Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
বাংলাদেশের বেকার সমস্যা অনেকাংশে কমে আসছে ফ্রিল্যান্সিং ( Freelancing) ও আউটসোর্সিং (Outsourcing) এর মাধ্যমে। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি আপনার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এটি সাধারণ চাকরির চেয়ে একটু আলাদা, ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের বাধা ধরা নিয়ম থাকে না এবং এইখানে আপনার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা থাকা জরুরি। ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর পরিধি অনেক বড়। গ্রাফিক্স ডিজাইন ( Graphics design) , ফটো এডিট ( Photo edit) , ভিডিও এডিট ( Video edit), ভিডিও মেকিং( Video making) , এনিমেশন ( Animation), ডিজিটাল মার্কেটিং ( Digital marketing) , কোডিং (Coding),ওয়েব ডিজাইন (Web design), ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Web development), ব্লগিং (Blogging) সহ আরো নানা ধরনের কাজ এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়।
আজকের এই পর্যায়ে আমরা ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে শিখবেন এর বিস্তারিত আলোচনা করব ও আপনাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেয়ার চেষ্টা করব আশা করি আপনাদের কাজে আসবে।
ফ্রিল্যান্সিং কি
ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি স্বাধীন পেশা যেখানে আপনি আপনার বিশেষ দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। এক কথায় বলা যায়, ফ্রিল্যান্সিং হলো ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম।
সাধারণ চাকরির চেয়ে ফ্রিল্যান্সিং আলাদা। এইখানে কাজের ধরা বাধা কোনো সময় থাকে না। কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানি, বস বা মালিক থাকে না। কাজের স্থানও সাধারণ চাকরির থেকে আলাদা। নির্দিষ্ট কোনো অফিস ও নেই, আপনার বাসাই আপনার অফিস।
আপনি বাড়িতে বসেই বিভিন্ন দেশের বায়ার ( Buyer) দের সাথে কাজ করতে পারবেন। গুরুত্ব সহকারে কাজ করলে ও ঠিকঠাক মত সময় দিলে বাংলাদেশের অনেক সরকারি – বেসরকারি চাকরির তুলনায় অনেক বেশি ইনকাম করা সম্ভব।
প্রয়োজনীয় জিনিস
অনেকেই ভেবে থাকেন, ফ্রিল্যান্সিং সবার জন্য কিনা? সবাই এটা পারবে কিনা। কি কি প্রয়োজন, কিভাবে শুরু করবেন এসব নিয়ে চিন্তা করে অনেকে ভাবেন ফ্রিল্যান্সিং আমার দ্বারা হবে না। ধৈর্য্য আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কেউ ই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য্য ও ইচ্ছাশক্তি। ফ্রিল্যান্সিং এ বেশ খানিকটা সময় দেয়া লাগে। শুরুর দিকে কাজ পেতেও অনেক খাটনি করা লাগে, সময় দেয়া লাগে। ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আপনি সফলতা পাবেন।
এছাড়াও ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো ধারনা, ক্লায়েন্টের সাথ যোগাযোগের দক্ষতা ও বেসিক ইংরেজি জানা প্রয়োজন।
এক কথায় বলতে গেলে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস প্রয়োজন –
১.নিজস্ব ডেস্কটপ ( Desktop), ল্যাপটপ (Laptop) এবং ইন্টারনেট কানেকশন।
২.একটি স্মার্টফোন (Smartphone)
৩.ইংরেজি ভাষায় নুন্যতম দক্ষতা।
৪. যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা ( Skill)
যেভাবে শুরু করবেন
