কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা । ২০২৪

কালোজিরা ফুল

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ বহুদূর এগিয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসাশাস্ত্র আজো অসহায়। যার জলন্ত এক উদাহারণ আমরা দেখেছি করোনা ভাইরাসের সময়। তো চিকিৎসাশাস্ত্র থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদীক, ইউনানীসহ লোকজ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত জিনিষ হচ্ছে কালোজিরা।

কালোজিরার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা, পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে শুরুকরে প্রাচীন বিভিন্ন শাস্ত্রে কালোজিরার উপকারিতা উঠে এসেছে। আজকে আমরা জানবো প্রাকৃতিক মহা ঔষধ কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

কালোজিরা

কালোজিরা (Black Caraway, Black Cumin, Nigella) কালো রঙের ছোট দানাদার বীজের মত দেখতে। কালোজিরার বেশ কিছু ইংরেজি নাম রয়েছে – Fennel flower, Nutmeg flower, Roman Coriander, Blackseed or Black caraway।

এর অন্যান্য বাংলা নাম সমূহ  কালিজিরা,কালো কেওড়া, রোমান ধনে, নিজেলা, কালঞ্জি। এটি একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী গাছ, একবার ফুল,ফল হয়। কালোজিরার  বৈজ্ঞানিক নাম Nigella Sativa Linn। কালোজিরা আয়ুর্বেদীক, ইউনানীসহ লোকজ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হয়। এটিকে মশলা হিসেবেও ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান হলো কালোজিরা। কালোজিরার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়।

কালিজিরার আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া।অনেকের মতে, কালোজিরার উৎপত্তি স্থান ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল। ওষুধ শিল্প থেকে শুরু করে কনফেকশনারি শিল্প ও নিত্যদিনের খাবার তৈরিতে কালিজিরা ব্যবহার রয়েছে। এটি খাদ্যকে রুচিকর ও সুগন্ধি করে তোলে। কালোজিরার ব্যবহৃত অংশ হলো  শুকনো বীজ ও বীজ হতে প্রাপ্ত তেল। কালোজিরাকে সব রোগের ওষুধ হিসেবে ধরা হয়। নিয়মিত কালোজিরা খেলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একজিমা, এলার্জি সহ আরো অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা দেখতে যেমন

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

নিচে কালোজিরা বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস তুলে ধরা হলো।

জগৎ
Plantae
বর্গ
Ranunculales
পরিবার
Ranunculaceae
গণ
Nigella
প্রজাতি
N. sativa
দ্বিপদী নাম
Nigella sativa L
প্রতিশব্দ
Nigella cretica Mill.

উপাদানসমূহ

কালোজিরার উপাদান সমূহ

  • আমিষ – ২১ শতাংশ
  • শর্করা – ৩৮ শতাংশ
  • স্নেহ – ৩৫ শতাংশ
  • ভিটামিন (Vitamins)
  • খনিজ পদার্থ (Minerals)
  • নাইজেলোন
  • থাইমোকিনোন
  • লিনোলিক এসিড
  • অলিক এসিড
  • ক্যালসিয়াম (Ca)
  • পটাশিয়াম (K)
  • আয়রন (Fe)
  • জিংক (Zn)
  • ফসফেট
  • লৌহ
  • ফসফরাস (P)
  • কেরটিন
  • ম্যাগনেশিয়াম (Mg)
  • সেলেনিয়াম (Se)
  • ভিটামিন-এ (Vitamin A)
  • ভিটামিন-বি (Vitamin B)
  • ভিটামিন-বি২ (Vitamin B2)
  • ভিটামিন-সি (Vitamin C)
  • নিয়সিন
  • অ্যামিনো অ্যাসিড
  • স্যাপোনিন
  • ক্রুড ফাইবার
  • উদ্বায়ী তেল

