Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman
জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং এবং শেয়ারিং অ্যাপ Musical.ly এর আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী ছিল। অ্যাপটি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে, একটি চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স দ্বারা দখল করা হয় এবং এর ব্যবহারকারীদের বর্তমান টিকটকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। Musical.ly এ থাকা সমস্ত সামগ্রী এবং অ্যাকাউন্টগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন টিকটক অ্যাপে স্থানান্তরিত হয়েছিল। যার ফলে আমরা আজকে পেয়েছি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং এপ টিকটক (TikTok)।
(TikTok) টিকটক
টিকটক হল একটি স্বল্প আকারের, ভিডিও–শেয়ারিং অ্যাপ যা ব্যবহারকারীদের যেকোনো বিষয়ে ভিডিও তৈরি এবং শেয়ার করতে দেয়। টিকটক চীনের বাজারের জন্য একটি পৃথক অ্যাপ রাখে, যা ডুইন নামে পরিচিত, যার ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় মাসিক ব্যবহারকারী রয়েছে। এই অ্যাপটি একই শর্ট–ফর্ম ভিডিও কনসেপ্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এর পরিসর অনেক বৃস্তিত।
TikTok অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য ভিডিওতে বিশেষ ইফেক্ট এর ইউজ এবং ফিল্টার যুক্ত করার বিকল্প পদ্ধতি সহ শব্দ এবং গানের স্ক্রিপ্টের বিস্তৃত নির্বাচন অফার করে। ফোনে তৈরি ভিডিও সরাসরি আপলোড করার একটি ব্যবস্থাও রয়েছে এতে। এতে একটি ডিজিটাল ওয়েল–ওয়েলিং ফিচারও যোগ করা হয়েছে যা ব্যবহারকারীদের অ্যাপে দুই ঘণ্টার বেশি সময় কাটালে সতর্ক সংকেত প্রদান করে। অ্যাপটি ভিডিও–শেয়ারিং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক হিসেবে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে। টিকটক ব্যবহারকারীরা চ্যালেঞ্জ, নাচের ভিডিও, ম্যাজিক ট্রিকস এবং মজার ভিডিও থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের ভিডিও তৈরি করতে পারে।
জনপ্রিয়তা
এটি চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই TikTok অ্যাপের জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অক্টোবর ২০১৮ সালে, এটি বিশ্বব্যাপী অ্যাপল স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড করা ভিডিও অ্যাপ ছিল। অ্যাপটি প্রতি মাসে ৫০০ মিলিয়নেরও অনেক বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী সংগ্রহ করেছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি প্রায় ৮০ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে। এবং টিকটকের বিশ্বে গ্রোথ বা বৃদ্ধি হচ্ছে প্রায় ২০০%, নিচের চিত্রে লক্ষ করুন। টিকটক অ্যাপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পিছনে অনেক কারন রয়েছে। সেগুলো হলঃ
সেলিব্রিটি অনুমোদন
অ্যাপটি অনেক সেলিব্রেটিদের বেশ পছন্দের একটি প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে অনেক তারকাই নিয়মিত তাদের ভিডিও এই অ্যাপ এ আপলোড করছে। অনেকে স্পন্সার হিসেবেও এই সাইটে কাজ করছে। টিক টক অ্যাপের অনেক অঞ্চলে সেলিব্রিটি অংশীদারিত্ব রয়েছে। যখন এটি জাপানে চালু হয়, অ্যাপটি কিনোশিতা ইউকিনা, কিয়ারি পামু পামিউ এবং ওয়াতানাবে নাওমির মতো সেলিব্রিটিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। থাইল্যান্ডে, টিকটক সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি কাইকাই সালাইদার এবং ভারতে আশিকা ভাটিয়ার সাথে সহযোগিতা করেছে। সেলিব্রিটি পার্টনারশিপ টিকটকের ভৌগোলিক সম্প্রসারণ কৌশলের মূল কৌশল। এই সেলিব্রিটিরা কেবল টিকটকে সামগ্রী পোস্ট করেন না বরং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে টিকটকের প্রচারও করেন।
