Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
আমরা যারা ইসলামকে মেনে চলার চেষ্টা করি তাদের অনেকেরই ইচ্ছা থাকে নতুন নতুন দু’আ, কুর’আনের আয়াত ও সূরা মুখস্থ করার। হয়তো আমরা অনেকেই সে চেষ্টা করেছি। কেউ কেউ সফল হয়েছি এবং হচ্ছি।
কেউবা আবার ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়েও দিয়েছি। মুখস্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনের একটি অন্যতম কারণ হলো এটা মনে করা যে, আমাদের স্মৃতিশক্তি কমে গিয়েছে। তাহলে এই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় কী? আসুন এ ব্যাপারে জেনে নেই কিছু অসাধারণ কিছু কৌশল ও পড়া মনে রাখার দোয়া এবং আমল।
পড়া মুখস্ত করার অসাধারণ কিছু কৌশল
ক. ইখলাস বা আন্তরিকতা:
যে কোনো কাজে সফলতা অর্জনের ভিত্তি হচ্ছে ইখলাস বা আন্তরিকতা। আর ইখলাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন,
“উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভালো হবে।”
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।” [সূরা আল-বায়্যিনাহঃ ৫]
তাই আমাদের নিয়ত হতে হবে এমন যে, আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেনো একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই বাড়িয়ে দেন।
খ. পাপ থেকে দূরে থাকা:
প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি প্রভাব হচ্ছে দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসাথে থাকতে পারে না। ইমাম আশ-শাফি’ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “আমি (আমার শাইখ) ওয়াকীকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো কোন পাপচারীকে দান করা হয় না।”
আল-খাতীব আল-জামী’ (২/৩৮৭) গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেনঃ
“এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে আবদ, আল্লাহ আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোন কিছু কি আছে? তিনি বলেন, যদি কোন কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে তা হলো পাপ করা ছেড়ে দেয়া।’”
যখন কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
গ. জীবনের অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারসমূহ ত্যাগ করা:
বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ও জ্ঞান অর্জনে অনীহার একটি অন্যতম কারণ হলো আমরা নিজেদেরকে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে রাখি। ফলে কোনো কাজই আমরা গভীর মনোযোগের সাথে করতে পারি না। মাঝে মাঝে আমাদের কারো কারো অবস্থা তো এমন হয় যে, সালাতের কিছু অংশ আদায় করার পর মনে করতে পারি না ঠিক কতোটুকু সালাত আমরা আদায় করেছি।
আর এমনটি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নিজেদেরকে আড্ডাবাজি, গান-বাজনা শোনা, মুভি দেখা, ফেইসবুকিং ইত্যাদি নানা অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে রাখা। তাই আমাদের উচিত এগুলো থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা।
ঘ. কিভাবে দীর্ঘদিনের জন্য মুখস্থ করবেন?
১. প্রতিটি লাইন দশবার করে দেখে পড়া। তারপর নিজে নিজে তা পুনরাবৃত্তি করা।
এভাবে পড়া হয়ে গেলে পরের লাইনে/আয়াতে অগ্রসর হন। যদি কোন শব্দ মনে রাখতে সমস্যা হয় তাহলে সেটির আগের ও পরের শব্দসহ ৫ বার পড়ুন (আগের শব্দ + কঠিন শব্দ + পরের শব্দ)। তারপর পুরো লাইনটি আবার মনে মনে পড়ুন।
২. তারপর পরের লাইন দশবার পড়া।
দুইবার পড়ে নিজে নিজে পুনরাবৃত্তি করবেন না…একদম না !!! সেটা ভুল হবে !!!
আপনি যদি একবার পড়েই মুখস্থ করে ফেলেন তবুও বার বার ততক্ষন দেখে পড়বেন যতক্ষণ না আপনার মনে শব্দগুলো লাইনের ভিতরে গেঁথে যায়। প্রথম লাইনটি দশবার দেখে পড়ুন, পরের লাইনটিও দশবার দেখে পড়ুন।
এখন এই দুইটি লাইন একসাথে তিনবার দেখে পড়ুন, তারপর মনে মনে পড়ুন। তারপর তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এভাবে পৃষ্ঠার শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
এটাকে বলা হয় স্বল্প মেয়াদী মুখস্থ। কয়েক সপ্তাহ পরেই এটা ভুলে যেতে পারেন।
কিভাবে এই পৃষ্ঠাটি দীর্ঘমেয়াদের জন্য মুখস্থ করতে পারবেন??