পুষ্টি উপাদান

প্রতি গ্রাম কালোজিরায় পুষ্টি উপাদান হলোঃ

উপাদান
পরিমাণ
প্রোটিন
২০৮ মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন বি১
১৫ মাইক্রো গ্রাম
নিয়াসিন
৫৭ মাইক্রো গ্রাম
ক্যালসিয়াম
১.৮৫ মাইক্রো গ্রাম
আয়রন
১০৫ মাইক্রো গ্রাম
ফসফরাস
৫.২৬ মিলি গ্রাম
কপার
১৮ মাইক্রো গ্রাম
জিংক
৬০ মাইক্রো গ্রাম
ফোলাসিন
৬১০ আই ইউ (IU- International unit)

কালোজিরার ঔষধি গুণাগুণ বা কালিজিরার পুষ্টিগুণ

কালিজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টিকর ও উপকারী উপাদান রয়েছে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক গুন বেড়ে যাবে। কালোজিরা ফুলের মধু  ও তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বর্তমানে কালোজিরা ক্যাপসুলও পাওয়া যায়। কালোজিরার রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাবজনিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, এনজাইম,  অম্লনাশক উপাদান।

কালোজিরা আয়ুর্বেদীক ইউনানি, কবিরাজি এমনকি লোকজ চিকিৎসায় ও বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নারীদের বিভিন্ন রোগে কালোজিরা একটি মহৌষধ। নারীদের প্রসবকালীন ব্যথা কমাতে, প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য প্রসবোত্তর কালোজিরা বাটা ভর্তা খাওয়ার প্রচলন যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

কালোজিরার উপকারিতা

কালোজিরার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা, তারপরো চলুন দেখেনে সঠিকভাবে কালোজিরার ব্যাবহারের ফলে আমরা কি কি উপকার পেতে পারি।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

কালোজিরার তেল রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রাপ্ত বয়স্করা হাফ চা-চামচ করে দিনে দু’বার কালোজিরার তেল খেতে পারেন, এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে।এই তেলে রয়েছে  উচ্চ থাইমোকুইনোন  যা রক্তচাপ কমানোয় সহায়তা করে।

ক্ষতিকারক  কোলেস্টেরল কমায়

কালোজিরার তেলে প্রচুর  পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা আমাদের শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমায়।স্থূলকায় মানুষ যদি প্রতিদিন ৩ গ্রাম করে আট থেকে বারো সপ্তাহ কালোজিরার তেল সেবন করেন, তাহলে  তাদের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল (এলডিএল – লো ডেনসিটি লিপো প্রোটিন/ Low density Lipoprotein) অনেকাংশে কমে আসবে।

গবেষণায় দেখা গেছে,টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন ৩ গ্রাম করে ১২ সপ্তাহ  কালোজিরার তেল খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লাইসেরাইড উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে এসেছে।  এই উচ্চ মাত্রার এলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লাইসেরাইড  হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

কালোজিরার ফুল
কালোজিরার ফুল

পেট খারাপের সমস্যা সমাধানে

নিয়মিত পেট খারাপের সমস্যা থাকলে কালোজিরা হালকা ভেজে গুঁড়ো করে ৫০০ মিলিগ্রাম  ৭-৮ চা চামচ দুধে মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে একটানা সাত দিন ধরে পান করলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে আনে

কালোজিরা খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে ওজন কমাতে সক্ষম। চায়ের সঙ্গে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে  উপকার হয় আবার মেদ ও কমে।

ব্রণের সমস্যা দূর করে

কালোজিরা  ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণ সারাতেও সক্ষম। ব্রণের স্থানে ২০% কালো জিরার তেল সমৃদ্ধ ক্রিম মাখলে ব্রণের সমস্যা দূর হবে। লেবুর রস ও কালোজিরার তেলের মিশ্রণ দিনে দু’বার মুখে লাগান, এতে করে ত্বকে ব্রণ ও দাগ অদৃশ্য হয়ে যাবে।লেবুর রস ও কালোজিরা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের আরো অনেক সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।

ত্বককে আর্দ্র রাখে

কালোজিরার তেল মাখলে ত্বকে আর্দ্রতা আসে ও কিছু চর্মরোগ প্রশমিত হয়। দিনে দু’বার করে।চার সপ্তাহ কালোজিরার তেল প্রয়োগ করলে একজিমা কমে আসবে।

নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে

কালোজিরার তেল ব্যবহারে চুল আরো ঘন হয় পাশাপাশি চুল পড়া কমে। কালোজিরার তেলে বিদ্যমান প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড স্ক্যাল্পের  রক্ত চলাচল বাড়িয়ে চুল গজাতে সহায়তা করে। নারকেল তেলের তুলনায় কালোজিরা তেল ব্যবহারে চুলের ঘনত্ব অধিক বৃদ্ধি পায়।

শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায়

কালোজিরার তেল সেবনের ফলে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়তে পারে। এমনকি শুক্রানূর গতিশীলতাও বাড়ে। এক চা চামচ জলপাই তেল, এক চা চামচ মাখন, এক চা চামচ কালোজিরা এবং মধু মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ বার করে  ৪/৫ সপ্তাহ খেলে যৌন সমস্যার  সমাধান হবে।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

ডায়াবেটিস ইদানিং সবচেয়ে বিপজ্জনক রোগ হিসেবে পরিণত হয়েছে। কালোজিরার তেল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। প্রতিদিন সকালে এক কাপ চায়ে আধা চা চামচ  কালোজিরার তেল মিশিয়ে পান করুন, আপনার ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ডায়েটে কালোজিরা

ডায়েটের ক্ষেত্রে কালোজিরা দারুণ কাজ করে। রুটি বানানোয় বা তরকারি রান্নায় কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন।মধু ও পানির সঙ্গে মিশিয়েও কালোকিরা খেতে পারেন। ওটমিল ও টক দইয়ের সঙ্গে  কালোজিরা মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।

মাথাব্যথা সারায়

কালোজিরার তেল মাথাব্যথার জন্য একটি পুরানো ঘরোয়া প্রতিকার। কালোজিরার তেল  মাথার ত্বকের ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা কমে।কপালে,চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তী স্থানে দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার কালো জিরার তেল মালিশ করলে  মাথা ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়।

জয়েন্টে ব্যথা  থেকে মুক্তি দেয়

সরিষার তেল এবং কালোজিরার তেল  একসাথে মিশিয়ে গরম করে হাঁটু বা  অন্যান্য জয়েন্টগুলোতে ম্যাসাজ করুন। এটি জয়েন্টের ব্যথা,বাত ব্যথা থেকে মুক্তি দিবে। বাতের ব্যাথায় আরাম পেতে হলে, ব্যথার জায়গা ভাল করে ধুয়ে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। এক চা- চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে ১ চা চামচ কালোজিরার তেল ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার খান, বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
খাবারের উপরে কালোজিরার ব্যাবহার

লিভার ও কিডনির সুরক্ষা করে

কালোজিরায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায়, তা শরিরের প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে এবং লিভারকে সুরক্ষিত করতে সহায়তা করে। কালোজিরা রাসায়নিক পদার্থের বিষাক্ততা কমাতে সক্ষম। প্রস্টেটজনিত সমস্যা এবং কিডনিজনিত রোগে বয়স্করা কম বেশি  পা ফোলা সমস্যায় ভোগেন। কালোজিরা তাদের এ সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে। কালোজিরা লিভার ও কিডনিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

বিশেষ করে যাদের কিডনিতে পাথর আছে হয়েছে তারা ২ চামচ কালোজিরা গুড়ো এবং ২ চামচ  মধু কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন ভোরে খেতে পারেন। মধুতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল (Anti bacterial) এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল (Anti fungal) উপাদান যা কিডনির পাথরকে প্রতিরোধ করে। ১ চা চামচ ভিনেগার, ২ চা চামচ মধু, ২ চা চামচ কালোজিরা তেল এক সাথে মিশিয়ে  ৩০ দিন খেলে  কিডনির পাথর অপসারণ হয়ে যাবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোল। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে, জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেহ ও স্বাস্থ্যের সার্বিক  উন্নতি সাধন করে।