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা থাকা জরুরি। যেই বিষয়ে আপনার আগ্রহ বেশি, সেই বিষয়টি বেছে নিলে আপনার জন্য কাজ করা সহজ হবে। এতে আপনি কাজ করেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এবং অনেক সময় ধরে কাজ ও করতে পারবেন।
যেমন : গ্রাফিক্স ডিজাইন – এটি ডিজাইন ভিত্তিক ( Design based) কাজ। যাদের ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ আছে, তারা এই সেক্টরে অনেক ভালো করতে পারবেন। এই সেক্টরটি বেছে নেয়ার আগে আপনি দেখে নিবেন,ডিজাইনের প্রতি আসলে আপনার আগ্রহ কেমন। ব্যানার ডিজাইন, কভার ডিজাইন, বিজনেজ কার্ড ডিজাইন, লোগো ডিজাইন ইত্যাদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের অন্তর্ভুক্ত।
ইউটিউব, গুগোল এর বিভিন্ন রিসোর্স (Resource) খুঁজে খুঁজে শিখতে পারেন। আবার অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স আছে, সেখান থেকেও শিখতে পারেন। এছাড়াও কিছু ইন্সটিটিউট আছে, যারা অফলাইনে হাতে কলমে ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন সেক্টরের ট্রেনিং দিয়ে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
কাজ শেখার পালা শেষ, এইবার কাজ করার প্লাটফর্ম প্রয়োজন (Freelancing platform) ফ্রিল্যান্সিং যেহেতু অনলাইন ভিত্তিক কাজ, তাই এর কর্মক্ষেত্র পুরোটাই অনলাইনে। ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে একটা একাউন্ট খুলতে হবে। অনেক ধরনের ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম রয়েছে। যেমন –
১. ফাইভার ( Fiverr)
www.fiverr.com – ফাইবারে কাজ শুরু হয় ৫ ডলার থেকে। এইখানে প্রতিটা কাজের জন্য আলাদা আলাদা গিগ তৈরি করতে হয়। গিগ গুলো মূলত প্যাকেজ আকারে থাকে। কি কি কাজ করা হবে, কাজের কোনো কোন ফাইল দেয়া হবে, এসবের উপর ডিপেন্ড করে প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
২. ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)
এইখানে পার আওয়ার(Per hour), পার মানথ (Per month) হিসেবে কাজ করা যায়। এইখানে কন্টেস্ট ও হয়ে থাকে। একটি কাজের জন্য আপনি সহ আরো অনেক ফ্রিল্যান্সার এপ্লাই করতে পারেন। এইখান থেকে যার কাজ বায়ারের ভালো লাগবে বায়ার (Buyer) তাকে উইন (Win) করবে এবং কাজের মূল্যটা সে পাবে।
৩. আপওয়ার্ক (Upwork)
আপওয়ার্ক হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেট প্লেস। আপওয়ার্কে সাধারণত একটু বেশি মূল্যের কাজ পাওয়া যায়। আপওয়ার্কে বিড (Bid) এর মাধ্যমে কাজ পাওয়া যায়। ঘন্টা,দিন বা মাস হিসেবেও কাজ পাওয়া যায়।
৪. গুরু (Guru)
৫. পিপল পার আওয়ার (People per hour)
৬. নাইন্টি নাইন ডিজাইন ( 99 designs)
ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট খোলার পর আপনার একাউন্টটি সুন্দর করে, যথাযথ ইনফরমেশন দিয়ে সাজাতে হবে। আপনার কাজের ধরন, প্রকৃতি, কাজের মূল্য সহ পোর্টফোলিও (Portfolio) সাজাতে হবে। পোর্টফোলিও হলো মূলত আপনার কাজের স্যাম্পল বা উদাহরণ।
প্রায় সব কাজের ই প্রথম বা শুরু ধাপ টা কষ্টকর হয়ে থাকে, শুরতে কাজ পেতে একটু বেগ পেতে হয়। তবে ফ্রিল্যান্সিং এ রেফারেন্স টা খুব কাজে আসে৷ অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের রেফারেন্সে আপনি কাজ পেতে পারেন। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের একটি বড় কমিউনিটি আছে, চাইলে তাদের ও সাহায্য নিতে পারেন। কাজ পেতে শুরু করলে ধীরে ধীরে কাজের সুযোগ বাড়ে।
কাজের মান (Quality) বজায় রাখা ও ক্লায়েন্টকে (Client) সন্তুষ্ট রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ.
