Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
ওমান দেশটি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেনের সাথে স্থল সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে এবং এটি ইরান এবং পাকিস্তানের সাথে সামুদ্রিক সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। আরব বিশ্বের প্রাচীনতম স্বাধীন রাষ্ট্র টি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মাসকাট এবং পরে ওমান নামে পরিচিতি লাভ করে।
এই দেশটির বিভিন্ন সুন্দর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে দুর্গম পর্বতশ্রেণীর মধ্যে উপত্যকা রয়েছে যেখানে ডালিম, এপ্রিকট এবং গোলাপ জন্মে। এছাড়াও বিস্তীর্ণ সমভূমি, বিস্তীর্ণ মরুভূমি এবং মাঝখানে বড় পুকুর রয়েছে। ওমানের প্রধান শহরগুলি উপকূল বরাবর সুন্দরভাবে সারিবদ্ধ। আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে সুন্দর দেশ ওমান। ওমানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতই মধুর বা আকর্ষণীয় যে আপনাকে তাদের দেশে ভ্রমন করতে আগ্রহ জন্মাবে। তবে এটি শুধুমাত্র তাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে নীল জলের সুন্দর প্রাচীন সৈকত রয়েছে। ওমান তার পুনরুদ্ধারকৃত দুর্গের জন্য পরিচিত। ওমানের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনাগুলির মধ্যে একটি হল বাহালি দুর্গ। এটি মধ্যযুগীয় ইসলামী যুগে পাথর এবং কাদা–ইটের কাঠামো দ্বারা নির্মিত। এটিকে ১৯৮৭ সালে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ওমানের অতীত সুলতান
হাউস অফ আল বুসাইদের প্রতিষ্ঠাতা এবং পনেরো প্রজন্মের বংশধর আরব বিশ্বের দীর্ঘতম শাসনকর্তা সুলতান কাবুস বিন সাইদ ৭৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য এবং আরব বিশ্বে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী নেতা ছিলেন।
ওমানের বর্তমান সুলতান
ওমান দেশটি কাবুস বিন সাইদ আল সাইদের মৃত্যুর পর হাইথাম বিন তারিক আল সাইদকে দেশের নতুন শাসক হিসেবে ঘোষণা করেছিলো। তখন হাইথাম বিন তারিক দেশের নতুন সুলতান হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।
ওমানের রাজধানী
মাস্কাট ওমানের রাজধানী। মাস্কাট ওমান দেশের উপসাগরের উপকূলে ওমানের মূল ভূখণ্ডের উত্তরে অবস্থিত। মাস্কাট শহরটি ওমানি সরকারের বর্তমান আসন। ওমান শহরে রয়েছে বিস্তৃত মেট্রোপলিটন এলাকা। যার জনসংখ্যা প্রায় ১.৮ মিলিয়ন। এটি ওমানের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। ওমানের সরকারী ভাষা আরবি। তাছাড়াও সোয়াহিলিও ভাষায় ও মানুষ কথা বলে থাকে। ওমানের জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলমান। নীল সমুদ্র সৈকত এবং রোমাঞ্চকর ওয়াটারস্পোর্ট যোন রয়েছে ওমানে। যা অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিদের অনেক আকর্ষণ করে। তাই বলা যায় যে মাস্কাট শহরটি পাহাড় এবং সমুদ্র সৈকতের মধ্যে একটি সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর শহর। এটি সংস্কৃতির অনুরাগীদের জন্যও একটি দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতপক্ষে, এটি ওমানের সবচেয়ে বড় শহর।
ওমানে ধর্ম
