মেডিকেল টেস্ট কি? কিভাবে মেডিকেল টেস্ট করবেন? । ২০২৪

মেডিকেল টেস্ট

Last Updated on 7th April 2024 by Mijanur Rahman

বর্তমান সময়ে মেডিকেল টেস্ট সকল এর কাছে একটি পরিচিত জিনিস। মেডিকেল টেস্ট হলো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে রোগ প্রক্রিয়া, সংবেদনশীলতা সনাক্ত, নির্ণয় বা পর্যবেক্ষণ করতে বা রোগ নির্ধারণ করা হয়।

বিশেষ ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলি আলাদাভাবে করা হয়ে থাকে যা হাসপাতালের কোন ওয়ার্ডে বা কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার করে থাকে। তবে একজন ডাক্তার রুটিন চেকআপের অংশ হিসাবে, নির্দিষ্ট রোগ এবং ব্যাধিগুলি পরীক্ষা করতে বা আপনার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে এই পরীক্ষাগুলি করতে পারেন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি আরও গুরুতর কিছু হওয়ার আগে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা যেতে পারে।

এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ সনাক্ত করতে এবং প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও বাইরের দেশে যেতে হলে আইডিন্টিটি তৈরি করার জন্যও মেডিকেল টেস্ট হয়ে থাকে।

ডিফেন্সে নিয়োগ এর ক্ষেত্রে প্রার্থীর কোনো রোগ বা কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কিনা তা চেক করার জন্যও মেডিকেল টেস্ট হয়ে থাকে। অর্থাৎ বলতে গেলে বর্তমান সময়ে মেডিকেল টেস্টের প্রচলন ব্যাপক। তো সে যাই হোক, এই লেখাতে আমরা জানবো, মেডিকেল টেস্ট কি? মেডিকেল টেস্ট কোথায় করানো হয়, মেডিকেল টেস্ট খরচ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত।

মেডিকেল টেস্ট এর ক্ষেত্র

  • বডি চেক আপ।
  • বিদেশগামীদের মেডিকেল টেস্ট। 
  • আইনি ঝামেলায় মেডিকেল টেস্ট।
  • বিয়ের ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট।
  • ডিফেন্সে নিয়োগ এর ক্ষেত্রে।
  • খেলাধুলায়।
  • পোস্টমর্টেম এর ক্ষেত্রে।
  • সরকারি চাকরীর নিয়োগের ক্ষেত্রে। 
  • ড্রাগ টেস্ট।

বডি চেক আপ

এটি হল আপনার শরীরের পরীক্ষা যা সাধারণত ডাক্তার দ্বারা করা হয়। পরীক্ষায় শরীরের মৌলিক সিস্টেম যেমন হার্ট সিস্টেম, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেম, স্নায়ুতন্ত্র এবং ফুসফুস সিস্টেম রয়েছে। অনেকে তাদের শারীরিক অবস্থা বা তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে অধিক সচেতন থাকে। সেক্ষেত্রে তারা নিয়মিত বডি চেকাপ করে থাকে। নিয়মিত বডি চেকাপ করা আমাদের সকলের জন্য খুবই জরুরি। সেটা হতে পারে ৩ মাস, ৬ মাস বা ১ বছর পর পর (সামর্থ্য অনুযায়ী)। এতে আমাদের শরীরে যদি কোনো রোগ থাকে তা সহজেই মোকাবেলা করা যায়। এমনকি ক্যান্সার এর প্রাথমিক স্টেজে ধরা পরলেও তা চিকিৎসা করে মোকাবেলা করা যায়। কোনো বড় ধরনের রোগ প্রাথমিক ভাবে ধরা পরলে তা মোকাবেলা করার পাশাপাশি সেই চিকিৎসার খরচ ও অনেক সাশ্রয় করা যায়। এখানে কিছু পরীক্ষা যা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ডাক্তার রা করে থাকেন। 

  • ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ, পালস রেট সহ সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা।
  • রক্ত পরীক্ষা এবং হিমোগ্রাম যা সংক্রমণ, রক্তাল্পতা বা অন্যান্য রোগের সূত্রপাত নির্ধারণ করে। 
  • লিপিড প্রোফাইল কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি মূল্যায়ন করে। 
  • লিভার ফাংশন পরীক্ষা লিভারের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে বা লিভারের রোগ নির্ণয় করে। 
  • কিডনি ফাংশন পরীক্ষা কিডনির সঠিক কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে। 
  • রক্তে শর্করা ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করে। 
  • বুকের এক্স-রে বুক এবং এলাকায় অবস্থিত অঙ্গগুলি অধ্যয়ন করে।
  • ইসিজি হার্ট রেট এবং হার্টবিটের অভিন্নতা নির্ধারণে সাহায্য করে। 
  • ইউরিন পরিক্ষা করে থাকে।
  • পদ্ধতিগত বা বিপাকীয় রোগ।

তবে শুধু নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিক্ষা করলেই হবে না। তার সাথে সঠিক নিয়ম মেনে জীবন-যাপন করতে হবে। সকল ধরনের বদ অভ্যাস যেমন ধূমপান, কম ঘুমানো, অলসতা এগুলো পরিহার করতে হবে।

বডি চেক আপ
বডি চেক আপ

বিদেশগামীদের মেডিকেল টেস্ট

আপনি যদি অন্য কোনো দেশে যেতে চান বা অন্য দেশ থেকে আপনার দেশে ফিরে আসেন তখন বিদেশে থাকাকালীন আপনি কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হননি তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট রুটিন পরীক্ষা সম্পন্ন করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার নিজের নিরাপত্তার জন্য এবং অন্যদের নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু রুটিন পরীক্ষা এখানে দেওয়া হলঃ

  • বিদেশগামীদের করোনা টেস্ট – করোনা মহামারীর জন্য এখন কোরোনা টেস্ট মোটামুটি সব দেশেই বাধ্যতামূলক, সুতারাং আপনি যে দেশেই এখন যাবেন সেখানে যাওয়ার ৭২ ঘন্টার মধ্যে করোনা টেস্ট করাতে হবে।
  • ব্লাড টাইটার টেস্টিং – এই পরীক্ষা রক্তে অ্যান্টিবডি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের উপস্থিতি যাচাই করতে সাহায্য করতে পারে। আপনার নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনের জন্য বুস্টার শটের প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য ভ্রমণের আগে একটি পরীক্ষাও করা যেতে পারে।
  • ম্যালেরিয়া পরীক্ষা-যে কেউ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণ করেছেন এবং বিশ্বাস করেন যে তারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্য ম্যালেরিয়া পরীক্ষা অপরিহার্য। 
  • প্যারাসাইট টেস্টিং – প্যারাসাইট টেস্টিং হল আরেকটি পরীক্ষা যা যদি রোগী অসুস্থ বোধ করে এবং সন্দেহ করে যে সে দূষিত পানির সংস্পর্শে এসেছে।
  • যক্ষ্মা (টিবি) পরীক্ষা – একটি যক্ষ্মা পরীক্ষা একটি নিয়মিত পরীক্ষা যা কেবল ভ্রমণকারীদের দ্বারা নয় বরং অন্যান্য অনেক ব্যক্তি বিশেষ করে যারা শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবাতে কাজ করে তাদের প্রয়োজন।
  • প্রস্রাব পরীক্ষা: প্রস্রাব বিশ্লেষণ মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনি রোগ, লিভারের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য বিপাকীয় অবস্থার মতো অবস্থা সনাক্ত করতে পারে। 
  • বুকের এক্স-রে: বুকের এক্স-রে শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত কাশি, জ্বর, বুকে ব্যথা বা আঘাত নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, এটি নিউমোনিয়া, এমফিসেমা এবং ক্যান্সারের মতো ফুসফুসের বিভিন্ন অবস্থার জন্য রোগ নির্ণয় এবং নিরীক্ষণে সহায়তা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পরীক্ষার জন্য কোন বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।
  • গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য একটি বিশেষ যত্ন এবং মেডিকেল পরীক্ষার রেকর্ড প্রয়োজন হবে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের মতে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় ভ্রমণ সবচেয়ে আরামদায়ক এবং গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অস্বস্তি তৈরি করবে। অনেক দেশে নির্দিষ্ট টিকা বা অন্যান্য সতর্কতা প্রয়োজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ থেকে ক্লিনিকাল রিপোর্ট একটি রেকর্ড রাখা প্রয়োজন হবে। যদি ভিসা আবেদনের জন্য দেশ অনুযায়ী বুকের এক্স-রে প্রয়োজন হয়, তাহলে সেন্টার অফ ডিজিজ অ্যান্ড কন্ট্রোল (সিডিসি) প্যানেল চিকিৎসক এবং ল্যাবরেটরিগুলিকে বুকের রেডিওগ্রাফ গ্রহণ করার সময় পেট এবং পেলেভিক সুরক্ষা প্রদান করতে নির্দেশ দেয়। 

