ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত ২০২৪

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

আসসালামুয়ালাইকুম পাঠকবৃন্দ। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা জানবো ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, তার ফজীলত ও ইশরাকের নামাজ নিয়ে হাদিস।  এটি একটি নফল নামাজ যা আদায়ের ফলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় ও গুনাহ মাফ হয়।

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নফল নামাজও আদায় করা জরুরি। কারণ এতে অতিরিক্ত সওয়াব অর্জিত হয় ও বান্দার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।তাই এ নামাজের ফজিলত অনেক। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি ইশরাকের নামাজ আদায় করে দুনিয়া ও আখেরাতে অধিক কল্যাণ অর্জন করা যায়।

ইশরাকের নামাজ

সালাতুত ইশরাক বা ইশরাকের নামাজ হলো একটি নফল নামাজ যা নবী করীম (সা) নিজে আদায় করতেন ও সকলকে আদায় করতে বলতেন।  “ইশরাক” শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য উদিত হওয়ার পর জগৎ আলোকিত হয়, তাই এ সময়ে যে নামাজ আদায় করতে হয় তাকে ইশরাকের নামাজ বলা হয়।

এ নামাজ ফজরের নামাজের পর সূর্য উঠার পর আদায় করতে হয়। অনেকের মতে সূর্য উঠার  ১৫-২০ মিনিট পর এ নামাজ আদায় করতে হয় এবং সূর্য এক বর্শা বা দেড় মিটার পরিমাণ মধ্যাকাশের দিকে উঠা পর্যন্ত এর সময় থাকে। 

সূর্য উদিত হওয়ার পর পরই আদায় করলে সেটাকে ইশরাকের নামাজ বলে । আর আরেকটু পর আদায় করলে সেটাকে চাশতের নামাজ বলে। তাই এ দুটো একই নামাজ।

ইশরাকের নামাজ
ইশরাকের নামাজ

নবী করীম (সা) ফজরের নামাজ আদায়ের পর কিছুক্ষণ দ্বীনি আলোচনা করতেন । এবং ইশরাকের নামাজের ওয়াক্ত হলে এ নামাজ আদায় করে নিতেন। এ নামাজ আদায় করতে তিনি সকলকে উৎসাহিত করতেন। ইশরাকের নামাজ সুন্নত নাকি নফল এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

তবে বিভিন্ন হাদিসে জানা যায় এটি একটি নফল ইবাদত। ইশরাকের নামাজে কোনো কাযা নেই। এটি আদায় না করলে গুনাহ হবে না তবে এটি আদায় করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।

ইশরাকের নামাজ কত রাকাত?

হাদীসে ইশরাকের নামাজের সঠিক রাকাত সংখ্যার উল্লেখ না থাকলেও এটি দুই রাকাত থেকে আট রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়।  আবার কিছু ওলামায়ে কেরামগণ বলেছেন,এই নামাজ দুই রাকাত করে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়‌।

তবে আমাদের রাসূল (সা) দুই রাকাত করে চার রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করতেন। এজন্য সকল মুসলিম ভাই-বোনদের উচিত ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট পর দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করা।

ইশরাকের নামাজের নিয়ত

সালাতুল ইশরাক বা ইশরাকের নামাজের জন্য হাদিসে আলাদা কোনো নিয়ত বর্ণিত হয় নি। এজন্য এর নিয়ত আরবিতে বলা আবশ্যক নয়। তবে এ নামাজ শুরু করার আগে বাংলায় নিয়ত করে নেয়া যাবে ।

যেমন :”ইশরাকের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে ক্বিবলামুখি হয়ে নিয়ত করলাম আল্লাহু আকবার।”

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হলে বিশেষ কোনো সূরা বা ক্বিরাত পড়তে হয় না। সাধারণভাবে আমরা যেমন দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে থাকি ঠিক সেরকম ভাবেই ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়।

সকলের সুবিধার্থে এই নামাজ আদায়ের ধাপগুলো বর্ণনা করা হলো:

✓ ফজরের নামাজ আদায় করার পর ওই স্থানেই বসে তাসবিহ তাহলীল পাঠ করতে হবে। চাইলে এ সময় আল্লাহর দরবারে যেকোনো দোয়া ও করা যেতে পারে।

✓ ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর নামাজ আদায় করার জন্য দাঁড়াতে হবে ও মুখে বাংলায় নিয়ত পড়ে নামাজ শুরু করতে হবে।

✓ এরপর দুই রাকাত সুন্নত নামাজের ন্যায় আদায় করতে হবে। এভাবে চার রাকাত বা এর বেশি ও পড়া যায়। অনেকে ১২ রাকাতও আদায় করে থাকেন।