ওমান একটি মুসলিম দেশ, তবুও জনসংখ্যার প্রায় ১৩% হিন্দু ধর্মের মানুষ বসবাস করে ওমানে। প্রায় তিন–চতুর্থাংশ মুসলমানদের পড়াশোনার জন্য অনেক বিদ্যালয় রয়েছে। বাকি চতুর্থাংশ হল সুন্নি। বাকিরা অভিবাসী, যারা ওমানে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। যেমন– খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি, হিন্দু ধর্মের মানুষ ওমানে বসবাস করছে। এদের মধ্যে আবার কিছু মানুষ, এরা প্রায় ২ শতাংশ যারা কিনা কোন ধর্ম অনুসরণ করে না। তারা নিজেদেরকে নাস্তিক বলে অভিহিত করে থাকে।
ওমানের অধিকাংশ মানুষ নিজেদেরকে ইবাদি হিসেবে চিনে। এদের একটি জনপ্রিয় বিদ্যালয় রয়েছে। যেটির নাম হচ্ছে (ইবাদি স্কুল অব থট)। মুলত ইবাদিরা প্রায় জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ।
ওমানের দুটি জনপ্রিয় শহর আল বাটিনা এবং মাস্কাট এখানে শিয়া মুসলমানদেকেও দেখতে পাওয়া যায়। ওমানে একটি আইন রয়েছে যেটিকে বলা হয় (শরিয়া আইন)। এর অর্থ হলো ইসলাম অনুযায়ী আইন। এটি ওমানের অনেক অঞ্চলে অনুশীলন করা হয় এবং কখনও কখনও ফৌজদারি আইনের চেয়েও শরিয়া আইন অগ্রাধিকার বেশি পায় এই আইন।
১৭ টি তথ্য যা আপনি ওমান সম্পর্কে জানেন না
ওমান আরব বিশ্বের প্রাচীনতম স্বাধীন রাষ্ট্র:
১৭৪৪ সাল থেকে ওমান দেশটি আল সৈয়দ পরিবার দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল। সুলতান কাবুস শাসক হওয়ার আগে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এটি আরব বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে এই দেশটি শাসন হয়ে আসছিল। শুধু তাই নয় ঐতিহ্যবাহী দেশগুলির মধ্যেও এই দেশটির নাম রয়েছে। এর মাধ্যমে এটাও অনুমান করা হয় যে, মানুষ অন্তত ১০৬,০০০ বছর ধরে ওমানে বসবাস করছে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মানব–অধ্যুষিত দেশগুলির মধ্যে একটি।
ওমান মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শাসনকারী শাসক:
সুলতান কাবুস বিন সাইদ ১৯৭০ সালের ২ জুলাই ওমানের সরকারী শাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে দেশটি শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক মানসমূহে নাটকীয় উন্নতি দেখা দিয়েছিল এবং দেশটি দ্রুত উন্নতি করেছিল এবং মানুষও ধীরে ধীরে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছিল।
ওমান একটি সন্ত্রাস মুক্ত দেশ:
গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স অনুযায়ী, ওমান আরব বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ এবং সন্ত্রাসমুক্ত দেশ। ২০১৬–২০১৭ এর একটি সর্বশেষ প্রতিবেদনে, ওমান ০–এর স্কোর নিয়ে তালিকার শেষের দিকে ছিল।, যার মানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে কম সন্ত্রাসবাদের দেশগুলির মধ্যে একটি। যা পৃথিবীতে বিরল।
আরবীয় অরিক্স ওমানের জাতীয় প্রাণী:
বিপন্ন অ্যারাবিয়ান অরিক্স রয়েছে ওমান দেশে। এটি হল একটি সাদা হরিণ। যেটির আছে লম্বা সোজা শিং এবং একটি কুঁজযুক্ত লেজ। এই প্রানিটি আরব উপদ্বীপের মরুভূমিতে বসবাস করে, এই প্রাণীটি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ওমান দেশে। এই প্রানিটি ওমান দেশের জাতীয় প্রাণী এবং তাদের নামে বিখ্যাত ওমানি গ্যাস স্টেশনগুলির নামকরণ করা হয়েছে।
সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয় ওমানের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল:
সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয় হলো ওমান দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৮৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হলে আপনাকে অনেক বেশি উচ্চ স্কোর অর্জন করতে হবে তাহলেই আপনি এখানে পড়া শুনা করার সুযোগ পাবেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি মাস্কাটের রাজধানী গভর্নরেটের আল খোদে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে অনেক বাসস্থান, স্টোর, একটি লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয় এটি সমস্ত ওমানীদের জন্য উন্মুক্ত।
ওমানিরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ নির্মাতা:
ওমানীদের একটি প্রধানতম কাজ হচ্ছে জাহাজ নির্মানের কাজ। তারা তাদের প্রধান কাজের আয়ের উৎস হিসাবে জাহাজ নির্মাণ করে থাকে। ওমানীরা কেবল জাহাজ নির্মাণের শিল্পই নিয়েই কাজ করেনি, বরং তারা এটিকে নিখুঁত এবং দক্ষ করে তুলেছে নিজেদেরকে। তাদের জাহাজগুলি বিশ্বজুড়ে চলাচল করে। শুধু তাই নয় তাদের মতো কিছু ওমানি উপকূলীয় শহর বিশ্বব্যাপী জাহাজ এবং জাহাজ মেরামতের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। আজ ওমানিরা পৃথিবীর অন্যতম সেরা জাহাজ নির্মাতা হিসেবে বিবেচিত।
ওমানিরা আরবীয় ঘোড়ার সেরা প্রজননকারী হিসেবে বিবেচিত:
আরবীয় বা আরব ঘোড়া এটি একটি অনন্য প্রজাতি যা আরব উপদ্বীপে দেখতে পাওয়া যায় এবং এই ঘোড়া বিশ্বের প্রাচীনতম প্রজাতির একটি। আরবীয় ঘোড়ার দুটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো তাদের মাথার আকৃতি এবং উঁচু লেজ। যা বিশ্বে আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় নাহ। আরবীয় ঘোড়াগুলি তাদের দুর্দান্ত সহনশীলতা, গতি, পরিমার্জন এবং শক্তিশালী হাড়ের জন্য বিখ্যাত। তারা ভাল স্বভাবের এবং খুব দ্রুত শিখতে পারে। ওমানের মানুষ এইসব ঘোড়াগুলির প্রতি অনেক যত্নশীল।
ওমানের চারটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে:
ওমানের চারটি সাইট রয়েছে যা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিনা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাহলা দুর্গ, বাদুড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, আল খুতম এবং আল আইন।
শুধুমাত্র ওমানে লাইসেন্স দিয়ে অ্যালকোহল কেনা যায়:
বেশিরভাগ মুসলিম ওমানিরা অ্যালকোহল পান করে না। পর্যটক এবং অমুসলিমরা ছাড়া এটি পান করা প্রায় দুর্লভ ওমানে। যদি কেউ ওমানে অ্যালকোহল পান করতে চায় তাহলে ওই ব্যক্তির লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। যা পুলিশ দ্বারা জারি করা হয় অ্যালকোহল কিনতে।
ওমানে লোবান গাছ প্রাকৃতিক ভাবেই পাওয়া যায়:
পৃথিবীতে দামি গাছগুলোর মধ্যে লোবান গাছ একটি। ওমানিরা বিশ্বজুড়ে রাজাদেরকে এই গাছ উপহার হিসেবে দিয়ে থাকে। তবে বর্তমানে এই গাছের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ওমান সহ বিশ্বের আরো ও কয়েকটি দেশে লোবান গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মে।
কফি জাতীয় পানীয়:
কফিকে আরবিতে কাহওয়া বলা হয়। ওমানে, কাহওয়া অথিতিদের আপ্পায়নের জন্য অন্যতম সুস্বাদু পানিয়। এ ছাড়াও ওমানিরা খেজুর, ফল, মিষ্টি এবং বেকারির খাবার ইত্যাদি দিয়ে আপ্পায়ন করে থাকে অথিতিদের। তবুও, কাহওয়া পানীয়টি আরবীয় কফির একটি অনন্য পানিয় যা সাধারণত এলাচের সাথে মিশ্রিত করা হয়। ওমানীরা এটি দিনে কয়েকবার পান করে থাকে। শুধু তাই নয় ওমানিরা অতিথিদের বাসায়ও এই কফি পাঠিয়ে থাকে।