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ
ফ্রিল্যান্সিং এ অন্তর্ভুক্ত কাজসমূহ / কি কি কাজের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হল।
১. গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design)
- ভিডিও এডিটিং (Video editing)
- লোগো ডিজাইন (Logo design)
- বিজনেস কার্ড ডিজাইন (Business card design)
- ব্যানার ডিজাইন (Banner design)
- ফটো এডিট (Photo edit)
- বুক কভার ডিজাইন (Book cover design)
- ফ্লায়ার ডিজাইন (Flyer design)
- সোশাল মিডিয়া ডিজাইন (Social media design)
- মোশন গ্রাফিক্স ( Motion graphics)
- আর্ট এন্ড ইলাস্ট্রেশন (Art and illustration)
- টাইপোগ্রাফি (Typography)
- ইন্টারফেস ডিজাইন (Interface design)
- এনিমেশন ( Animation)
- এডভারটাইজিং ডিজাইন ( Advertising design)
- প্যাকেজিং বা প্রোডাক্ট ডিজাইন (Packaging or product design)
- লে আউট এন্ড প্রিন্ট ডিজাইন (Layout and print design)
- ইনফো গ্রাফিক্স (Info graphics)
- গেম ইন্টারফেস ডিজাইন (Game interface design)
- এপ ডিজাইন (App design)
২. ওয়েব ডিজাইন (Web design)
- ই কমার্স ডিজাইন (E Commerce design)
- ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট ডিজাইন ( Personal website design)
- ব্লগ ওয়েবসাইট ডিজাইন (Blog website design)
- কর্পোরেট ওয়েবসাইট ডিজাইন (Corporate website design)
- সোশাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ( Social media website)
৩. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Web development)
- ব্যাক এন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Back end web development)
- ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Front end web development)
- ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Full stack web development)
- ওয়েব প্রোগ্রামার (Web programmer)
৪.কন্টেন্ট রাইটিং (Content Writing)
- ব্লগ রাইটিং (Blog writing)
- কপিরাইটিং (Copy writing)
- ফিচার রাইটার (Feature writing)
- রিপোর্ট রাইটিং (Report writing)
- এস ই ও কন্টেন্ট রাইটিং (SEO content writing)
- স্ক্রিপ্ট রাইটিং ( Script writing)
৫. ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital marketing)
ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে আবার অনেক ধরনের কাজ রয়েছে –
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search engine optimization- SEO)
- সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং (Social media marketing)
- কন্টেন্ট মার্কেটিং (Content marketing)
- ইমেইল মার্কেটিং (Email marketing)
- মোবাইল মার্কেটিং (Mobile marketing)
- এফিলিয়েট মার্কেটিং ( Affiliate marketing)
- মার্কেটিং এনালাইটিকস (Marketing analytics)
- পে পার ক্লিক (Pay per click -PPC)
কাজ পাওয়ার উপায়
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে হলে কিছু নিয়ম মানা আবশ্যক। অনেক অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছে, এর মধ্যে বায়ার আপনাকেই যেন কাজ দেয় এমন ভাবে কাজের মান ও দাম রাখতে হবে। বায়ারের সাথে সম্পর্ক যত ভালো হবে, আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ও তত ভালো হবে।
তবে সঠিকভাবে কাজ না শিখে মার্কেটপ্লেসে নামবেন না, এতে করে মার্কেটের মান নেমে যায়, আপনি যেই দেশে ফ্রিল্যান্সার, সেই দেশের বদনাম হয়।
পোর্টফোলিও (Portfolio)
আপনার কাজের কিছু স্যাম্পল বা আগের করা কিছু কাজ দিয়ে আপনি আপনার পোর্টফোলিও সাজাতে পারেন। পোর্টফোলিওর জন্য ভাল কিছু সাইট (Site) হলঃ
১. পিন্টারেস্ট ( Pinterest)
২. বিহ্যান্স (Behance)
৩. ড্রিবল (Dribbble)
এছাড়াও আপনি ইন্সটাগ্রাম (Instagram), ফেসবুক (Facebook) ,টুইটার(Twitter) , লিংকড ইন( LinkedIn) এসব সোশাল মিডিয়ায় (Social media) ও আপনার কাজের স্যম্পল রাখতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগে?
