Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, নয় মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে আমরা বিজয়ী হয়েছি। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের, গৌরবের কাহিনি। বাঙালি জাতির এমন অনেক গৌরবের কাহিনি আছে। যে সব জানতে হলে ইতিহাস পাঠ প্রয়ােজন।
ইতিহাস তুলে ধরে দেশ বা জাতির বিভিন্ন যুগের সামাজিক রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনের সত্যনিষ্ঠ ধারাবাহিক বর্ণনা। মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত এই সব বর্ণনাই ইতিহাসের বিষয়বস্তু।
ইতিহাস পাঠ করতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ইতিহাস কী? জানতে হবে এর বিষয়বস্তু এবং পাঠের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে। এই লেখাতে আমরা আলোচনা করবো ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন ও ইতিহাস কি, ইতিহাসের সংজ্ঞা ইত্যাদি। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন।
ইতিহাস
‘ইতিহাস’ শব্দটির উৎপত্তি ‘ইতিহ’ শব্দ থেকে যার অর্থ ‘ঐতিহ্য’। ঐতিহ্য হচ্ছে অতীতের অভ্যাস, শিক্ষা, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয় ইতিহাস। ঐতিহাসিক ই.এইচ.কার-এর ভাষায়, ইতিহাস হলাে বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ।
ইতিহাস শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে এর রূপ দাঁড়ায়, ইতিহ+আস। যার অর্থ এমনই ছিল বা এরূপ ঘটেছিল। ঐতিহাসিক ড. জনসনও ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ইতিহাস বলেছেন। তাঁর মতে, যা কিছু ঘটে তাই ইতিহাস। যা ঘটে না তা ইতিহাস নয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সমাজ ও রাষ্ট্রে নিরন্তর বয়ে যাওয়া ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস।
গ্রিক শব্দ ‘হিস্টরিয়া (Historia) থেকে ইংরেজি ‘হিস্ট্রি’ (History) শব্দটির উৎপত্তি। যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ইতিহাস। হিস্টরিয়া’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডােটাস (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক) তিনি ‘ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত। তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর গবেষণা কর্মের নামকরণে এ শব্দটি ব্যবহার করেন যার আভিধানিক অর্থ হলাে সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা।
ইতিহাসের সংজ্ঞা
বিখ্যাত ইতিহাসবিদগণ ইতিহাসের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটা উল্লেখযােগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলঃ
- ডক্টর জনসন বলেন, “যা কিছু ঘটে তা-ই ইতিহাস।” তিনি আরাে বলেন, “অতীতের কাহিনী মাত্রই ইতিহাস।”
- ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মতে, “ইতিহাস হলাে মানব সমাজের অতীত কার্যাবলির বিবরণী।”
- টয়েনবি বলেন, “সমাজের জীবনই ইতিহাস। প্রকৃতপক্ষে মানব সমাজের অনন্ত ঘটনা প্রবাহই ইতিহাস।” |
- ঐতিহাসিক র্যাপসন বলেন, “ঘটনার ক্রমিক এবং বৈজ্ঞানিক বিবরণই ইতিহাস।”
- ইতিহাস শাস্ত্রবিদ ই.এইচ.কার মনে করেন যে, “ইতিহাস হলাে বর্তমান ও অতীতের মধ্যে অন্তহীন সংলাপ।” তিনি আরাে মনে করেন যে, “ইতিহাস হলাে ঐতিহাসিক ও তথ্যের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার এক অব্যাহত প্রক্রিয়া।” মূলত ইতিহাস হচ্ছে অতীতকালীন সময়কার মানব সমাজের ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিক বিবরণী, যার মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সংঘাত, সম্প্রীতি তথা মানব সভ্যতার ভাঙাগড়ার পর্যালােচনামূলক ইতিকথা।
ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন
ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, চলুন দেখে নেই ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন?
- মানবসমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনের সত্য নির্ভর বিবরণ হচ্ছে ইতিহাস। যে কারণে জ্ঞানচর্চার শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব অসীম। ইতিহাস পাঠ মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুঝতে, ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে সাহায্য করে। ইতিহাস পাঠের ফলে মানুষের পক্ষে নিজের ও নিজদেশ সম্পর্কে মঙ্গল-অমঙ্গলের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। সুতরাং দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তির প্রয়ােজনে ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি।
- অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ জাতির সফল সংগ্রাম, গৌরবময় ঐতিহ্যের তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে জাতীয়তাবােধ, জাতীয় সংহতি সুদৃঢ়করণে ইতিহাস পাঠের বিকল্প নেই।
- ইতিহাস জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তােলে। বিভিন্ন মানবগােষ্ঠির উত্থান-পতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলাে জানতে পারলে মানুষ ভালাে মন্দের পার্থক্যটা সহজেই বুঝতে পারে। ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে।
- ইতিহাসের ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ ইতিহাস পাঠ করে অতীত ঘটনাবলির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ইতিহাসের শিক্ষা বর্তমানের প্রয়ােজনে কাজে লাগানাে যেতে পারে। ইতিহাস দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় বলে ইতিহাসকে বলা হয় শিক্ষনীয় দর্শন। মানুষ কৌতুহলপ্রিয়। মানুষ তার অতীত ঘটনা জানতে চায়। ইতিহাস পাঠ করার মাধ্যমেই অতীতকে জানা সম্ভব।
- সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস পাঠ করে যে জ্ঞান লাভ হয়, তা বাস্তব জীবনে চলার জন্য উৎকৃষ্টতম শিক্ষা। ইতিহাস পাঠ করলে বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ে, দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহ জন্মে।
শেষ কথা
ইতিহাস হলাে মানব সভ্যতা ও মানব সমাজের অগ্রগতির ধারাবাহিক সত্যনির্ভর বিবরণ। বিভিন্ন জাতি গােষ্ঠির উত্থান পতনের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা ইতিহাসের বিষয়বস্তু। গ্রিক পণ্ডিত হেরােডােটাস সর্বপ্রথম বিজ্ঞান সম্মতভাবে মানুষের অতীতের কাহিনি ধারাবাহিকভাবে রচনার চেষ্টা করেছিলেন বলে তাকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। ইতিহাস পাঠ করে আমরা অতীতের অবস্থা জানতে পারি। আবার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎও গড়তে পারি। সর্বোপরি ইতিহাস পাঠ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মমর্যাদাবােধ এবং জাতীয়তাবােধেরও জন্ম দেয়। সে ক্ষেত্রে ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ একটি শাস্ত্র বা বিষয়।
তথ্যসুত্রঃ নবম ও দশম শ্রেণীর ইতিহাস বই
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও কমপ্লেইন করা হবে।
এই ব্লগের কোন লেখায় তথ্যগত কোন ভুল থাকলে আমাদের Contact পেইজে সরাসরি যোগাযোগ করুন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য যাচাই করে লেখা আপডেট করে দিবো।
ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।