আপনার মুখস্থ করা পৃষ্ঠাটি খুলুন, দেখে দেখে ২০ বার পড়ুন। ভাল হয় যদি লাইন গুলোর উপর আঙ্গুল রেখে পড়েন। এটি আপানর মাথায় গেঁথে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর এটি আপনি ভুলবেন না। আল্লাহকে শুকরিয়া। কেন?
কারণ আপনি যদি পৃষ্ঠাটি ২০ বার দেখে দেখে পড়েন, আপনার চোখ সেই পৃষ্ঠার ছবি তুলে রাখবে, আর তা আপনার মাথায় গেঁথে যাবে। আল্লাহ যদি চান আপনি তা আর কখনও ভুলে যাবেন না।
পড়া মনে রাখার ১১ টি দারুন টিপসঃ
১. যা পড়েছি তা অন্যকে শেখানো:
কোনো কিছু শেখার একটি উত্তম উপায় হলো তা অন্যকে শেখানো। আর এজন্য আমাদেরকে একই বিষয় বারবার ও বিভিন্ন উৎস থেকে পড়তে হয়। এতে করে ঐ বিষয়টি আমাদের স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়। পড়া মনে রাখার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই এ পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়।
নিজে যা পড়েছি বা জেনেছি তা অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে মস্তিষ্কে আরো ভালোভাবে গেঁথে যায়। তাছাড়া অন্যকে শেখানোর ফলে নিজের দক্ষতা প্রকাশ পায় এবং পড়াটি ভালভাবে আয়ত্ত হয়েছে কিনা তাও বুঝা যায়।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রেইন যেকোন ইনফরমেশন বা তথ্যকে মেমরি বা স্মৃতিতে পরিণত করে ঘুমানোর সময়। তাই পড়া মনে রাখার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোও জরুরি। সাধারণত একজন সুস্থ ব্যক্তির দিনে ৮ ঘন্টার মত ঘুমানো উচিত।
এর থেকে কম ঘুমালে পড়া মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা ব্যস্ত অফিসের মতো কাজ করে। এটি তখন সারাদিনের সংগৃহীত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাত করে। তাছাড়া ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুণর্গঠন ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে দুপুরে সামান্য ভাতঘুম আমাদের মন-মেজাজ ও অনুভূতিকে চাঙা রাখে। এটি একটি সুন্নাহও বটে। আর অতিরিক্ত ঘুমের কুফল সম্পর্কে তো আগেই বলা হয়েছে। তাই আমাদের উচিত রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াহ বিতরণ না করে নিজের মস্তিষ্ককে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া।
৩. নিমনিক তৈরী করা:
আমাদের ব্রেইন আগোছালো জিনিস মনে রাখতে পারে না। তাই কোন কিছু ছক বা টেবিল আকারে সাজিয়ে নিলে কিংবা কবিতার ছন্দ বানিয়ে পড়লে তা সহজেই মনে রাখা যায়। পড়া মনে রাখার এই কৌশল কে নিমনিক (mnemonic) বলা হয়।
একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখবো যে, আমাদের সকলের মুখস্থ করার পদ্ধতি এক নয়। কারো শুয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কারো আবার হেঁটে হেঁটে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়। কেউ নীরবে পড়তে ভালোবাসে, কেউবা আবার আওয়াজ করে পড়ে।
কারো ক্ষেত্রে ভোরে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কেউবা আবার গভীর রাতে ভালো মুখস্থ করতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ উপযুক্ত সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ঠিক করে তার যথাযথ ব্যবহার করা। আর কুর’আন মুখস্থ করার সময় একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ (কুর’আনের আরবি কপি) ব্যবহার করা। কারণ বিভিন্ন ধরনের মুসহাফে পৃষ্ঠা ও আয়াতের বিন্যাস বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে তার একটি ছাপ পড়ে যায় এবং মুখস্থকৃত অংশটি অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে যায়।
৪. পড়ার জন্য সঠিক সময় নির্বাচন করা:
অনেকেরই ধারণা সারাদিন-সারারাত পড়লেই পড়া বেশি মনে থাকে। এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। কারণ সবসময় আমাদের ব্রেইন একইভাবে কাজ করতে পারে না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বিকালের পর আমাদের ব্রেইনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই বিকালে আসরের পর না পড়ে অর্থাৎ সন্ধ্যায় মাগরীবের নামাযের পর বা রাতে পড়া বেশি কার্যকর হয়।
৫. কনসেপ্ট ট্রি ব্যবহার করে পড়া:
কোন বিষয় পড়ার আগে অধ্যায়গুলোকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিলে পড়তে সুবিধা হয়। একে একটি গাছের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। গাছটিকে একটি অধ্যায় বিবেচনা করে প্রতিটি পাতায় অংশ গুলোর একটি করে সারমর্ম লিখে পড়লে পড়া মনে রাখতে সহজ হয়। এ পদ্ধতিকে কনসেপ্ট ট্রি বলা হয়। পড়া মনে রাখতে এটি বেশ কার্যকর।
৬. লিখে লিখে বা ছবি এঁকে পড়ার অভ্যাস করা:
কোন জিনিস পড়ার সাথে সাথে লিখলে বা ছবি আঁকলে পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। কারন নিউরো সায়েন্সের মতে, কিছু লিখলে বা ছবি আঁকলে ব্রেইনের অধিকাংশ জায়গা উদ্দীপিত হয় এবং ছবি বা লেখাটিকে স্থায়ী মেমরিতে রূপান্তরিত করে ফেলে। ফলে পড়াটি মস্তিষ্কতে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সাধারণভাবেও বুঝা যায়, বইতে যেসব বিষয় ছবি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয় তা-ই আমাদের বেশি মনে থাকে। পরীক্ষার সময়ও চোখের সামনে বইয়ের ছবিটিই ভেসে উঠে। তাই লিখে বা ছবি এঁকে পড়া অনেক কার্যকর।
যেমনঃ অংকের বেলায় সম্পাদ্য বা উপপাদ্য ছবি একে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্ত হয়।
৭. বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা:
আমাদের ব্রেইন ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি গুলোকে তখনই দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে যখন তা বারবার ইনপুট দেয়া হয়। বারবার ইনপুট দেয়ার ফলে ব্রেইনের স্মৃতি গঠনের স্থানে গাঠনিক পরিবর্তন হয় যা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি তৈরীতে সাহায্য করে। তাই বেশি বেশি পড়া ও অনুশীলন করা পড়া মনে রাখার অন্যতম উপায়।
এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে পড়লে পরীক্ষার্থীদের অনেক সহায়তা করতে পারে। মুখস্থকৃত বিষয়ের উপর ‘আমল করা: আমরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয় যতো বেশিবার পড়া হয় তা আমাদের মস্তিষ্কে ততো দৃঢ়ভাবে জমা হয়।
কিন্তু আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে অতো বেশি পড়ার সময় হয়তো অনেকেরই নেই। তবে চাইলেই কিন্তু আমরা এক ঢিলে দু’পাখি মারতে পারি। আমরা আমাদের মুখস্থকৃত সূরা কিংবা সূরার অংশ বিশেষ সুন্নাহ ও নফল সালাতে তিলাওয়াত করতে পারি এবং দু’আসমূহ পাঠ করতে পারি সালাতের পর কিংবা অন্য যেকোনো সময়।
এতে একদিকে ‘আমল করা হবে আর অন্যদিকে হবে মুখস্থকৃত বিষয়টির ঝালাইয়ের কাজ।
৮. কালারিং বা মার্কার পেন ব্যবহার করে দাগিয়ে পড়া:
আমাদের মধ্যে অনেকেই মার্ক করে বা দাগিয়ে পড়ে। এটাও পড়া মনে রাখতে বেশ কার্যকর। মার্ক করার ফলে কোন শব্দ বা বাক্যের প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ বেড়ে যায়। পাশাপাশি এর উপর ব্রেইনের ভিজ্যুয়ালিটি ইফেক্টও বেড়ে যায় যা পড়াকে মনে রাখতে সহায়তা করে।
৯. পড়ার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা:
যে বিষয়টি পড়ব তার প্রতি আকর্ষণ জাগাতে হবে। কিংবা আকর্ষণীয় উপায়ে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে পড়া সহজে মনে থাকবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ কোন কিছুর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলে তা সহজেই মস্তিষ্কে মেমরি বা স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং তা স্মৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
যে কোনো কাজে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হাল না ছাড়া। যে কোনো কিছু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শুরুটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়। তাই আমাদের উচিত শুরুতেই ব্যর্থ হয়ে হাল না ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
১০. পড়তে বসার আগে ১০ মিনিট হাঁটা:
পড়ার টেবিলে বসার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে বা হালকা ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে পড়া মনে রাখতে বেশ সুবিধা হয়। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, পড়ার পূর্বে ১০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ পরিমাণ বেড়ে যায়। তাহলে একটু হাঁটার পরেই শুরু হোক পড়ালেখা।