অডিশন
এর জনপ্রিয়তার আরেকটি বিশেষ দিক হলো একটি বিশ্বব্যাপী অ্যাপ হওয়া সত্ত্বেও, এটি স্থানীয়করণের বিষয়বস্তুর উপর জোরালো মনোযোগ রয়েছে। অ্যাপটি প্রায়ই স্থানীয় প্রতিযোগিতা এবং চ্যালেঞ্জ চালায় এবং স্থানীয় হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচার এবং জনপ্রিয়তা ধরে রাখে।
টিকটক বিভিন্ন দেশে অডিশন প্রতিযোগিতা চালায়। প্রতিটি প্রতিযোগিতার জন্য, অংশগ্রহণকারীদের ভিডিও তৈরির জন্য থিম দেওয়া হয় এবং তারপর শীর্ষস্থানীয় ভিডিও নির্মাতাদের পুরস্কৃত করা হয়। এই প্রতিযোগিতা কেবল হাজার হাজার স্থানীয় ভিডিও তৈরির দিকে পরিচালিত করে না, যেখানে এটি অনুষ্ঠিত হয় সেই দেশে তাদের ব্যবহারকারী বাড়তে থাকে। এভাবেই তাদের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলছে। রাশিয়াতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এই ধরনের একটি প্রতিযোগিতা অডিশন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ৩১ হাজার ভিডিও এবং লক্ষ লক্ষ ভিউ পেয়েছে। যা তাদের ব্যবহারকারী, জনপ্রিয়তা আর প্রচার বৃদ্ধি করেছে।
সহজ বিষয়বস্তু
এই অ্যাপটি ভিডিও তৈরি করাকে সহজ করেছে এবং এর ফলে জনপ্রিয়তাকে উপর লেভেলে নিয়ে গেছে। সমস্ত ব্যবহারকারী সবকিছু রেকর্ড করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে এটি পোস্ট করতে পারে। ভিডিও তৈরি বা দেখার প্রক্রিয়াটি খুব বেশি সময় ধরে হয় না। এই শর্ট–ফর্ম ভিডিও কন্টেন্টটি ব্যবহারকারী অ্যাপটি খোলার সাথে সাথেই চালানো হয়। ভিডিওগুলি একের পর এক বাজতে শুরু করে এবং একজন দর্শক মজা, বিনোদনমূলক, আসক্তিযুক্ত ভিডিওতে মগ্ন হয়ে যায়। বিষয়বস্তুর ধরনের এই প্রকৃতির কারণে, মানুষের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা এলোমেলো ভিডিও দেখা খুব সহজ।
টিকটকে ডুয়েট গা
টিকটকের একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দুটি ব্যবহারকারীকে একই জায়গায় না থাকা সত্তেও একটি ডুয়েট গান করার অনুমতি দেয়। উভয় ব্যবহারকারীকেই কাজ করতে একে অপরকে অনুসরণ করতে হবে। একজন ব্যবহারকারী একটি ভিডিও তৈরি করে এবং পোস্ট করে, এবং তারপরে একজন পারস্পরিক অনুসারী ভিডিওর নীচে ডানদিকে “…” আইকনটি ট্যাপ করতে পারেন। দ্বিতীয় ব্যবহারকারী তারপর প্রথম ব্যক্তির সাথে লিপ–সিঙ্ক করতে পারেন।
টিকটক চ্যালেঞ্জ
চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভাইরাল হওয়া যেকোনো ধারণা। এগুলি গান, ক্রিয়াকলাপ বা নাচ হতে পারে ।সর্বাধিক জনপ্রিয় চ্যালেঞ্জ, যেমন জটিল কোরিওগ্রাফেড ডান্স, নাম্বার রেনেগেড এবং পেছনের দিকের হুডি ফ্রিজ মিক্সআপ। কিন্তু কিছু সত্যিই বিপজ্জনক।
ভিডিও শুটিং
ভিডিও আপলোড বা ভাইরাল হবার প্রথম ধাপ অবশ্যই আপনার টিকটকভিডিওর শুটিং। শুরু করার আগে, আপনাকে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি ইন–অ্যাপ ক্যামেরা দিয়ে একটি নতুন ভিডিও শুট করবেন নাকি ফটো লাইব্রেরি থেকে একটি ভিডিও আপলোড করবেন। প্রতিটির সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
টিকটকঅ্যাপের মধ্যে একটি ভিডিও শুটিং করলে রেকর্ডিং শুরু করার আগে আগেই ফিল্টার এবং ইফেক্ট প্রয়োগ করতে পারবেন। একটি বড় সুবিধা হল যে ভিডিওগুলিতে আপনি একটি গান বা শব্দে লিপ–সিঙ্ক করছেন তা অ্যাপের মধ্যে রেকর্ড করা অনেক সহজ হবে।
আর যদি আপনি একাধিক ক্লিপের সমন্বয়ে একটি ভিডিও শুটিং করেন, তাহলে আপনার ডিভাইসের নেটিভ ক্যামেরা দিয়ে শ্যুট করা বেশি ভালো। কারণ অ্যাপের ৬০ সেকেন্ড সময়সীমা রয়েছে।
টিকটক ভিডিও আপলোড
- ট্রেন্ডিং শব্দ বা গান ব্যবহার করুন।
- ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন।
- জনপ্রিয় বিষয়বস্তুর দিকে ঝুঁকুন, যেমন একটি জনপ্রিয় নাচ বা কোনো সিন।
- কাহিনীতে একটু রহস্য বা টুইস্ট রাখার ট্রাই করতে হবে।
টিকটক ভিডিও কিভাবে বানাবেন?
