Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
ঘুমন্ত অবস্থায় নাক ডাকা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। কখনও কখনও অসুস্থতা, ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে মানুষ নাক ডাকতেই পারে। কিন্তু কি হয় যখন কেউ প্রতিনিয়ত ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে? এই সমস্যা আপনার নিজের ও অন্যের জন্য খুবই বিরক্তিকর।
তাই যাদেরই নাক ডাকার অভ্যেস রয়েছে তাদের জন্য নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় গুলো জানা অবশ্যই জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নাক ডাকার পেছনে অনেক স্বাস্থ্যসমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকিও থাকতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, মধ্যবয়স্ক পুরুষের মধ্যে ৪০ শতাংশই নাক ডাকেন। আর নারীর ক্ষেত্রে তা ২০ শতাংশ।
তাই বুঝতেই পারছেন নাক ডাকা সমস্যা টি মোটেই অবহেলা করা যাবে না৷ এর কারণ ও প্রতিকার খুঁজে বের করতে হবে। আজকের এই লেখাতে আমরা আলোচনা করবো নাক ডাকার কারণ, নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে দেরী না করে চলুন আগে দেখে নেই মানুষ নাক ডাকে কেনো।
মানুষ নাক ডাকে কেন?
মানুষ বিভিন্ন কারণে, রোগে নাক ডাকতে পারে। সাধারণ নাক ডাকা হয় যখন আপনার ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় শ্বাসনালী দিয়ে অবাধে বায়ু প্রবাহিত হতে পারে না। যখন শ্বাসনালী সংকীর্ণ বা আংশিকভাবে অবরুদ্ধ থাকে, তখন শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে উপরের শ্বাসনালীর টিস্যুগুলি কম্পিত হয়। এজন্য কেউ নাক ডাকলে আপনি শব্দ শুনতে পান। এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক নাক ডাকার পেছনের যুক্তিক কারণ কি কি হতে পারে।
নাক ডাকার কারণ
শ্বসনতন্ত্রের ইনফেকশন ও অন্য রোগের কারণে মানুষ নাক ডাকতে পারে। যেমন –
- আপনার ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাসের গতিপথে কোনো প্রকার বাধা পড়লে বায়ু শ্বাসতন্ত্রে কাঁপুনির তৈরি করে। এজন্য নাক থেকে শব্দ সৃষ্টি হয়।
- ওজন বেশি হবার কারণে শ্বাসনালীর চারপাশেও চর্বি জমে থাকতে পারে। যার ফলে মোটা ব্যক্তিদের নাক ডাকার সমস্যা বেশি হয়।
- অনেকের জন্মগত কোনো রোগের কারণেও শ্বাসতন্ত্র চিকন থাকতে পারে। বা কারো আবার চোয়ালে কোনো ত্রুটি থাকলে নাকে ভেতের অল্প আওয়াজ হয়। তাছাড়া আপনার গলার মাংসপেশির নমনীয়তা কমে গেলেও নাক ডাকার সমস্যার দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত ধূমপান,বেশি বেশি অ্যালকোহল পান ও নাক ডাকার কারণ।
- অনেকে ঘুমের সমস্যার কারণে রাতে ঘুমের ওষুধ সেবন করেন। এ ধরনের লোকদের মধ্যেও নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়।
- অনেকের থাইরয়েডের সমস্যা থাকতে পারে। কিংবা গ্রোথ হরমোনের আধিক্য হতে পারে। এই দুটি রোগের কারণেও যেকেউ নাক ডাকতে পারে।
- যারা দিনে খুব বেশি ক্লান্তিকর কাজ করেন। কিন্তু রাতে ভাল করে ঘুমায় না। তারা পরবর্তীতে ঘুমালে প্রবলভাবে নাক ডাকেন।
- তাছাড়া কেউ যদি চিত হয়ে ঘুমায় তাহলে জিব পেছনে চলে যেতে পারে। এটি অনেক সময় শ্বসনতন্ত্র বন্ধ করে ফেলে। এজন্য নাক থেকে আওয়াজ বের হয়।
- বয়স ও ডাক ডাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেহের পেশি গুলো দুর্বল হয়ে যায়। তাই বয়স ৫০ পেরুলে অনেকেই নাক ডাকার সমস্যায় ভুগেন। এগুলো এক পর্যায়ে ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র রুপ ধারণ করতে পারে। তবে কম বয়সে অতিরিক্ত নাক ডাকা আরো বেশি ঝুকিপূর্ণ।
- এমন অনেকে আছেন যাদের গলার গঠন বংশগতভাবেই কিছুটা লম্বা। তাদের ও ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ডাক্তার রা বলেন, পুরুষের জন্য গলার স্বাভাবিক মাপ হবে ১৭ ইঞ্চির মধ্যে। এর বেশি হওয়া খুবই মারাত্মক। এটি নাক ডাকা সহ নানা সমস্যা তৈরি করে। আর নারীদের জন্য ১৬ ইঞ্চির থেকে বেশি হওয়াটা আশঙ্কাজনক।
- নাক ডাকা টা অনেক সময়ে লিঙ্গের ওপরও ডিপেন্ড করে। যেহেতু পুরুষের শরীরের উপরের অংশে মেদ তুলনামূলক একটু বেশি পরিমাণে থাকে। সেহেতু নারীদের চেয়ে পুরুষের ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ কিংবা অতিরিক্ত নাক ডাকার সমস্যা বেশি হয়।
- এছাড়াও কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে মানুষ নাক ডাকতে পারে। যেমন,যেসব পুরুষদের পেটে অতিরিক্ত মেদ আছে তারা বেশি নাক ডাকেন। আর যেসব নারীরা মেনোপোজে আছেন তাদের মাঝেও নাক ডাকার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যায়।
নাক ডাকা ঝুকিপূর্ণ কেন?