১১. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণ:
পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত আবশ্যক। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের অলস করে তোলে। ফলে আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। তাছাড়া কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী।
সম্প্রতি ফ্রান্সের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যয়তুনের তেল চাক্ষুস স্মৃতি (visual memory) ও বাচনিক সাবলীলতা (verbal fluency) বৃদ্ধি করে। আর যেসব খাদ্যে অধিক পরিমাণে Omega-3 ফ্যাট রয়েছে সেসব খাদ্য স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য খুবই উপকারী।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অনেক ‘আলিম কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের কথা বলেছেন। ইমাম আয-যুহরি বলেন, “তোমাদের মধু পান করা উচিত কারণ এটি স্মৃতির জন্য উপকারী।”
মধুতে রয়েছে মুক্ত চিনিকোষ যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া মধু পান করার সাত মিনিটের মধ্যেই রক্তে মিশে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। ইমাম আয-যুহরি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি হাদীস মুখস্থ করতে চায় তার উচিত কিসমিস খাওয়া।”
কোন কোন আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া। ইমাম যুহরী বলেন: তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।
তিনি আরও বলেন: যে হাদিস মুখস্ত করতে চায় সে যেন কিসমিস খায়। (খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ ২/৩৯৪)
আলেমগণ আরও বলেন: অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্থশক্তির দুর্বলতা বাড়ায়।
মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি ও ভুলে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধে আরও যে জিনিসটি সাহায্য করে সেটি হচ্ছে- মাথায় শিংগা লাগানো। এটি পরীক্ষিত। (আরও বিস্তারিত জানতে ইবনুল কাইয়্যেম এর ‘আততিব্ব আন-নাবাবি’ পড়)।
পড়া মনে রাখার দোয়া ও আমল
আমরা সকলেই জানি, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দু’আ করা যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। এক্ষেত্রে আমরা নিন্মোক্ত দোয়া ও আমলগুলি করতে পারি।
পড়া মনে রাখার দোয়া ১:-
পড়তে বসার পূর্বে প্রথমে ৩ বার যে কোনো দরুদ শরীফ পড়তে হবে ৷ তার পর ৩ বার স্মরণ শক্তির দোয়া পড়া-
رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
উচ্চারণ– ‘রাব্বি যিদনি ইলমা’ (৩ বার)
বাংলা অর্থ– “হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।” [সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪]
তার পর আবার ৩ বার দরুদ শরীফ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে পড়তে বসতে হবে ৷ ইন-শা-আল্লাহ পড়া খুব ভালোভাবে মুখস্থ হবে এবং মনেও থাকবে ৷
পড়া মনে রাখার দোয়া ও আমল ২:-
[ দরূদে ইবরাহিম ১১ বার পড়ে তারপর দোআ- রাব্বিশ-রাহলি ছাদরি… তরপরে পড়া শেষ করে আবার দরূদে ইবরাহিম ১১ বার পড়তে হবে।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد
বাংলা উচ্চারণ :
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ; কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদ; কামা বারাকতা আ’লা ইবরাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ। – ১১ বার
উচ্চারণ :
রাব্বিশ-রাহলি ছাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি ওয়াহলুল ওক্বদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু ক্বাওলি।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ; কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদ; কামা বারাকতা আ’লা ইবরাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইবরাহিম; ইন্নাকা হামিদুম মাঝিদ। – ১১ বার ]
পড়া মনে রাখার দোয়া ও আমল ৩:-
তাছাড়া যিকর বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…” [সূরা আল-কাহ্ফঃ ২৪]
তাই আমাদের উচিত যিকর, তাসবীহ (সুবহান আল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) – এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করা।
