Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কথাটি ছোটবেলা থেকে অনেকেই পড়েছেন। কৃষিপ্রধান এই দেশে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি আবশ্যক। সেজন্য বাংলাদেশে অনেকগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে কৃষি সম্পর্কিত চারটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে শিক্ষার্থীদের কৃষি বিষয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ রয়েছে। যতগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বা Sylhet Agricultural University: (SAU)। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে সংক্ষেপে সিকৃবি বলেও ডাকা হয়ে থাকে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বারান্দা, মেইনগেট, বন্ধু টিলা, শহিদমিনার, প্রশাসন ভবন, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, লেকসাইডের পাকা বেঞ্চি, জালালের চায়ের দোকান, ট্যাঙ্কির তলা, ক্যাফেটেরিয়া, সেকেন্ড গেইট, ইকোপার্ক সবকিছুতেই বর্তমানে হাজারো শিক্ষার্থীদের সুখ, দুঃখ ও আবেগ লুকিয়ে রয়েছে। টিলাঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর এক অবাক বিস্ময়। আপনি যদি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর এই অপার সৌন্দর্যের মধ্যে হারিয়ে যেতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু নিচে আলোচনা করা হলোঃ
অবস্থান ও স্থাপত্য কাল
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা সিলেট শহরের টিলাগড়ে অবস্থিত। সিলেটের বিভাগীয় শহর থেকে ৭ কিলোমিটার (রাজধানী ঢাকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার) উত্তর-পূর্বে ৫০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠেছে এই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনে ছোট হলেও ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এখানে অবস্থিত ছোট-বড় টিলাগুলি। এছাড়াও প্রায় ১২.২৯ একর ভূমি নিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ-তামাবিল বাইপাস সড়ক সংলগ্ন খাদিম নগর এলাকায় বিকেএসপি এর পূর্ব পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও গবেষণা মাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে শিক্ষাদান ও দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর টিলা ও সমতল ভূমি ঘিরে নগরীর আলুরতল এলাকায় যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত ’’সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৬’’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ৩রা অক্টোবর সিলেট সরকারি ভ্যাটেরিনারী কলেজ পুনর্গঠণ করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় লোকেশন
ভৌত স্থাপনাসমূহ
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে
- ১ টি প্রশাসনিক ভবন,
- ১ টি শিক্ষক ছাত্রকেন্দ্র (টিএসসি),
- ১ টি, ১ টি রূপালি ব্যাংক লিমিটেড,
- ১ টি টিচার্স ক্লাব,
- ৫ টি কর্মচারী ভবন,
- ৩ টি আবাসিক শিক্ষক ভবন,
- ১ টি কর্মকর্তা ডরমিটরি,
- ১ টি অডিটরিয়াম,
- ১ টি কেন্দ্রীয় গ্যারেজ,
- ৫ টি ছাত্র পরিবহন বাস ও
- ১ টি হেলথ সেন্টার রয়েছে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ৬ টি অনুষদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ভ্যাটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স নামে একটি অনুষদ ছিল। তারপরে এখানে এগ্রিকালচার, ফিসারিজ এবং এগ্রিকালচারাল ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস স্ট্যাডিজ নামে আরও তিনটি অনুষদ চালু হয়। বর্তমানে আরও দুটি অনুষদ এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ও বায়োটেনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ চালু করে। ৬টি অনুষদেঃ
- ভেটেরিনারি, এনিম্যাল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সে অনুষদ চৌদ্দটি বিভাগ নিয়ে গঠিত।
- কৃষি অনুষদ এগারোটি বিভাগ নিয়ে গঠিত।
- মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ ছয়টি বিভাগ নিয়ে গঠিত।
- কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ পাঁচটি বিভাগ নিয়ে গঠিত।
- কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ পাঁচটি বিভাগ নিয়ে গঠিত।
- বায়োটেনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ছয়টি বিভাগ নিয়ে গঠিত।
সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদ ৪৭ টি বিভাগ, মাঠগবেষণা কেন্দ্রসহ উন্নত ল্যাবরেটরি একটি এবং ভেটেরনারি টিচিং হাসপাতাল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ৪৭টি বিভাগে ২৫৫ জন শিক্ষক, ১৫৪ জন কর্মকর্তা, ২১১ জন কর্মচারী ও ৩০০০+ শিক্ষার্থী আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনের পার্শস্থ ভবনটি আধুনিক গ্রন্থাগার হিসেবে চলমান আছে। যেখানে রয়েছে ১০৫২৫ টি বই এবং ২৩১০ টি জার্নাল। বাংলাদেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের মধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এর সৌন্দর্য এতটা বেশি মনমুগ্ধকর যে এর নামকরণ করা হয়েছে “সূর্যালোকে বর্ণমালা”।
ছেলেদের আবাসিক হল ৫টি
১) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
২) হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী হল
৩) শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া হল
৪) আব্দুস সামাদ আজাদ হল
৫) হযরত শাহপরাণ হল।
মেয়েদের আবাসিক হল দুইটি
১) সুহাসিনী দাস হল
২) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল।
পড়াশোনার মান
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থা্র উন্নতি সাধন করতে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি, নির্মিত পরিবেশ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা, গবেষণা এবং জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নেতৃত্ব প্রদান করা। কৃষি অধ্যয়নের জন্য উৎকর্ষের কেন্দ্রে পরিণত হওয়া এবং আগামী দিনের নেতাদের বিকাশিত করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাচ্ছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর পড়াশোনার মান অতি উন্নত। এখানে শিক্ষার্থীরা গবেষণার পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ পায়। গবেষণাগার এখানে অনেক উন্নত। এমনকি অনেক শিক্ষার্থী গবেষণা করে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও লাভ করেছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ‘পোকা আক্রান্ত আগরকাঠ: বাংলাদেশের আগর বাজারের একটি নতুন মূল্যবান পণ্য’ গবেষণা করে। তার উপস্থাপনা ‘বেস্ট পোস্টার প্রেজেন্টর এওয়ার্ড’ হিসেবে মনোনীত হয়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রতি আরেকটি গবেষণা হল টমেটো বা শিম এর প্রোটিন সমৃদ্ধ গ্রীষ্মকালীন নতুন দুটি জাত আবিষ্কার করা। এই গবেষণার ফলে টমেটো বা সিমের জন্য আর শীতকালের অপেক্ষা করতে হবে না। এমনকি এটি মধ্যম স্তরের জনশক্তির চাহিদা পূরণের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স এবং কয়েকটি ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ প্রদান করে। যদিও কিছু সমস্যা থেকে গেছে। এখনো অনেক অনুষদে ব্যবহারিক কার্যক্রমগুলো সম্পূর্ণভাবে করা হয় না। পর্যাপ্ত ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির অভাবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে পারে না। তাই শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিখানোর থেকে ক্লাসরুমে পড়াতেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ করে কৃষি ও মাৎস্য-বিজ্ঞান অনুষদের ডিপার্টমেন্টগুলোর অবস্থা অনেক বেশি করুন। আবার মাৎস্য-বিজ্ঞান অনুষদে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ব্যবহারিক অসুবিধার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে শিক্ষকদের সংকট। তবে আস্তে আস্তে এইসকল সংকট মোকাবেলা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সবটুকু দিয়ে নিজেদের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসটি বর্তমানে সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রচুর সংখ্যক আবেদন গ্রহণ করছে এবং বর্তমানে ছাত্র, গবেষক, অনুষদ, পোস্ট ডক্টরাল ফেলো এবং সাপোর্ট স্টাফের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য পূরণকরণের মূল চাবিকাঠি।
গৃহীত উদ্যেগ
