ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় ২০২৩

ডিপ্রেশন

Last Updated on 28th February 2023 by Mijanur Rahman

ডিপ্রেশন একটি মানসিক ব্যাধি যা বিশ্বব্যাপী একটি সাধারণ অসুস্থতা। বিশ্বব্যাপী ২৬৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই রোগে ভোগে। বিষণ্নতার প্রভাবগুলি দীর্ঘস্থায়ী বা পুনরাবৃত্ত হতে পারে যা আপনার মেজাজ এবং কাজ করার ক্ষমতাকে অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে সক্ষম।

এই রোগে আক্রান্ত জনসংখ্যার আনুমানিক ৩.৮%। বিশ্বব্যাপী, এটি অনুমান করা হয় যে ৫.০% প্রাপ্তবয়স্করা বিষণ্নতায় ভোগে এবং ৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে ৫.৭% রয়েছে। এটি আক্রান্ত ব্যক্তিকে ব্যাপকভাবে কষ্ট দিতে পারে যেমন- কর্মস্থলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা পরিবারে এটি ব্যাপক ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির স্বাভাবিক মেজাজের ওঠানামা করায় তাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জের এর মুখমুখি হতে হয়।

অনেক সময় এই রোগ অনেক গুরুতর হতে পারে যা আপনাকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রতি বছর ৭০০,০০০ এরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত আত্মহত্যার কারণে মারা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হচ্ছে ডিপ্রেশন।

দুঃখজনক ব্যাপারটি হচ্ছে এই রোগের এত বিস্তার থাকার পরও বেশির ভাগ মানুষই এই রোগের চিকিৎসা নেয় না বা সচেতন হয় না। নিম্ন আয়ের ৭৫ % মানুষই এর চিকিৎসা নেয় না। কার্যকর পরিচর্যার অভাব, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর অভাবের কারনের বেশির ভাগ মানুষ এই ব্যাপারে অজ্ঞ। তো যাইহোক, এই লেখাতে আমার আজ জানবো ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় ও ডিপ্রেশনের নাড়িভুঁড়ি

ডিপ্রেশন অর্থ কি

সহজ করে বললে ডিপ্রেশন অর্থ হলো হতাশা। হতাশা থেকেই মূলত মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগে। ডিপ্রেশন গুরুতর একটি মানসিক সমস্যা, যা একজন ভুক্তভোগীর মনে নানান নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়ে থাকে, যার ফলে মানসিক অশান্তি, অবসাদ, বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয়।

কারা বেশি ডিপ্রেশনে ভোগে?

হতাশা যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে, তার বয়স, লিঙ্গ বা পরিস্থিতি যেটাই হোক না কেন, প্রতি বছর অনেক মানুষ এই রোগে ভোগেন এবং দীর্ঘদিন কষ্ট করেন। মহিলারা পুরুষদের তুলনায় দিগুন হতাশায় ভুগেন, এর একটি বড় কারন হচ্ছে মহিলারা তাদের জীবনের অনেকটা সময় হরমোন পরিবর্তন ক্রিয়াকলাপের মধ্য দিয়ে পার করে।

ডিপ্রেশন এর প্রধান কারণ

যে কোন মানুষ যে কোন সময় ডিপ্রেশন এ আক্রান্ত হতে পারে। বিভিন্ন কারনে আপনি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিষণ্নতার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং জৈবিক বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। নিম্নে এর কারনগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ

  1. অপব্যবহারঃ শারীরিক, যৌন, বা মানসিক শরীরের অপব্যবহার আপনাকে পরবর্তী জীবনে বিষণ্নতার জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
  2. বয়সঃ বয়স্ক ব্যক্তিরা হতাশার ঝুঁকিতে বেশি। এদের এই রোগে ভোগার অন্যান্য কারণগুলির  মধ্যে রয়েছে যেমন- একা থাকা এবং সামাজিক সহায়তার অভাব।
  3. সামাজিকঃ পরিবার এবং সামাজিক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা। কাজ এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে অসুবিধা হওয়া। সম্পর্কের মধ্যে আপত্তিকর বা অনিয়ন্ত্রিত আচরণ প্রদর্শন করা।
  4. নির্দিষ্ট কিছু ওষুধঃ কিছু ওষুধ যেমন- আইসোট্রেটিনয়েন (ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়), অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ ইন্টারফেরন-আলফা এবং কর্টিকোস্টেরয়েড ইত্যাদি এই সকল ওষুধ সেবনে আপনার বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  5. দ্বন্দ্বঃ যে ব্যক্তির জৈবিক দুর্বলতা আছে অর্থাৎ পারিবারিক সদস্য বা বন্ধুদের সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা বিবাদ রয়েছে এই সকল ব্যাক্তির এই রোগে ভোগার সম্ভাবনা অনেক থাকে।
  6. মৃত্যু বা ক্ষতিঃ প্রিয়জনের মৃত্যু বা হারানোর পর দুঃখ বা শোক এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  7. লিঙ্গঃ নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হতাশায় ভোগেন যা এর আগেও আলোচনা করা হয়েছে। এর কারন হচ্ছে নারীরা তাদের জীবনের বিভিন্ন সময়ে তাদের হরমোনাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। যার ফলে তারা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  8. জিনঃ হতাশার একটি বড় কারন হতে পারিবারিক ইতিহাস। যার ফলে এর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিজ্ঞানিরা মনে করে যে বিষণ্নতা একটি জটিল বৈশিষ্ট্য, এর কারন হল অনেক সময় হতাশা জেনেটিক্স কারনেও হতে পারে।
  9. ঘটনাঃ আমাদের জীবনের কিছু কমন ঘটনা যেমন চাকরি হারানো, স্নাতক/ডিগ্রি অর্জন করতে না পারা এবং বিবাহবিচ্ছেদ  ইত্যাদি কারনেও মানুষ বিষণ্নতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  10. অন্যান্য মানসিক অসুস্থতাঃ অন্যান্য মানসিক অসুস্থতা যেমন- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা পরিবার বা সামাজিক গোষ্ঠী থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার মতো সমস্যাগুলি হতাশার ঝুঁকিতে অবদান রাখতে পারে।
  11. গুরুতর অসুস্থতাঃ কখনও কখনও, বিষণ্নতা একটি বড় অসুস্থতা। যেমন- কোন বড় রোগে আক্রান্ত হওয়া বা কোন রোগ থেকে সেরে উঠার পর মানুষ ডিপ্রেশন এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  12. দ্রব্যের অপব্যবহারঃ অ্যালকোহল বা মাদক জাতীয় দ্রবন সাময়িকভাবে আপনাকে ভাল বোধ করাতে পারে, তবে সেগুলি অবশেষে বিষণ্নতা বাড়িয়ে তুলার সম্ভাবনাই বেশি।