সর্দি-কাশি সারায়

এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে এক চা চামচ মধু অথবা এক কাপ লাল চায়ের সঙ্গে আধ চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার খান, সর্দি কাশি কমবে। এক চা চামচ কালোজিরার সঙ্গে তিন চা চামচ মধু ও দুই চা-চামচ তুলসি পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি মেলে।

হাপানি বা শ্বাসকষ্টে কালোজিরা

যারা হাপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য কালোজিরা বেশ উপকারী,তারা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কালোজিরার ভর্তা রাখতে পারেন।

দেহের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়

নিয়মিত কালোজিরা খেলে দেহের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে।ফলে মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে, যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি

নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ালে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্ক সুস্থ রাখেএবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে

মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালোজিরা একটি মহৌষধ। প্রসূতি মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা গুড়ো করে দুধের সাথে  মিশিয়ে খেলে ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়াও কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সাথেও খাওয়া যেতে পারে। কালোজিরার তেল ও  সমপরিমাণ মধুর মিশ্রণ দিনে ৩বার করে নিয়মিত খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

চুল পড়া কমায়

নিয়মিত কালোজিরা সেবন করলে চুলের গোড়া ঠিকমতো পুষ্টি পায়, ফলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়। সপ্তাহে কয়েকবার কালোজিরার তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়ার সমস্যা দূর হবে।

অপারেশনের দাগ দূর হয়

নিয়মিত কালোজিরা খেলে অপারেশনের ফলে সৃষ্ট দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়।

অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিক রোধে

এক কাপ দুধ ও এক টেবিল চামচ কালোজিরার তেলের মিশ্রণ দৈনিক তিনবার  করে ৫-৭ দিন সেবন করতে হবে। এতে গ্যাস্টিক কমে যাবে

চোখে সমস্যা দূর করে

রাতে ঘুমানোর আগে চোখের পাশে এবং কপাল ও ভ্রুতে কালোজিরার তেল মালিশ করুন।

রূপ চর্চায়

অলিভ অয়েল ও কালোজিরার তেল মিশিয়ে মিশ্রনটি মুখে মেখে এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। চেহারার ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পাবে। কালোজিরাতে রয়েছে লিনোলেনিক এবং লিনোনেইক নামক এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড, এটি ত্বককে ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি ( UV ray – Ultraviolet ray) থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল, এবং ১ চা চামচ কালোজিরার তেল এক সাথে মিশিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করলে ত্বক উজ্জ্বল হবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

কালোজিরার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল (Anti bacterial) ও অ্যান্টি মাইকোটিক (Antimicotic) প্রভাব রয়েছে। এটি বোনম্যারোকে এবং প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে উত্তেজিত করে ইন্টারফেরন তৈরি বাড়িয়ে দেয়।কালোজিরার টিউমার বিরোধী গুনাগুন রয়েছে। শরীরে ক্যান্সার উৎপাদনকারী ফ্রির‌্যাডিক্যাল ধ্বংস করতে পারে কালিজিরা।

দাঁত ব্যথায়

দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা ভিজিয়ে  সেই পানি দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও এই পানি ব্যবহারে  জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে যায়।

পাইলস সমস্যা সমাধানে

এক চা চামচ মাখন এবং সমপরিমাণ তিলের তেলের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে পাইলস সমস্যা সমাধানে উপকার পাবেন।

অনিয়মিত মাসিক সমস্যায়

কাঁচা হলুদের রস এবং কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে খেলে অনিয়মিত মাসিক সমস্যায় ওষুধের মতো কাজ করে।

রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করে

কালোজিরা রান্নার ব্যবহার করলে রান্নার স্বাদ যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি রান্নার পুষ্টিমান ও বাড়ে।

কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা মসলা হিসেবে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়। এটি পাঁচ ফোড়নের ও একটি উপাদান। বিভিন্ন উপায়ে কালোজিরা ব্যবহার করা যায়। তো যাইহোক এখানে আমি তুলে ধরছি কালোজিরা খাওয়ার নিয়মঃ