সবুজ কচ্ছপ ওমানি সৈকতে স্থানান্তরিত হয়:
সবুজ কচ্ছপ একটি বিপন্ন প্রাণী। ওমানের পূর্ব ওমানের আল শারকিয়া অঞ্চলের রাস আল জিনজে সৈকতে কয়েকটি সবুজ কচ্ছপের রয়েছে। সবুজ কচ্ছপেরা যখন ডিম পাড়ে তখন তারা রাস আল জিনজ সৈকতে চলে আসে। এই অনন্য দৃশ্য এবং প্রক্রিয়াটি উপভোগ করার জন্য বিশেষ ভ্রমণের আয়োজন করা হয় সূর্যোদয়ের আগে। ভোরের দিকে এটি আয়োজন করা হয়। তাছাড়া, দর্শনার্থীরা বাচ্চা কচ্ছপ ডিম ফুটা এবং সমুদ্রে ফিরে আসার ব্যাপারটি উপভোগ করে। রাস আল জিনজে সৈকতে শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সবুজ কচ্ছপের নিরাপত্তা এবং আরাম নিশ্চিত করার জন্য অনেক অর্থ খরচ করা হয়। যদি কেউ এই কচ্ছপ চুরি করতে আসে এবং সে যদি ধরা পরে তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
ওমানি দরজা সাধারণত অলঙ্কৃত হয়:
ওমানী স্থাপত্য নকশা এবং কাঠামো যে কারো মনকে সুন্দর করে তুলে। ওমানি দুর্গ, দালান, প্রাসাদ, এমনকি বাড়িঘরও চমৎকার ভাবে নকশা করা। প্রায় প্রতিটি ওমানি বাড়িতে একটি শোভাময় বা সুন্দর ভাবে সজ্জিত করা দরজা রয়েছে। আপনি যদি একটি ওমানি রাস্তায় হাঁটেন তাহলে আপনার অনেক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা এবং ওমানি স্থাপত্য উপভোগ করার একটি দুর্দান্ত উপভোগ্য ব্যাপার লক্ষ করতে পারবেন।
প্রতিটি ওমানি বাড়িতে লৌকিকতা থাকে:
যেহেতু ওমান কাহওয়ার জন্য বিখ্যাত, তাই ওমানে এমন কোন ঘর নেই যেখানে সুগন্ধযুক্ত জায়গা নেই। ওমানীরা প্রতিদিন ধূপ জ্বালায় এবং তাদের বাড়ির প্রতিটি ঘরে রেখে দেয়। এজন্যই মাঝে মাঝে রাস্তায় হাঁটলে আপনি তাদের বাড়ির ভিতর থেকে গন্ধ পাবেন।
কোকাকোলা নেই:
দেশে প্রায় কোন কোকাকোলা পণ্য নেই! কিন্তু আপনার চিন্তা করার কোন কারন নেই! তৃষ্ণা পেলে আপনি পেপসি উপভোগ করতে পারেন। মাউন্টেন ডিউ ওমানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পানীয়।
ওমান কেমন কর দিতে হয়?
আপনি যদি ওমানে অর্থ সঞ্চয় করতে চান, তাহলে ওমান আপনার কাজ করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা হতে পারে। কারণ দেশটি আয়কর ধার্য করে না। ওমানে এম্ন অনেক করদাতা করদাতা রয়েছে যারা ০ – ৩% (শর্ত সাপেক্ষে) কম হারে করের অধিকারী। বিদেশীদের নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের উপর ১০% হারে উইথহোল্ডিং কর আরোপ করা হয়ে থাকে।
কথা বলার গন্ধ:
অ্যামাউজ – একটি অনবদ্য ঘ্রাণ সহ বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান পারফিউম। যেটি ওমানে উত্পাদিত হয়। এই সুগন্ধি ১৯৮৩ সালে প্রথম তৈরি করা হয়েছিল। এটি উৎপাদনকারী সংস্থাটি নিজেকে একটি রাজকীয় ব্র্যান্ড হিসাবে দাবি করে। কারণ এই পারফিউম মহা বিশ্বতে শুধু ওমানেই পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং রাজাদের এই পারফিউম উপহার হিসেবে পাঠানো হয়ে থাকে।
ওমানের জাতীয় পতাকা