ডিপ্রেশনের লক্ষণ

ডিপ্রেশন রোগের লক্ষন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, প্রাথমিক লক্ষণগুলো নিম্নে দেয়া হলঃ

  • খারাপ মেজাজ।
  • যৌন আকাঙ্ক্ষায় অক্ষমতা।
  • ক্ষুধা মন্দা।
  • অনিচ্ছাকৃতভাবে ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি।
  • খুব বেশি বা খুব কম ঘুমানো।
  • আন্দোলন বা অস্থিরতা।
  • ক্লান্তি বা শক্তি হ্রাস।
  • মূল্যহীনতা বা অপরাধ বোধ।
  • অতিরিক্ত চিন্তা করা।
  • মৃত্যু বা আত্মহত্যার পুনরাবৃত্তিমূলক চিন্তা, বা আত্মহত্যার চেষ্টা।
মন ভালো করার উপায়
ছবিঃ মন খারাপ

বয়স ভিত্তিক ডিপ্রেশন এর লক্ষণ

ডিপ্রেশন যে কোন বয়সে আক্রান্ত হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়স ভিত্তিক লক্ষনই বেশি প্রকাশ পায়। বয়স ভিত্তিক যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে মহিলা,পুরুষ, শিশু এবং কিশোর বয়সের ডিপ্রেশন নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করতে হবে। নিম্নে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন লক্ষন নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

মহিলাদের মধ্যে

সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর তথ্য অনুসারে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে হতাশা দ্বিগুণ যা ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে এমন কিছু উপসর্গ তুলে ধরা হল যা বিষণ্নতার উৎস নারীদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়ঃ

  • বিরক্তি
  • উদ্বেগ
  • মেজাজ পরিবর্তন
  • ক্লান্তি
  • উদ্বেগজনক (নেতিবাচক চিন্তা বেশি করা)

পুরুষদের মধ্যে

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পৃথিবির ৩০.৬% পুরুষের বিষণ্নতা বা উদ্বেগের অনুভূতি রয়েছে। হতাশায় আক্রান্ত পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করে, রাগ দেখায় এবং এই ঝুঁকির মধ্যে নিযুক্ত হয়। নিচে এমন কিছু উপসর্গ তুলে ধরা হল যা বিষণ্নতার উৎস পুরুষদের  মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়ঃ

  • সব সময় দুঃখ  প্রকাশ করা, আশাহীন  বা শূন্য বোধ করা।
  • সব সময়  ক্লান্ত অনুভব করা।
  • ঘুমাতে সমস্যা হয় বা খুব বেশি ঘুম হয়।
  • সাধারণত উপভোগ করার মত ক্রিয়াকলাপ থেকে আনন্দ পান না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত এশিয়াতে প্রায় ৮৫ মিলিওন ডিপ্রেশনে ভোগা রোগী ছিলো, যা অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।

শিশুদের মধ্যে

শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের জন্য শিশুদের  ডিপ্রেশন চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে। ফলস্বরূপ, অনেক শিশু যারা চিকিৎসা থেকে উপকৃত হতে পারে কিন্তু  তারা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পায় না।  শিশুদের মাঝেও এই রোগের লক্ষন দেখা দিতে পারে, যা আমরা তাদের শিশু ভেবে বুঝতে পারি না। নিচে এমন কিছু উপসর্গ তুলে ধরা হল যা বিষণ্নতার উৎস শিশুদের  মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়ঃ