বিদেশগামীদের মেডিকেল টেস্টের খরচঃ

মেডিকেল টেস্টের খরচের কোনো নির্দিষ্ট হিসেব নেই। চিকিৎসার ধরন এবং অবস্থা বুঝে খরচ হয়ে থাকে। তবে যে একদম কম তাও না। অনেকে নিয়মিত বিদেশ গিয়েও তাদের বডি চেক আপ করিয়ে থাকে। এতে কয়েক লাখ টাকাও খরচ হয়ে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে যাবেন বলে চিন্তাভাবনা করছেন তাদের অবশ্যই মেডিকেল টেস্ট করতে হবে, আর এই টেস্টের জন্য আপনার বর্তমানে খরচ হবে ১০,০০০ টাকার মতো। সৌদি আরব, কাতার, ওমান, কুয়েত, বাহরাইন এই সবকটি দেশের জন্যই সমপরিমাণ খরচ হবে। বিদেশগামীদের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিচের কাগজ বা ডকুমেন্টস লাগবে।

  • গামকা (GCC) ওয়েবসাইট থেকে ১০ ডলারের বিনিময়ে মেডিকেল স্লিপ নিতে হবে
  • পাসপোর্ট এবং পুরো পাসপোর্টের এক সেট ফটোকপি সাথে নিতে হবে
  • সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইনের মেডিকেলের জন্য সাথে করে ৫ কপি পাসপোর্টসাইজ ছবি নিতে হবে।
  • কুয়েতের জন্য ভিসার কপি সাথে নিয়ে যেতে হবে।

আইনি ঝামেলায় মেডিকেল টেস্ট

আইনি ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট করা হয়। এক্ষেত্রে অপরাধীর মেডিকেল ডাটা নিয়ে একটা বায়োডাটা তৈরি হয়। তারপর তা তাদের অপরাধীর রেকর্ডে যোগ করা হয়। যাতে পরবর্তীতে প্রয়োজনে তাকে আবার গ্রেফতার করতে সেই ডাটার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে অপরাধীর পুরো বডি চেক আপ করা হয় এবং সবকিছু নোট করা হয়। 

এছাড়াও ধর্ষণ মামলায় ও ভিক্টিম আর অপরাধীর মেডিকেল টেস্ট কর হয় এবং মামলায় তা পেশ করা হয়। এতে খুব সহজেই অপরাধী শনাক্ত করা যায় এবং তাকে শাস্তির আওতায় আনা যায়। 

এছাড়াও কেউ যদি কেইস খেয়ে ওয়ান্টেডের আসামী হয় আবং দেশ ছেড়ে পালানোর চিন্তা করে তখন মেডিকেল টেস্টের ডকুমেন্ট দিতে তাকে সহজেই গ্রেফতার করা যায়। তার হাতের ছাপ এবং রেটিনা স্ক্যান করে সহজেই অপরাধী কে শনাক্ত করা যায়।

বিয়ের ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট

বর্তমান যুগে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বা স্বামী-স্ত্রীর ক্যারেক্টার অথবা তাদের কোনো গোপন সমস্যা আছে কিনা তা টেস্ট করার জন্য মেডিকেল টেস্ট হয়ে থাকে। 