  • মশলা হিসেবে
  • পাঁচ ফোড়ন
  • কালোজিরার তেল
  • কালোজিরা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়
  • ভেজে খাওয়া যায়।
  • রুটি বা মুড়ির সাথে কালিজিরা খাওয়া যায়
  • গরম পানি বা চায়ের সাথে পান করা যায়।
  • গরম ভাতের সাথে কালোজিরার ভর্তা খাওয়া খুব উপকারী।
  • চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য অন্য তেলের সাথে বা সরাসরি কালোজিরার তেল ব্যবহার করা যায়।
  •  তরকারি রান্নার সময় কালোজিরা দেয়া যায়।
  • চাটনি করে খাওয়া হয়।
  • মিষ্টি, কেক, হালুয়া, ফিরনি, বিস্কুট এসবের সাথে  কালোজিরা দেয়া যায়।
  • তিলের তেলের সাথে কালিজিরার পেস্ট বা কালোজিরার তেল একসাথে মিশিয়ে ফোঁড়াতে লাগলে ফোঁড়ার উপশম হয়।
  • মধু ও কালোজিরার পেস্ট বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
  • কালোজিরা গুড়ো করে পেয়ারা পাতার রসের সাথে মিক্স করে খাওয়া যায়। এলার্জির রোগিদের জন্য কালোজিরা ও পেয়ারা পাতার রস অনেক উপকারি।
  • কালোজিরার তেলের সাথে ১ কাপ পরিমান পুদিনা পাতার রস এবং কমলা লেবুর রস মিশিয়ে কালো জিরার মিশ্রন করে খাওয়া যেতে পারে।


কালোজিরার উপকারিতা ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম | Kalojirar Upokarita | Nigella Seeds 

কালোজিরার তেলের উপকারিতা

অনেক ভাবেই কালোজিরা ব্যবহার করা যায়, কিন্তু বর্তমানে কালোজিরার তেল বেশি ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার তেল ক্যাপসুল বা লিকুইড হিসেবে পাওয়া যায়। চিকিৎসকের মতে, দিনে ১-২ চা চামচ কালোজিরা তেল সেবন নিরাপদ। কালোজিরার তেলের উপকারিতা বলতে গেলে কালোজিরার যেসব উপকারিতা রয়েছে সব ক্ষেত্রেই এই তেল উপকারি। তারপরো যেসব ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল ব্যাবহার করে সুফল পাবেন তা আবার তুলে ধরা হলো।

কালোজিরা বা কালোজিরার তেল যেসব সমস্যা বা রোগে কার্যকরীঃ

কালোজিরার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কালিজিরা নিয়মিত ও পরিমিত খেতে হয়। অতিরিক্ত বেশি খেলে বা ব্যবহার করলে উপকারের চেয়ে অপকার ই বেশি হবে। কালোজিরার তেল গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় মাত্রারিক্ত কালোজিরা খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।

অনেকেই কালোজিরা হজম করতে পারেন না, এক্ষেত্রে আস্তে আস্তে অভ্যাস করা যেতে পারে।দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালিজিরার তেল সেবন না করানোই উত্তম। কৃত্রিম কালিজিরার তেল গ্রহণ করা উচিত না।

কিছু কিছু ওষুধ কালোজিরার সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে,এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ আবশ্যক। পুরোনো কালোজিরার তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

শেষ কথা

উপরের পর্যালোচনা থেকে বুঝা যায় যে কালোজিরার উপকারিতা অনেক, ছোটখাটো সমস্যায় বা ঘরোয়া চিকিৎসায় আমরা খুব সহজে কালোজিরার ব্যাবহার করে সফল পেতে পারি।

তো বন্ধুরা আজকের লেখা কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা লেখাটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লেখাটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। দেখা হবে আগামী লেখায়। আজকের মতো এখানেই বিদায়।

Author

Scroll to Top