মেজাজঃ মেজাজ খিটখিটে, রাগ, মেজাজ পরিবর্তন, কান্না ইত্যাদি।

মানসিক অশান্তিঃ মানসিক অশান্তি বলতে বুঝানো হয়েছে যে অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা নিজেকে অযোগ্য মনে করে যেমন- আমি ঠিক কিছু করতে পারি না বা তীব্র দুঃখ প্রকাশ করা।

আচরণগতঃ যেমন স্কুলে ঝামেলায় পড়া বা স্কুলে যেতে অস্বীকার করা, বন্ধু বা ভাইবোনকে এড়িয়ে যাওয়া, মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা করা।

আরো বেশ কিছু ধরন যেমনঃ কোন কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা, স্কুলের কর্মক্ষমতা হ্রাস, গ্রেডে পরিবর্তন, ঘুমাতে অসুবিধা বা খুব বেশি ঘুমানো ইত্যাদি পরিবর্তন দেখা দিলে বুঝতে পারবেন যে শিশু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কিশোর কিশোরীদের মধ্যে

বর্তমান সময়ে কিশোর কিশোরীই সবচেয়ে বেশি এই রোগে ভোগে। এই রোগ থেকে তাদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। কিশোর কিশোরীদের ডিপ্রেশন এর ধরন প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শারীরিক পরিবর্তন, সহকর্মীদের চাপ, একাডেমিক প্রত্যাশা এবং অন্যান্য কারণ বিষণ্নতায় অবদান রাখতে পারে। কিশোর কিশোরীদের জন্য অনেক উত্থান -পতন আনতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো সাময়িক থাকে। কিন্তু কিছু কিশোর -কিশোরীর জন্য, এগুলো সাময়িক অনুভূতির চেয়ে বেশি  কাজ করে যার ফলে তারা হতাশার ভোগে। এরা যদি হতাশা বা বিষন্নতা কাটিয়ে না উঠতে পারে তাহলে এর পরিনাম মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। কিশোর কিশোরীদের মধ্যে এই রোগের উপসর্গগুলো অনেক বেশি। তাদের মধ্যে এই রোগের এর লক্ষণগুলি দেখা দিলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে।

নিচে এমন কিছু উপসর্গ তুলে ধরা হল যা বিষণ্নতার উৎস কিশোর কিশোরীদের  মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়ঃ

  • অনিদ্রা বা খুব বেশি ঘুমানো।
  •  খিটখিটে বা বিরক্ত মেজাজ দেখানো।
  • কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়া কান্নাকাটি করা।
  • অস্থিরতা, যেমন স্থিরভাবে বসতে না পারা।
  • স্কুলের কাজে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হওয়া।
  • সব সময় নিজেকে অসহায় বা মূল্যহীন বোধ করা।
  • স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে অনাগ্রহ বা আনন্দ হারানো।
  •  আত্মহত্যার পরিকল্পনা বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা।
  •  রাগান্বিত বিস্ফোরণ, বিঘ্নিত বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা।
  • ক্ষুধা পরিবর্তন – ক্ষুধা কম লাগা এবং ওজন কমে যাওয়া।
  • অ্যালকোহল, নেশা বা ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার করা।
  • শরীর ব্যাথা এবং মাথা ব্যথার করার ঘন ঘন অভিযোগ করা।
  • বন্ধু এবং পরিবার থেকে সরিয়ে নেয়া বা তাদের কাছ দূরে থাকার চেষ্টা করা।

ডিপ্রেশন কত ধরনের?

ডিপ্রেশন এর লক্ষণগুলি এর তীব্রতার উপর নির্ভর করে, ডিপ্রেশনকে ২ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

দুটি প্রধান ধরনের আছে:

  • মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার।
  • পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার।

মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার

মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার ব্যাধি যা ক্রমাগত দুঃখের অনুভূতি এবং অনাগ্রহের উদ্ভুদ্ধ করে। এই ব্যাধি ক্লিনিকাল বিষণ্নতা নামেও পরিচিত। এটি আপনার অনুভূতি, চিন্তাভাবনা এবং আচরণকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন ধরনের মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আপনার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সমস্যা হতে পারে এবং কখনও কখনও আপনি মনে করতে পারেন যে আপনার জীবন বেঁচে থাকার যোগ্য নয়।

এই বিষণ্নতার জন্য দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই বলে হতাশ হলে হবে না। বিষণ্ণতায় আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষ ওষুধ এবং সাইকোথেরাপির মাধ্যমে ভাল হয়ে যায়।

লক্ষণ

এটি দুঃখ হতাশা এবং মূল্যহীনতার অবিচ্ছিন্ন অনুভূতি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার নির্ণয় করার জন্য, আপনাকে অবশ্যই ২-৩ সপ্তাহের সময়কালে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি অনুভব করতে হবে:

  • দিনের বেশিরভাগ সময় বিষণ্ণ বোধ করা।
  • প্রতিদিন এর নিয়মিত ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ কমে যাওয়া।
  • ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়া।
  • দিনের বেশিরভাগ সময় ক্লান্তি বা কম শক্তি অনুভব করা।
  • ক্ষুব্ধ ক্ষোভ, বিরক্তি বা হতাশা এমনকি ছোটখাটো বিষয় নিয়েও অনেক রাগ দেখানো।
  • যৌনতা, কোন শখ বা খেলাধুলার মতো বেশিরভাগ বা সমস্ত স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ বা আনন্দ হারানো।
  • উদ্বেগ, উত্তেজনা বা অস্থিরতা
  • মূল্যহীনতা বা অপরাধবোধ, অতীতের ব্যর্থতা নিয়ে বারবার নিজেকে দোষারোপ করা।
  • অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা হতে পারে যেমন-পিঠে ব্যথা বা মাথাব্যথা।
  • মৃত্যু বা আত্মহত্যার পুনরাবৃত্তিমূলক চিন্তা করা।
  • অতিরিক্ত চিন্তা করা, কোন কিছুতে মনোনিবেশ করতে না পারা, সিদ্ধান্ত হীনতায় ভোগা এবং মনে রাখতে সমস্যা হওয়া।

এই রোগের এর এই লক্ষনগুলো যথেষ্ট গুরুতর। যদি আপনার এই লক্ষনগুলো থেকে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে। মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার এর বিভিন্ন উপপ্রকার রয়েছে যা আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (স্পেসিফায়ার) হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার
ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার

ঝুঁকির কারণ

মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার প্রায়শই কিশোর কিশোরীদের হয়ে থাকে ২০ থেকে ৩০ বছরের মানুষদের মাঝে এই রোগ বেশি দেখা যায়। তবে এটি যে কোনও বয়সে ঘটতে পারে।

এই ডিসঅর্ডার এর ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

ব্যক্তিত্বঃ আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছে যারা কিনা নিজেদেরকে অনেক ছোট ভাবে বা ব্যক্তিত্বহীনতায় ভুগে। সব সময় কম আত্মসম্মান এবং নিজের খারাপ অবস্থান নিয়ে চিন্তা করে এই সকল ব্যাক্তিদের এই ডিসঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া  মানসিক চাপ, যেমন শারীরিক বা যৌন নির্যাতন, প্রিয়জনের মৃত্যু  বা আর্থিক সমস্যা।

  • জিনগতঃ অনেক সময় দেখা যায় যে বংশের মধ্যে আত্মহত্যার ইতিহাস রয়েছে, এমনটিও হতে পারে যে এর কারনে আপনিও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
  • নেশাজাতীয় দ্রব্যঃ নেশা জাতীয় দ্রব্য বা মাদক আপনাকে সাময়িক আনন্দ দিবে বা সুখে রাখবে। যখন আপনি এই জাতীয় জিনিস ত্যাগ করবেন তখন দেখা যায় যে এই সকল মানুষগুলো চরম ভাবে ডিপ্রেশনএ আক্রান্ত।

ওষধঃ ক্যান্সার, স্ট্রোক, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, বা হৃদরোগ সহ গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ইত্যাদি এই সকল রোগের জন্য আমরা যেই সকল ওষধ সেবন করে থাকি, সেই সকল ওষধ দীর্ঘমেয়াদি সেবনের ফলে এই রোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া যদি ওই সকল রোগের ওষধ হঠাৎ করে ছেড়ে দেন তাহলেও আপনার সমস্যা হতে পারে। ওষধ বন্ধ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

কখন ডাক্তার এর কাছে যাবেন?

যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে দীর্ঘদিন দেখতে পান তাহলে আপনি প্রথমত ভয় পাবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ডাক্তার বা মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে  দেখা করার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন। আপনি যদি চিকিৎসা নিতে অনিচ্ছুক হন তাহলে বন্ধু বা প্রিয়জনের সাথে কথা বলুন এই ব্যাপারে, তারা নিশ্চয়ই আপনাকে সঠিক রাস্তা দেখাবে যে আপনি কিভাবে এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

প্রতিরোধ

মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার রোধ করার জন্য কোন নিশ্চিত উপায় নেই। যে কেউ যে কোন সময় যে কোন বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে কিছু  কৌশল জানা থাকলে আপনাকে এর প্রতিরোধ সম্পর্কে সাহায্য করতে পারে।

  • চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন।
  • পরিবার এবং ববন্ধুবান্ধব আমাদের প্রত্যেকটি মানুষ এর জীবন এই অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে সংকটের সময়ে আপনাকে যারা সাহায্য করতে পারে।
  • আপনার হতাশা আরও খারাপ এর দিকে যেতে পারে যদি আপনি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেন। ডিপ্রেশন যেন আবার পুনরায় আবার ফিরে না আসে তার জন্য দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ চিকিৎসা করার কথা বিবেচনা করুন।

পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজোরডার

পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার ডিস্টাইমিয়াও বলা হয়ে থাকে। এটি হতাশার একটি ক্রমাগত দীর্ঘমেয়াদী বা দীর্ঘস্থায়ী রূপ। এই রোগ দেখা দিলে আপনি স্বাভাবিক দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন, আশাহীন বোধ করতে পারেন এবং কম আত্মসম্মান অভাব বোধ করতে পারেন।