অস্থিরতা ও চিন্তামুক্ত থাকার দোয়া-
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم
উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম (৩ বার)
যে কোনো পরিক্ষায় ভালো ফল করার আমল:
ভালো ফল করার আমল ১ঃ
পরীক্ষা ঘরে প্রশ্ন পত্র পাওয়ার পর, প্রশ্ন পত্রটি উলটো করে ধরে প্রথমে ৩ বার দরুদ শরীফ পড়তে হবে ৷ মনে রাখতে হবে এই আমলটি করতে বেসি সময় লাগানো যাবে না, সেই জন্য খুব ছোট দরুদ পড়তে হবে ৷ ছোট দরুদ যেমন- (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম)
তার পর ১১ বার – سُبْحَانَكَ لاَ عِلْمَ لَنَا إِلاَّ مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
উচ্চারণ “সুবহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লামা আল্লামতানা ইন্নাকা আনতাল আলিমুল হাকিম (সুরা বাকারাহ)
তার পর ১১ বার يا فتاح ( ইয়া ফাত্তাহু) তার পর ৭ বার- والله المستعان علىٰ ما تصيفون
তার পর শেষে ৩ বার দরুদ শরীফ পড়ে লিখতে শুরু করতে হবে ৷
পরিক্ষা হয়ে যাওয়ার পর প্রতি দিন রেজাল্ট বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি দিন এশার নামাজের পর ৩০০ বার المليك القدوس (আলমালিকুল কুদ্দুসু) পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে ইন-শা-আল্লাহ পরিক্ষার ফল ভালো হবে ৷
ভালো ফল করার আমল ২ঃ
প্রতিদিন ১০১ বার এই দোয়াটি পাঠ করলে ইন-শা-আল্লাহ পরীক্ষায় সফল হবে। এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করতে হবে ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে ।
দোয়া – والله المستعان علىٰ ما تصيفون
উচ্চারণ:– ওল্লাহুল মুসতায়নু আলা মা তাসিফুন ।
ভালো ফল করার আমল ৩ঃ
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي
উচ্চারণ: রাব্বিশ-রাহলি ছাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি ওয়াহলুল ওক্বদাতাম মিল্লিসানি ইয়াফকাহু ক্বাওলি।
অর্থঃ “হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও, আর আমার কাজকে আমার জন্য সহজ করে দাও এবং জিহবার তথা জবানের জড়তাকে দূর করে দাও, যাতে মানুষ আমার কথা বুঝতে পারে।
অতপর পরীক্ষার খাতা হাতে পেয়ে-
‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাঝিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে খুব খেয়াল করে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড, প্রশ্নপত্রের সেট কোডসহ যাবতীয় তথ্য সুন্দর করে (বৃত্ত ভরাট) পূরণ করা।
তারপর ঘণ্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর নামে ঠাণ্ডা মাথায় প্রথমেই সহজ ও জানা প্রশ্নগুলো উত্তরপত্রে লিখতে শুরু করা।
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ম মেনে সুন্দরভাবে পরীক্ষা দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার দোয়া ও আমল:
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার আমল ১:
পড়ালেখা করতে ইচ্ছা করে না কেন? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। অন্যান্য ব্যস্ততা কিংবা দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা। যদি প্রথম কারণ হয় তাহলে সেসব অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। পড়ালেখার জন্য একনিষ্ঠতা অপরিহার্য।
অন্য সকল ব্যস্ততা পরিহার করলে ইনশাআল্লাহ মন বসতে থাকবে। আর যদি দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনার কারণে পড়ালেখার প্রতি মনোনিবেশ করতে না পারো তাহলে তার চিকিৎসা এই যে, আল্লাহর কাছে দোয়া কর।। নিজেকে ও নিজের সকল বিষয়কে আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করে ভারমুক্ত হও এবং পড়াশোনায় মগ্ন হয়ে যাও। নিম্নের দোয়াটি মুখস্থ করে মাঝে মাঝে পড়বে–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”
হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন। (বুখারী ২৮৯৩)
মনে রাখবে, মন বসে না বলে বসে থাকা রোগবৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। মন বসে না-এই ওয়াসওয়াসাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। মন বসালেই বসবে, জোর করে কাজে লেগে গেলেই মন বসবে। এজন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে লেগে যাও।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার আমল ২:
আর মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির জন্য তোমার প্রতি পরামর্শ হল-
১। গুনাহ থেকে দূরে থাকবে। কারণ গুনাহর কারণে মুখস্থশক্তিতে দুর্বলতা আসে।
খতীব আল-জামে নামক গ্রন্থে (২/৩৮৭) ইয়াইয়া বিন ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক মালেক বিন আনাসকে বললেন: হে আবু আব্দুল্লাহ! মুখস্তশক্তি বাড়ানোর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন: যদি কোন কিছু থাকে তাহলে সেটা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোন মানুষ গুনাহ করে তখন এ গুনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গুনাহর ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে।
সে গুনাহর কারণে তার চিন্তাধারা মশগুল হয়ে থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্থশক্তি অন্যতম।
২। অধিক হারে আল্লাহর যিকির করবে। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: واذكر ربك إذا نسيت“যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর যিকির করুন”। (সূরা কাহাফ: ২৪)
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার দোয়া ও আমলঃ
সফলতার জন্য আল্লাহ রহমত অপরিহার্য বিষয়। আর কোনো কাজে আল্লাহ তাআলার রহমত তখনি আসে যখন বান্দার পক্ষ থেকে চেষ্টা ও দোয়া থাকে।
এ জন্য উদ্দিষ্ট সুফল লাভের জন্য চেষ্টা যেমন প্রয়োজন, তেমনি আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকতের জন্য সকাতরে তার সাহায্য প্রার্থনা করা আবশ্যক। সুতরাং পরীক্ষায় কামিয়াব হতে হলে পরীক্ষার্থীদের প্রতি অভিজ্ঞমহল ও বিশিষ্ট আলেমদের পরামর্শ হল–
প্রথমত,
অলসতা ত্যাগ করে নিজের সাধ্যানুযায়ী কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, যারা ব্যাপক পরিশ্রমী তাদের সাফল্য ব্যাপক হয় আর যারা অপেক্ষাকৃত অলস তারা সফলতা থেকে তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَلِكُلّٖ دَرَجَٰتٞ مِّمَّا عَمِلُواْۖ وَلِيُوَفِّيَهُمۡ أَعۡمَٰلَهُمۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ
‘আর সকলের জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোন যুলম করা হবে না।’ (সূরা আল-আহকাফ ১৯)
দ্বিতীয়ত,
আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, তিনিই সকল কাজে সফলতা দান করেন, তাই তিনি অবশ্যই আমাকে সফলতা দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক : ৩)
তৃতীয়ত,
মহান আল্লাহর নিকটে বিনয়ের সাথে দোয়া করতে হবে। প্রয়োজনে “সালাতুল হাজত” পড়ে দোয়া করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বিশেষ কোন হালাল চাহিদা পূরনের জন্য আললাহ’র উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করাকে “সালাতুল হাজত” বলা হয়। (ইবনু মাজাহ ১৩৮৫) হুযায়ফা রাযি. বলেন, كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন নামাজে রত হতেন’। (আবু দাউদ ১৩১৯)
এই নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। নামাজ শেষে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে।
চতুর্থত,
পরীক্ষার্থীরা সময়ভিত্তিক নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পড়লে পরীক্ষায় কামিয়াব হয় বলে অভিজ্ঞ আলেমরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
পড়ার পূর্বে: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْألُكَ فَهْمَ الأَنبِياءِ وَحِفظَ المُرسَلينَ و المَلائكَةِ المُقَرَّبِينَ
পড়ার পর: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَودِعُكَ ما قَرَأتُ وَ ما فَهِمْتُ وَ ما تَعَلَّمْتُ فَرُدَّهُ إليَّ عِندَ حَاجَتِي لَهُ أنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
পরীক্ষার দিন: اللَّهُمَّ إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَيْكَ وَسَلَّمْتُ أَمْرِي إلَيكَ لا مَلْجَأَ وَلا مَنْجَا مِنكَ إلَّا إلَيك
পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময়: رَّبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَل لِّي مِن لَّدُنكَ سُلْطَانًا نَّصِيرًا