  • বন্ধ্যাত্ব পরীক্ষাঃ ভবিষ্যতে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা বা স্বাভাবিক যৌন জীবন যাপন করার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাগুলো অনেকে করে থাকে। এর ফলাফল নেগেটিভ হলে সহজেই চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে তা সারিয়ে তোলা যায়। 
  • ব্লাডের আরএইচ ফ্যাক্টরঃ  এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। আপনি যদি সন্তান জন্ম দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তবে আপনার এবং আপনার সঙ্গীর একই Rh ফ্যাক্টর (রিসাস ফ্যাক্টর) থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার রক্তের গ্রুপ একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে এটি গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। একটি Rh অসঙ্গতি দ্বিতীয় সন্তানের জন্য মারাত্মক হতে পারে। কারণ এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে গর্ভবতী মহিলার রক্তে থাকা অ্যান্টিবডি তার শিশুর রক্তকণিকা ধ্বংস করে। অনেক সময় সন্তান মৃত বা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায়।
  • জেনেটিকঃ জেনেটিক অবস্থা সহজেই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তরিত হতে পারে। অতএব, খুব দেরি হওয়ার আগে এই দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা অবস্থার জন্য পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু রোগের মধ্যে রয়েছে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, কিডনি রোগ এবং ডায়াবেটিস। সময়মতো রোগ নির্ণয় জীবন-হুমকির মুখে পড়ার আগে এই চিকিৎসা অবস্থার সঠিক চিকিৎসা পেতেও সাহায্য করতে পারে।
  • যৌন সংক্রামিত রোগঃ বর্তমানযুগে বিবাহপূর্বে যৌন সংক্রামিত রোগের জন্য পরীক্ষা করা একটি ভাল ধারণা। এই রোগগুলির মধ্যে রয়েছে এইচআইভি/এইডস, গনোরিয়া, হারপিস, সিফিলিস এবং হেপাটাইটিস সি।
বিয়ের ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট
বিয়ের ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট

যদি আপনার সঙ্গীর পরীক্ষার রিপোর্ট ইতিবাচক হয়, তাহলে এটি আপনাকে ভবিষ্যতে যে মানসিক ও মানসিক আঘাতের মুখোমুখি হতে পারে তা থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে এবং আপনি বিবাহে এগিয়ে যেতে চান কিনা তা স্পষ্ট করে দিতে পারেন।

ডিফেন্সে নিয়োগের ক্ষেত্রে

ডিফেন্সে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রত্যেক প্রার্থীর মেডিকেল টেস্ট খুব সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে। সবাই চাইলেই ডিফেন্সে এপ্লাই করতে পারে না। পদ ভেদে বয়স এবং বয়স অনুযায়ী প্রার্থীর উচ্চতা এবং ওজন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে যেই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলোঃ 

  • একজন প্রার্থীর শক্তিশালী শরীর এবং ভাল মানসিক স্বাস্থ্য থাকতে হবে।
  • ভালো উচ্চতা থাকতে হবে। 
  • ওজন তাদের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী থাকতে হবে। 
  • চোখের দৃষ্টি প্রখর হতে হবে। 
  • কোনো রোগ শরীরে বহন করা যাবে না।
  • ন্যূনতম ৫ সেমি এক্সটেনশন সহ বুক ভালভাবে বিকশিত থাকতে হবে। 
  • প্রতিটি কানের সাথে স্বাভাবিক শ্রবণ এবং উভয় চোখে ভাল বাইনোকুলার দৃষ্টি থাকতে হবে। 
  • প্রাকৃতিক সুস্থ মাড়ি এবং দাঁত থাকতে হবে অর্থাৎ ন্যূনতম 14 ডেন্টাল পয়েন্ট।

খেলাধুলায় মেডিকেল টেস্ট

খেলাধুলার ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি খেলার আগে খেলোয়াড়দের ফিটনেস টেস্ট করে দেখতে হয় যে তারা খেলার জন্য ফিট বা নিরাপদ কিনা। তাই বিভিন্ন খেলাভেদে টেস্টের ধরন ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আর তার জন্য একটা নির্ধারিত মান ও সেট করা থাকে। অনেক প্লেয়ার আছে যারা ভালো খেলার জন্য বা দম বাড়ানোর জন্য ড্রাগ নিয়ে থাকে। তাই মেডিকেল টেস্ট করলে তা সহজেই ধরা পরে যায়। 