- প্রথমে অ্যাপটি ওপেন করতে হবে।
- স্ক্রিনের নিচে মাঝখানে ‘+’ বোতাম ক্লিক করতে হবে।
- স্ক্রিনের উপরের কেন্দ্রে ‘’অ্যাড সাউন্ড” বাটন ক্লিক করুন।
- যে সাউন্ডটি ব্যবহার করতে চান তা সার্চ বক্স এ সার্চ করুন।
- এর পর এটিতে ক্লিক করে আপনার ভিডিওতে এটি যুক্ত করতে লাল চেকমার্ক এ ক্লিক করতে হবে।
- রেকর্ড করার জন্য আপনার ফোন সেট আপ করুন।
- স্ক্রিনের ডান পাশে টাইমার ফাংশন ক্লিক করুন।
- সুবিধামত ৫ অথবা ১০ সেকেন্ড কাউন্টডাউন বেছে নিন।
- ‘’স্টার্ট কাউনডাউন’’ বাটন ক্লিক করুন।
- আপনার ভিডিও রেকর্ড করুন!
- কোন ফিল্টার, প্রভাব, স্টিকার, বা কথা যোগ করুন।
- নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- ভিডিওর ক্যাপশন এবং অন্যান্য বিবরন লিখুন।
- এবার পোস্ট এ ক্লিক করে পোস্ট করুন।
স্লো মোশন ভিডিও
আরেকটি ভিডিও ট্রেন্ড যা প্রায়ই ভাইরাল হয় তা হল স্লো–মোশন ভিডিও। এর জন্য যা করতে হবেঃ
- প্রথমে অ্যাপটি ওপেন করতে হবে।
- স্ক্রিনের নিচে মাঝখানে ‘+’ বোতাম ক্লিক করতে হবে।
- ভিডিওটি সাধারনভাবে রেকর্ড করুন।
- স্ক্রিনের নীচে–বামে ইফেক্ট এ ক্লিক করুন।
- নিচে স্ক্রল করে ডানদিকে নেভিগেট করুন এবং সময় নির্বাচন করুন।
- স্লো–মো অপশনে ট্যাপ করুন।
- আপনার ভিডিওর যে জায়গায় স্লো মোশন চান সেটা নির্বাচন করুন।
- স্ক্রিনের উপরের ডানদিকে ‘সেভ’ টিপুন।
- অন্য কোন ফিল্টার, স্টিকার বা কথা যোগ করুন।
- নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- ভিডিওর ক্যাপশন এবং অন্যান্য বিবরন লিখুন।
- এবার পোস্ট এ ক্লিক করে পোস্ট করুন।
ভিডিও তৈরি
যদিও বেশ কয়েকটি ক্লিপ দিয়ে ভিডিও শ্যুট করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল আপনার ফোনের ক্যামেরা দিয়ে একটি লম্বা ভিডিও শুট করা এবং তারপর একেকটি ছোট খাটো ক্লিপে ট্রিম করা। তবে আপনি অ্যাপের মাধ্যমে একাধিক ক্লিপ শুট করতে পারেন।
- প্রথমে অ্যাপটি ওপেন করতে হবে।
- স্ক্রিনের নিচে মাঝখানে ‘+’ বোতাম ক্লিক করতে হবে।
- স্ক্রিনের নিচে রেকর্ড বাটন প্রেস করুন এবং ধরে রাখুন।
- ক্লিপ রেকর্ড করা শেষ হলে ছেড়ে দিন।
- আপনার পরবর্তী ক্লিপ ফিল্ম করতে আবার রেকর্ড রেকর্ড বাটন প্রেস করুন এবং ধরে রাখুন।
- এভাবে একই নিয়মে ভিডিও রেকর্ড করুন।
- অন্য কোন ফিল্টার, স্টিকার বা কথা যোগ করুন।
- নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- ভিডিওর ক্যাপশন এবং অন্যান্য বিবরন লিখুন।
- এবার পোস্ট এ ক্লিক করে পোস্ট করুন।
ভাইরাল হবার টিপ্স
- প্রাণবন্ত ফিল্টার ব্যবহার করুন। অনেকগুলি ফিল্টার রয়েছে যা আপনার ভিডিওকে আরও উজ্জ্বল এবং আরও রঙিন করে তুলবে।
- আপনার ভিডিওতে এমন টেক্সট যোগ করুন যা আপনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বর্ণনা করে।
- ভয়েস–ওভার তৈরি করতে টেক্সট–টু–স্পিচ ইফেক্ট ব্যবহার করুন।
- ভিডিও ক্লিপের মধ্যে ট্রানজিশন ব্যবহার করুন।
ট্রানজিশন ব্যবহার
- প্রথমে অ্যাপটি ওপেন করতে হবে।
- স্ক্রিনের নিচে মাঝখানে ‘+’ বোতাম ক্লিক করতে হবে।
- ভিডিওটি সাধারনভাবে রেকর্ড করুন।
- স্ক্রিনের নীচে–বামে ইফেক্ট এ ক্লিক করুন।
- স্ক্রিনের নীচে ট্রানজিশন এ ক্লিক করুন।