কৃষি বদৌলতে ষোল কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে একটা মানুষও না খেয়ে নেই। বাংলাদেশের যে ক্ষেতে আগে ১ টন ধান ফলন হতো, এখন সেখানে হচ্ছে এখন ফলছে ৫-৬টন। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর হাজার শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে বের হয়। এরা বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই গ্র্যাজুয়েটরা প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মানব-প্রাণী ইন্টারফেসে স্বাস্থ্যের উন্নতি, ক্লিনিকাল পরিসেবার ব্যবস্থা, মহামারীবিদ্যা এবং কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারা বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সেবার সাথেও জড়িত। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের কৃষির উচ্চশিক্ষার একটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষা এবং শেখার, গবেষণা ও জ্ঞান বিনিময়ে উৎকর্ষতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাড়িতে এবং বিশ্বজুড়ে অসামান্য পণ্ডিতদের লালন -পালনের চেষ্টা করে এবং সময়ের সাথে কৃষি ক্ষেত্রে সকল চাহিদা পূরণের জন্য যুক্তিসঙ্গত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিশ্বব্যাপীর উপস্থিতি, আঞ্চলিক গুরুত্ব এবং সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সমাজ ও নেতাদের উন্নয়নে সহায়তা করে। যথাঃ
- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানকার গবেষকরা সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় হাওরে জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। বোরো ফসল নির্ভর হাওরাঞ্চল যাতে আর পতিত না থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৫ সাল থেকে সুনামগঞ্জের দেকার হাওর সহ বিভিন্ন হাওরের নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে।
- ২০১৮ সালের জুলাইয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রক্ষায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহায়তায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পে খরিপ ও রবি মৌসুমে লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রান্তিক জনপদের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার ল্যাবের তত্ত্বাবধানে সিলেট অঞ্চলের কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য জানার জন্য প্রথমবারের মতো অটোমেটেড এগ্রোমেটিওরোলজিক্যাল স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
- প্যাথলজি বিভাগ গবাদিপ্রাণিতে মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং তার জন্য মানবদেহের এন্টিবায়োটিকের কার্য়কারিতা বিনষ্ট হয়ে মানুষের যে মৃত্যু হয় তার উপর গবেষণা করছে।
- কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
যেভাবে ভর্তি হওয়া যায়
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পূর্বে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীরা অনলাইনে মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর আসন সংখ্যা ৪৩১ টি। এখানে ভেটেরিনারি, এনিম্যাল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সের অনুষদে সাধারণ আসন সংখ্যা ৯২, সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৮। কৃষি অনুষদে সাধারণ আসন সংখ্যা ৮১ এবং সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৭। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে আসন সংখ্যা ৬৯ এবং সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৬।
ন্যূনতম যােগ্যতা
- ২০১৭/২০১৮ সালে এসএসসি/ সমমান এবং ২০১৯/২০২০ সালে এইচএসসি/ সমমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করতে হবে এবং উভয় ক্ষেত্রের প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ এবং সর্বমােট ন্যূনতম জিপিএ ৮.০০ (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত) থাকতে হবে।
- অবশ্যয় উভয় পরীক্ষায় জীববিদ্যা, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত আলাদা বিষয় হিসেবে থাকতে হবে।
লিখিত নির্বাচনী পরীক্ষা
- Multiple Choice Question (MCQ) পদ্ধতিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সর্বশেষ পাঠ্যক্রম অনুসরণে ইংরেজি, জীববিদ্যা, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলা ও ইংরেজিতে প্রণীত হবে।
- প্রশ্নের প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ (শূন্য দশমিক দুই পাচ) নম্বর করে কাটা হবে।
পরীক্ষার বিষয়
MCQ (Multiple Question Choice) পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে মোট ১০০ নম্বরের। পরীক্ষার বিষয় হবে যথাক্রমেঃ
- ইংরেজি-১০, প্রাণিবিজ্ঞান- ১৫, উদ্ভিদবিজ্ঞান- ১৫, পদার্থবিজ্ঞান- ২০, রসায়ন- ২০ এবং গণিত – ২০।