এর সবচেয়ে বড় সমস্যা  হল এই অনুভূতিগুলি বছরের পর বছর ধরে থাকে আপনি বার বার ভুলার চেষ্টা করেও ভুলতে পারবেন না। যদি আপনার ক্রমাগত হতাশাজনক ব্যাধি থাকে, আপনি খুশির অনুষ্ঠানেও উচ্ছ্বসিত হওয়া কঠিন হয়ে পরতে পারে আপনার জন্য। তবে ভাল দিক হচ্ছে এই হতাশাজনক ব্যাধি মেজর ডিপ্রেশন ডিসঅর্ডার এর মতো এতো গুরুতর নয়।

এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যাক্তির মেজাজ হালকা, মাঝারি বা গুরুতর হতে পারে। ডিস্টাইমিয়া ব্যাধি অনেক  দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে, এর লক্ষণগুলি মোকাবেলা করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে টকিং থেরাপি, সাইকোথেরাপি এবং ওষুধের মাধ্যমে এই অবস্থার চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে।

রিলেটেডঃ মন খারাপ কেন হয়? জেনে নিন মন ভালো করার উপায়

লক্ষন

পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার নির্ণয়ের  জন্য এর লক্ষণগুলি কমপক্ষে ২ বছর স্থায়ী হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার আপনার জীবনকে মেজর ডিপ্রেশন ডিজোরডার এর চেয়েও বেশি প্রভাবিত করতে পারে। কারণ এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। নিম্নে এর লক্ষনগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

  • স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ হারানো।
  • দিনের বেশিরভাগ সময় নিরাশ বোধ করা।
  • আশাহীনতায় ভোগা।
  •  ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব বোধ করা।
  •  মনোনিবেশ করতে সমস্যা এবং সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হওয়া।
  • খিটখিটে বা অতিরিক্ত রাগ দেখানো।
  • সামাজিক কার্যক্রম পরিহার করা।
  • অপরাধবোধ এবং অতীতের দুশ্চিন্তার অনুভূতিতে আঘাত পাওয়া।
  • ক্ষুধা বা অতিরিক্ত খাওয়া।
  • ঘুমের সমস্যা হওয়া।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে তাদের ক্ষেত্রে  লক্ষণগুলো বিষণ্ন মেজাজ এবং বিরক্তি লক্ষন দেখা যেতে পারে।

কখন ডাক্তার এর কাছে যাবেন?

যেহেতু পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজোরডার এর অনুভূতিগুলি এত দীর্ঘ সময় ধরে চলে যে তাই আপনি মনে করতে পারেন এগুলি সর্বদা আপনার জীবনের অংশ হয়ে যাবে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি ঠিক এমন নয় সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সেরে উঠা সম্ভব। যদি আপনার হতাশার অবস্থার ধরন খুব বেশি হয় তাহলে চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে। আপনার লক্ষণগুলি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে প্রাথমিক ভাবে কথা বলুন

অথবা সরাসরি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে  সাহায্য নিন। আপনি যদি একজন মানসিক ডাক্তার এর সাথে দেখা করতে অনিচ্ছুক হন, তাহলে এমন একজন এর  সাথে যোগাযোগ করুন যিনি আপনাকে চিকিৎসার পথ দেখাতে সাহায্য করতে পারে যেমন -বন্ধু বা প্রিয়জন, শিক্ষক, অথবা আপনার বিশ্বাস করা অন্য কেউ।

ঝুঁকির কারণ

পারসিস্টেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজোরডার ব্যাধিটি প্রায়শই আমাদের জীবনের শুরুর দিকে শুরু হয় যেমন- শৈশবে, কিশোর বয়সে, বা প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনে।  কিছু কারণ ক্রমাগত এই হতাশাজনক ব্যাধির বিকাশ আমাদের জীবনে ঝুঁকি বাড়ায় যার মধ্যে রয়েছেঃ

মেজর ডিপ্রেশন ডিজোরডার ব্যাধি বা অন্যান্য হতাশাজনক ব্যাধিগুলির সাথে প্রথম-ডিগ্রী সম্পর্কিত আঘাতজনিত বা মানসিক চাপের ঘটনার কারনে এই ডিজোরডার এর সম্ভাবনা থাকতে পারে।  যেমন- প্রিয়জনের হারানো বা আর্থিক সমস্যা।

ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে নেতিবাচকতা বা নেতিবাচক চিন্তা করা, যেমন কম আত্মসম্মান এবং কাউকে নির্ভর করতে না পারা। তাছাড়া আত্ম-সমালোচনামূলক বা হতাশাবাদী হওয়া।

রিলেটেডঃ মন খারাপ কেন হয়? জেনে নিন মন ভালো করার উপায়

প্রতিরোধ

এই ব্যাধিরও প্রতিরোধ করার কোন নিশ্চিত উপায় নেই। যেহেতু এটি প্রায়শই শৈশবে বা কিশোর বয়সে শুরু হয়, এই অবস্থার ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সনাক্তকরণ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে সহায়তা করতে পারে। এই ব্যাপারে বাবা মাকে অনেক সচেতন হতে হবে যাতে প্রথম দিক থেকেই প্রতিরোধ করা যায়। এটি প্রতিরোধের পদ্ধতিটিও ঠিক মেজর ডিপ্রেশন ডিজোরডার এর মতই যেমনঃ