- আপনি যে চেঞ্জটি চাচ্ছেন বা ব্যবহার করতে চান তা নির্বাচন করুন। আপনি একই ভিডিওতে একাধিক ট্রানজিশন ব্যবহার করতে পারেন।
- স্ক্রিনের উপরের ডানদিকে সেইভ এ ক্লিক করুন।
- অন্য কোন ফিল্টার, স্টিকার বা কথা যোগ করুন।
- নেক্সট এ ক্লিক করুন।
- ভিডিওর ক্যাপশন এবং অন্যান্য বিবরন লিখুন।
- এবার পোস্ট এ ক্লিক করে পোস্ট করুন।
ট্রানজিশন ব্যবহারঃ Photo Transition Effect
ভিডিও ডিলিট
অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একটি ভিডিও মুছে ফেলার জন্য, প্রোফাইল থেকে আপনি যে ভিডিওটি মুছে ফেলতে চান তা নির্বাচন করতে হবে। সেখান থেকে, নীচের ডান কোণে “…” আইকনটি প্রেস করে ডিলিট/রিমোভ বাটন এ প্রেস করতে হবে। তারপর তারা আপনার থেকে আবার কনফার্ম করে সাইট থেকে ভিডিও টি ডিলিট করে। তারপর এটি আপনার প্রোফাইল থেকে মুছে ফেলা হবে।
টিকটক থেকে আয়
টিকটক থেকে কিভাবে আয় করবো? এই প্রশ্নটা প্রায় শুনি। অনলাইন থেকে টাকা আয়ের যে কয়টি মাধ্যম আছে তার মধ্যে টিকটক হল একটি। TikTok আপনাকে ইউটিউবের মতো ভিডিও ভিও এর ভিত্তিতে কোন টাকা দিবেনা, কিংবা ফেইসবুকের মতো এডস বসিয়েও TikTok থেকে কোন ধরনের টাকা আপনি পাবেন না। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে TikTok থেকে টাকা আয় করবো! অবশ্যই টিকটক থেকে আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন, নিচে আমরা টিকটক কিংবা লাইকি থেকে যেভাবে টাকা আয় করবেন তা নিয়ে আলোচনা করবো। নিচের ৮টি উপায়ে আপনি টিকটক থেকে ভালো একটা আয় করতে পারবেন।
- ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং (Influencer marketing)
- এফিলিয়েট মার্কেটিং
- কনটেস্ট
- ব্রান্ড প্রমোশন
- প্রোডাক্ট স্পন্সর
- লাইভ স্ট্রিমিং
- টিকটক ম্যানেজার
- টিকটক একাউন্ড বিক্রি
আরো পড়ুনঃ কর্মসংস্থান ব্যাংক কি? কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার বিভিন্ন উপায়।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং (Influencer marketing)
আপনি যদি ভালো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে থাকেন তাহলে Influencer marketing এর মাধ্যমে যেকোন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আয় করতে পারবেন, হোক সেটা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার কিংবা ইউটিউব। বিশ্বের বড় বড় কম্পানিগুলা বিভিন্ন ধরনের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করে থাকে, তাদের ব্রান্ড প্রমোশন কিংবা সেবার মার্কেটিং এর জন্যে। তখন তারা ভালো কনন্টেন্ট ক্রিয়েটর খোঁজে তাদের হায়ার করে থাকে। আপনি যদি টিকটকে ভালো ভিডিও বানান, কিংবা আপনার অনেক ফলোয়ার হয়, তখন সেসব বিদেশি কিংবা দেশি কম্পানি আপনাকে তাদের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে হায়ার করবে। সেখান থেকে আপনি ভালো মানের একটা আয় করতে পারবেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো কোন কম্পানির পণ্য বিক্রি করতে সহায়তা করা, যার ফলে আপনি একটা কমিশন পাবেন। আপনার নির্দিষ্ট লিংকের মাধ্যমে যে বা যারা কোন পণ্য ক্রয় করবে ততোবার আপনি কমিশন পাবেন। বর্তমান বিশ্বে মার্কেটিং এর মধ্যে এফিলিয়েট মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয়। Rakuten এর মতে ৮০-৮৪% ব্রান্ড এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে থাকে। আপনার টিকটক আইডি যদি জনপ্রিয় হয়ে থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে এফিলিয়েট মার্কেটিংকে কাজে লাগিয়ে টিকটক থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