- লিখিত পরীক্ষার জন্য থাকবে ১০০ নম্বর এবং এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ এর (চতুর্থ বিষয় ব্যতীত) এসএসসি/ সমমান হতে ২৫ নম্বর এবং এইচএসসি/ সমমান হতে ২৫ নম্বর যােগ করে ৫০ নম্বর। সর্বমােট ১৫০। এই নম্বরের মধ্যেই মেধা স্কোর নির্ধারণ করে ফলাফল দেওয়া হবে।
আবেদনের নিয়মাবলী
আবেদন ফি ১০০০/- টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবেদনের নিয়মাবলী হলঃ
- আবেদনকারীকে Online-এ আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এর পূর্বে ওয়েবসাইটের ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। সে অনুযায়ী ফরম পূরণ করতে হবে।
- ফরম পূরণ করার সময় প্রদত্ত মোবাইল নম্বর এ SMS দেওয়া হবে। সেই SMS এ পিন/লগইন পাসওয়ার্ড ও ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে।
- সাধারণ’ অপশন নির্বাচন/ সিলেক্ট করতে হবে। আর যদি কোটায় আবেদনকারী হন তাহলে আবেদনকারীদের কোটা সংক্রান্ত সনদ এর স্ক্যান কপি Online আবেদন ফরমের নির্ধারিত স্থানে আপ্লোড করতে হবে।
ভর্তি প্রস্তুতি
বিগত কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখলে ভর্তি প্রস্তুতি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। বিগত বছর থেকে প্রতিবছর ৩০-৪০ শতাংশ প্রশ্ন কমন থাকে। তাছাড়াওঃ
- জীববিজ্ঞানঃ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উদ্ভিদের বিভিন্ন পর্বের নাম, সামুদ্রিক শৈবালের গঠন, উদ্ভিদের কোষ, সালোকসংশ্লেষণ, শ্বসন, প্রাণীর শ্রেণিবিভাগ, হাইড্রা, পরিপাকতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে বেশি। আবুল হাসনাতের উদ্ভিদবিজ্ঞান বইয়ের খুঁটিনাটি জানতে হবে। প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য গাজী আজমলের বইটিই যথেষ্ট।
- পদার্থবিজ্ঞানঃ কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা, তড়িৎ, চুম্বক, আপেক্ষিক তত্ত্ব, ইলেকট্রনিকস সম্পর্কিত অধ্যায় থেকে গাণিতিক সমস্যা বেশি আসে। এগুলোর প্রতিটি অধ্যায়ের গাণিতিক সমস্যার উদাহরণসহ প্রশ্ন এবং বিগত বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে আসা গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। কারণ পদার্থবিজ্ঞানে অধিকাংশই গাণিতিক সমস্যা থাকে। তবে অবশ্যই সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সমাধানের নিয়ম শিখতে হবে। ‘দি ভার্সিটি টার্গেট’ এই বইটি পড়তে পারেন।
- রসায়নঃ রসায়ন প্রথম পত্রের মোলার ও মোলারিটি, জারণ-বিজারণ, রাসায়নিক সাম্যবস্থা অধ্যায় থেকে অঙ্ক বেশি আসে। রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকে বিভিন্ন বিক্রিয়ার উৎপাদক বিষয়ে বেশি প্রশ্ন আসে। কবীরের রসায়ন প্রথম পত্র এবং হাজারী নাগের দ্বিতীয় পত্র ভালো করে পড়লেই হবে।
- গণিতঃ সেট, ফাংশন, অমূলদ-মূলদ সংখ্যা, বিন্যাস, সমাবেশ, ত্রিকোণমিতি ও ক্যালকুলাস থেকে সাধারণত গণিতে প্রশ্ন বেশি আসে। একখানে ভালো করতে হলে প্রতিটি অধ্যায়ের সূত্র মুখস্থ রাখতে হবে। সূত্র থেকেও অনেক প্রশ্ন হয়। অল্প সময়ের মধ্যে সমাধানের জন্য সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সমাধানের নিয়ম শিখতে হবে।
- ইংরেজিঃ প্রিপজিশন, সিনোনিম, এনটোনিম, গ্রুপ ভার্ব, বাক্য রূপান্তর, বাক্য শুদ্ধকরণ, টেন্স, ভয়েস বিষয় থেকে পরীক্ষায় বেশি প্রশ্ন হয়। তবে ইংরেজির নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তাই বিগত বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করতে পারেন।
যেভাবে সিকৃবিতে আসবেন
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হলে প্রথমে আপনাকে সিলেট আসতে হবে। ঢাকা থেকে সড়কপথ, রেলপথ ও আকাশ পথে সাধারণত সিলেট যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঢাকা হতে রেলপথে সিলেটের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার। ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩টা এবং রাত ৯.৫০টায় ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ট্রেনে গেলে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। ট্রেনের ভাড়া সাধারণত প্রকারভেদে ১২০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ট্রেনে যেতে আপনার সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। এছাড়া বাসেও যাওয়া যাবে। ঢাকা হতে সিলেট এর সড়ক পথের দূরত্ব ২৪১ কিলোমিটার। বাসে যেতে চাইলে অনেক বাস আছে। এর মধ্যে শ্যামলি, হানিফ, সোহাগ, ইউনিক, গ্রীন লাইন উল্লেখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে রাত ১২.