নাক ডাকার পেছনে অনেক রকম কারণ থাকে। আমরা সাধারণত নাক ডাকাকে খুব একটা আমলে নেই না। কারণ সচরাচর আমরা নাক ডাকতে শুনি। যদি নাক ডাকার ধরণ তীব্র না হয় বা কোনো আশংকাজনক সিম্পটম দেখা না দেয়। তাহলে চিন্তার কিছু নেই। হয়ত অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারণে এটি হয়েছে। কিন্তু কখন বুঝবেন যে আপনার নাক ডাকা ঝুকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে গেছে। কেনই বা এটি আশংকাজনক। চলুন এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাক। –
উচ্চ রক্তচাপ
অতিরিক্ত নাক ডাকা হল ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’। এটি অত্যাধিক দুশিন্তার ফলে দেখা দেয়। এসময়ে নাক ডাকার ফলে কয়েক সেকেন্ড শ্বাস বন্ধের হয়ে যায়। ফলে দেহে রক্তচাপ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এভাবে শরীরে মানসিকচাপ বৃদ্ধিকারী এনজাইম ‘কেটেকোলামিঞ্জ’ বাড়তে থাকে। এটাি রক্তচাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।
তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন নাক ডাকাটা কতটা ঝুকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এমনকি রাতে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক ও হতে পারে। মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তাই এই অনিদ্রার প্রধা কারণ। এজন্য ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র ট্রিটমেন্ট করাতে ‘কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার’ বা সিপিএপি এর সহায়তা নিতে হবে।
অনিয়ন্ত্রিত বিএমআই
আমরা অনেকেই বছরে একবারের জন্যও বিএমআই নির্ণয় করি না। অনেকে আছে বিএমআই সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না। কিন্তু আপনার অতিরিক্ত নাক ডাকা হতে পারে আপনার অনিয়ন্ত্রিত বিএমআই এর কারণ। তাই নিয়মিত বিএমআই নির্ণয় করে ও নিয়ন্ত্রণ করে নাক ডাকার সমস্যার সমাধান করা যায়।
একজন মানুষের বিএমআই ১৮.৫ – ২৪.৯ এর মধ্যে হলে তা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। তবে এর মান যদি ২৫ – ২৯.৯ এর মধ্যে যায় তাহলেই এটি বাড়তি ওজন বলে বিবেচিত হবে। আর যদি ৩০-এর উপরে চলে যায় সেট স্থূলকায় হিসেবে ধরা হয়। অনিয়ন্ত্রিত বিএমআই যাদের আছে তারা প্রচন্ড রকম নাক ডাকতে পারেন। তাই নাক ডাকার সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই বিএমআই নির্ণয় করুণ। এবং নিয়ন্ত্রণে আনুন। নয়ত এটি নানা সমস্যা বয়ে নিয়ে আসবে।
অকাল মৃত্যু
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র বিশেষ একটি লক্ষণ হল ‘নাক ডাকা’। যার কারণে মানুষের ঘুমের মধ্যে ১০ সেকেন্ড বা তারও বেশি সময় শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আপনার “নাক ডাকা অনেক জোরে হলে কিংবা নিরবিচ্ছিন্নভাবে হলে এবং শ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে তা নিয়ে দ্রুত সচেতন হওয়া দরকার।
আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন’ বলে, এই বিষয়ে যথাসময়ে সতর্ক না হলে, এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক , ডিপ্রেশন এমনকি অকাল মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। যেহেতু নাক ডাকা এই রোগের মূল লক্ষণ। তাই নাক ডাকাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা চলবে না।
নাক ডাকা বন্ধ করার উপায়
