা খাবারে এলার্জি রয়েছে সেগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) কেন ভর্তি হবেন? জেনে নিন বিস্তারিত।
ওষুধ
আপনার এলার্জির উপর নির্ভর করে ওষুধগুলো আপনার ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া কমাতে এবং লক্ষণগুলো তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনার ডাক্তার কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশন উপরে বড়ি বা তরল, নেসাল স্প্রে বা আইড্রপের আকারে ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন।
এলার্জিক কনজাংটিভাইটিসে টপিকাল এন্টিহিস্টামিন, মাস্ট সেল স্ট্যাবিলাইজার বা স্বল্প মাত্রার টপিকাল স্টেরয়েড দ্বারা এর চিকিৎসা করা হয়। তবে ভারনাল কনজাংটিভাইটিসে রোগীদের চোখে স্টেরয়েড ড্রপ,মাস্ট সেল স্ট্যাবিলাইজার, টপিকাল এন্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা হয়। আর যদি রোগীদের স্টেরয়েড রেজিস্ট্যান্ট থাকে তাহলে সাইক্লোসেপারিন ২% ড্রপ ব্যবহার করা যায়।
কোল্ড এলার্জির চিকিৎসা
কোল্ড এলার্জির জন্য ঠাণ্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এক ধরনের মুখোশ ব্যবহার করতে হবে। শ্বাস কষ্টের জন্য সালবিউটামল ইনহেলার নেয়া যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকাতে চাইলে স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইমিউনোথেরাপি
মারাত্মক এলার্জি বা এলার্জি যা অন্যান্য চিকিৎসার দ্বারা পুরোপুরি উপশম হয় না, সেগুলোর জন্য আপনার ডাক্তার এলার্জেন ইমিউনোথেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটিতে আপনার শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম যাতে এলার্জেনে প্রতিক্রিয়া না করে সেই জন্য শরীরকে আপনার এলার্জিতে অভ্যস্ত হতে সহায়তা করা হয়।
এই চিকিৎসাটিতে বিশুদ্ধ এলার্জেন নির্যাস একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে সাধারণত কয়েক বছরের জন্য আপনার দেহে দেওয়া হবে। ইমিউনোথেরাপির আরেকটি ফর্ম হল একটি ট্যাবলেট যা জিহ্বার নিচে (সাবলিংগুয়াল) যতক্ষণ না এটি দ্রবীভূত হয় ততক্ষণ রাখা হয়। কিছু পরাগের অ্যালার্জির চিকিৎসার জন্য সাবলিঙ্গুয়াল ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
জরুরী এপিনেফ্রিন
যদি আপনার মারাত্মক অ্যালার্জি থাকে, তাহলে আপনাকে সব সময় জরুরী এপিনেফ্রিন শট বহন করা লাগতে পারে। মারাত্মক অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার জন্য, একটি এপিনেফ্রিন শট (আউভি-কিউ, এপিপেন, অন্যান্য) আপনি জরুরি চিকিৎসা না পাওয়া পর্যন্ত আপনার উপসর্গগুলো কমাতে পারে।
এলার্জি দূর করার উপায়
এলার্জি চুলকানি দূর করার কিছু কার্যকারী ঘরোয়া উপায় হলোঃ
- রোদে ভালো করে ১ কেজি নিম পাতা শুকিয়ে পাটায় পিষে গুঁড়ো করুন। এর পরে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে এক চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ নিমপাতার গুঁড়া এবং ১ চা চামচ ইসবগুলের ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে পান করুন। এতে আপনি এলার্জি থেকে রেহাই পাবেন।
- এলার্জির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে কলা খেলে এই সমস্যা অতিরিক্ত আর বাড়বে না।
- অনেক সময় পাকস্থলীতে অনেক পরিমাণে প্রোটিনের আধিক্য হলেও অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এই জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশী পরিমাণে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
- পানি এবং মধুর সাথে লেবুর রস মিসশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলে এলার্জি সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়ে যায়। কারণ এই মিশ্রণটি দিয়ে টক্সিক পদার্থকে বের হতে সাহায্য করে।
- কোন খাবার খাওয়ার পরে যদি এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে শসা এবং গাজর একসাথে তাৎক্ষণিকভাবে খেয়ে ফেললে আর সমস্যা হবে না।
- প্রতিদিন সকালে এক কাপ পরিমাণ পানিতে ৫-১০ ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে খেলে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- হঠাৎ করে এলার্জি সমস্যা দেখা দিলে আপনি আদা অথবা আদা চা মধু দিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন। এতে উপকৃত হবেন।
পরিশেষে
সর্বোপরি এলার্জি সমস্যার জন্য আপনাকে সবসময় অনেক সাবধানে থাকতে হবে। বিশেষ করে যেসব খাবারে আপনার এলার্জি আছে সেসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে, যদি ধূলোবালিতে আপনার এলার্জি থেকে থাকে তাহলে এসব এড়িয়ে চলতে হবে। আপনার কিছু সতর্কতা আপনাকে এলার্জিজনিত জ্বর কাশি কিংবা আরো নানান সমস্যাথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
যদি আপনার রক্তে এলার্জি থেকে থাকে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, এছাড়া কোল্ড এলার্জি বা বাচ্চাদের এলার্জি হলে তাৎক্ষণিক ডাক্তারের সাহায্য নেওয়া উচিত।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকে আমাদের লেখা এলার্জি কি, এলার্জির প্রকারভেদ, এলার্জির কারণ, ও এলার্জি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যদি এই লেখা সম্পর্কে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আজকের মতো এখানেই বিদায়, দেখা হবে আগামী লেখাতে।
I need a product