Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
আমরা প্রতিদিন জেনে না জেনে অসংখ্য গুনাহের কাজ করে ফেলি, কেউ গুনাহ করতেছি জানার পরও গুনাহ করে ফেলি, আবার কেউ না জানার ফলে এসব গুনাহ করে হতাশায় ভুগি। কাল হাশরের ময়দানে আমাদের প্রত্যেককেই এজন্যে জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা হচ্ছেন দয়ার সাগর, আর কিছু কিছু দোয়া আছে যেগুলো পড়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করতে পারি, যেনো আল্লাহ তাআলা আমাদের কাল হাশরের ময়দানে মাফ করে দেন। সেসব দোয়ার মধ্যেই একটি দোয়া হল সাইয়েদুল ইস্তেগফার।
আজ আমরা বিস্তারিতোভাবে জানবো সাইয়েদুল ইস্তেগফার কি? এর ফযীলত, ইতিহাস, এর বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে দেরী না করে চলুন দেখে নেওয়া যাক।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার
সাইয়েদুল ইস্তেগফার হলো একটি সহীহ হাদিস, হাদিসটি হচ্ছে বুখারী শরীফের ৬৩০৬ ও ৬৩২৩ নাম্বার হাদিস। সহীহ হাদিস বলার কারণ হলো, এই হাদিস নিয়ে কোন দ্বিধাদন্ধের সুযোগ নাই, এই হাদিস মেশকাত শরীফেও এসেছে, হাদিস নাম্বার ২৩৩৫ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪।
সাইয়িদুল ইস্তিগফারকে (সাইয়েদুল ইস্তেগফার) বলা হয় ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আঃ। এই দোয়ার রয়েছে অনেক ফযীলত যা আমরা পরে আলোচনা করবো। তার আগে চলুন জেনে নেই সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ইতিহাস।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের আরবি উচ্চারণ
আপনরা যারা সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি খোঁজতেছেন তাদের জন্য নিচে সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি দেওয়া হল।
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের বাংলা উচ্চারণ
আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের বাংলা অর্থ
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ঘটনা ও ইতিহাস
হাসান বসরী রাহ. এর কাছে একবার এক ব্যক্তি জানালো “ তার ফসলে খরা লেগেছে। তাকে যেনো কোন আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন নিয়মিত এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর অন্য আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি অনেক গরীব। আমাকে কিছু রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বলেলন নিয়মিত এস্তেগফার করো।
এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হওয়ার আমল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, নিয়মিত এস্তেগফার করো।” সেখানে উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “ হুজুর সবাইকে একই পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ.তখন বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলি নি। এটা বরং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তার পবিত্র কুরআনে শিখিয়েছে। তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)
নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে নিয়মিত এস্তেগফার করো। ( ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অনেক ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপরে অজস্র বারিধারা ও রহমত বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)
যারা পেরেশানি মধ্যে আছেন, হতাশার মধ্যে আছেন, ডিপ্রেশনে আছেন, sadness, loneliness ইত্যাদি না্নান সমস্যার সম্মুখীন আছেন, তারা নিয়মিত এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম হচ্ছে, দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফার করা বা নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেওয়া। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম
এবার আসুন দেখে নেই সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম, বা কিভাবে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়বেন। যেহেতু এটি একটা দোয়া তাই আপনি যখন ইচ্ছা ফরজ নামাজের শেষে সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়তে পারবেন। তাছাড়া সাধারণত এই দোয়া পড়া হয়।
- সকালের ফজরের নামাজের শেষে।
- বিকালে আসরের নামাজের শেষে।
- এছাড়া দিন রাত যখন খুশি এই দোয়া পড়তে পারবেন।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ফযীলত
এতোক্ষণ আমরা জানলাম সাইয়েদুল ইস্তেগফার কি, ইতিহাস, পড়ার নিয়ম। তাহলে চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক এই দোয়ার ফযীলত কি, কেনো এই দোয়াকে ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়।
- হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
- হতাশা, মানসিক কষ্ট, মন খারাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই দোয়ার ফলে।
- যাদের বিয়ে হচ্ছে না, বা যাদের সন্তান হচ্ছে না তারা এই দোয়া বেশি বেশি পড়তে পারেন।
- যাদের অভাব অনটন লেগেই আছে তারা বেশি বেশি এই দোয়া পাঠ করবেন।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার ছবি
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের অডিও ও ভিডিও
এখানে আপনাদের সুবিধার্থে সাইয়েদুল ইস্তেগফারের অডিও ও ভিডিও ফরম্যাট দেওয়া হল।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার ভিডিও
যাদের সাইয়েদুল ইস্তেগফারের অডিও দরকার তার নিচের লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের অডিও Link
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের বাংলা উচ্চারণ | সাইয়েদুল ইস্তেগফারে বাংলা অর্থ | সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবি |
আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা। | ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’ | اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ |
সচরাচর জিজ্ঞাসা
সাইয়েদুল ইস্তেগফার কি?
সাইয়েদুল ইস্তেগফার হল আল্লাহর দরবারের ক্ষমা চাওয়ার একটি শ্রেষ্ট দোয়া। استغفار বা ইস্তিগফার অর্থ হলো ক্ষমা চাওয়া।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর ফজিলত কি?
- হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’।
- হতাশা, মানসিক কষ্ট, মন খারাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই দোয়ার ফলে।
- যাদের বিয়ে হচ্ছে না, বা যাদের সন্তান হচ্ছে না তারা এই দোয়া বেশি বেশি পড়তে পারেন।
- যাদের অভাব অনটন লেগেই আছে তারা বেশি বেশি এই দোয়া পাঠ করবেন।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও কমপ্লেইন করা হবে।
এই ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করুন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।
এই ব্লগের কোন স্বাস্থ বিষয়ক পোস্টের পরামর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিবেন, আমরা স্বাস্থ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ না, আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। সুতারাং কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার অবশ্যই আমরা নিবো না।