টিন সার্টিফিকেট কি? টিন সার্টিফিকেট নবায়ন করার নিয়ম

টিন সার্টিফিকেট

Last Updated on 6th April 2024 by Mijanur Rahman

দেশের এক জন নাগরিক হিসেবে আমাদের কর দিতে হয়। কর দেয়াটা বাধ্যতামূলক।  এই কর প্রদান করার জন্য আমাদের টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয়। এটা করযোগ্য আয়ের সীমা অতিক্রম কারী দেশের সকল নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়া বিভিন্ন কাজের জন্য নিজের সম্পত্তির বৈধতা যাচাইয়ের জন্যেও  এটি খুব গুরত্বপূর্ণ।

টিন সার্টিফিকেট কি?

টিন (TIN)  হলো ট্যাক্স-পেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার,(Taxpayer Identification Numbers) যা দ্বারা একজন করদাতাকে শনাক্ত করা হয়। মূলত এই আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারের সাহায্যে একজন করদাতার সব তথ্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রেজিস্টার করা হয়ে থাকে। করদাতা এই টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে নিজের বার্ষিক আয় ও মোট সম্পদের যাবতীয় তথ্য ইনকাম টেক্স বিভাগের নিকট সঠিক ভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের সব সম্পত্তির হিসেব রাষ্ট্রের নিকট উপস্থাপন করা আমাদের দায়িত্ব।

টিন সার্টিফিকেট এর ব্যবহার

সরকারের প্রবর্তিত নিয়মানুসারে এবং একজন নাগরিকের বিভিন্ন সেবা গ্রহণের জন্য টিন সার্টিফিকেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে একজন নাগরিক বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারেন। বাৎসরিক আয়কর রিটার্ন মূলত  এই টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে দাখিল করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারের প্রয়োজন হয়,

১) আপনি যদি আপনার ট্রেড লাইসেন্স নবায়ণ করতে যান তবে আপনার টিন সার্টিফিকেট দেখাতে হয়।

২) বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরে তা রেজিস্ট্রেশন করার জন্য এটি দরকার হয়। আর রেজিস্ট্রশন ছাড়া সকল কোম্পানি অবৈধ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য হলেও এটি দরকার হয়।

৩) আপনার আমাদানিপত্র রেজিস্ট্রেশন করার জন্য আপানার টিন সার্টিফিকেট অবশ্যই লাগবে। কারণ আপনার সম্পত্তির হিসাবে দেখাতে হবে।

৪) বিভিন্ন ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য টিন সার্টিফিকেট দেখাতে হয়।

৫) বিভিন্ন বাণিজ্যিক দরপত্র ক্রয় করার জন্য আপনার ট্যাক্স-পেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার থাকা বাধ্যতামূলক।

৬) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার জন্য  TIN  দরকার। তবে এক্ষেত্রে কর প্রদান বাধ্যতামূলক নয়।

৭) সিটি কর্পোরেশন ভুক্ত জমি বা ভবন রেজিস্ট্রেশন করতে হলেও আপনার টিন সার্টিফিকেট লাগবে। এই নাম্বার ব্যবহার করে বাড়ির টেক্স দিতে হবে।

৮) ব্যবসায়িক সমিতির সদস্যপদ প্রাপ্তি ও নবায়ণের জন্য এটি দরকার হবে।

৯) গাড়ি, মাইক্রোবাস অথবা জিপ এর রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস সনদ পেতে হলেও টিন দেখাতে হবে।

১০) কোন লাইসেন্স যেমন, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী ইত্যাদি গ্রহণের জন্য টিন সার্টিফিকেট দরকার।

১১) নির্বাচনের প্রার্থী হতে হলে।

টিন সার্টিফিকেট ও কর প্রদান নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ

আমাদের মধ্যে  একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, টিন গ্রহণ করলেই কর দিতে হবে। কিন্তু  এধারণা মোটেই সত্য নয়। কারণ কর প্রদানের জন্য আপনার আয় একটি নির্দিষ্টি সীমা অতিক্রম করতে হবে। যদি আপনার আয়করযোগ্য না হয় কিন্তু আপনার টিন রয়েছে সেক্ষেত্রে আপনাকে কর শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তার মানে করতে দিতে হলে অবশ্যই আপনার টিন নিতে হবে। কিন্তু আয় করযোগ্য না হলে কর দেয়া লাগবে না।  সরকারের নিয়মানুসারে যাদেরকে অব্যশই কর দিতে হবে,