ওমানের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ এপ্রিল, ১৯৯৫ সালে গৃহীত হয়েছিল। এই পতাকাটি ১৯৭০ এর পতাকার সাথে প্রায় সম্পুর্ন মিল রয়েছে। শুধু একটা পার্থক্য রয়েছে পুরাতন পতাকার পাতলা মাঝারি ডোরাকাটা দাগ ছিল। বর্তমান পতাকাটিতে তিনটি অনুভূমিক ফিতার মধ্যে সাদা (উপরের) অংশে, সবুজ এবং লাল রয়েছে। পতাকার বাম দিকে একটি উল্লম্ব লাল দণ্ডে দেশের জাতীয় প্রতীক রয়েছে। পতাকাটির উচ্চতা দৈর্ঘ্য অনুপাত ১: ২। এই পতাকাটি তিনটি রঙ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। পতাকার উপরের দিকের রঙটি হচ্ছে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। মাঝের দিকে লাল রঙ এবং পতাকার উপরের দিকে বিদেশী হানাদারদের বিরুদ্ধে ওমানের জনগণের যুদ্ধের প্রতিনিধিত্ব করছে এমন একটি চিহ্ন। পতাকার সবুজ রংটি দিয়ে জমির উর্বরতাকে বোঝানো হয়েছে। ওমানের পতাকার রং এবং প্রতীকগুলির উপরোক্ত অর্থগুলি সরকারীভাবে গৃহীত করা হয়েছে। তবে পতাকার বৈশিষ্ট্যগুলির ব্যাখ্যা অনুসারে এই ধরনের ব্যাখ্যা মানে ইমামতি, লাল সুলতানি এবং সবুজ ওমানের পাহাড়ী সবুজ অভ্যন্তরের প্রতিনিধিত্ব করছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
ওমানে ভ্রমণ করার জন্য সেরা সমুদ্র সৈকত
সোনালি বালু, উজ্জ্বল নিল পানি, পরিষ্কার নীল আকাশ, রঙিন পাখি এবং প্রচন্ড প্রাকৃতিক বাতাসের জন্য ওমান খুবই বিখ্যাত। ওমান হচ্ছে পৃথিবীর একটি অবিস্মরণীয় জায়গা যেখানে রয়েছে অনেক ধরনের সমুদ্র সৈকত। আপনি চাইলে সেখানে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে ছুটি উপভোগ করতে পারবেন। যেহেতু আমরা সবাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা জায়গায় থাকতে পছন্দ করি, তাই আমরা ওমানের কিছু সেরা সৈকতগুলির তালিকা সংগ্রহ করেছি।
আল কুরুম সৈকত: আল কুরুম সৈকত ওমানের উত্তরে মাস্কাট শহরে অবস্থিত। এটি ওমানের অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত হিসাবে বিবেচিত হয়, এই কারণেই এর কাছাকাছি প্রচুর বিখ্যাত হোটেল এবং ক্যাফে নির্মিত হয়েছে। রাজধানী শহর মাস্কাটে থাকার কারণে, আল কুরুম সৈকত ওমানের ব্যস্ততম সৈকতগুলির মধ্যে এটি একটি। যেখানে একটি শপিং সেন্টার, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য আকর্ষনিয় যায়গা রয়েছে যা আপনার মনকে আনন্দিত করে তুলবে। দর্শনার্থীরা দীর্ঘ সৈকতে হাঁটা উপভোগ করতে পারে এবং ঝলমলে বালিতে খেলতে পারে।
আল মুগসাইল সৈকত: আল মুগসাইল সৈকত ওমানের দক্ষিণাঞ্চলের ধোফারে অবস্থিত। এই সৈকত প্রায় ৭ কিমি (৪.৩৫ মাইল) দীর্ঘ। উজ্জ্বল নিল পানি এবং উজ্জ্বল বালি ছাড়াও, উপকূলরেখা বরাবর নারকেল গাছ এবং কলা বাগানের কারনে এটি একটি সুন্দর স্বর্গ গড়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য।
মুসান্দাম সৈকত: মুসান্দাম সৈকত ওমানের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত। ওমান উপসাগর এবং আরব উপসাগর এই দুটি উপসাগর দ্বারা ঘেরাও এই সৈকতটি। এই সৈকতটি অনেক সুন্দর। যেখানে রয়েছে পরিষ্কার সাদা বালি।
তিভি সৈকত: তিভি হচ্ছে একটি ছোট মাছ ধরার গ্রাম যা ওমানের এটি পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। তিভি সৈকতে সাদা বালি ছাড়াও, তাদের সবুজ বাগান, উজ্জ্বল পানি এবং মহিমান্বিত পাহাড় রয়েছে। দর্শনার্থীরা হাইকিং এবং ক্লাইম্বিংয়ের অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে পারবে এই সৈকতে। অথবা কেউ যদি চায় শুধু আরাম করবেন কোন এক সৈকতে তাহলে তিভি সৈকত আপনার জন্য আদর্শ। আপনি চাইলে সুন্দর বসার জায়গা উপভোগ করতে পারবেন এই সৈকতে।