নাক ডাকা খুব একটা বিরক্তিকর বিষয়, যে নাক ডাকে সে কদাচিৎ নাক ডাকার বিষয়ে বুঝতে পারে। বেশি ভুক্তভোগী হয়ে থাকে আক্রন্ত ব্যাক্তির পাশে যে ঘুমায়। বিবাহিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে নাক ডাকার সমস্যা খুব বিপজ্জনক, স্বামী কিংবা স্ত্রী যে ই নাক ডাকুক না কেনো তার প্রতিফল পাওয়া যায় ঘুমে। নাক ডাকার কারণে সঙ্গীর ঘুম হয়না, অনিদ্রায় থাকতে থাকতে ছোটখাটো সমস্যা অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়।
তো যাইহোক আপনি যদি সঠিকভাবে নিচের নাক ডাকা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করেন তাহলে খুব তারাতারি নাক ডাকা থেকে মুক্তি পাবেন। তাহলে চলুন দেখে নেই সহজে নাক ডাকা থেকে মুক্তির উপায় কি কি।
ধূমপান থেকে বিরত থাকুন
ধূমপানের এমনিতেই শ্বাস-প্রশ্বাসে অনেক রকমের কিছু জটিলতা তৈরি করে। তবে ধূমপান কারলে টারবাইনেটস নামক নাকের বিশেষ এক টাইপের টিস্যু ফুলে যেতে পারে। আর এটি থেকে ল শ্বাস নিতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। ধূমপানের এই দুই রকমের সাইড ইফেক্ট এর কারণেই নাক ডাকার সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই ধূমপানের অভ্যাশটি পরিত্যাগ করতে পারলেই আপনার আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
মদ্যপান এড়িয়ে চলুন
বেশি পরিমাণে মদ্যপান বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পানের করলেও মানুস নাক ডাকতে পারে। মদ জাতীয় পানীয় আপনার জ্বিহ্বার পেশিগুলোকে বেশ শিথিল করে ফেলে। এতে করে আপনার শ্বাস নালি সংকুচিত হয়ে যায়। এবং এ থেকেই নাক থেকে শব্দ বের হওয়া শুরু হয়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসক রা।
অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন
অতিরিক্ত ওজন নাক ডাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যেসব পুরুষের পেটে মেদ বেশি থাকে তারা অধিক নাক ডাকার সমস্যা তে ভুগেন। এছাড়াও যেসব নারীর বিএমআই মাত্রা অনেক বেশি ছাড়িয়ে গেছে তারাও নাক ডাকার সমস্যা ফেস করেণ। তাই আপনি যত দ্রুত সম্ভব আপনার বিএমআই নির্ণয় করে ফেলুন। যদি ওজন অতিরিক্ত হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট করুন। ওজন কমার সাথে সাথে নাক ডাকার সমস্যার ও পরিবর্তন দেখতে পারবেন। রিলেটেডঃ ওজন কমানোর উপায়, স্টেপ বাই স্টেপ গাইড
মশলাযুক্ত খাবার কম খান
অতিরিক্ত মসলা দেয়া খাবার খেলে আপনার পাকস্থলীতে বেশি বেশি অ্যাসিডের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। একটি গবেষণা থেকে এটি দেখা গেছে যে, পাকস্থলীর এসব সমস্যার সাথে নাক ডাকার বিশেষ সম্পর্ক আছে। আপনি যদি কিছুতেই আপনার নাক ডাকার উৎস খুঁজে না পান , তাহলে রেগুলার খাবারে মসলার পরিমাণ টা একটু কমিয়ে দেখুন। আসা করা যায় এ যাত্রায় নাক ডাকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
শোয়ার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন
শোয়ার ভঙ্গির সাথেও নাক ডাকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনি যদি একদম সোজা হয়ে শুয়ে পড়েন তাহলেও রক্ত সঞ্চালন ও নিশ্বাসের উভয়ের সমস্যা দেখা দেয়। তাই একটু কাত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করবেন৷ বিশেষজ্ঞ রা ডান কাত হয়ে শোবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই নাক ডাকার কারণে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে, শোয়ার ভঙ্গি টা একটু পরিবর্তন করে দেখতে পারেন।
পরিষ্কার পরিবেশে ঘুমান