১)  করদাতার মোট করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করে তবে রিটার্ন জমা দিতে হবে।

২) মোটর গাড়ির মালিকানা থাকলে অবশ্যই কর দিতে হবে।

৩) মূল্য সংযজোন কর আইন, ১৯৯১ এর অধীন নিবন্ধিত কোন ক্লাবের সদস্যপদ থাকলে।

৪) সিটি কর্পোরেশনে অথবা পৌরসভায় ব্যাবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে থাকলে আয়ের অংশ থেকে কর দিতেই হবে।

৫) বিভিন্ন পেশা যেমন ডাক্তার, আয়কর আইনজীবী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার ইত্যাদিতে নিয়োজিত সকল ব্যাক্তিবর্গকে রিটার্ন জমা দিতে হবে।

৬) চেম্বার অব কমার্স এন্ড উন্ডাস্ট্রিজ অথবা কোন ট্রেড এসোসিয়েশনের সদস্য।

৭) পৌরসভা, সিটি কর্পরেশন অথবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পদপ্রার্থী হলে।

৮) সরকারী, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ঠিকাদারি কাজে টেন্ডারে অংশগ্রহনকারী সকল ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

৯) সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারী চাকরীরতদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি হলে রিটার্ন জমা দিতে হবে।

তাই টিন সার্টিফিকেট নিলে আপনাকে আয়কর রিটার্ন অবশ্যই দাখিল করতে হবে। অন্যথায় আপনার অর্থ কালো টাকা (Black Money) হিসেবে বিবেচিত হবে।  

টিন সার্টিফিকেট কিভাবে করবেন?

টিন সার্টিফিকেটের নাম শুনলেই আমরা ভয় পেয়ে যাই। কারণ আয় কর বিষয়টা জটিল হওয়ার কারণে অনেকে  এ বিষয়টি সহজে বুঝতে পারেন না। কিন্তু টিন সার্টিফিকেট হলো শুধু একটি নাম্বার যা দিয়ে আপনার টেক্স পরিচিতি (tex identity) নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এবং এই ট্যাক্স-পেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার,(Taxpayer Identification Numbers) দিয়ে আপনার টেক্স প্রদান, সম্পদের হিসাব ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়।

তাই এর নাম শুনলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। যদি উদাহরণ দেই, আমরা কোন ব্যাংক একাউন্ট করার সময় ব্যাংকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে একটি  একাউন্ট খুলি এবং ব্যাংক থেকে আমাদের একটি একাউন্ট নাম্বার দেয়।

সেই নাম্বার দিয়ে আমরা হিসাব, টাকা সঞ্চয়, ঋণ গ্রহণ করে থাকি। ঠিক তেমনি ভা বে এই টিন নাম্বার দিয়ে আমাদের কর(Tex)  এর সব ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সহজ কথায় এটিকে টেক্স দেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও বলা হয়।

কখন এটি করবেন?

যখন আপনার মোট আয় করযোগ্য আয়ের সীমা অতিক্রম করবে বা উপরোক্ত তালিকার মধ্যে পড়বেন তখন আপনার টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে। আর দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশকে আয়কর দিয়ে  এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং নিজের বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনার টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া আপনি যদি উক্ত তালিকায় থেকে কিংবা করমুক্তসীমার বেশি আয় করেও  আয়কর প্রদান না করেন তবে সরকার আইন অনুসারে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, জরিমানা করতে পারে।

টিন সার্টিফিকেট করতে কী কী লাগবে?

টিন সার্টিফিকেট করতে প্রাথমিক ভাবে ,

  •   জাতীয় পরিচয়পত্র
  •  মোবাইল নাম্বার
  •  বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা

এবং আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র লাগবে।

কিভাবে টিন সার্টিফিকেটের আবেদন করবেন?

টিন সার্টিফিকেটের আবেদন করার জন্য আপনাকে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ড এর ওয়েব সাইটে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে সেখান থেকে রেজিস্টার করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে আবেদেন করার সাথে  সাথেই ১২ সংখ্যার ইউনিক আইডি নম্বর বা টিন নম্বর পেয়ে যাবেন। যেটা ব্যবহার করে আপনি আয়কর সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ কারতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার্থে ধাপ অনুযায়ী দেয়া হলো,

১)  বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ড এর ওয়েব সাইট  https://secure.incometax.gov.bd/TINHome এ গিয়ে  মেনু থেকে রেজিস্টার অপশনে ক্লিক করবেন অথবা সরাসরি এখানে ক্লিক করেও  রেজিস্টার পেজে যেতে পারবেন।  https://secure.incometax.gov.bd/Registration/Index