  • চাপ নিয়ন্ত্রণ, আপনার স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি এবং আপনার আত্মসম্মান বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ নিন।
  • পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন বিশেষ করে সংকটের সময়ে।
  • লক্ষণগুলি আরও খারাপ হওয়ার আগে বাধা দিতে সাহায্য করার জন্য এই সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণে চিকিৎসা নিন।
  • লক্ষণগুলির পুনরায় সংক্রমণ রোধে সহায়তা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী রক্ষণাবেক্ষণ চিকিৎসা করার কথা বিবেচনা করুন।

বিষণ্নতা কি প্রতিরোধ করা যায়?

বিভিন্ন মাধ্যমে আপনি এই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে পারেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

  • প্রতিটা মানুষের জন্যই পর্যাপ্ত  ঘুম খুবই জরুরী। ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী প্রত্যেক দিন ৭-৮ ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এবং ব্যায়াম, ধ্যান বা যোগের মাধ্যমে এবং নিয়মিত ভাল কিছু করার অনুশীলন করে হতাশা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
  • আপনার আচরণ পরিবর্তন করা – আপনার শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, জীবনধারা এবং এমনকি আপনার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন এর মাধ্যমে আপনি এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • উপরোক্ত লিখায় হতাশার বিষয়গুলি নিয়ে অনেক ডিটেইলস আলোচনা করা হয়েছে। আপনার যদি হতাশার লক্ষণ থাকে, তাহলে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং ডাক্তারের সাহায্য নিন।  এরা আপনাকে তাড়াতাড়ি ভাল বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

আমরা আমাদের জীবনের কোন না কোন সময়  আমরা এই রোগ এর সাথে লড়াই করি। এই রোগ আমাদের জীবনেরই একটা অংশ বলে আমি মনে করি যা অতি স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এমনটি নাও হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই রোগ এত গুরুতর অবস্থা ধারন করে যে মানুষ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। যাদের এই সমস্যা অনেক বেশি তাদের অনেক সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়। ডাক্তাররা থেরাপি এবং ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে থাকে তবে থেরাপি এবং ওষুধের পাশাপাশি আপনি নিজেও এর সাথে  লড়াই করে মুক্তি পেতে পারেন। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাবার ১২ টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

১) একটি রুটিন তৈরি করুন

আপনার যদি ডিপ্রেশন এর সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনাকে একটি  রুটিন তৈরি করতে হবে। (আয়ান কুক) তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ইউসিএলএ -তে বিষণ্নতা গবেষক। তিনি বলেছেন জীবন পরিচালনা করার জন্য ভাল ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে দৈনিক রুটিন করে কাজ করা আপনাকে ট্র্যাকে ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারে।

২) লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

যখন আপনি হতাশ হয়ে পরবেন, তখন আপনার মনে হতে পারে যে আপনি কিছুই অর্জন করতে পারবেন না এই জীবনে।  এটি আপনাকে নিজের সম্পর্কে আরও খারাপ ধারনা তৈরি করে। আপনি কি করতে চান বা ভবিষ্যতে কি হতে চান তা নিজের জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

৩) ছোট করে শুরু করুন

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কুক বলেন, যে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য   এমন ভাবে শুরু করুন যাতে আপনি সফল হতে পারেন। এই ক্ষেত্রে ছোট ছোট কাজ থেকে শুরু করা অনেক ভাল। উদাহরনসরুপঃ আপনি প্রথমে আপনি আপনার খাদ্যাবাসে পরিবর্তন আনতে পারেন। আপনি যদি কোন নেশা জাতীয় দ্রবন গ্রহন করে থাকেন তাহলে তা পরিহার করার চেষ্টা করুন। যখন দেখবেন যে আপনার মানসিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে তখন  আপনি আরও চ্যালেঞ্জিং দৈনিক লক্ষ্য যোগ করতে পারেন।

৪) ব্যায়াম

ব্যায়াম সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবারই দৈনিক ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। হতাশাগ্রস্ত লোকদের জন্য ব্যায়াম সাময়িকভাবে এন্ডোরফিনস নামক অনুভূতিযুক্ত রাসায়নিক পদার্থকে বৃদ্ধি করে। এটি হতাশায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দিতে পারে। মনো বিজ্ঞানি কুক বলেন যে নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্ককে ইতিবাচক উপায়ে নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে।

আপনার কতটুকু ব্যায়াম দরকার? হতাশা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আপনাকে ম্যারাথন দৌড়ানোর দরকার নেই। সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার হাঁটা আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে।