পরীক্ষা শুরুর পূর্বে: رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي بِسم اللهِ الفَتَّاح
পরীক্ষার মাঝে: يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ رَبِّ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
কোনকিছু ভুলে গেলে: اللَّهُمَّ رَبَّ الضَّالَّةِ ، هَادِيَ الضَّالَّةِ ، تَهْدِي مِنَ الضَّلَالَةِ ، رُدَّ عَلَيَّ ضَالَّتِي بِقُدْرَتِكَ وَسُلْطَانِكَ مِنْ عَطَائِكَ وَفَضْلِكَ
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হলে: اللُّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَ سَهْلاً ، وَأَنْتَ إِنْ شِئْتَ جَعَلْتَ الْحَزْنَ سَهْلاً
পরীক্ষা শেষ করে: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ
উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবায়ে কেরাম রাযি., তাবেইন ও পরবর্তী মনীষীগণ এ দোয়াগুলো বা এগুলোর একাংশ বিভিন্ন সময়ে পড়তেন। সুতরাং বাড়িতে বা যে কোনো স্থানে লেখাপড়ার শুরুতে কিংবা সাধারণ দোয়াতেও এ দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে।
স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য দু’আ ও যিকির করাঃ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আসলে কোনও কিছু মনে রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই বেশী বেশী জিকির করা ও আল্লাহর কাছে এ ব্যপারে সাহায্য চাওয়া, যেন তিনি আমাদের মুখস্থ করার ক্ষমতা বা স্মরণশক্তি বাড়িয়ে দেন। স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য এই দু’আ বেশী বেশী করে পড়ুন।
اًرَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي
ربِّ زِدْنِي عِلْم
উাচ্চারন: রাব্বিশ রাহলী সাদরি; ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি; ওয়াহলুল উ’কুদাতাম মিল্লিসানি; ইয়াফকাহু ক্বওলী; রাব্বি ঝিদনী ঈলমা।
অর্থাৎ: হে আমার পালনকর্তা! আমার হৃদয় খুলে দিন (আমাকে আত্মবিশ্বাস, সন্তুষ্টি এবং সাহস প্রদান করুন); আমার জন্য আমার কাজ সহজ করুন; এবং আমার বক্তব্যের বাধা অপসারণ করে দিন, যাতে তাঁরা আমার কথা বুঝতে পারে। হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সুরাহ ত্ব-হা; ২০ঃ ২৫-২৮)
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারন: রাব্বী ইন্নি বিমা আংঝালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকীর।
অর্থাৎ: হে আমার পালনকর্তা! আপনার প্রেরিত প্রত্যেকটি ভালো জিনিষের প্রতি আমি অত্যন্ত মুখাপেক্ষী। (সূরা কাসাস; ২৮ঃ২৪)
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا , وَ رِزْقًا طَيَّبًا , وَ عَمَلاً مُتَقَبَّلاً
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান না’ফিয়া্ন; ওয়া রিযকান তাইয়্যেবান; ওয়া আমালাম মুতাকাব্বালান।
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আমাকে উপকারী ইলম (জ্ঞান) দান করুন , পবিত্র রিজিক দান করুন এবং আপনার কাছে গ্রহণীয় আমলের তৌফিক দান করুন। (ইবনে মাযাহ এবং অন্যান্য)
اللِّهُم انّفَعنِي بِمَا عَلَّمتَنِي وَ عَلِّمنِيِ مَا يَنفَعنِي
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা ইংফা’আনী বিমা ‘আল্লামতানি ওয়া আল্লামনি মা ইয়াংফা’উনী।
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যা শিখিয়েছেন তা আমার জন্য উপকারী বানিয়ে দিন এবং আমাকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিন যা আমার উপকার করে।
اللَّهُمَّ الْطُفْ بِىْ فِىْ تَيْسِيْرِ كُلِّ عَسِيْرٍ فَاِنَّ تَيْسِيْرَكُلِّ عَسِيْرٍ عَلَيْكَ يَسِيْرٌَ
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা আলতুফ বী ফী তাইসিরি কুল্লি ‘আসীর, ফাঈন্না তাইসীরা কুল্লী আসীরীন আলাইকা ইয়াসির।
অর্থাৎ: হে আল্লাহ! আপনার বিশেষ অনুগ্রহ ও মেহেরবানী দিয়ে আমার জন্য প্রত্যেক কঠিন বিষয় সহজ করে দিন, কারন আপনার জন্য যেকোন কঠিন বিষয় সহজ করা খুবই সহজ।
তো বন্ধুরা, এই ছিলো পড়া মনে রাখার দোয়া, অসাধারণ কৌশল, ও আমলগুলি। এই লেখাটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আজকের মতো এখানেই বিদায়, দেখা হবে আগামী লেখাতে। সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন।
সৌজন্যেঃ ‘কমদামে ডট কম’