কনটেস্ট
টিকটকের কন্টেস্টে জয়ন করে আপনার কোন ভিডিও যদি ট্রেন্ডিং এ চলে যায় তখন সেখান থেকে আপনি ভালো একটা আয় করতে পারবেন, সেই সাথে রয়েছে আকর্ষণীয় কুপন সুবিদা, সেসব কুপন ভাঙ্গিয়ে আপনি টাকা আয় করতে পারবেন। কুপনগুলার মূল্য ১০০ ডলার, ৫০০ ডলার এমনকি ১০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাক। মোট কথা ভালো ভিডিও কন্টেন্ট হলে আপনি যেকোন যায়গা থেকে আয় করতে পারবেন।
ব্রান্ড প্রমোশন
বাংলাদেশের অনেক ব্রান্ড আছে যারা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়ে থাকে, আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট যদি খুব জনপ্রিয় হয়ে থাকে তখন ভালো ভালো কম্পানি আপনার সাথে যোগাযোগ করবে তাদের সাথে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে চুক্তিতে যাওয়ার জন্য। বিনিময়ে আপনি তাদের ব্রান্ডের নাম প্রমোশন করবেন। সেখান থেকে মাসিক কিংবা বার্ষিক ভিত্তিতে আপনি ভালো একটা আয় করতে পারবেন।
প্রোডাক্ট স্পন্সর
TikTok থেকে টাকা ইনকামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল প্রোডাক্ট স্পন্সর। অনেক কম্পানি আছে তারা জনপ্রিয় টিকটকারদের প্রডাক্ট স্পন্সর করে থাকে, ফলে সেই টিকটকার যখন ভিডিও বানায় তখন সেই পণ্য ভিডিওতে দেখিয়ে থাকে, প্রোডাক্ট স্পন্সরিং ইউটিউবেও জনপ্রিয়। এভাবে দেখা গেছে দুই পক্ষেরই লাভ হয়ে থাকে। যাকে বলে উইন উইন সিচুয়েশন। সেসব দামি প্রডাক্টগুলা আপনি ভিডিওতে ব্যবহারের পর চাইলে বিক্রিও করতে পারেন। ফলে সেখান থেকে একটা আয় করতে পারবেন।
লাইভ স্ট্রিমিং
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া আছে যখন আপনি লাইভ স্ট্রিমিং করবেন তখন ভিওয়ার চাইলে আপনাকে নানা ধরনের গিফট কার্ড, ইমোজি, কয়েন, ক্রাউন ইত্যাদি উপহার দিতে পারে। সেসব গিফট কার্ড, ইমোজি, কয়েন, ক্রাউন জমা দিয়ে বা ভাঙ্গিয়ে আপনি টাকা আয় করতে পারবেন।
টিকটক ম্যানেজার
আপনি যদি ভালোভাবে টিকটক চালাতে পারেন, কিংবা ভালোভাবে ভিডিও এডিট, হ্যাশট্যাগ রিসার্চ করতে পারেন তাহলে একজন টিকটক ম্যানেজার হিসাবে আপনি অনলাইনের বিভিন্ন ফ্রিলান্সিং প্লাটফর্মে কাজ করতে পারেন। অনেক কম্পানি আছে তাদের চ্যানেলের জন্য টিকটক ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে থাকে। সুতারং সেখান থেকেও ভালো মানের একটা আয় করা সম্ভব।
টিকটক একাউন্ড বিক্রি
সবশেষে আপনি আপনার জনপ্রিয় টিকটক একাউন্ড বিক্রি করেও আয় করতে পারবে। এই আয় এককালীন, যত বেশি জনপ্রিয় প্রোফাইল হবে ততো বেশি দামে একাউন্ট বিক্রি করতে পারবেন।
নিরাপত্তা