পোস্টমর্টেম এর ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট

কেই অপঘাতে মারা গেলে বা খুন হলে বা এক্সিডেন্ট কিংবা আত্মহত্যা করলে তখন তার মৃত্যুর কারন খুজে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য পোস্টমরটেম করা হয়ে থাকে। অনেক সময় ভিকটিম এর চেহারা বিকৃত থাকে। সেক্ষেত্রে তার পূর্বের মেডিকেল টেস্টের রিপোর্টের সাথে ম্যাচ করে ভিকটিম কে শনাক্ত করা হয়। 

পোস্টমর্টেম এর ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট
পোস্টমর্টেম এর ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্ট

সরকারি চাকরির মেডিকেল টেস্ট

যে কোন সরকারি চাকরিতে নিয়োগের পূর্বে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। তাদের মেডিকেল টেস্টের তালিকাঃ

  • উচ্চতা এবং ওজন পরিমাপঃ নুন্যতম উচ্চতা এবং ওজন সাধারণত প্রতিটি মেডিকেল পরীক্ষার শুরুতে নেওয়া হয়। মেডিকেল এবং প্যারামেডিক্যাল পোস্টের জন্য সহ সকল ক্ষেত্রে ন্যূনতম উচ্চতা ইত্যাদি প্রয়োজন হয় না কিন্তু তবুও এটি রেকর্ড রাখতে সাহায্য করে এবং উচ্চতা ওজনের অনুপাত স্বাভাবিক কিনা তা নির্ধারণ করতেও সাহায্য করে। প্রার্থীর ওজন হবে এবং তার ওজন কিলোগ্রামে রেকর্ড করা হবে।
  • ইউরিন পরীক্ষাঃ এই পরীক্ষা সহজ পরীক্ষা। কোন অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করার জন্য প্রস্রাবের নমুনা নেওয়া হয়। 
  • রক্ত পরীক্ষাঃ খালি পেটে এবং ভরা পেটে রক্ত ​​পরীক্ষা করা হয় যাতে রক্তের কোষের অস্বাভাবিক পতন বা বৃদ্ধি সনাক্ত করা যায় যা বিভিন্ন রোগের সময় ঘটে। এই পরীক্ষাটি এইচআইভি সনাক্ত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রক্তচাপঃ রক্তচাপ পরিমাপ করা হয় এবং আপনার মেডিকেল পরীক্ষায় উল্লেখ করা হয়। প্রার্থীকে চাপে না পড়ার চেষ্টা করা উচিত অন্যথায় ডাক্তার আরও প্রশ্ন করতে পারে এবং আরও পরীক্ষা করতে পারে।
  • ইসিজিঃ হার্টের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য সহজ পরীক্ষা।
  • ফুসফুস পরীক্ষাঃ ফুসফুস স্টেথোস্কোপ বা স্পাইরোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার সময় ডাক্তার আপনাকে স্বাভাবিকভাবে বা দ্রুত হারে শ্বাস নিতে বলতে পারেন।
  • ডায়াবেটিস পরীক্ষাঃ কিছু বিভাগ ডায়াবেটিস মেলিটাসের উপস্থিতি চেক করার জন্য এই পরীক্ষাটিপরিচালনা করে।
  • ইএনটি পরীক্ষাঃ কান, নাক এবং গলা বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করা হয় যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে কিনা তা সনাক্ত করে।
  • চোখের পরীক্ষাঃ প্রার্থীদের দূর থেকে চোখের চার্ট পড়তে হবে। চোখের চার্টে বিভিন্ন আকারের বর্ণমালা রয়েছে। আপনার এক চোখ বন্ধ এবং উভয় চোখ খোলা দিয়ে পড়তে হবে। আপনি যদি চশমা ব্যবহার করেন তাহলে আপনাকে চশমা সহ এবং ছাড়া পড়তে বলা হবে।
  • এক্স-রে এবং আল্ট্রাসাউন্ডঃ শ্বাসকষ্ট এবং কঙ্কাল ব্যবস্থায় অস্বাভাবিকতার উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য একটি বুকের এক্স-রে আছে। উভয় কিডনি সঠিক অবস্থানে আছে কিনা তা চেক করা হয়।
  • হার্নিয়ার জন্য পরীক্ষাঃ কখনও কখনও ডাক্তার কেবল জিজ্ঞাসা করেন যে আপনার হার্নিয়া আছে কিনা, অথবা তিনি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা করতে পারেন। এই পরীক্ষা কিছু প্রার্থীর কিছু কাপড় খুলে ফেলা দরকার হয়, তবে তা বিশেষ ক্ষেত্রে।