টিন সার্টিফিকেটের আবেদন
ধাপ ১ঃ টিন সার্টিফিকেটের আবেদন

২) রেজিস্টার পেজে যাবতীয় তথ্য দিয়ে নিজের একাউন্ট করে নিতে হবে। তার জন্য আপনাকে ইউজার আইডি ( User ID), পাসওয়ার্ড (অবশ্যই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিবেন। এবং সেটা নোট করে রাখবেন),   নিরাপত্তা প্রশ্ন (Security Question) সেট করে তার উত্তর দিয়ে নোট করে রাখবেন। যেটা আপনি পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে এটা দিয়ে পাওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারবেন। (  যেমন: Security Question= What is the name of your favorite teacher  দিয়ে উত্তরে আপনার প্রিয় শিক্ষকের নাম দিয়ে দিবেন যেটা আপনি ছাড়া কেউ জানবে না এবং আপনার প্রিয় শিক্ষকের নামও আপনি ভুলবেন না। তবে সেটা অবশ্যই নোট করে রাখবেন।) , এরপর দেশ, মোবাইল নম্বর ( এটা অবশ্যই সচল হতে হবে কারণ এটা দিয়ে আপনার  ই-টিন ভেরিফিকেশন করা হবে। মোবাইয়ে একটি কোড পাঠনো হবে সেই কোড দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে ) , এরপর  ইমেইল এড্রেস দেয়ার পরে সঠিকভাবে ক্যাপচা পূরণ করে রেজিস্টার অপশনে ক্লিক করার পরে আপনার কাছে একটি ভেরিফিকেশন কোড চাইবে। যা আপনার মোবাইলে মেসেজ আসবে। সে কোডটি সঠিকভাবে ই-টিন ভেরিফিকেশন এর ঘরে বসিয়ে একটিভ করলেই   করলেই আপনার ইউজার একাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।  এটা হলো প্রাথমিক ধাপ।

টিন সার্টিফিকেটের আবেদন
ধাপ ২ঃ টিন সার্টিফিকেটের আবেদন

৩) আপনার একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে আপনার ওয়েবসাইটে পুনরায় আপনার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

৪) লগ ইন করার পরে যে পেজটি  ওপেন হবে তার বাম পাশের মেনুতে অনেকগুলো অপশন দেখা যাবে। এই অপশন থেকে নতুন আবেদন করার জন্য TIN Application  এ ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পরে খালি ফরম আসবে। এই ফরমে আপনার টিন রেজিস্ট্রশন এর জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে হবে।

  •     করতাদার ধরণ নির্ধারণ করতে হবে ।যেমন-ব্যাক্তি হলে Individual,  কোন প্রতিষ্ঠান হলে,  Company এভাবে ধরণ অনুযায়ী আপনি যে ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট নিবেন তা নির্ণয় করুন।
  • পরবর্তী ঘরে প্রথম ঘরে যে তথ্য দিয়েছেন তা অনুযায়ী পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স নম্বর ইত্যাদি নির্বাচন করতে হবে। মনে রাখবেন এর উপর ভিত্তি করে আপনার টিন সার্টিফিকেট আসবে।
  • রেজিস্ট্রেশনের ধরণ থেকে  New Registration  নির্বাচন করতে হবে।
  •  এখন আপনি কিভাবে আয় করেন সে সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। অর্থাৎ আয়ের উৎস সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। তথ্য দিয়োর সময় অবশ্যই সঠিক এবং সত্য তথ্য দিতে হবে। ভুল বা গোপনীয়তার আশ্রয় নিলে পরবর্তীতে ঝামেলা হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রথম পেজের সব তথ্য পূরণ শেষ হলে নিচে  Go to Next  অপশনে ক্লিক করতে হবে।

৫) প্রথম পেজ সঠিক ভাবে পূরণ করা হলে নতুন পেজ আসবে। এখানে নিজের ব্যাক্তিগত বিভিন্ন তথ্য, আয় সম্পর্কিত তথ্য, যদি টিন প্রতিষ্ঠানের হয় তবে প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিতে হবে। যে ঘরে যে  তথ্য চাইবে ঠিক সেটিই নির্ভুল ভাবে দিতে হবে। সকল তথ্য দেয়া হলে পুনরায় Go to Next এ ক্লিক করতে হবে।