৫) স্বাস্থ্যকর খাওয়া

এমন কোন ম্যাজিক ডায়েট নেই যা হতাশা দূর করতে পারে। কিন্তু নিয়ম মেনে পরিমিত খাবার গ্রহনে ডিপ্রেশডএ আক্রান্ত ব্যাক্তিকে সাহায্য করতে পারে। যদি আপনি হতাশার কারনে  অতিরিক্ত খান বা কম খান, তাহলে আপনার খাওয়া নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। এতে আপনি অনেক উপকার পাবেন। তবে কিছু খাবার আছে যার মাধ্যমে আপনার সমস্যায় বেশ উপকার পেতে পারে। মনো বিজ্ঞানি কুক বলেন, যে প্রমাণ আছে যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন সালমন মাছ এবং টুনা মাছ) এবং ফলিক অ্যাসিড (যেমন পালং শাক) সহ খাবার আরো অনেক খাবার  আছে যা এই রোগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৬) ডায়েট

স্বাস্থ্যকর খাদ্য এই রোগ রোধ করতে এবং মানসিক সুস্থতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ২০১৯ সালের একটি গবেষণা বিশ্বস্ত উৎস থেকে দেখা গেছে যে, যেই ব্যাক্তি পরিমিত খাবার সময় মত গ্রহণ করেছে তাদের হতাশা বা ডিপ্রেশন অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। গবেষণা বিশ্বস্ত সূত্র পরামর্শ অনুসারে যেই সকল খাবার আপনার বেশি করে গ্রহন করা উচিত নিম্নে দেয়া হলঃ

  • সবুজ চা
  • স্বাস্থ্যকর তেল, যেমন জলপাই তেল
  • মাছ
  • তাজা ফল এবং সবজি, শাকসবজির মধ্যে যেই সকল শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এটি শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ ওজন বা মেদ কমানোর ২০টি সাইন্টিফিক উপায়

একই সময়ে, আপনার নিম্নলিখিতগুলির গ্রহণ সীমিত করা উচিতঃ

  • লাল মাংস এবং মাংস জাতীয় পণ্য
  • ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার
  • চিনিযুক্ত মিষ্টি এবং সোডা

৭) পর্যাপ্ত ঘুমানো

বেশি ঘুমানো আপনার হতাশার মাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে আবার খুব কম ঘুম হতাশার মাত্রা আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এই ক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন তা হল  আপনার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন করে শুরু করুন। সময় মত বিছানায় যান এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন আপনার নির্দিষ্ট সময়ের বেশি না ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আপনার শোবার ঘর থেকে আপনার সমস্ত বিভ্রান্তি সরিয়ে নিন – যেমন- কম্পিউটার নেই এবং টিভি নেই। সময়ের সাথে সাথে আপনি দেখবেন যে আপনার ঘুমের উন্নতি হয়েছে এবং মানসিক দিক দিয়েও অনেক শান্তিতে থাকবেন।

৮) দায়িত্ব নিন

যখন আপনি হতাশ হবেন, আপনি হয়তো জীবন থেকে আপনার প্রতিদিন এর ক্রীয়াকলাপ থেকে  সরে আসতে চান এবং বাড়িতে এবং কর্মস্থলে আপনার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু এটি করবেন না আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজের সাথে জড়িত থাকুন। দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনে আপনাকে একটি ভাল জীবনধারা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে যা এই রোগ মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে কাজ করে  না থাকেন, তাহলে ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই আপনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। যেমনঃ স্বেচ্ছাসেবীর কাজ।

৯) নেতিবাচক চিন্তা থেকে বিরত থাকার চ্যালেঞ্জ

হতাশার বিরুদ্ধে আপনার লড়াইটা  অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক। আপনাকে  আপনার চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। যখন আপনি হতাশ হন তখন আপনি সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক চিন্তা করেন। আপনার মনে হতে পারে যে কেউ আপনাকে পছন্দ করে না, আপনি গ্রহের সবচেয়ে মূল্যহীন ব্যক্তির মত অনুভব করতে পারেন, কিন্তু এটি কি সত্যিই সম্ভব? না এটি বাস্তবে সম্ভব নয় এই পৃথিবিতে প্রত্যেকটি মানুষই অনেক মুল্যবান। এই রোগের জন্য প্রাকৃতিক ভাবে চিকিৎসা অনেক কাজে দেয়।

নেতিবাচক চিন্তা যেন না আসে এর জন্য আপনাকে অনুশীলন করতে হবে।  সময়ের সাথে সাথে আপনি সেই নেতিবাচক চিন্তাধারাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগেই আপনাকে রুখে দাড়াতে হবে।

১০) সাপ্লিমেন্ট

আপনি যদি আপনার ডায়েট এর সাথে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনাকে এটি ব্যবহার করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। মনো বিজ্ঞানি কুক বলেছেন যে হতাশার জন্য কিছু সাপ্লিমেন্ট তাদের হতাশা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেকোনো সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে সর্বদা আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, বিশেষ করে যদি আপনি ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করার পর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

১১) নতুন কিছু করুন

যখন আপনি হতাশ হয়ে পরেন তখন আপনি অস্থির হয়ে পড়েন। সেই সময় যদি আপনার দৈনন্দিন কাজের বাইরে গিয়ে ভিন্ন কিছু করার জন্য চেষ্টা করুন। উদাহরণসরুপ যদি বলি কোন জায়গায় ঘুরতে যান। বই সংগ্রহ করে পরতে পারেন তাছাড়া রান্না বান্না করা ডিপ্রেশনকে অনেক কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।