ড্রাগ টেস্ট

ড্রাগ টেস্টের জন্য মেডিকেল টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বড় বড় স্কুল কলেজ আছে যারা ধূমপায়ী ছাত্র ছাত্রী গ্রহন করে না। তাই অনেক সময় তারা নিজ উদ্যোগে ছাত্র ছাত্রীদের ড্রাগ টেস্ট করিয়ে থাকে। অনেক সময় প্রাইভেট কোম্পানির চাকরীর সার্কুলারে লিখা থাকে যে তাদের চাহিদা অধূমপায়ী প্রার্থী। তাই অনেক প্রার্থীর মধ্যে সত্যতা যাচাই করতে এবং ধূমপায়ী লোক খুজে বের বের করতে ড্রাগ টেস্ট করা হয়। অনেক খেলোয়াড় খেলার আগে ড্রাগ নিয়ে থাকে। এর মাধ্যমেও তা খুজে বের করা যায়। অনেক সময় সন্তান একটু বড় হবার পর সচেতন বাবা মা সন্তানের ড্রাগ টেস্ট করানোর মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে তাদের সন্তান ড্রাগে আসক্ত কিনা। 

মেডিকেল টেস্টের বিশেষ টিপস

এখন আপনাদের সাথে কিছু টিপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার মেডিক্যাল এক্সাম এ সঠিক ফলাফল দিতে সহায়তা করবে। সেগুলো হলোঃ 

  • মেডিকেল টেস্টের আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। এটি হতে পারে ৬-৮ ঘন্টা। তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। যাতে নার্ভ নরমাল থাকে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব অথবা অতিরিক্ত ঘুম আমদের ব্লাড টেস্ট এর ফলাফল কে প্রভাবিট করে। একটা গবেষনা থেকে জানা যায় যে ৯২% ক্ষেত্রে যারা কম ঘুমায় বা অতিরিক্ত ঘুমায় তাদের ব্লাড টেস্ট এর ফলাফল নির্ভুল ছিলো না। তাই ব্লাড টেস্ট এর আগে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। তবেই ব্লাড টেস্টের রেসাল্ট সঠিক হবে এবং সহজেই এই পরীক্ষায় পাশ করা যাবে। 
  • নোনতা বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 
  • ব্যায়াম করলে হার্টবিট ফাস্ট কাজ করে এবং রক্ত সঞ্চালন ও খুব দ্রুত হয়। তাই মেডিকেল টেস্ট এর আগে ব্যায়াম করা যাবে না। 
  • কফি বা কোনও ক্যাফিনযুক্ত পণ্য পান করবেন না। কফিতে কোলেস্টেরল না থাকলেও, এটি কোলেস্টেরলের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। কফির ডিটারপেনগুলি কোলেস্টেরল ভাঙ্গনের সাথে জড়িত পদার্থগুলির শরীরের উৎপাদনকে দমন করে, যা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। বিশেষত, কফি ডিটারপেনগুলি মোট কোলেস্টেরল এবং এলডিএল মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • মেডিকেল টেস্ট এর আরেকটি ধাপ হলো ইউরিন টেস্ট। ইউরিন টেস্ট এর ১ থেকে ২ ঘন্টা আগে যতটুকু সম্ভব পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ইউরিন টেস্ট এর ১ থেকে ২ ঘন্টা আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে সঠিক টেস্টের সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে।
  • টমেটোর রস। এক গ্লাস টমেটোর রস পান করা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো কাজ করতে পারে। এছাড়াও খেতে পারেন বিটের রস,প্রান জুস,ডালিমের রস,বেরি রস, দুধ। 
  • পানি আপনার তৃষ্ণা নিবারণের চেয়ে অনেক বেশি করে। এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, জয়েন্টগুলিকে তৈলাক্ত করে, হজম এবং পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে এবং বর্জ্য পণ্যগুলি অপসারণ করে আপনার শরীরকে বিষমুক্ত করে।
  • পরীক্ষার আগে কয়েক ঘন্টা জল ছাড়া আপনার কিছু খাওয়া বা পান করা উচিত নয়। আপনি যখন স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করেন, তখন সেই খাবার এবং পানীয়গুলি আপনার রক্তপ্রবাহে শোষিত হয়।
  • কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা অ্যালকোহল পান করবেন না কারণ ড্রাগ এবং অ্যালকোহল কিছু পরীক্ষাকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • শারীরিক পরীক্ষার সময়, ডাক্তার লিঙ্গ এবং অণ্ডকোষ সহ যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করবেন। ডাক্তার অণ্ডকোষপরীক্ষা করার সময় কিশোরকে কাশি করতে বলতে পারেন। যদিও এটি একজন কিশোর পুরুষের জন্য বিব্রতকর হতে পারে তবে মানসিকভাবে শক্ত থাকবেন। 
  • অনেক সময় বুক এবং পেটের এক্স-রে পরীক্ষা করার জন্য বাধ্যতামূলক জামা কাপড় খুলতে হয়। তাই ভালো করে তৈরি হয়েই যাবেন। 
  • মানসিক ভাবে চাপমুক্ত থাকতে হবে। আমরা যখন বেশি টেনশন করি বা চাপএ থাকি তখন আমাদের হার্ট এবং রক্ত চলাচল দ্রুত হতে থাকে। যার ফলে আমাদের মেডিকেল টেস্ট এর ফলাফল সঠিক নাও আসতে পারে। তাই সবসময় চাপমুক্ত থাকতে হবে। 

