Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
সঞ্চয়পত্র হল এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ী হিসাব যার একটি নির্দিষ্ট সুদের হার এবং এটি শেষ হবার একটি নির্দিষ্ট তারিখ থাকে। সঞ্চয়পত্রের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। একেক সঞ্চয়পত্রের একেক ধরনের মেয়াদ থাকে। যেমন সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ তিন মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আপনি যতদিন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে টাকা রেখে যাবেন এর সুদের হারও তত বেশি পাবেন।
সঞ্চয়পত্রের প্রকারভেদ
বাংলাদেশে প্রধানত ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে।
১) বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
২) পরিবার সঞ্চয়পত্র
৩) মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
৪) পেনশনার সঞ্চয়পত্র
এই চার ধরনের সঞ্চয়পত্র এর মধ্যে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র অন্যতম। আমরা আজকে শুধু এই পারিবারিক সঞ্চয়পত্র নিয়েই আলোচনা করব।
পরিবার সঞ্চয়পত্র
পরিবার সঞ্চয়পত্র একটি ডিপোজিট যা ৫ বছরের একটি সঞ্চয় প্রকল্প যা পারিবারিক সঞ্চয়পত্র নামেও পরিচিত। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা (বয়স ১৮ বছরের বেশি) এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। সর্বনিম্ন ১০,০০০/- টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত আপনি এই পারিবারিক সঞ্চয় করতে পারবেন। নিম্ন লিখিত পারিবারিক সঞ্চয়ের সুদের/মুনাফার হিসাবটি দেখলে আপনাদের বুঝতে আরো সহজ হবে।
সময়কাল | মুনাফা/সুদ |
টাকা জমা রাখার ১ বছর পর | ৯.৫০ শতাংশ |
টাকা জমা রাখার ২ বছর পর | ১০.০০ শতাংশ |
টাকা জমা রাখার ৩ বছর পর | ১০.৫০ শতাংশ |
টাকা জমা রাখার ৪ বছর পর | ১১.০০ শতাংশ |
টাকা জমা রাখার ৫ বছর পর | ১১.৫২ শতাংশ |
আপনি যদি এই সঞ্চয়পত্রে ১ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করেন তাহলে আপনি এর মাসিক মুনাফা পাবেন ৮৬৪ টাকা। যেহেতু ৫ বছর মেয়াদি, তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সঞ্চয়পত্রে একেক বছরে একেক রকম হারে সুদ/মুনাফা পেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি? কীভাবে লোন পাবেন? বিস্তারিত গাইড
পরিবার সঞ্চয়পত্রের টাকার পরিমান মুল্যায়ন
টাকার মুল্যায়ন এর মধ্যে রয়েছে যেমন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু তারপর ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার টাকা, ১ লক্ষ টাকা, ২ লক্ষ টাকা, ৫ লক্ষ টাকা এবং ১০ লক্ষ টাকা। এই পরিমান টাকা দিয়েই আপনি শুরু করতে পারবেন এবং মাস শেষে মুনাফা প্রদান করা হবে আপনার টাকা অনুযায়ী। আপনার ৫ বছর শেষ হওয়ার পর আপনাকে আপনার আসল টাকা বুঝিয়ে দেয়া হবে। নিম্ন লিখিত ছকটি দেখলে আপনি উপরের লিখিত টাকার সুদ/মুনাফা সম্পর্কে জানতে সুবিধা হবে।
টাকার পরিমান | মাস ভিত্তিক সুদ/মুনাফার টাকার পরিমান |
১০,০০০ টাকা | ৯৬ টাকা |
২০,০০০ টাকা | ১৯২ টাকা |
৫০,০০০ টাকা | ৪৮০ টাকা |
১,০০,০০০ টাকা | ৯৬০ টাকা |
২,০০,০০০ টাকা | ১,৯২০ টাকা |
৫,০০,০০০ টাকা | ৪,৮০০ টাকা |
১০,০০,০০০ টাকা | ৯,৬০০ টাকা |
আপনি কেন পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনবেন?
আপনি যদি আপনার টাকা কোথাও বিনিয়োগ করার চিন্তা করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য পারিবারিক সঞ্চয়পত্র একটি দুর্দান্ত সমাধান। এই সঞ্চয় আপনাকে উচ্চ সুদের গ্যারান্টি দিতে পারে। এর মানে হচ্ছে আপনার অর্থ এই সঞ্চয় মেয়াদে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে প্রদান করা হয় এবং মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ প্রতি তিন মাস ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র মাসিক ভিত্তিক মুনাফা দেয়াতে এতে লাভ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। এই সঞ্চয়পত্রটি আপনি বাংলাদেশের সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১ টি কার্যালয় থেকে গ্রহন করতে পারবেন। এর একটি সুবিধা মুলক দিক হচ্ছে আপনি একই জায়গা থেকেই এই সঞ্চয়পত্রটি ভাংতে পারবেন। অবশ্যই আপনাকে সঞ্চয়পত্রটি ভাঙানোর দিন উপস্থিত থাকতে হবে। আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আমি একটি লিংক দিয়ে দিচ্ছি যার মাধ্যমে এর ফরমটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
লিংকঃ পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আবেদন ফরম
✅ পরিবার সঞ্চয়পত্র কীভাবে করবেন?