৬) নতুন  পেজে আপনার সকল তথ্য একটি ফরমে দেখাবে। এখান থেকে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে  সকল ঠিক কিনা। যদি সকল তথ্য ঠিক এবং নির্ভুল হয় তবে নিচে চেক বক্সে টিক দিতে হবে।  যেখানে লেখা থাকবে I hereby affifm that all information given is true &  complete and I have not taken any TIN অর্থাৎ আপনি স্বীকার করছেন আপনার সকল তথ্য সত্য এবং সম্পূর্ণ ও আপনি এর আগের কোন টিন সার্টিফিকেট নেই। বক্সে টিক দেয়ার পরে  Submit Application  এ ক্লিক করে আপনার আবদেনটি সাবমিট করতে হবে।

৭) এপ্লিকেশন সাবমিট করার পরেই আপানার আবেদনটি সম্পূর্ণ তবে। এবং পরবর্তী পেজে আপনার সকল তথ্য দেখাবে। এই পেজের নিচে দুটি অপশন থাকবে   View Certificate Print Details এখান থেকে প্রিন্টি ডিটেইলস এ ক্লিক করে আপনার তথ্য প্রিন্ট অথবা ডাউলোড করে রেখে দিতে হবে। এছাড়া ভিউ সার্টিফিকেট অপশনে ক্লিক করলেই পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত টিন সার্টিফিকেট। এটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিলেই আপনার টিন সার্টিফিকেট ব্যবহারের জন্য তৈরি।

টিন সার্টিফিকেট করা খুবই সহজ। তবে আপনাকে প্রতিটা বিষয় মনোযোগ দিয়ে বুঝে বুঝে করতে হবে। কারণ এখানে ভুলেই সমস্যা হবে। তাই সব তথ্য দেয়ার সময় দেখে বুঝে করতে হবে। যদি নিজে বুঝতে সমস্যা হয় তবে অভিজ্ঞ কারো সহায়তা নিতে পারেন। এক্ষত্রে কোন কম্পিউটার অপারেটর থেকে করাতে পারেন। যারা এই ধরণের কাজ করে থাকে।

টিন সার্টিফিকেটের নমুনা ফটো
টিন সার্টিফিকেটের নমুনা ফটো

টিন সার্টিফিকেট করার ক্ষেত্রে জানা জরুরি

 টিন সার্টিফিকেট চাইলাম আর করে ফেললাম এটা ভেবে করার কোন দরকার নেই। আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার জন্য এটা করা জরুরি তবেই কেবল ‍টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করবেন। তাই অনুরোধ থাকবে টিন নাম্বার নেয়ার আগে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।

১) আপনার আয় করযোগ্য হলে হুট করেই কারো পরামর্শ ছাড়া টিন গ্রহণ করবেন না। একজন ইনকাম টেক্স বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন। তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।

২)  নিজে যদি ব্যবসায়ী হন আর আপনার যদি প্রতিষ্ঠান থাকে তবে ইনকামট্যাক্স বিশেষেজ্ঞের নিকট থেকে বুঝে নিন আপনি ব্যাক্তিগত ভাবে টিন( TIN) নিবেন নাকি প্রতিষ্ঠানের নামে নিবেন।

৩) আপনার যদি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান থাকে তবে আপনার টিন( TIN) নিতে হবে।  সিটিকর্পোরেশন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে নিবেন শুরুতে।

৪) যদি কর যোগ আয় হয় আর আপনি বা আপনার প্রতিষ্ঠান টিন সার্টিফিকেট নেননি তবে অবশ্যই অভিজ্ঞদের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন। কারণ আপনার দেয়া কর দ্বারা দেশেও উন্নয়ন হবে। আর কর দেয়া বা নিয়মিত আয় কর রিটার্ন দাখিন না করলে আপনার প্রতিষ্ঠান সরকারি বিভিন্ন ঝামেলার সম্মূখীন হতে পারে।

মোট কথা হলো যেহেতু টিন সার্টিফিকেট দ্বারা আপনার যাবতীয় আয়, সম্পদ, সম্পত্তির হিসাব রাষ্ট্রের নিকট দেখাতে হবে তাই এটি নিয়ে যেকোন পদক্ষেপ নেয়ার পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া জরুরি।

টিন সার্টিফিকেট নবায়ন করার নিয়ম

বিভিন্ন কারণে আমাদের টিন সার্টিফিকেটটি নবায়ন বা আপগ্রেড করার প্রয়োজন হতে পারে। দেখা যায় কোন সমস্যার কারণে টিন সার্টিফিকেট নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারেন। আর সে ঝামেলা এড়ানোর জন্য TIN Certificate টি নবায়ণ করতে হবে। এটি করার জন্য আপনার বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন নেই। এজন্য টিন নম্বার গ্রহণের সময় যে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড ছিলো তা দরকার পড়বে। আর সাথে নবায়ন করার প্রয়োজনীয় তথ্য।  