মেডিকেল টেস্ট কোথায় করানো হয়?

উপরে আমরা আলোচনা করেছি ভিন্ন ভিন্ন মেডিকেল টেস্ট সম্পর্কে, আপনি যে মেডিকেল টেস্ট করবেন তার উপর নির্ভর করবে কোথায় গিয়ে এই টেস্ট করবেন। আপনি যদি বিদেশ যাওয়ার জন্যে মেডিকেল টেস্ট করতে চান তাহলে যার মাধ্যমে বিদেশ যাবেন তার সাথে যোগাযোগ করলে তারা নির্ভুল তথ্য দিতে পারবে।

এছাড়া আপনি যদি চাকুরী বা ডিফেন্সের জন্যে মেডিকেল টেস্ট করতে চান তাহলে সেটা চাকুরী বা ডিফেন্সের নিয়োগপত্রেই লেখা থাকবে কোথায় এই টেস্ট করতে হবে।

পরিশেষে

মেডিকেল টেস্ট নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সহজ ভাষায় মেডিকেল টেস্ট মানে আপনার ওজন, উচ্চতা, বডি মাস ইনডেক্স বা বি এম আই পরীক্ষা করা। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্ক্রিনিং। মাস্কুলোস্কেলেটাল পরীক্ষা যা সম্পূর্ণ শরীরের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে।

হার্ট পরীক্ষা যা নাড়ির হার এবং উচ্চ রক্তচাপ অন্তর্ভুক্ত করে। আমাদের সুস্থ থাকার জন্য এবং আমাদের পরিবেশকে সুস্থ রাখার জন্য আমাদের সকলের উচিত খারাপ অভ্যাস পরিহার করা।

ধূমপান আমাদের জীবনের জন্য অভিশাপ। যে ধূমপান করে সে যেমন খতিগ্রস্থ হয় ঠিক তেমনি তার আশে পাশের লোক জনের ক্ষতি করে। এটা সহজেই ফুফফুসের মাধ্যমে শরীরের ভিতর প্রবেশ করে এবং লিভার, ফুসফুস। কিডনি নস্ট করে দেয়। তাই সকলে সুস্থ থাকবেন এবং অন্যকেও সুস্থ রাখবেন, সেই সঙ্গে আমাদের এই পরিবেশকে।

Author

Leave a Comment

Scroll to Top