৩০টা পর্যন্ত সব বাস পাবেন। বাস ভাড়া ননএসি ৩০০/৩৫০ টাকা এবং এসি ৯০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাসে যেতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৪.৩০ ঘণ্টা। আকাশ পথে সিলেট যেতে ৪০/৪৫ মিনিট লাগে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, এবং ইউএস-বাংলাতে করে সহজে সিলেট যাওয়া যাবে। বর্তমানে 30 টির বেশী ফ্লাইট ঢাকা-সিলেট রুটে যাতায়াত করে। এখানে ভাড়া সর্বনিম্ন ২৬৯৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০০ টাকা লাগবে। অপ্রচলিত মাধ্যম হিসেবে নৌপথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে কেবলমাত্র সিলেট, শেরপুর ও আজমেরীগঞ্জ ছাড়া অন্য কোনো এলাকার সাথে ঢাকা থেকে বা সিলেট শহর হতে সরাসরি কোনো নৌযান চলাচল করে না। সিলেট শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে যেতে পারেন। বাস কিংবা ট্রেন স্টেশন থেকে সিএনজি দিয়ে ১০০-১৫০টাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যায়।
সিলেটে থাকার জন্য অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। কিন্তু এসব হোটেলের বেশীরভাগ মাজার রোড, আম্বরখানা, এবং জিন্দাবাজারে অবস্থিত। এসব হোটেলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ হোটেল ইস্টার্ন গেইট এন্ড পানাহার রেস্টুরেন্ট, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল আজমীর, হোটেল বাহারাইন রেসিডেনসিয়াল, গ্রিনল্যান্ড হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, হোটেল গুলশান, হোটেল দরগা ভিউ, হোটেল সিটি লিঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল কুরাইশি রেসিডেন্স, হোটেল স্টার প্যাসিফিকসহ আরো কিছু ভালো ভালো মানের হোটেল আছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে ভালো মানের তেমন হোটেল পাবেন না।
আরো পড়ুনঃ যেভাবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবেন, স্টেপ বাই স্টেপ গাইড ।
কোথায় থাকবেন
সিলেটে থাকার জন্য অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। কিন্তু এসব হোটেলের বেশীরভাগ মাজার রোড, আম্বরখানা, এবং জিন্দাবাজারে অবস্থিত। এসব হোটেলের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলঃ হোটেল ইস্টার্ন গেইট এন্ড পানাহার রেস্টুরেন্ট, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল আজমীর, হোটেল বাহারাইন রেসিডেনসিয়াল, গ্রিনল্যান্ড হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, হোটেল গুলশান, হোটেল দরগা ভিউ, হোটেল সিটি লিঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল কুরাইশি রেসিডেন্স, হোটেল স্টার প্যাসিফিকসহ আরো কিছু ভালো ভালো মানের হোটেল আছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে ভালো মানের তেমন হোটেল পাবেন না
কী কী খাবেন
সিলেট শহরে রয়েছে খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশেই বেশকিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। স্থানীয় পর্যায়ের বিখ্যাত খাদ্য হলো আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা)। তাছাড়াও আনারস, কমলা, পান, লেবু এবং কাঠালও স্থানীয়ভাবে বিখ্যাত।
পরিশেষে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একটি প্রথম শ্রেণীর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।তাই আপনার যদি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বাদে কৃষিবিষয়ক কোন সাবজেক্টে পড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। এটির মনোরম পরিবেশ আপনাকে যেমন মুগ্ধ করবে তেমনি ভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা আপনার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে। নিচের ভিডিওতে এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে আরও জানতে ঘুরে আসুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।
নোটঃ এই লেখায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেওয়া হয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে, উইকিপিডিয়া থেকে এবং সরকারি অনেক বিজ্ঞপ্তি থেকে। লেখারটির মধ্যে কোন ধরনের তথ্যগত ভুল হয়ে থাকলে ভুল সংশোধনের জন্য সরাসরি যোগাযোগ করুন আমাদের Contact পেইজে। আমরা তথ্যগুলো যাচাই করে যত তারাতাড়ি সম্ভব আর্টিকেলটি আপডেট করে দিবো।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও অভিযোগ সাবমিট করা হবে।
ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।