অপরিষ্কার বা ধুলা বালি আছে এমন পরিবেশ ঘুমানো উচিত নয়। কারণ ধুলাবালি আমাদের নিশ্বাসের সাথে শ্বাসনালী তে প্রবেশ করে। এবং বায়ু চলাচল করতে বাধা তৈরি করে। অনেক সময়ে এগুলো শ্লেষার সাথে জড়িয়ে যায়। এবং নাকের ভেতরের পেশিগুলোকে ইফেক্ট করে। এর ফলে আপনার নাক থেকে শব্দ বের হয়। তাই সবসময়ে চেষ্টা করতে হবে পরিষ্কার বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করার। তাছাড়া যে রুমে ঘুমাবেন সেটিও ধুলাবালির মুক্ত হতে হবে।
নাক ডাকা সমস্যার চিকিৎসা
অতিরিক্ত নাক ডাকার সমস্যা যাদের আছে, তাদের জন্য নাকের এন্ডোস্কপি, এক্স-রে (গলার ও বুকের), ইসিজি এবং রক্তে কিছু রেগুলার টেস্ট করানো টা জরুরি। নাকের এন্ডোস্কপি (এক টাইপের এন্ডোস্কোপ যেটি শুধু নাক ও শ্বাসনালি দেখার জন্য তৈরি) সবক্ষেত্রে দরকার। এর মাধ্যমে শ্বাস প্রশ্বাসের রাস্তার উপরের অংশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়।
‘পলিসমনোগ্রাফি’ দিয়ে ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধ হওয়ার পসিবিলিটি ও নাক ডাকার শব্দের মাত্রা সবচেয়ে সূক্ষ্ম ভাবে নির্ণয় করা যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে একটি বিশেষ উপায়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক লিড (পরিমাপক) বসানো হয়। এবং তাকে ঘুমের ব্যবস্থা করা হয়।
এটি দিয়ে ঘুমের মধ্যে হওয়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা এবং শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশের কার্যক্রম ও নানা রকম রোগ রেকর্ড করা যায়। এছাড়া এর একটি সহজ অলটারনেটিভ হচ্ছে ব্যক্তির ঘুমন্ত অবস্থায় পাল্স অক্সিমিটারের দিয়ে সারারাত তার অক্সিজেনের মাত্রার রিডিং নেয়া।
নাক ডাকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে শুরুর দিকেই এই সমস্যার চিকিৎসা করতে হবে। নাক ডাকার সমস্যা কিন্তু নাকের অ্যালার্জি মেডিসিন দিয়েও সমাধান করা যায়। তবে এক্সরে করে নাকের হাড় বাঁকা দেখতে পেলে, তা অবশ্যই শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন করে নির্মূল করতে হবে।
তাছাড়া নাক ডাকা সমাধানে, সিপিএপি (কন্টিউনাস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার) মেশিন ব্যবহার করে নাক ডাকা অফ করা যায়। তবে এই মেশিন ব্যবহার করার আগে আপনার নাকের অণ্য কোনো প্রবলেম থাকলে প্রথমে সে সমস্যার চিকিৎসা করাতে হবে। এ যন্ত্রটি প্রথম দর্শনে দেখতে একটু দৃষ্টিকটু ও অস্বাভাবিক। তাই অনেকে এটি ব্যবহার করতে দ্বিধা করেন। তবে এটি একবার ব্যবহার শুরু করে দিন। তাহলে আপনি খুব দ্রুতই সুফল পেতে থাকবেন।
শিশুদের নাক ডাকা সমস্যা ও চিকিৎসা
শিশুদের ক্ষেত্রে নাক ডাকার প্রধান কারণ হচ্ছে টনসিল এর বৃদ্ধ। অথবা এডেনয়েড গ্রন্থির প্রদাহ বা ফুলে স্ফীত হয়ে যাওয়া। যদি এগুলোর কারণেই নাক ডাকা হয়ে থাকে তাহলে অপারেশনের মাধ্যমে এটি অপসারণ করা হচ্ছে একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত ট্রিটমেন্ট। তাছাড়া যদি এডেনয়েড বড় হয়, নাক ডাকা তীব্র হয় এবং ঘুমে শ্বাসহীন এর মত সমস্যা হয়। তাহলে এটি অপারেশন করে অপসারণ বাধ্যতামূলক।
এবার আসুন জেনে নেই যেসব খাবারে নাক ডাকার সমস্যা কমবে-
সোয়া মিল্ক
অনেক মানুষের মধ্যে ল্যাকটোস সেনসিটিভিটি দেখা যায় । এটা তাদের অনেকের একদম অজান্তেই হয়ে থাকে। তাছাড়া গরুর দুধে ল্যাকটোস সেনসিটিভিটি এর সমস্যা অনেক বেশি থাকে। ফলে এটি থেকে অনেক রকম অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এজন্য আপনার ন্যাসাল প্যাসেজ ফুলে বড় হয়ে উঠতে পারে। এভাবেই নাক থেকে শব্দ তৈরী হতে পারে। তাছাড়া গরুর দুধে অনেক বেশি পরিমাণে মিউকাস থাকে। এগুলো রেসপিরিটরি সিস্টেমের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।