মনো বিজ্ঞানি কুক বলেন যে যখন আমরা নিজেদেরকে ভিন্ন কিছু করার জন্য চ্যালেঞ্জ করি, তখন মস্তিষ্কে একটি রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। নতুন কিছু করার চেষ্টা [মস্তিষ্কের রাসায়নিক] ডোপামিনের মাত্রা পরিবর্তন করে, যা আনন্দ, উপভোগ এবং শিখতে সাহায্য করে।

১২) মজা করার চেষ্টা করুন

আপনি যদি হতাশ হয়ে থাকেন, তবে আপনার পছন্দের জিনিসগুলির জন্য সময় দিন।  মনো বিজ্ঞানি কুক বলেন যে যদি আপনার কিছুই করতে  মজা না লাগে তাহলে বুঝবেন যে আপনি ডিপ্রেশন এর কোন একটা ধারায় আক্রান্ত। এর জন্য আপনার আপনাকে যেভাবেই হোক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যাতে আপনি সব কাজেই মজা পান। শুনতে হয়তো একটু অদ্ভুত মনে হতে পারে কিন্তু এটি অনেক কাজে দেয়।  আপনাকে মজা করার জন্য কাজ করতে হবে। আপনি যে জিনিসগুলি উপভোগ করেন সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করুন। যেমন- সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। খাবার খেতে  বন্ধুদের সাথে বাইরে যেতে পারেন বা তাদের সাথে আড্ডা দিতে পারেন। ভাল একটা সময় কাটানো চেষ্টা করুন।

১৩) অ্যালকোহল এবং অন্যান্য মাদক এড়িয়ে চলুন

ডিপ্রেশন এ আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই সকল পদার্থের অপব্যবহার অতি সাধারণ। আপনার হতাশার লক্ষণগুলি মোকাবেলা করার জন্য আপনি অ্যালকোহল, গাঁজা বা অন্যান্য মাদকদ্রব এর  দিকে ঝুঁকতে পারেন। মাদকদ্রব্য পান করা এবং ব্যবহার করা হতাশার একটি বড় কারণ হতে পারে। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদী ওষুধের ব্যবহার আপনার মস্তিষ্কের কাজকে বদলে দিতে পারে এবং খারাপ করে দিতে পারে  বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

মনো বিজ্ঞানি কুক বলেন যে যখন আপনি হতাশ হন, আপনি জীবন উপভোগ করার দক্ষতা হারাতে পারেন। ওই সকল পদার্থের অপব্যবহার কিভাবে রুখতে হবে তা আপনাকে শিখতে হবে। সময়ের সাথে সাথে, দেখবেন যে মাদক দ্রব্য আপনি মুক্তি পেয়ে গেছেন।

১৪) টকিং থেরাপি

এই রোগ রোধে সাইকোথেরাপি একটি নির্ভরযোগ্য উৎস, বা টকিং থেরাপিও বলা যেতে পারে। ডাক্তাররা এই থেরাপির মাধ্যমে মানুষকে হতাশার কারণ চিহ্নিত করতে এবং ব্যবহারিক সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

আরও কিছু থেরাপির মধ্যে রয়েছে যেমন– জ্ঞানীয়-আচরণগত থেরাপি (CBT), যা একজন ব্যক্তিকে চিন্তা এবং এই রোগ থেকে সেরে উঠার নতুন উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।মনোবিশ্লেষকেরা প্রায়শই রোগীর অতীতের বিষয়গুলি দেখে চিন্তা করে এই সকল থেরাপি দিয়ে থাকে।

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যাক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা

বিষণ্নতা নির্ণয়ের জন্য একক পরীক্ষা নেই। কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনার লক্ষণ এবং একটি মানসিক মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে মমনোবিজ্ঞানীরা রোগ নির্ণয় করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, তারা আপনার সম্পর্কে ধারাবাহিক প্রশ্ন করবেঃ

১) মেজাজ

২) ক্ষুধা

৩) নিদ্রা অভ্যাস

৪) কর্মকান্ডের পর্যায়

৫) চিন্তা

কারণ আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারি যে ডিপ্রেশন অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সাথেও যুক্ত হতে পারে। আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামরশ নিয়ে একটি শারীরিক পরীক্ষাও করতে পারেন। কখনও কখনও থাইরয়েডের সমস্যা বা ভিটামিন ডি এর অভাবেও এই রোগের লক্ষন দেখা দিতে পারে। হতাশার লক্ষণ উপেক্ষা করবেন না। যদি আপনার মেজাজ উন্নত না হয় বা খারাপ হয়, তাহলে চিকিৎসা সহায়তা নিন। বিষণ্নতা একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য অসুস্থতা যার জটিলতার সম্ভাবনা রয়েছে।

সুত্রঃ https://www.who.int/health-topics/depression#tab=tab_1

Author

Leave a Comment

Scroll to Top