অনেক ধরনের স্কিল ফ্রিল্যান্সিং এর অন্তর্ভুক্ত। একেকটি কাজ শিখতে এককরকম সময় লাগে। আর এর চেয়েও বড় কথা, শেখার কোনো শেষ নাই। আপনি যেই বিষয়েই ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, প্রত্যেক বিষয়েই প্রতিনিয়ত নতুন কিছু না কিছু আপডেট হবে আর তা আপনাকে আয়ত্ব করতে হবে। তবে মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করার জন্য যে মিনিমাম দক্ষতা প্রয়োজন তা প্রায় ৬-৮ মাসের মধ্যে অর্জন করতে পারবেন। কারো কারো ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম বা বেশিও লাগতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা সম্ভব?
ঠিকঠাক মত কাজ করলে বাংলাদেশর অনেক সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কয়েকগুন বেশি ইনকাম করা সম্ভব। কয়েক হাযার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ পর্যন্ত ইনকাম করা যায়। যেহেতু এইখানে ফিক্সড (Fixed) কোনো স্যালারি নেই, তাই এইখানে কে কত টাকা ইনকাম করবে সেটা তার কাজের উপর নির্ভর করে।
পেমেন্ট সিস্টেম
যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং মানেরি দেশের বাইরে কাজ করা। সুতরাং, পেমেন্ট ও আসবে দেশের বাইরে থেকে। আর একেক দেশের মুদ্রার সিস্টেম একেক রকম। কোনো দেশে পাউন্ড(Pound) কোথাও বা ডলার(Dollad)। বেশিরভাগ মার্কেটপ্লেসেই সাধারণত ডলার (Dollar) সিস্টেম থাকে। সেখান থেকে পরবর্তীতে অন্যান্য দেশের মুদ্রায় পরিবর্তন করে নেয়া হয়। আন্তর্জাতিক ভাবে লেনদেন করার জন্য কিছু উপায় রয়েছে, যেমন –
১.ট্রান্সপে (Transpay)
২.স্ক্রিল (Skrill)
৩.পেপাল (Paypal)
৪.পায়জা (Payza)
৫.পেয়োনিয়র (Payeneer)
সরাসরি ব্যাংক একাউন্টেও পেমেন্ট নেয়া যেতে পারে। ক্লায়েন্ট আপনাকে পেপাল জুম (Paypal xoom) এর মাধ্যমে সরাসরি ব্যংকে টাকা পাঠাতে পারবে
✅ সুবিধা ✅
ফ্রিল্যান্সিং এর বহুল সুবিধার জন্যই মানুষ ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে বেশি ঝুকছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১. সময়ের স্বাধীনতা
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা ধরার সময় থাকেনা। আপনি আপনার সময় সুবিধামতো আপনার কাজ করতে পারেন। আপনি চাইলে দুই ঘন্টা কাজ করার পর এক ঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজ করতে পারেন, চাইলে টানা তিন চার ঘন্টা কাজ করতে পারেন। আপনি চাইলে দিনে অথবা রাতে যে কোন সময় সুবিধামতো আপনার কাজ করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনাকে কেউ সময় বেঁধে দিবে না। এক্ষেত্রে আপনি কাজ করার সময়ের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছেন।
২. কাজের স্বাধীনতা
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি আপনার যে কোন কাজ ইচ্ছেমতো বাছাই করে নিতে পারেন।
ধরুন আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার, গ্রাফিক ডিজাইনিং এর অনেকগুলো ছোট ছোট ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন – ব্যানার ডিজাইন, এড ডিজাইন বিজনেস, কার্ড ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ফটো এডিট সহ আরো নানা ধরনের কাজ। আপনি যদি চান আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে শুধুমাত্র লোগো ডিজাইন করতে পারেন, চাইলে বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতে পারেন। আবার ইচ্ছা হলে সবগুলো কাজই করতে পারেন। কেউ আপনার কাজের সীমা বা কাজের ধরন ও নির্ধারণ করে দিবে না। ফ্রিল্যান্সিং আপনি আপনার কাজের স্বাধীনতা ও পাচ্ছেন।
৩. আপনার মন মত বেতন নির্ধারণ