পরিবার সঞ্চয়পত্র সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগ। আবার, গ্যারান্টি এবং সর্বাধিক মুনাফার ক্ষেত্রে এই সঞ্চয় খুবই ভাল। অন্তত ব্যাংকে স্থায়ী আমানত এবং শেয়ার বাজারের বিনিয়োগের তুলনায়। তবে কেউ চাইলে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে না এই সঞ্চয়ে। কমপক্ষে এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে আপনার ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইটিআইএন) থাকতে হবে। যদিও এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইটিআইএন লাগে না। ইটিআইএন বলতে বুঝানো হয়েছে ইলেক্ট্রনিক কর সনাক্তকরন নাম্বার।
পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের একটি নির্দিষ্ট ফর্ম রয়েছে। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে গ্রাহকদের প্রথমে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে যেসব প্রয়োজনীয় কাজপত্রাদি লাগবে তা নিচে দেওয়া হলঃ
- গ্রাহক এর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং মনোনীত ব্যক্তির দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
- গ্রাহক এবং মনোনীত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি লাগবে।
- যদি মনোনীত ব্যক্তির বয়স ১৮ না হয়ে থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধনের কপি লাগবে।
- গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং চেক এর কপি লাগবে।
- গ্রাহক যেখানে তার সুদ এবং আসল টাকা জমা রাখবেন বা টাকা উওোলন করবেন এর হিসাব নাম্বার লাগবে।
- সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের নির্দারিত আবেদন ফর্ম।
- ক্রেতার ই-টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি (দুই লক্ষ টাকার বেশি ক্রয়ের জন্য)
পরিবার সঞ্চয়পত্রের উপকারিতাঃ
আপনার পরিবার যত বড় বা ছোটই হোক না কেন, যদি আপনার কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের এবং লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন থাকে তবে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র হতে পারে ভালো একটি পছন্দ। পরিবার সঞ্চয়পত্রের রয়েছে অনেক সুবিদা, এইসব সুবিদার জন্য আপনি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চিন্তা করতে পারেন।
- ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ।
- লভ্যাংশ ফেরতের নিশ্চয়তা।
- জরুরী তহবিলের জন্য সঞ্চপত্র ভাঙানো যায়।
- বাড়ি কেনা, কিংবা বিদেশ যাত্রার জন্য এককালীন টাকা পাওয়ার সুবিদা।
- কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, গাড়ি, বা অন্যান্য বড় ক্রয়ের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ভালো একটি চিন্তা
- সন্তানের ভবিষ্যৎ, লেখাপড়া নিশ্চিতের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উপকারি।
- বড় কোন অসুখের ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ ওষুধের মতো কাজ করে।
পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের যোগ্যতা
আপনি চাইলেই পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন না। সরকার এ ব্যাপারে কিছু নিয়ম দিয়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে অবশ্যই ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী হতে হবে। বাংলাদেশের শারীরিক যে কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী এবং পুরুষ এবং ৬৫ বছরের নাগরিকেরা শুধু এক নামে এই সঞ্চয়পত্রটি খুলতে পারবে। যদি কোন কারনে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক মারা যান, তাহলে সেই টাকা পাবে তার মনোনীত বা নমিনি ব্যক্তি। পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের সুবিধা হল আপনি এখানে এক বা একাধিক মনোনীত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এটি বাধ্যতামুলল নয়। আপনি চাইলে অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরও মনোনয়ন দিতে পারবেন। গ্রাহকের মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে সেই সঞ্চয়পত্রটি আদালতের কাছ থেকে ওই ব্যক্তির উত্তরাধিকার অর্থাৎ ওই গ্রাহকের মনোনীত ব্যক্তির কাছে টাকা হস্তান্তর করতে হবে। গ্রাহক এবং মনোনীত ব্যক্তি যদি তারা দুজনই মারা যায় তাহলে আইনি উত্তরাধিকারীরা এই সঞ্চয়পত্র ভাংতে পারবে।
✅ আরো পড়ুনঃ কর্মসংস্থান ব্যাংক কি? কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার বিভিন্ন উপায়।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও অভিযোগ সাবমিট করা হবে।
ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।