রাস আল হাদ: রাস আল হাদ ওমানের পূর্ব উপকূলে আল শারকিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এই সৈকতটিকে সবুজ কচ্ছপের বাড়ি বলেও অবিহিত করা হয়ে থাকে। রাস আল হাদে আপনি এই সবুজ কচ্ছপ দেখার সাক্ষী হতে পারেন। তারা সূর্যোদয়ের আগে গর্তে ডিম পাড়ে। মানুষ এটা দেখার জন্য এই সৈকতে গিয়ে থাকে। আপনি চাইলে এই সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
আল বুস্তান সমুদ্র সৈকত: আল বুস্তান সৈকতটি মাস্কাটে অবস্থিত। এটি আরেকটি বিস্ময়কর সমুদ্র সৈকত। এখানে রয়েছে অন্যতম বিলাসবহুল হোটেল (আল বুস্তান প্যালেস হোটেল)। পটভূমিতে দুর্দান্ত পাহাড়ের দৃশ্য রয়েছে, যা এই সৈকত এবং হোটেল থেকে দৃশ্যগুলি বেশ অসাধারণ করে তুলেছে।
মাসিরাহ দ্বীপ: মাসিরাহ দ্বীপ পূর্ব উপকূলের অন্যতম সুন্দর দ্বীপ এবং এটি ওমানের বৃহত্তম দ্বীপ। এটি প্রায় ৯৫ কিলোমিটার (৫৯ মাইল) এরও বেশি এবং যা প্রায় ১৩ কিলোমিটার (8 মাইল) প্রশস্ত, এটি ৬৪৯ কিমি বর্গক্ষেত্র। মাসিরাহ দ্বীপে রয়েছে অনেক সুন্দর সৈকত, যেমন দক্ষিণে দাস আবু জাবেল সৈকত এবং পশ্চিমে সুর মাসিরা সৈকত।
ডুকু সৈকত: আল–ডুকু সৈকতটি ওমানের দক্ষিণ –পূর্ব অংশে আল উস্তা অঞ্চলে অবস্থিত। এই সৈকতটি একটি বন্দর শহরে অবস্থিত। এটি তার নরম বালু, মৃদু বাতাস এবং উজ্জ্বল পানির জন্য বিখ্যাত।
আল সাওয়াদী সমুদ্র সৈকত: আল সাওয়াদী সৈকত ওমানের উত্তরাঞ্চলে আল বাটিনাহ অঞ্চলে অবস্থিত, মাস্কাট থেকে প্রায় ৭০ কিমি (৪৩.৫ মাইল) দূরে। এটি ওমানের অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত হিসেবে বিবেচিত এবং এই দিপটিকে পাথরের দ্বীপ বলেও উপকূলীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়। এই দ্বীপগুলি দেশীয় পাখিদের আকর্ষণ করে যা সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যোগ করে।
আপনি যেভাবে ওমানে যেতে পারেন
এয়ার ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে ভ্রমণ করা সবচেয়ে সহজ। বিকল্প ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে প্রধান দেশ থেকে মাস্কাট, সালালাহ এবং খাসাবের জন্য নিয়মিত ফ্লাইট পাওয়া যায়। ওমান এবং আশেপাশের দেশগুলির মধ্যে ফেরি চলাচলের পরি সেবা না থাকলেও ওমান রাস্তা দিয়ে সহজে প্রবেশ করা যায়।
বিমানযোগে ওমান পৌঁছানো: ওমানের মাস্কাট, সালালাহ এবং আল খাসাবে তিনটি প্রধান বিমানবন্দর রয়েছে। মাস্কাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সালালাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সালালাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল ওমানের সেরা বিমানবন্দরগুলোত মধ্যে একটি। কারণ এই বিমানবন্দরে প্রধান দেশগুলির মধ্যে অসংখ্য সরাসরি এবং বিরতিহীন ফ্লাইট রয়েছে। যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে পৌছে যেতে পারবেন।ওমান এয়ারলাইনস ওমানের জাতীয় বিমান সংস্থা। ওমানের প্রধান বিমান সংস্থাগুলি হল এমিরেটস, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স এবং রয়েল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশ থেকে ওমানের ফ্লাইটের তথ্য:
- বাংলাদেশ থেকে ওমানের খুব অল্প দামের ফ্লাইট হল ঢাকা থেকে মাস্কাট।এর ভাড়া হচ্ছে ৪২২২২.০৬ টাকা থেকে শুরু।
- বাংলাদেশ থেকে ওমানের দ্রুততম ফ্লাইট হল ঢাকা থেকে মাস্কাট, ফ্লাইট এর গড় সময় ৭ ঘন্টা ৪৫ মিনিট।
- বাংলাদেশ থেকে ওমান যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স হল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, এয়ার আরাবিয়া আবুধাবি, স্পাইসজেট।
- ওমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহরের গন্তব্য হল মাস্কাট, সালালাহ, সুর।
ওমান ভিসা
আপনি ওমানে ঘুরতে চাইলে আপনার ওমানের পর্যটন ভিসার প্রয়োজন হবে। ওমানে থাকার সময়টি সাধারণত পর্যটন ভিসায় ৩০ দিনের মেয়াদে সংক্ষিপ্ত এবং ভিসার মেয়াদ ৩০ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ওমান পর্যটক ভিসার জন্য আবেদন করার সময় আবেদনকারীকে উপস্থিত থাকতে হবে। ওমান পর্যটন ভিসার জন্য আবেদনের জন্য সব ধরনের ডকুমেন্টর প্রয়োজন হয়। আপনি চাইলে ওমান ভিসা এম্বেসির কাছ থেকে দরকারী তথ্য পেতে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আপনি যেভাবে অনলাইনে ওমান ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন
ওমান ভিসা পাবার জন্য অনেক ওয়েবসাইট আছে যা আপনাকে ভিসা প্রদান করতে পারে বা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। শুধু নিশ্চিত করুন যে সাইটটি ওমান সরকারের সাথে নিবন্ধিত। এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইভিসার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে
ওমানের ভিসা: https://www.instaomanvisa.com/oman.php
এই ওয়েবসাইটটি ব্যক্তি এবং আইনী সংস্থাকে ওমানে স্বল্পমেয়াদী থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আবেদনকারী শুধুমাত্র ইভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন যদি সে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজ পূরণ করতে পারে। আবেদনকারীকে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই সমস্ত বিবরণ পূরণ করতে হবে। আবেদন দাখিলের পর, আবেদনকারীকে অর্থ প্রদান করতে হবে। আবেদনকারী ভিসার সাথে একটি মেইল পাবেন। আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইভিসার প্রিন্টআউট প্রদান করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মেডিকেল টেস্টঃ জেনে নিন মেডিকেল টেস্টের যাবতীয় খুঁটিনাটি
ওমান ভিসা পাবার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য এবং নির্দেশাবলী
আবেদনকারী কেবল তখনই যোগ্য, যখন সে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সঠিক ভাবে পূরণ করতে পারে। মৌলিক প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো হল:
- পাসপোর্টটি ছয় মাসের জন্য বৈধ হতে হবে, এবং এটিতে একটি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে যাতে ভিসায় স্ট্যাম্প করা যায়। পাসপোর্ট অবশ্যই ভালো অবস্থায় থাকতে হবে।
- আবেদনকারীকে তারিখ এবং আবেদনকারীর স্বাক্ষর অথবা ওমান ইভিসার প্রিন্টআউট সহ আবেদনপত্রের নিশ্চিতকরণ পৃষ্ঠার একটি অনুলিপি জমা দিতে হবে।
- আবেদনকারীকে অবশ্যই দুটি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে যা পাসপোর্টে থাকা ছবিটির সাথে দৃশ্যমান এবং অনুরূপ হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- আবেদনকারীকে তার ফ্লাইট রিজার্ভেশন টিকিট এবং হোটেল রিজার্ভেশন টিকিটের একটি কপি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীকে তার সাম্প্রতিক ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
- আবেদনকারীকে অবশ্যই আবেদনপত্রে স্পন্সরের বিস্তারিত তথ্য পূরণ করতে হবে।
- একটি মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও অভিযোগ সাবমিট করা হবে।
ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।