আপনি কি কাজ করবেন এবং তার জন্য ঠিক কত মূল্য নির্ধারণ করবেন সেটি সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা। আপনার একটি কাজের জন্য আপনার কাজের মান ও ধরন অনুযায়ী আপনি আপনার কাজের মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন। কেউ আপনার কাজের মূল্য নিয়ে দরদাম করবে না।
ধরুন আপনি বিজনেস কার্ড ডিজাইন করবে, এতে আপনি চাইলে 5 ডলার থেকে 100 ডলার মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন , কিংবা এর বেশিও পারবেন। এই মূল্য নির্ধারণ নির্ভর করবে সম্পূর্ণ আপনার উপর। আপনি আপনার কাজের ধরন, কাজের মান ও সময় এর উপর ডিপেন্ড করে আপনার কাজের মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন।
৪. ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ
নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিতে কাজ না করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি কোন কোম্পানিতে এবং কোন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করবে।
৫. টিমওয়ার্ক (Team work) বা দলগত কাজের সুযোগ
আপনি চাইলে একটি কাজ টিম আপ করেও করতে পারেন।
৬. সুবিধা অনুযায়ী কাজের পরিবেশ নির্ধারণ
আপনার কাজের পরিবেশ বা ওয়ার্কস্টেশন (Workstation) আপনার নিজের ইচ্ছামত গুছাতে বা সাজাতে পারবেন, কারণ এক্ষেত্রে আপনার বাসাই আপনার অফিস।
৭. পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ
আপনি যদি একজন স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশাটি আপনার জন্য খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্ট টাইম (Part time) বা ফুল টাইম (Full time) দুইভাবে আপনি কাজ করতে পারেন। কাজ এবং লেখাপড়া দুটি সমান তালে করতে পারবেন।
উপরের ভিডিওতে আরো কিছু এডিশনাল রিসোর্স পাবেন
🚫 অসুবিধা 🚫
ফ্রিল্যান্সিং এ অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু অসুবিধা ও রয়েছে।
১. দীর্ঘ সময় একই স্থানে বসে কাজ করায় কোমর, পিঠ, ঘাড়সহ শরিরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হতে পারে
২. বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারদেরই একটি কমন ( Common) সমস্যা হলো চোখ ব্যথা। একটানা অনেক্ষন কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে থাকায় চোখ ব্যথা, চোখ জ্বালা পোড়া, চোখ চুলকান সহ আরো কিছু চোখের সমস্যা হয়।
৩. কম্পিউটারের তীব্র আলোর কারণে প্রায়শই মাথা ব্যথা হতে পারে।
৪. ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ যেহেতু একা একা বাসায় বসে করতে হয়, এর ফলে বাইরের মানুষের সাথে যোগাযোগ কম হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সাররা মানসিক অবসাদে ভুগে।
৫. বাইরের দেশে যখন দিন, আমাদের এইখানে তখন রাত। তাই ফ্রিল্যান্সারদের বেশিরভাগ কাজই মূলত রাতে করতে হয়। এতে করে ঘুমের সমস্যা হয়। সারারাত জেগে ফ্রিল্যান্সিং করে আবার দিনের বেলা অন্যান্য কাজ করতে হয়, ফলে ঘুম কম হয়।
৬. বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই রাতে কাজ করে দিনের বেলা ঘুমায়। তাই তারা দিনে তেমন একটা বের হওয়ার সুযোগ পায় না। সূর্যের আলোর সংস্পর্শ তারা পায় না, তাই দীর্ঘ দিন ধরে যারা ফ্রিল্যান্সিং করছে তাদের ভিটামিন ডি ( Vitamin D) এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
শেষ কথা
আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং কে আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে এবং প্রতিনিয়ত তা অনুশীলন (Practice) করে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। চেষ্টা করবেন কাজের মান ও দামের সামঞ্জস্য রাখার।
ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব কমবে, আপনিও স্বাবলম্বী হবেন।
Very informative and helpful. thank you sir