১) শুরুতে ওযেব সাইটে যেতে হবে। যাওয়ার পরে ইউজার নেইম আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। (পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ফরগট অপশন থেকে পাসওয়ার্ড রিসেট করে নিন।

২)  লগ ইন সম্পূর্ণ হলে  বামদিকের মেনু থেকে Edit/Correct/Update অপশনটি নির্বাচন করুন। যেটি মেনুবারের নিচের দিকে।

৩) এর পর আপনার সামনে যে নতুন পেজ আসবে তা মনোযোগ দিয়ে দেখুন। কোথায় কি আছে তা দেখার পরে ঠান্ডা মাথায় আপনার যে ধরণের পরিবর্তন দরকার তা সম্পূর্ণ করুন। তথ্য দেয়ার সময় সতর্ক থাকুন এবং শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তথ্য পূরণ করুন।

৪) তথ্য পূরণ হয়ে গেলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।  সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পরে আপনার কাজ শেষ। কিছু সময় পরেই আপনার সব তথ্য সেখানে পাবনে।

TIN বাতিল  বা স্থগিত করার নিয়ম

আপনার যদি মনে হয় যে আপনার টিন সার্টিফিকেট বাতিল বা স্থগিত করা প্রয়োজন  তবে সেটি বাতিল করা যাবে। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশে টিন সার্টিফিকেট বন্ধ করার নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। তবে তা স্থগিত করার কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করলে বাতিল করতে পারবেন। তখন আর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে না। তবে তার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে।

১) পর পর তিনবছর যদি আপনার আয় করযোগ্য না হয় তবে আপনাকে তিন বছর শূন্য আয়কর রিটর্ন দাখিল করতে হবে।

২) যদি তিন বছরে আপনার আয় করযোগ্য হওয়ার কোন সম্ভাবনা না থাকে তবে তৃতীয় বার রিটার্ন দাখিলের সময় উপকর কমিশনার বরাবর আপনার আয়কর ফাইলটি নথি ভুক্ত করে স্থগিত করে রাখতে হবে।

৩) আপনি যে  কর অঞ্চলের অধীনে আপনার টিন নাম্বারটি  নিয়েছেন সেখানেই আপনাকে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

৪) আপনার আবেদনটি উপকমিশনার গ্রহণ করার পরে যদি সন্তুষ্ট হন তবে আপনার ফাইলটি নথিস্থ করে স্থগিত রাখবেন। অর্থাৎ আপনার টিন সার্টিফিকেট স্থাগিত হবে পুরোপুরি বন্ধ নয়।

মনে রাখবেন, আপনার টিন সার্টিফিকেট স্থগিত করার পরে যদি আপনার আয় করযোগ্য হয় তবে আপনাকে পুনরায় তা সচল করতে হবে। সচল করার জন্য নিজ কর অঞ্চলে যোগাযোগ করতে হবে।

পরিশেষে

আয়কর জমা দেয়া আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। আর আয়কর জমা দেয়ার পূর্বশর্ত হলো টিন নম্বার গ্রহণ করা। তাই আমাদের সবার উচিত নিয়ম মেনে টিন সার্টিফিকেট নেয়া। টিন সার্টিফিকেট নেয়ার পরে নিয়মিত আয় অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করা ও সকল সম্পত্তির হিসেবে দেয়া।

মনে রাখবেন রিটার্ন বহির্ভূত সমস্ত সম্পত্তি বেআইনী বলে বিবেচিত তবে। তাই টেক্স ফাঁকি দিতে সব সম্পদের পরিমাণ রিটার্নে দাখিল না করা অপরাধ। আর দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে কর ফাঁকি দেয়া উচিত নয়। কারণ সরকার যদি নিয়মিত আয়কর না পায় তবে দেশের উন্নয়ন কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হবে।

তথ্যসূত্র:

১) বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ড: https://nbr.gov.bd / https://secure.incometax.gov.bd/TINHome
২) https://nbr.gov.bd/uploads/publications/Nirdeshika_2021-2022.pdf
৩) https://tipsnetbd.com/tin-certificate-download/
৪) প্রথম আলো:  https://cutt.ly/wR9ieGG

Author

Leave a Comment

Scroll to Top