উপরোক্ত নিয়মানুযায়ী সালাতুল ইশরাক আদায় করতে হয় যা অত্যন্ত কল্যাণকর। 

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম_ishrak er namaz
ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম_ishrak er namaz

ইশরাকের নামাজের ফজিলত

নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি ইশরাকের নামাজ আদায় করা অনেক উত্তম।  এ নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত বহু হাদিস রয়েছে। তাই কুরআন ও হাদীসের আলোকে এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

  • আমাদের রাসূল (সা) ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন এবং ইশরাকের নামাজ আদায় করতেন। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।
  • আনাস ইবনে মালেক (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন,” যে ব্যক্তি জামাতের সহিত ফজরের নামাজ আদায় করলো ও সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মগ্ন থাকলো , অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করলো , সে একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ঝ ও ওমরাহ পালন করার সওয়াব অর্জন করবে।”  (তিরমিজি: ৫৮৬)
  • হজরত আবু উমামাহ (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, এক নামাজের পর (ধারাবাহিক) আর এক নামাজ,যার মাঝখানে কোনো গোনাহ হয়নি, তা ইল্লিয়্যুন (উচ্চ মর্যাদায়) লেখা হয়। (আবু দাউদ)
  • অন্য একটি বর্ণণায় এসেছে, “সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির,তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার নিকট ইসমাইল বংশের দুজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।” (মুসনাদে আহমদ)
  • ইশরাকের নামাজ নিয়মিত আদায় করা উত্তম কারণ যেকোনো নফল ইবাদতই নিয়মিত পালন করা ভালো। আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় আমলটি হচ্ছে যে আমল নিয়মিত করা হয়ে থাকে। তাই কেউ যদি ইশরাকের নামাজ নিয়মিত আদায় করে তাহলে তা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় বলে গণ্য হবে।
  • কোনো নফল ইবাদত নিয়মিত আদায় করা সুন্নত। কারণ নবী করীম (সা) কোনো নফল ইবাদত করা শুরু করলে তা তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছেড়ে দেন নি।  এতে প্রমাণিত হয় যে , তিনি নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেন। তাই এটি সকলের জেনে রাখা জরুরি।
  • নবী করীম (সা) বলেছেন , দিনের শুরু যেন বেশি বেশি সিজদাহর মাধ্যমে হয়। তাই ফজরের নামাজের পর ইশরাকের নামাজ অধিক উত্তম ।
  • বেশি বেশি নফল ইবাদত করলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তাই ইশরাকের নামাজ আদায় করা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। এবং এর পাশাপাশি অন্যান্য নফল ইবাদত করাও উত্তম।


ইশরাকের নামাজ | ইশরাকের নামাজের সময় | ইশরাকের নামাজের নিয়ম | ইশরাকের নামাজের ফজিলত

  • নফল নামাজ দ্বারা আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা পরিমাপ করা হয়। তাই বোঝা যাচ্ছে এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইশরাকের নফল নামাজ প্রত্যেকেরই আদায় করা উচিত।
  • ইশরাকের নামাজ আদায়ের ফলে বান্দা আল্লাহর অধিকতর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করতে পারে।
  • একদা এক সাহাবি প্রশ্ন করেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কী? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদাহ করবে (বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বে); কারণ তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদাহ করো তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৫৩)
  • আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানুষ! তুমি দিনের প্রথমাংশে আমার জন্য চার রাকাত নামাজ আদায় করো। তাহলে এ দিনে তোমার যা কিছু প্রয়োজন হয়, সবই আমি পূরণ করে দেবো।” (তিরমিজি)
  • মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে নির্ধারিত ফরজ নামাজগুলো আদায়ের পাশাপাশি হাদিসে ঘোষিত নফল নামাজ পড়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের ফজিলত ও মর্যাদা লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।তাই সকলের উচিত ইশরাকের নামাজসহ অন্যান্য নফল নামাজ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আদায় করা।

সবশেষে বলা যায়

নফল ইবাদত নিয়মিত আদায় করলে দৈনিক ফরজ ইবাদতের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় ও আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় বান্দা হওয়া যায়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই এ নামাজ আদায় সম্পর্কে উদাসীন। 

এর ফজিলত সম্পর্কে জেনে সঠিকভাবে এই নফল ইবাদত পালন করার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সুনিশ্চিত করা যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত ইশরাকের নামাজ নিয়মিত আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

Author

Scroll to Top