যেকোনো সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু বাচ্চাদের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের তত্ত্বাবধানে (এবং একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট) অ্যাপটি নিরাপদে ব্যবহার করা সম্ভব। টিকটকের বিভিন্ন বয়সের জন্য বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে:
- ১৩ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীরা ভিডিও বা মন্তব্য পোস্ট করতে পারে না, এবং বিষয়বস্তু অল্প বয়স্ক দর্শকদের জন্য তৈরি করা হয়।
- ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য অ্যাকাউন্টগুলি ডিফল্টভাবে সেট করা হয়। শুধুমাত্র তার বন্ধুরা ভিডিওগুলিতে মন্তব্য করতে পারে। কিন্তু অন্যান্য ব্যবহারকারীরা ভিডিও গুলি্তে মন্তব্য করতে পারে না।
- শুধুমাত্র ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যবহারকারীরা সরাসরি মেসেজিং ব্যবহার করতে পারে। আর ১৮ বছরের বেশি বয়সী ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল উপহার কিনতে, পাঠাতে বা গ্রহণ করতে পারে।
টিকটক এ বাবা –মাকে অ্যাপে বাচ্চাদের কত সময় ব্যয় করে এবং শিশুরা কী দেখতে পারে তা সীমাবদ্ধ করার জন্য কিছু সরঞ্জাম সরবরাহ করে। পিতা –মাতা চাইলে পারিবারিক সুরক্ষা মোড ব্যবহার করতে পারেন যাতে তাদের অ্যাকাউন্ট তাদের সন্তানের সাথে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
টিকটকের ভবিষ্যত
টিকটক অ্যাপের বর্তমান জনপ্রিয়তা বিস্ময়কর এবং আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু এখনও শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না যে এটি কবে ফেসবুক বা ইউটিউবের মত র্যাংকে পৌঁছাবে। কারন অনেক সাইট আছে যারা খুব জনপ্রিয়তার সাথে কাজ করে গেলেও নিজেদের ধরে রাখতে পারেনি। ‘ভাইন’ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিডিও–শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ছিল, কিন্তু এটি এখন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত। এছাড়াও আরো অনেক অ্যাপ আছে যা দ্রুত খ্যাতি অর্জন করে কিন্তু পরে আর জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারে না।
এর বর্তমান জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে, তাদের ব্যবহারকারী বেসকে যুক্ত করার জন্য উদ্ভাবনী এবং নতুন উপায় খুঁজতে হবে। অ্যাপগুলিকে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ব্র্যান্ডের জন্য প্ল্যাটফর্মকে আরও ব্যবহার বান্ধব করে তুলতে হবে।
উপসংহার
সংক্ষেপে, টিকটক একটি মজাদার, বিনোদনমূলক এবং আসক্তিযুক্ত অ্যাপ্লিকেশন যার গত কয়েক বছরে প্রচুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অ্যাপের পরবর্তী বড় মার্কেটিং এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। অ্যাপ নির্মাতারা কীভাবে এই সম্ভাব্যতাকে কাজে লাগায় এবং অ্যাপের বর্তমান জনপ্রিয়তা বজায় রাখে, তা দেখার বিষয়।
বিঃদ্রঃ এই ব্লগের প্রত্যেকটা ব্লগ পোস্ট Sylhetism ব্লগের নিজস্ব ডিজিটাল সম্পদ। কেউ ব্লগের কোন পোস্ট কিংবা আংশিক অংশ ব্লগের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার অধিকার রাখে। এবং অবশ্যই কপিরাইট ক্লাইম করে যে মাধ্যমে এই ব্লগের পোস্ট প্রকাশ করা হবে সেখানেও অভিযোগ সাবমিট করা হবে।
ধন্যবাদ, ব্লগ কর্তৃপক্ষ।