এজন্য ডাক্তার রা সোয়া মিল্কে সাজেস্ট করে থাকেন। কারণ এতে অতিরিক্ত মিইকাস নেই। এটি কোনো রকম অ্যালার্জিক সমস্যা তৈরি করে না। তাই নাক ডাকার সমস্যা এড়াতে গরুর দূধের পরিবর্তে সোয়া মিল্ক পান করতে পারেন।
চা
আপনি কি জানেন চা নাক ডাকা কমায়? স্পেশালি লিকার চা। চা খেলে আপনার নাকের ভেতরের কনজেশন এবং শ্লেষ্মা কমে যায়। তাই নাক ডাকার সমস্যা ও কমে যায়। চা পান করার সময় যে বাষ্প টি বের হয় সেটিও ভাল কাজ করে। এটি আপনার ন্যাসাল প্যাসেজকে প্রশমিত করে দেয়। ফলে মিউকাস তরল হয়ে যায়। এবং আপনার নাক ডাকা কমে যায়।
নাক ডাকার কারণ । নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় । নাক ডাকার চিকিৎসা
মধু
মধু আমাদের শ্বাসনালীকে বেশ মসৃণ করে তুলে। মধুতে আছে প্রচুর অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এর মত গুণই। এটি আমাদের কন্ঠ নালীকে পরিষ্কার রাখে। তাই রাতে ঘুমাতে যাবার যদি চায়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করেন তাহলে বেশ উপকার পেতে পারেণ। তবে অতিরিক্ত লিকার দিয়ে চা খেলে অনিদ্রা হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমানে পান করবেন। রিলেটেডঃ মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা, এবং খাওয়ার নিয়ম
হলুদ
অনেকর ক্ষেত্রে নাক ডাকার প্রধান কারণ হতে পারে ইনফ্ল্যামেশন। এর কারণে আমাদের স্বরনালী ও নাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু চলাচলের স্পেস থাকে না। আমরা জানি হলুদ একটি অত্যন্ত ইউজফুল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি মশলা। হলুদ এর মধ্যে আছে খুবই কার্যকর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, কারকুমিন। এটি ইনফ্ল্যামেশন কমাতে ব্যপক ভুমিকা রাখে।
তবে হলুদ খাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে, হলুদ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করলে অনেক বেশি কাজে দেয় না। তাই হলুকে কোনও একটি পানীয় এর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। রিলেটেডঃ হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা
মাছ
মাছ খাওয়ার সাথে নাক ডাকার সমস্যার সমাধান রয়েছে। তবে এর চেয়েও বেশি দরকারী হল রেড মিট খাওয়া কমানো। রেড মিটে থাকে প্রচুর স্যাটুরেটেড ফ্যাট। এগুলো আপনার গলার টিস্যু ও সাইনাসকে বড় করে তোলে। অন্যদিকে মাছ ভাল কাজ করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ আরো ভাল। এর থেকে যে এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড নিসৃত হয়, তা আপনার নাকের ইনফ্লেমেশন কমাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
পিঁয়াজ
যুগ যুগ ধরে নাক ডাকার সমস্যার অব্যর্থ ওষুধ বলে ধরা হয় পিঁয়াজ কে। পিঁয়াজ থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি পদার্থ। এটি আপনার ন্যাসাল প্যাসেজকে ক্লিন রাখে। ও পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু চলাচলে হেল্প করে। তাই নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় হিসেবে পিঁয়াজ খুবই কার্যকর।
শেষকথা
ঘুমের মধ্যে জোরে জোরে নাক ডাকা নিঃসন্দেহে খুবই বিব্রতকর একটি বিষয়। নাক ডাকা আসলে নানা ধরনের রোগের লক্ষণ হতে পারে। যে ব্যক্তি নাক ডাকেন, তাঁর বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থাকতে পারে। এজন্য নাক ডাকা ও তার সাথে অন্যান্য রোগের যোগসূত্র খুঁজে বের করা জরুরি।
এবং নাক ডাকার কারণ অনুযায়ী নাক ডাকা বন্ধ করার উপায় গুলোও এপ্লাই করতে হবে। আশা করি আমাদের আজকের আলোচনা টি পরে আপনি নাক ডাকা সমস্যার স্থায়ী সমাধান পাবেন।